loader image for Bangladeshinfo

শিরোনাম

  • শেষ মুহূর্তের গোলে ইতালিয়ান কাপের ফাইনালে ইউভেন্টাস

  • আর্সেনালের কাছে পাঁচ গোলে উড়িয়ে গেলো চেল্সি

  • হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর

  • বেপজা অর্থনৈতিক জোনে চীনা কোম্পানির ১৯.৯৭ মি. ডলার বিনিয়োগ

  • কাতারের আমিরের ঢাকা ত্যাগ

ক্রোয়েশিয়াকে হারিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বকাপ জিতলো ফ্রান্স


ক্রোয়েশিয়াকে হারিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বকাপ জিতলো ফ্রান্স

ইতিহাস তাঁদের সঙ্গেই ছিলো - ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে কখনোই হারেনি ফ্রান্স। তিনবার জয় আর দুইবার ড্র। ১৯৯৮ সালে ক্রোয়েটদের সেমিফাইনালে হারিয়েছিলো ফ্রান্স। সেই আসরে প্রথমবার বিশ্বকাপ জয়ের আনন্দে মেতেছিলো জিনেদিন জিদানরা। ২০ বছর পরে আবারাে  ক্রোয়েটদের হারালো ফ্রান্স। এবারও তাঁরা বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। মাঠে এই কাজটা সহজ করে দিলেন গ্রিজম্যান, পগবা ও এমবাপে।

২১তম ফুটবল বিশ্বকাপের শিরােপা জিতেছে ফ্রান্স। ‘দি গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’-এর ফাইনালে রবিবার (১৫ জুলাই) ফরাসিরা ৪-২ গোলে হারায় প্রথমবারের মতো ফাইনালে ওঠা ক্রোয়েশিয়াকে। ১৯৯৮ সালের পরে আবারো বিশ্বকাপের শিরোপা জিতলো ফ্রান্স। অন্যদিকে প্রথমবারের মতো ফাইনালে উঠে শিরোপা স্পর্শ করা হলো না ক্রোয়েশিয়ার। তাই রানার্স-আপ হয়ে এবারের বিশ্বকাপ মিশন শেষ করলো লুকা মড্রিচরা।

মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামে ম্যাচের শুরু থেকেই সতর্ক কিন্তু ভালাে ফুটবল খেলেছে ফ্রান্স ও ক্রোয়েশিয়া। বল দখলের লড়াইয়ের মাঝে নিজেদের গুছিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে তাঁরা। ৪-৪-২ পদ্ধতিতে শুরু করা ফ্রান্স ১৮ মিনিটেই গোলের স্বাদ নেয়। অবশ্য এজন্য পুরো কৃতিত্ব ক্রোয়েশিয়ার। কারণ গোলটি ছিলো আত্মঘাতী। নিজেদের বক্সের সামনে ক্রোয়েশিয়ার মিডফিল্ডার মার্সেলো ব্রোজোভিচ প্রতিপক্ষের অন্টােয়ান গ্রিজম্যানকে ফাউল করলে ফ্রি-কিক পায় ফ্রান্স। ক্রোয়েশিয়ার বিপদ-সীমানার শট নেন গ্রিজম্যান। বাতাসে উড়ে আসা বল বিপদমুক্ত করার জন্য হেড দেওয়ার চেষ্টা করেন ক্রোয়েশিয়ার স্ট্রাইকার মারিও মান্দজুকিচ। কিন্তু বল তাঁর মাথার উপরের অংশে লেগে ক্রোয়েশিয়ার জালে প্রবেশ করলে আত্মঘাতী গোলে এগিয়ে ফ্রান্স  যায় (১-০)। বিশ্বকাপের ফাইনালে এটি প্রথম এবং এই আসরে দ্বাদশ আত্মঘাতি গোল।

গোল হজমের পরে তেতে উঠে ৪-১-৪-১ ফরমেশনে খেলতে নামা ক্রোয়েশিয়া। নক-আউট পর্বের তিন ম্যাচেই গোল হজমের পরে ম্যাচে সমতা এনে সেই ম্যাচগুলো জিতেছেও ক্রোয়েশিয়া। তাই ম্যাচে ফিরতে মরিয়া হয়ে উঠে পেরিসিচরা। আক্রমণ অব্যাহত রেখে ২১ মিনিটে অধিনায়ক লুকা মড্রিচের ক্রস থেকে মাথার সহায়তায় গোল করার চেষ্টা করেন ডিফেন্ডার ডোমাগো ভিদা। কিন্তু সেই হেডে বল চলে যায় বারের উপর দিয়ে। ফলে গোল বঞ্চিত হয় ক্রোয়েশিয়া।

এরপর ২৪ মিনিটে আবারো ভালো একটি আক্রমণ করে ক্রোয়েশিয়া। ফ্রান্সকে গোল উপহার দেওয়া মান্দজুকিচ বল যোগান দিয়েছিলেন মিডফিল্ডার ইভান রাকিটিচকে। বল পেয়ে ফ্রান্সের বারের উপর দিয়ে বল মারেন রাকিটিচ।

২৮ মিনিটে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে ক্রোয়েশিয়া। কর্নার থেকে জটলার মধ্যে বল পান ইভান পেরিসিচ। বল দখলে নিয়ে কিছুটা বাঁ-দিকে সড়ে গিয়ে ফ্রান্সের গোলমুখে শট নেওয়ার পথ তৈরি করে প্রায় ২০ গজ থেকে তীব্র শটে বলকে ফ্রান্সের জালে আশ্রয় দেন পেরিসিচ (১-১)। ম্যাচে সমতা আসার পরে আরো আক্রমনাত্মক খেলা শুরু করে ক্রোয়েশিয়া। বল দখলে রেখে আক্রমণ অব্যাহত রাখে তাঁরা।

কিন্তু ৩৮ মিনিটে আবারো ভাগ্যের দোষে গোল হজম করে ক্রোয়েশিয়া। বক্সের ভেতর ফ্রান্সের গ্রিজম্যানের নেওয়া কর্নারে উড়ে আসা বল হাতে লাগে ক্রোয়েশিয়ার পেরিসিচের। এতে পেনাল্টির আবেদন করে ফ্রান্স। কিন্তু দেখতে না-পারায় পেনাল্টি এড়িয়ে যান অনফিল্ড রেফারি আর্জেন্টিনার নেস্টর পিটানা। তবে ফরাসিদের জোরালাে আবেদনে ভিএআরের সহায়তা নেন তিনি। ভিডিও’তে স্পষ্টই দেখা যায় - বল পেরিসিচের হাতে লেগেছে। তাই নিজের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে পেনাল্টির নির্দেশ দেন। পেনাল্টি থেকে গোল করে ফ্রান্সকে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে দেন গ্রিজম্যান।

এগিয়ে থেকেই বিরতিতে যায় ফ্রান্স। তবে এসময় বল দখলে এগিয়ে ছিলো ক্রোয়েশিয়া। ৬৭ শতাংশ বল দখলে রাখতে পেরেছে মড্রিচ-বাহিনী। প্রতিপক্ষের সীমানায় আক্রমণেও এগিয়ে ছিলো তাঁরা। সাতবার আক্রমণ করে দু’বার ফরাসিদের গোলমুখে শট নেয় ক্রোয়েশিয়া। অপরদিকে, ৩৩ শতাংশ বল দখলে রেখে ক্রোয়েশিয়ার সীমানায় একবার আক্রমণ করে একবারই গোলমুখে শট নিয়েছে ফ্রান্স।

বিরতির পরে প্রথম আক্রমণ করে ক্রোয়েশিয়া। ৪৮ মিনিটে রাকিটিচের পাস থেকে প্রতিপক্ষের গোলমুখে তীব্র শট নেন ডিফেন্ডার সিমে ভার্সালিকো। কিন্তু তাঁর শট ফ্রান্সের গোলরক্ষক হুগো লরিস কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন।

৫২ মিনিটে মধ্যমাঠ থেকে বল নিয়ে প্রচন্ড গতিতে ক্রোয়েশিয়ার বক্সের ভেতর ঢুকে পড়েন ফ্রান্সের স্ট্রাইকার কিলিয়ান এমবাপে। এরপর গোলমুখে শট নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু গোলবার ছেড়ে কিছুটা সামনে এসে সেই শট রুখে দেন গোলরক্ষক ড্যানিয়েল সুবাসিচ।

৫৯ মিনিটে মধ্যমাঠ থেকে আবারো আক্রমণে যায় ফ্রান্স। পল পগবার কাছ থেকে বল পেয়ে ক্রোয়েশিয়ার বক্সের ভেতর ঢুকে গোলে শট নেন এমবাপে। তাঁর শট ক্রোয়েশিয়ার ডিফেন্ডারদের গায়ে লেগে চলে যায় ডি-বক্সের কাছাকাছি। সেখানে বল পান গ্রিজম্যান। আলতো ছোঁয়ায় সামনেই থাকা পগবাকে বল দেন গ্রিজম্যান। বল পেয়ে ডান পায়ে ক্রোয়েশিয়ার গোলমুখে শট নেন পগবা। সেই শট ক্রোয়েশিয়ার ডিফেন্ডার ডেজান লভরেনের গায়ে লেগে ফিরে আসে। ফিরে আসা বলে এবার বাঁ-পায়ে শট নেন পগবা। তাঁর বল ক্রোয়েশিয়ার জাল স্পর্শ করলে ৩-১ গোলে এগিয়ে যায় ফ্রান্স।

এই গোলের রেশ কাটতে না কাটতে আবারো গোল আদায় করে নেয় দেশমের শিষ্যরা। ৬৫ মিনিটে গোলদাতার তালিকায় নাম লেখান ১৯ বছর বয়সী এমবাপে। মধ্যমাঠ থেকে বল নিয়ে একক প্রচেষ্টায় ক্রোয়েশিয়ার বক্সে প্রবেশের চেষ্টায় ছিলেন ডিফেন্ডার লুকাস হার্নান্দেজ। কিন্তু ক্রোয়েশিয়ার ডি-বক্সের কাছাকাছি এমবাপেকে দেখতে পান হার্নান্দেজ। তাই এমবাপেকে বল বাড়িয়ে দেন তিনি। বল পেয়ে সামান্য বাঁ-দিকে সড়ে ডান-পায়ের তীব্র শটে বল ক্রোয়েশিয়ার জালে পাঠান এমবাপে। এই গোলে ৪-১ ব্যবধানে এগিয়ে শিরোপা জয়ের আরো কাছে চলে আসে ফ্রান্স।

ফ্রান্সের চতুর্থ গোলের চার মিনিট পরে সম্পূর্ণ ভাগ্যের সহায়তায় ব্যবধান কমায় ক্রোয়েশিয়া। ফ্রান্সের ডিফেন্ডার স্যামুয়েল উমিতিতি বল সরাতে মধ্যমাঠ থেকে মাইনাস করে গোলরক্ষক হুগো লরিসকে দেন। ততক্ষণে হরিসের সামনে চলে আসেন ক্রোয়েশিয়ার স্ট্রাইকার ও ফরাসিদের আত্মঘাতি গোল উপহার দেওয়া মান্দজুকিচ। ফ্রান্সের গোলরক্ষক লরিস বড় নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হন। ফলে ঠান্ডা মাথায় গোল আদায় করে নেন মান্দজুকিচ (৪-২)।

শেষদিকে আরাে আক্রমণ করলেও গোল করতে পারেনি ক্রোয়েশিয়া। অন্যদিকে ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ পেয়েও তা কাজে লাগাতে পারেনি ফ্রান্স। শেষ পর্যন্ত ৪-২ গোলে জয় নিয়ে তৃতীয়বার ফাইনাল খেলে দ্বিতীয়বারের মতাে বিশ্বকাপ জিতে নেয় ফ্রান্স।

হারলেও সেরা-খেলােয়াড় হয়ে গোল্ডেন বল জিতেছেন ক্রোয়েশিয়ার অধিনায়ক লুকা মড্রিচ। ছয় গোল করে গোল্ডেন বুট পেয়েেছন ইংল্যান্ডের অধিনায়ক হ্যারি কেইন। এবার সেরা গোলরক্ষক হয়েছেন বেলজিয়ামের থিবো কর্টোয়া। ১৯ বছর বয়সী কিলিয়ান এমবাপে পেয়েছেন সেরা তরুণ খেলোয়াড়ের পুরস্কার।

২০ বছর আগে নিজেদের মাটিতে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে খেলোয়াড় হিসেবেও বিশ্বকাপ জিতেছিলেন ফ্রান্সের বর্তমান কােচ দিদিয়ের দেশম। এবার শিরােপা জয়ে তিনি নাম লেখালেন ব্রাজিলের মারিও জাগালাে ও জার্মান-কিংবদন্তী ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ারের পাশে।

Loading...