২০১৮ ফুটবল বিশ্বকাপে ক্রোয়েশিয়ার কাছে ৩-০ গোলে হারলো বর্তমান রানার্স আপ আর্জেন্টিনা। নিঝনি নভোগড় স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার (২১ জুন) অনুষ্ঠিত ‘ডি’ গ্রুপের ম্যাচের ৫৩ মিনিটে ক্রোয়েশিয়ার হয়ে প্রথম গোল করেন অ্যান্টে রেবিচ। এরপর ৮০ মিনিটে লুকা মড্রিচ এবং ইনজুরি টাইমে ইভান রাকিটিচ গোল করেন। এই জয়ে শেষ ষোলো নিশ্চিত হয়ে গেল ক্রোয়েশিয়ার। তবে অনেক হিসাব-নিকাশের উপর ঝুলে রইলো আর্জেন্টিনার শেষ ষোলোতে যাওয়া।
ম্যাচের ৫ মিনিটে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ তৈরি করে ফেলে ক্রোয়েশিয়া। মধ্যমাঠ থেকে পাওয়া বল নিয়ে আর্জেন্টিনার বিপদ সীমানায় প্রবেশ করেন ক্রোয়েশিয়ার মিডফিল্ডার ইভান পেরিসিচ। গোলমুখে শট নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু বাঁ-দিকে ঝাপিয়ে পড়ে ক্রোয়েশিয়ার নিশ্চিত গোল রুখে দেন আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক উইলি কাবালেরো।
শুরুতেই ক্রোয়েশিয়ার এমন আক্রমণে ভড়কে যায়নি আর্জেন্টিনা। ১১ মিনিটে মিডফিল্ডার ম্যাক্সিমিলিয়ানো মেজা ক্রোয়েশিয়ার ডি বক্সের বাইরে থেকে চিপ করে সামনের দিকে মেসির জন্য বল বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই যোগান দেয়া বলে পা লাগাতে পারেননি মেসি। ফলে গোলের ভালো একটি সুযোগ নষ্ট হয়ে যায়।
৩০ মিনিটে গোলের সেরা সুযোগটি পেয়েছিলো আর্জেন্টিনা। ক্রোয়েশিয়ার ডি-বক্সের ভেতর বল পেয়ে ফাঁকা পোষ্ট থেকে গোল আদায় করে নিতে পারেননি ইনজো পেরেজ।
৩৩ মিনিটে পাল্টা আক্রমণে যায় ক্রোয়েশিয়া। তাঁরাও গোলের সেরা সুযোগটি মিস করেন। রক্ষণভাগের খেলোয়াড় সিমে ভার্সালিকোর ক্রসে আর্জেন্টিনার গোলমুখের ছয় গজ দূরে থেকে বলে মাথা ছোয়াতে ব্যর্থ হন স্ট্রাইকার মারিও মান্দজুকিচ। দু’দলের গোল মিসের মহড়াতে গোলশুন্যভাবে শেষ হয় প্রথমার্ধ।
প্রথমার্ধের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বল দখলে ক্রোয়েশিয়ার চেয়ে সামান্য এগিয়ে ছিলো আর্জেন্টিনা। দ্বিতীয়ার্ধে শুরুতেই গোলের সুযোগ তৈরি করে নীল-সাদা জার্সিধারীরা। ৪৮ মিনিটে অধিনায়ক লিওনেল মেসির যোগান দেয়া বল স্ট্রাইকার মার্কোস আকুনা গোল করতে ব্যর্থ হন।
আর্জেন্টিনা সুযোগ হাতছাড়া করলেও, ক্রোয়েশিয়াকে গোল করার সুযোগ তৈরি করেন দেন মেসিদের গোলরক্ষক কাবালেরো। ৫৩ মিনিটে রক্ষণভাগের খেলোয়াড় গ্যাব্রিয়েল মার্সাডোকে বল দিতে গিয়ে ব্যর্থ হন কাবালেরো। বল পেয়ে যান সামনেই থাকা অ্যান্টে রেবিচ। ডান পায়ের শটে গোল আদায় করে নিতে ভুল করেননি রেবিচ।
গোল পেয়ে আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠে ক্রোয়েশিয়া। তবে ম্যাচে সমতা আনতে আপ্রাণ চেষ্টা করে আর্জেন্টিনা। কিন্তু নিজেদের ভুলে ও ক্রোয়েশিয়ার ডিফেন্ডারদের দৃঢ়তায় ম্যাচে সমতা আনার সুযোগগুলো হাতছাড়া হয় আর্জেন্টিনার। এদিন আর্জেন্টিনা ছিলো একেবারেই ছন্নছাড়া। বল পেয়ে কোন সময়েই নিজেদের পায়ে রাখেতে পারেনি মেসির নেতৃত্বাধীন দলটি।
আর্জেন্টিনা না পারলেও ৮০ মিনিটে একক প্রচেষ্টায় দুরপাল্লার দুর্দান্ত এক শটে গোল আদায় করে নেন লুকা মড্রিচ। এই গোলে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে ম্যাচ জয়ের পথ প্রশস্ত করে ফেলে ক্রোয়েশিয়া। বলা যায়, আর্জেন্টিনাকে নিয়ে ছেলে খেলাই করেছে ক্রোয়েশিয়া।
শেষ ভাগে ক্রোটরা আরো বেশি আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। আর্জেন্টিনাকে যেন মাঠে খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছিলো না! যােগ করা সময়ের প্রথম মিনিটে ডিফেন্ডার ও গোলরক্ষকের ভুলে ম্যাচে তৃতীয় গোল হজম করে মেসিরা। তাই ৩-০ গোলের জয় নিয়ে শেষ ষোলোতে পা রাখে ক্রোয়েশিয়া।
বিশ্বকাপ আসরে এই নিয়ে দ্বিতীয়বার মুখোমুখি হয়েছিলো আর্জেন্টিনা ও ক্রোয়েশিয়া। ১৯৯৮ সালে প্রথম দেখায় ১-০ গোলে জিতেছিলো নীল-সাদা শিবির। এবার জিতে ঐ আসরে হারের প্রতিশোধ নিলো ক্রোয়েশিয়া।
আগামী ২৬ জুন গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে নাইজেরিয়া বিপক্ষে মাঠে নামবে আর্জেন্টিনা। একই দিন আইসল্যান্ডের মুখোমুখি হবে ক্রোয়েশিয়া। এর আগে আজ ‘ডি’ গ্রুপে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে লড়বে নাইজেরিয়া ও আইসল্যান্ড।
