বলা যায় গ্যারেথ বেলই গুড়িয়ে দিলেন প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগ। তাঁর জোড়া গোল ও বেনজেমার এক গোলে লিভারপুলকে ৩-১ ব্যবধানে হারিয়ে টানা তিনটি মৌসুমে ইউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা জিতলো রিয়াল মাদ্রিদ। এটি স্প্যানিশ ক্লাবটির ত্রয়োদশ চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়।
শনিবার (২৬ মে) রাতে কিয়েভের মাঠে জমজমাট লড়াইয়ের আভাস দিয়ে মাঠে নামে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো’র রিয়াল মাদ্রিদ ও মোহাম্মদ সালাহ্’র লিভারপুল। শুরু থেকেই দারুন খেলতে থাকে লিভারপুল। মুহুর্মুহু আক্রমণে কাঁপিয়ে তোলে সার্জিও রামোসদের রক্ষণভাগ। কিন্তু জাল খুঁজেই পাচ্ছিলো না যেন! ২৪ মিনিটে জেমস মিলনারের এগিয়ে দেওয়া বল রবার্তো ফারমিনো শট নিলে তা রক্ষণে আটকে যায়। ফিরতি বলটি আলেক্সান্ডার আর্নল্ড মাটি কামড়ানো শটে জালে পাঠাতে চাইলে তা ঝাঁপিয়ে পড়ে বাহুবন্দি করেন কেইলার নাভাস।
এর আগে সুযোগ এসেছিলো রিয়ালেরও। টনি ক্রুসের বাড়ানো বল থেকে জোরালো শট নিয়েছিলেন রোনালদো। কিন্তু বলটি গোলপোস্টের কিছুটা উপর দিয়ে চলে গেলে এ-যাত্রায় বেঁচে যায় জার্গেন ক্লপের শিষ্যরা।
২৬ মিনিটে লিভারপুল-শিবিরে নেমে আসে স্থবিরতা। মাঝমাঠ থেকে বল নিয়ে রিয়াল গোলবারের দিকে ছুটছিলেন মিশরীয় তারকা সালাহ্। সেই বল দখল নিতে সার্জিও রামোস তাঁর ডান হাত ধরে একই সমান্তরালে ছুটলে এক সময় ভারসাম্য হারিয়ে পড়ে যান সালাহ্। বেশ কিছুক্ষণ কাতরানোর পরে ফিজিও প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাঁকে মাঠের বাইরে নিয়ে যান। ফের নামলেও মিনিট তিনেক পর তাঁকে মাঠ থেকে উঠিয়েই নিতে হয়। সালাহ্ বুঝতে পারেন, চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে এবার আর খেলা হচ্ছে না। রোনালদো এসে সান্ত্বনা দিলেও অশ্রু লুকোতে পারছিলেন না তিনি। কাঁদছিলো লিভারপুল শিবিরও!
এর কিছুক্ষণ পরেই হাঁটুর পেছনে চোট পেয়ে মাঠ থেকে চলে যান রিয়ালের রাইটব্যাক দানি কারভাহাল। তিনিও কাঁদছিলেন। এই আঘাত তাঁর বিশ্বকাপ উপস্থিতিকেও শঙ্কায়ই ফেলে দিলো বোধ হয়!
প্রথমার্ধের শেষে এগিয়ে যাওয়ার আরেকটি সুযোগ পেয়েছিলো রিয়াল। অলরেড্দের গোলবারের একেবারে সামনে থেকে রোনালদোর হেড থেকে করিম বেনজেমা পোস্টে বল ঠেলে দেন। কিন্তু রেফারি জানিয়ে দেন, অফসাইড ছিলো। ফলে গোলশূন্য সমতা নিয়েই মাঠ ছাড়ে দুই দল।
দ্বিতীয়ার্ধে জাল খুঁজে পায় দু’দলই। ৫১ মিনিটে লিভারপুলের গোলরক্ষক কারিয়াসের হেয়ালির সুযোগ কাজে লাগিয়ে রিয়ালকে ১-০ তে এগিয়ে দেন ফ্রান্সের বিশ্বকাপ দল থেকে বাদ পড়া করিম বেনজেমা। কারিয়াস বল নিজের প্লেয়ারদের দিকে বাড়াতে চাইলে সামনে থাকা বেনজেমা এগিয়ে পা ছুঁইয়ে দেন, বল চলে যায় জালে। মাথায় হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েন অলরেড্দের হাজারো সমর্থক।
তবে তাঁদের সেই হতাশা কাটাতে খুব বেশি সময় নেয়নি লিভারপুল। ৫৫ মিনিটে জেমস মিলনারের কর্নার থেকে দিহান লোভরেন হেডে সাদিও মানের কাছে বল পাঠালে গোলপোস্টের একেবারে সামনে থেকে তা বাড়িয়ে জালে জড়িয়ে দেন এই সেনেগাল তারকা (১-১)।
সে-সমতা অবশ্য খুব বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারেনি লিভারপুল। ৬৩ মিনিটে ব্রাজিলিয়ান তারকা মার্সেলোর ক্রস থেকে অবিশ্বাস্ বাইসাইকেল শটে গোল করে রিয়ালকে ২-১ এ ব্যবধানে এগিয়ে নেন বেল।
রিয়ালের তৃতীয় গোলটিও আসে এই ওয়েলস তারকার পা থেকে। ৮৩ মিনিটে ৩০ মিটার দূরে থেকে তাঁর নেওয়া জোরালো শট গোলরক্ষকের হাত ফসকে বল জালে জড়িয়ে গেলে ৩-১ ব্যবধানে এগিয়ে যায় জিনেদিন জিদানের দল।
এরপর আর কিছু করা সম্ভব হয়নি ইংলিশ জায়ান্টদের। রিয়াল মাঠ ছাড়ে ২০১৭-১৮ মৌসুমের চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা জয়ের উল্লাসে মেতে।
এদিকে এর ফলে ব্যক্তিগত শিরোপার দৌড়েও এগিয়ে গেলেন রোনালদো। ক্যারিয়ারের পঞ্চম চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা জিতলেন এই পর্তুগিজ ফুটবলার। ২০০৯ সালে ইংলিশ ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে জেতার পর ২০১৪, ২০১৬ ও ২০১৭ সালে রিয়ালের হয়ে আরও তিনটি ইউরোপ সেরা’র শিরোপা জিতেছেন তিনি।
ম্যাচ শেষে স্বাভাবিকভাবেই রিয়াল-শিবির ছিলাে উল্লসিত, অন্যদিকে লিভারপুল শিবিরে ছিলো হতাশা। সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন মনে হয়েছে সালাহ্-ভক্তদের। আগামী মাসে রাশিয়ায় শুরু হতে যাওয়া বিশ্বকাপে তাঁরা-যে ভালো কিছু করার স্বপ্ন দেখছেন সালাহ্কে ঘিরে!
