loader image for Bangladeshinfo

শিরোনাম

  • কুমিল্লা ইপিজেড-এ চামড়া কারখানা করবে চীনা প্রতিষ্ঠান

  • নারী এশিয়া কাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশের গ্রুপে শ্রীলংকা

  • অস্ট্রেলিয়ার কাছে হোয়াইটওয়াশ হলো টাইগ্রেসরা

  • ১৯৭৫ সালের পর বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী

  • প্রীতি ম্যাচে পিছিয়ে পড়েও আর্জেন্টিনার জয়

মস্তিষ্কের রক্তনালীতে জমাট-রক্ত অপসারনের সর্বাধুনিক চিকিৎসা এখন দেশেই


মস্তিষ্কের রক্তনালীতে জমাট-রক্ত অপসারনের সর্বাধুনিক চিকিৎসা এখন দেশেই

এ্যকিউট ইসকেমিক স্ট্রোক বা মস্তিষ্কের রক্ত নালীতে রক্ত জমাট বাঁধার ও উপসর্গ দেখা দেওয়ার ৬ থেকে ১২ ঘন্টার মধ্যে এন্ডোভাসকুলার- ‘‘মেকানিক্যাল থ্রম্বেক্টমি’’ এর মাধ্যমে ঐ জমাট রক্তকে অপসারণ করার সর্বাধুনিক চিকিৎসা এখন বাংলাদেশেও সম্ভব। যে সকল প্রতিষ্ঠানে ক্যাথল্যাব আছে ও হৃৎরোগের চিকিৎসা করা হয় সেই সকল ক্যথ ল্যাবেই এ চিকিৎসা করা সম্ভব । শুধু প্রয়োজন প্রশিক্ষিত নিউরো-ইন্টারভেনশনিস্ট। কথাগুলো বলেছেন ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব নিউরোসায়েন্স এন্ড হসপিটাল এর ইন্টারভেনশনাল নিউরোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা: শিরাজী শাফিকুল ইসলাম শান্তনু। 

এক সাক্ষাৎকারে তিনি সাম্প্রতিক সময়ে স্ট্রোকের এক সফল চিকিৎসার উল্লেখ করে বলেন ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব নিউরো সায়েন্স এন্ড হাসপাতাল এর ইন্টারভেনশনাল নিউরোলজি বিভাগের চিকিৎসকবৃন্দ একিউট ইসকেমিক স্ট্রোকের চিকিৎসায় এক ঐতিহাসিক মাইলফলক স্থাপন করেছে। স্ট্রোকের চিকিৎসার ঐতিহাসিক সাফল্যের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন গত ২৩ ফেব্রুয়ারী হারুন অর রশিদ (৫৫) নামে এক রোগীকে বাংলাদেশে স্নায়ুবিজ্ঞানের একমাত্র আধুনিক চিকিৎসা ও গবেষনা প্রতিষ্ঠান নিউরো সায়েন্স হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। 

বিবরনে জানা যায়, আনুমানিক সকাল সাড়ে সাতটার দিকে হারুন অর রশিদকে ঘুমের মধ্যে গোঙ্গাতে দেখে তার মেয়ে ও জামাই ছুটে যান, দেখেন তিনি অজ্ঞান অবস্থায় যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছেন। অবস্থা খারাপ দেখে তারা তাকে প্রথমে হৃদরোগ হাসপাতালে নিয়ে যান। হৃদরোগ হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান রোগী স্ট্রোক করেছে এবং নিউরো সায়েন্স হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। সকাল আনুমানিক ৯.৩০মিঃ জরুরী বিভাগের বারান্দায় ট্রলিতে কাতরানো রোগী দেখে আমি রোগীর কাছে এগিয়ে যাই এবং অবস্থা পর্যবেক্ষন করি। তার বামপাশ সম্পুর্ন অবশ দেখে সাথে সাথে রোগীর সিটি স্কান ও সিটি এঞ্জিওগ্রাম করার ব্যবস্থা নেয়া হয়। সিটি স্কানে ইসকেমিক স্ট্রোক ও সিটি এঞ্জিওগ্রামে মস্তিস্কের ডান পাশের মিডল সেরেব্রাল ধমনি সম্পূর্ন বন্ধ পাওয়া যায়। সাথে সাথে বিষয়টি সহকর্মি সহযোগী অধ্যাপক ডা. শরীফ উদ্দিন খান ও সহযোগী অধ্যাপক ডা. কাজী মহিবুর রহমানকে অবহিত করা হয় এবং ক্যাথল্যাব ইনচার্জকে মেকানিক্যাল থ্রম্বেক্টমির জন্য ক্যাথল্যাব প্রস্ততির নির্দেশ দেয়া হয়। তিনি বলেন রোগী ক্যাথল্যাবে উপস্থিত হলে নিউরো ইন্টারভেনশন টিমের সকল ডাক্তার ও সেবিকাবৃন্দ দ্রুততার সাথে ও নিবিড় পরিচর্যায় মেকানিক্যাল থ্রম্বেক্টমি প্রসিডিউরে অংশগ্রহন করেন। 

মাত্র আধা ঘন্টার মধ্যে ‘স্টেন্ট রিট্রাইভার’ এর মাধ্যমে রোগীর মিডিল সেরেব্রাল ধমনী থেকে জমাট রক্ত অপসারণ করা হয় এবং রোগী অপারেশন টেবিলেই অবশ বাম হাত -পা নাড়াতে থাকে। এটাই বাংলাদেশে একিউট ইসকেমিক স্ট্রোকের প্রথম সফল মেকানিক্যাল থ্রম্বেক্টমী প্রসিডিউর। বাংলাদেশে এ্যকিউট ইসকেমিক স্ট্রোক বা ‘স্টেন্ট রিট্রাইভার’ এর মাধ্যমে রোগীর মিডিল সেরেব্রাল ধমনী থেকে জমাট রক্ত অপসারনের সাফল্য দেখে উপস্থিত ডাক্তার ও সেবিকাবৃন্দ আনন্দে উদ্বেলিত হন। ঘটনাটি পর্যবেক্ষন করতে হাসপাতালের পরিচালক ও অধ্যাপক ডা. কাজী দীন মোহাম্মদ ও যুগ্ম পরিচালক ও অধ্যাপক ডা.বদরুল আলম ক্যাথল্যাবে ছুটে আসেন ও এই দুঃসাহসিক পদক্ষেপ নিয়ে রোগীর প্রান বাঁচানোর জন্য নিউরোইন্টারভেনশন টিমের সকল সদস্যের প্রশংসা করেন। ডা. শিরাজী বলেন ভারত ও জার্মানীতে মেকানিকাল থ্রম্বেক্টমীর উপর প্রশিক্ষণ নিতে গিয়ে দেখন সেখানে এই চিকিৎসা অনেক আগেই চালু হয়েছে ।আমাদের দেশে এটাই প্রথম। তিনি বলেন এযাবৎকালে বাংলাদেশে সকল হাসপাতালে ইসকেমিক স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীদের শুধুমাত্র সাপোর্টিভ ম্যানেজমেন্ট ও রিহ্যাবিলিটেশন দেওয়া হতো। এখন স্ট্রোকের নির্দিষ্ট চিকিৎসা অন্তঃশিরায় ‘এ্যালটিপ্লেইজ ইনজেকশন’ ও ‘মেকানিক্যাল থ্রম্বেক্টমী পদ্ধতির চিকিৎসা দুটিই বাংলাদেশে শুরু হচ্ছে। যদিও এখনো এই চিকিৎসা ব্যয় বহুল। তবে শীঘ্রই হয়তো তা নাগালের মধ্যে চলে আসবে সেদিন আর বেশী দূরে নয়। 

টিম নিউরোইন্টারভেনশনের এই সাফল্য আমাদের স্ট্রোকের চিকিৎসায় আশার আলো দেখাচ্ছে। তিনি বলেন স্ট্রোক একটি মরণ ব্যাধি। এটি মস্তিস্কের রক্তনালীর রোগ। মস্তিস্কের রক্তনালীতে রক্ত জমাট বেঁধে বা রক্তনালী ছিড়ে গিয়ে স্ট্রোক হয়ে থাকে। রক্তনালীতে রক্ত জমাট বাঁধলে তাকে ইসকেমিক স্ট্রোক এবং রক্ত নালী ছিড়ে গিয়ে মস্তিস্কে রক্ত ক্ষরণ হলে তাকে হেমোরেজিক স্ট্রোক বলে। বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় ১ কোটি ৭০ লক্ষ মানুষ স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে প্রায় ৬ লক্ষ ৫০ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করে। বাকিদের মধ্যে ৫০ শতাংশ মানুষ পঙ্গুত্ব নিয়ে জীবন যাপন করে। 

বাংলাদেশে যত মানুষ অসুস্থ্য হয়ে মৃত্যুবরণ করে তার মধ্যে শতকরা ১৬ভাগ রোগী স্ট্রোকের কারনেই মারা যায়। বাংলাদেশে নগরায়নের সাথে সাথে মানুষের জীবন যাত্রার মান পরিবর্তন হয়েছে,বেড়েছে গড় আয়ু । সেই সাথে বেড়েছে বার্ধক্যজনিত রোগ। উচ্চ রক্ত চাপ, ডায়বেটিস, রক্তে চর্ব্বির আধিক্য হৃদরোগের ঝুঁকির সাথে সাথে স্ট্রোকের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিয়েছে। ডা. শিরাজী বলেন আমাদের দেশে হেমোরেজিক স্ট্রোকের শৈল্য চিকিৎসা অনেক আগেই শুরু হয়েছে কিন্ত একিউট ইমকেমিক স্ট্রোক এর কোন চিকিৎসা ছিল না। কিন্ত উন্নত বিশ্বে ইসকেমিক স্ট্রোকের উপসর্গ দেখা দেওয়ার সাড়ে চার ঘন্টার মধ্যে রোগীকে এ্যাল্টিপ্লেজ (রিকম্বিনেন্ট টিসু প্লাসমিনোজেন এ্যকটিভেটর ) নামক ইনজেকশন অন্তঃশিরায় প্রয়োগ করে জমাট রক্তকে বিচুর্ন করা হয় এবং যদি রোগী সাড়ে চার ঘন্টা পর হাসপাতালে আসে অথবা কোন কারনে ঐ ইনজেকশন প্রয়োগের অনুপযুক্ত হয় তাহলে মেকানিক্যাল থ্রম্বক্টেমী নামক এন্ডোভাসকুলার চিকিৎসা প্রধান করা হয়।

‘মেকানিক্যাল থ্রম্বেক্টমী এমন একটি চিকিৎসা পদ্ধতি যেখানে ডান উরুতে ফিমরাল ধমনী ছিদ্র করে তার ভেতর দিয়ে একটি সরু নল মস্তিস্কে প্রবেশ করিয়ে ‘স্টেন্ট রিট্রাইভার’ এর মাধ্যমে মস্তিষ্কের এ্যান্ডজিওগ্রাম করে ঐ জমাট রক্তকে রক্তনালীর ভেতর থেকে অপসরণ করা হয়। এর জন্য মস্তিষ্কে কোন অস্ত্রোপচার করার প্রয়োজন হয় না।

Loading...