নজরুল জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বর্ণাঢ্য র্যালি, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন কর্মসূচি ২৫ মার্চ দরিয়ারামপুর নজরুল-মঞ্চ থেকে শুরু হয়েছে। চলবে ২৭ মে পর্যন্ত। সংস্কৃতি-বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসন যৌথভাবে এ-অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।
রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে যথাযোগ্য মর্যাদায় শুক্রবার (২৫ মে) জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১১৯তম জন্মবার্ষিকী পালিত হয়েছে। ‘জাতীয় জাগরণে কবি নজরুল’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে শুক্রবার সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে এ-উপলক্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। খবর স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের।
রাজধানীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে কবির সমাধিতে সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ শিক্ষক-কর্মচারীদের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে দিনের কর্মসূচি শুরু হয়। পরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের পক্ষ থেকে কবির সমাধিতে পুস্পার্ঘ অর্পণ করা হয়। এছাড়া কাজী নজরুল ইসলামের পুত্রবধূ উমা কাজীর নেতৃত্বে পরিবারের পক্ষ থেকে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা হয়।
এ-বছর সংস্কৃতি-বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় ও জেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় জাতীয় পর্যায়ে কবির জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয় ময়মনসিংহের ত্রিশালে। এতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে অনুষ্ঠানসমূহ উদ্বোধন করেন।
সংস্কৃতি-বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির সভাপতি সিমিন হোসেন রিমির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ও ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান।
জাতীয় কবি’র জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কবির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পৃথক বাণী প্রদান করেছেন। এছাড়া বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতার এবং বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ও রেডিও বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করে।
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি নজরুল জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। এ-উপলক্ষে শুক্রবার সন্ধ্যায় জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে এবং শনিবার একই সময়ে একাডেমির জাতীয় সঙ্গীত ও নৃত্যকলা কেন্দ্র মিলনায়তনে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। শিল্পকলা একাডেমি ও নজরুল ইন্সটিটিউট নজরুল জন্মজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পালিত হয়েছে নজরুল জন্মজয়ন্তী। শুক্রবার ভোরে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মীবৃন্দ শোভাযাত্রা নিয়ে কবির সমাধিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
পরে কবির মাজার প্রাঙ্গণে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দীনের সভাপতিত্বে এক স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয় নজরুল গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক ড. বেগম আকতার কামাল, বিশিষ্ট কবি ও সমাজকল্যাণ গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মুহম্মদ সামাদ, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী, অফিসার এসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ আলী আকবর বক্তব্য রাখেন।
নজরুলের কবিতা আবৃত্তি করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো. এনামউজ্জামান ও অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. ভীষ্মদেব চৌধুরী। অনুষ্ঠানে সংগীত বিভাগের সভাপ্রধান ড. মহসিনা আক্তার খানম (লীনা তাপসী)-এর নেতৃত্বে সংগীত পরিবেশন করেন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীবৃন্দ।
বাংলাদেশ শিশু একাডেমি নজরুল জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে সকালে কবির মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে। পরে একাডেমির মিলনায়তনে এক আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মহিলা ও শিশু-বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাহমুদা শারমীন বেনু। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনপ্রশাসন মন্ত্রীর একান্ত সচিব বিশিষ্ট নজরুল গবেষক এএফএম হায়াতুল্লাহ ও স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ শিশু একাডেমির পরিচালক বিশিষ্ট ছড়াকার আনজীর লিটন।
বিশিষ্ট নজরুলসঙ্গীত শিল্পী ইয়াসমিন মুশতারী নজরুল সঙ্গীত পরিবেশন করেন। অনুষ্ঠানে শিশু একাডেমির প্রশিক্ষণার্থী শিশু-শিল্পীদের পরিবেশনায় কবিতা আবৃত্তি, ছড়াপাঠ ও গান পরিবেশিত হয়।
সোনারগাঁও বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন প্রাঙ্গণে নজরুল জন্মজয়ন্তী উদ্যাপন উপলক্ষে দিনব্যাপী কবির নির্বাচিত কবিতা আবৃত্তি, আলোচনা ও নজরুলসংগীতের আয়োজন করা হয়। মঙ্গলপ্রদীপ প্রজ্বালনের মধ্যদিয়ে দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন করেন ফাউন্ডেশনের পরিচালক কবি রবীন্দ্র গোপ। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ফাউন্ডেশনের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক মো. রবিউল ইসলাম, শিল্পী একেএম আজাদ সরকার প্রমুখ। কবিতা আবৃত্তি, সংগীতানুষ্ঠানে লালন পাঠশালার শিক্ষার্থীরা মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করে।
এছাড়া দেশের বিভিন্ন জেলায় প্রশাসনের উদ্যোগে ও সহযোগিতায় যথাযোগ্য মর্যাদায় জাতীয় কবি’র ১১৯তম জন্মবার্ষিকী পালিত হয়েছে।
