কৃষকদের জন্য কৃষিকে নিরাপদ এবং লাভজনক করে তুলে জনগণের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা অর্জনের লক্ষ্যে ‘জাতীয় কৃষিনীতি ২০১৮’র খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। সােমবার (৯ জুলাই) সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এই অনুমোদন দেওয়া হয়। খবর স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের।
বৈঠকের পরে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, জাতীয় কৃষিনীতি ২০১৩ কে আরেকটু যুগোপযোগী ও হালনাগাদ করে এটাকে আরো সমৃদ্ধ করা হয়েছে - যার মূল লক্ষ্যই হচ্ছে কৃষিকে কৃষকের কাছে নিরাপদ ও লাভজনক করে তোলা এবং খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা অর্জন করা।
মন্ত্রিসভা সােমবার বাংলাদেশ শিশু একাডেমী আইন-২০১৮ এর খসড়াও অনুমোদন দিয়েছে।
নতুন কৃষিনীতি সম্পর্কে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, অনেক কিছুই এখানে নতুন যোগ করা হয়েছে। যেসব আগের নীতিতে ছিল না। তাই এটাকে বেশ সমৃদ্ধ এবং বিস্তারিত বলা যায়। মন্ত্রিসভায় পাট নিয়ে আলাদা একটা অধ্যায় এখানে সংযোজনের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এবং তিল, তিষী-এই বিষয়গুলো যেন এখানে আসে সেজন্য বলা হয়েছে। আর সমবায়ভিত্তিক খামার ব্যবস্থাপনাকে গুরুত্ব দেওয়ার জন্যও বৈঠকে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, এই নতুন খসড়া আইনের মূল লক্ষ্য-নিরাপদ লাভজনক কৃষি এবং টেকসই খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা অর্জন। এর প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে - ফসলের উৎপাদন ও কৃষকের আয় বৃদ্ধি, শস্য বহুমুখিকরণ, পুষ্টি সমৃদ্ধ সিরাপদ খাদ্য উৎপাদন, বিপণন ব্যবস্থার উন্নয়ন, লাভজনক কৃষি ও দক্ষ প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহারের মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ও আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন।
প্রযুক্তিনির্ভর কৃষির উপর এখানে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, নতুন আইনে ২২টি অধ্যায় ও ১০৬টি অনুচ্ছেদ-উপঅনুচ্ছেদ রয়েছে। সেখানে ন্যানোপ্রযুক্তি-সংক্রান্ত একটি অনুচ্ছেদ যোগ করা হয়েছে- যেটা আগে ছিলো না।
তিনি বলেন, মানঘোষিত বীজ উৎপাদন ও নগরকেন্দ্রিক কৃষি সম্প্রসারণ সেবা-সংক্রান্ত বিষয়টিও নতুন যুক্ত করা হয়েছে। কৃষি যান্ত্রিকীকরণ সেবা, উদ্ভাবনী সম্প্রসারণ প্রযুক্তি, প্রযুক্তি ব্লক স্থাপন, বছরে ফল উৎপাদন - এগুলো আগে ছিলো না।
তিনি বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে ফসলের রোগ, জাতভিত্তিক চাহিদার উন্নয়ন, পুষ্টি আহরণ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে ন্যানো প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। আর ন্যানো সেন্সর-প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ভূমির গুণাগুন পর্যবেক্ষণ ও উৎপাদন বৃদ্ধির কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। গবেষণার অংশ হিসেবে ন্যানো ও জেনেটিক্স গ্রহণ করা হয়েছে।
প্রতিকূল পরিবেশের অঞ্চলগুলোর জন্য কৃষি কর্মসূচি গ্রহণের বিষয়টি একটি অনুচ্ছেদে আলাদাভাবে অধ্যায় করে বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে উল্লেখ করে শফিউল আলম বলেন, কৃষি উপকরণের নামে অনুচ্ছেদ নতুনভাবে সংযোজন করা হয়েছে।
নতুন আইনে-সুষম, জৈব, জীবাণু সার ব্যবহারের বিষয়গুলো বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। উপকারী পোকা ও জৈবসার, বালাইনাশক বিষয়ের নতুন সংযোজন করা হয়েছে। দক্ষতা উন্নয়নে জিআইএস, রিমোট সেন্সিং, ক্রপ মডেলিং, কর্মসংস্থানের সৃষ্টি, তথ্য ও যোগাযোগ পদ্ধতি ব্যবহার এবং স্থানীয় বা জাতীয় সমস্যাভিত্তিক উচ্চশিক্ষা গ্রহণ বিষয়টি অর্ন্তভূক্ত ছিল না, সেটা এখানে যুক্ত হয়েছে। সামুদ্রিক শৈবাল কৃষি ধারণার অন্তর্ভুক্ত করাসহ বেশ কিছু বিষয় অন্তর্ভুক্ত করে এই কৃষিনীতিকে সমৃদ্ধ করা হয়েছে।