loader image for Bangladeshinfo

শিরোনাম

  • ভারতের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে টাইগ্রেসদের দল ঘোষণা

  • বার্সাকে কাঁদিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিতে পিএসজি

  • অ্যাটলেটিকোকে উড়িয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ চারে ডর্টমুন্ড

  • রাষ্ট্রপতি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পাঠ্যক্রম যুগোপযোগী কর তাগিদ দিলেন

  • ক্যানাডায় আর্টসেলের আটটি কনসার্ট

ওদের হাতে রাইফেল, চোখে স্বপ্ন


ওদের হাতে রাইফেল, চোখে স্বপ্ন

এম এম মঞ্জুর মোর্শেদ

সদ্য সমাপ্ত বাংলাদেশ যুব গেমস ফেরত চট্টগ্রামের একদল উঠতি শুটারের সাথে হঠাৎ দেখা হলো সোনার বাংলা ট্রেনে। তাঁদের সাথে প্রাণবন্ত অভিজ্ঞতা বিনিময় হলো। জানা হলো ওদের স্বল্প পরিসরের সাতকাহন।

ক্রিকেট-ফুটবল-শাসিত এই দেশের ক্রীড়াক্ষেত্রে যে-খেলাটা প্রথম বড় সন্মান এনে দেয় সেটা কিন্তু শুটিং। চলুন, আসিফ, সাবরিনা, রত্নাদের পরবর্তী প্রজন্মের একটা অংশের সাথে আপনাদের পরিচয় করাই।

সদ্য মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ করেছেন শুটার সুমাইরা মোর্শেদ। স্কুলের পাশেই চট্টগ্রাম রাইফেলস শুটিং ক্লাব। নিজের ইচ্ছের কথা বড় ভাইকে জানালে বাবা মঞ্জুর মোর্শেদ ও মা মিসেস মোর্শেদের অনুপ্রেরণায় শুটিং শুরু করেন সেই ক্লাস সেভেন থেকে। প্রতিদিন প্রায় দুই ঘন্টা শুটিং প্র্যাকটিস করেন পড়াশোনার ফাঁকে। সদ্য সমাপ্ত যুব গেমসে দুটি মেডেল জিতেছেন। জানালেন, সাফ হয়ে অলিম্পিকে পাড়ি দেওয়ার স্বপ্নের কথা। কোচ আলমগীর বললেন, ওর মধ্যে অনেক সম্ভাবনা আছে। পরিবার পাশে থাকলে সফল হওয়ার জন্য সাহস এবং সম্ভাবনা দুটোই বেড়ে যায়। সুমাইরার শুটিং ক্যাটাগরি ১০ মিটার এয়ার রাইফেল।

সদ্য দশম শ্রেণীতে উঠেছেন সাকের আহমেদ। যুব গেমসে তাঁরও মেডেল আছে। জিজ্ঞেস করেছিলাম কীভাবে শুটিংয়ে আসা? বেশ সাবলীলভাবে জানালেন স্কুলে শুটার হান্টের সার্কুলার দেওয়া হয়েছিলো। আর সাকেরের এসবের প্রতি প্রবল আগ্রহ ছিলো। সেই অনুযায়ীই শুটিং এরেনাতে ঢুকে পড়া। সেটাও সপ্তম শ্রেণীতে থাকাকালীন সময়ে। সপ্তাহে দশ থেকে বারো ঘন্টা সময় দিতে হয় পড়ার ফাঁকে। বেশ সপ্রতিভভাবে জানালেন ধাপে ধাপে নিজের লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়ার কথা। সাকের শুটিং করেন ১০ মিটার এয়ার রাইফেল ক্যাটাগরিতে।

কাজী সাজ্জাদুল হোসেইনের হাতে দেখা গেল মেট্রোপলিটন ক্লাবের জেতা রানার আপ ট্রফি। চট্টগ্রাম থেকে আসা ৩য় মেডেল জয়ী জগ গেমসে। চেহারায় রাজ্যের সরলতা, কিন্তু কথা বললেন পেশাদারের মতো। বললেন, ‘‘আমার শুটিং ভালো লাগে, শুটিং দিয়ে দেশের জন্য কিছু করতে চাই। আসিফ ভাইদের থেকেও অনেক এগিয়ে যেতে চাই।’’ সাজ্জাদুলের শুটিং ক্যাটাগরি ১০ মিটার এয়ার রাইফেল।

চুপচাপ বসে থাকা এক কিশোরী শুটারকে নাম জিজ্ঞেস করতে প্রথমে কিছুই বললেন না। পরে বললেন নাম ফাহমিদা আলম। সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী। এই বয়সেই প্রায় ৩ কেজি ওজনের পিস্তল দিয়ে অনায়াসে লক্ষ্যভেদ করেন। বাবা আলমগীরের কাছ থেকে শুটিং কোচিংয়ের দীক্ষা নিয়েছেন। ফাহমিদার শুটিং ক্যাটাগরি এয়ার পিস্তল।

চুপচাপ আরো দুইজনকে দেখা গেলো। তাঁরা হলেন তাহছিন উদ্দিন, নাজমুল হাসান। এঁরাও চট্টগ্রামের উঠতি কিশোর শুটার। কথা হলো এঁদের কোচ জনাব আলমগীরের সাথে। বহু বছর নিজে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শুটিং করেছেন। প্রায় বারো বছর ধরে চট্টগ্রাম রাইফেলস ক্লাবের কোচের দায়িত্ব পালন করছেন। জানালেন, অফুরন্ত প্রতিভা থাকা সত্ত্বেও শুধু পৃষ্ঠপোষকের অভাবে শুটাররা বেশিদিন টিকে থাকতে পারেন না। ভালো সরঞ্জাম আর প্রয়োজনীয় স্পনসর পেলে এই দেশে আন্তর্জাতিক মানের শুটার আরো অনেক বেশি আসবে।

গ্যালারি শো নেই, প্রচুর দর্শক নেই, অনেক কিছু পাওয়াও প্রমাণিত নয়, তারপরও শুটিংকে গভীরভাবে ভালোবেসে শুটিং-এরেনাতে দাঁড়ানো, তীক্ষ্ন লক্ষ্য ভেদ করার প্রত্যয় আর দেশকে অনেক কিছু দেওয়ার লক্ষ্য যাঁদের - আসুন, কিছুক্ষণের জন্য হলেও না-হয় তাঁদের বাহবা দেই। কে জানে একদিন হয়তো দেখবো সুমাইরা, সাকের, সাজ্জাদ, ফাহমিদা বা এঁদের মতোই কেউ বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়ে মেডেল গ্রহণ করছে! সেই সুদিনের অপেক্ষায় আমরা থাকতেই পারি।

ছবি: এম এম মঞ্জুর মোর্শেদ

Loading...