loader image for Bangladeshinfo

শিরোনাম

  • মিলানকে হারিয়ে পাঁচ ম্যাচ আগেই ইন্টারের ২০তম শিরোপা জয়

  • লেভাকুজেনের ৪৫ ম্যাচে অপরাজিত থাকার রেকর্ড

  • ফুলহ্যামকে হারিয়ে শিরোপা লড়াইয়ে লিভারপুল

  • তাইওয়ানে আবারও ভূমিকম্পের আঘাত

  • প্রধানমন্ত্রীর থাইল্যান্ড সফরকালে পাঁচটি দলিল স্বাক্ষর ও বহুমুখী সহযোগিতার সম্ভাবনা

শেষ বলে আবারাে স্বপ্নভঙ্গ টাইগারদের


শেষ বলে আবারাে স্বপ্নভঙ্গ টাইগারদের

সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ: ২২২/১০ (৪৮.৩ ( লিটন ১২১, মিরাজ ৩২, ইমরুল ২, মুশফিক ৫, মিঠুন ২, মাহমুদউল্লাহ ৪, সৌম্য ৩৩ , মাশরাফি ৭, নাজমুল ৭ , মোস্তাফিজ ২, রুবেল ০ ; ভুবনেশ্বর ০/৩৩, বোমরাহ ১/৩৯ , চেহেল ১/৩১, কুলদীপ ৩/৪৫, জাদেজা ০/৩১, কেদার ২/৪১ )
ভারত:  ২২৩/৭ (৫০) ( রোহিত ৪৮, ধাওয়ান ১৫, রাইডু ২, কার্তিক ৩৭, ধোনি ৩৬, কেদার ২৩*, জাদেজা ২৩, ভুবনেশ্বর  ২১, কুলদীপ ৫* ; মিরাজ ০/২৭,  মোস্তাফিজ ২/৩৮, নাজমুল ১/৫৬, মাশরাফি ১/৩৫, রুবেল ২/২৬, মাহমুদউল্লাহ ১/২৮)
ফল: ভারত তিন উইকেটে জয়ী
ম্যান অফ দি ম্যাচ: লিটন দাস

টানা দ্বিতীয়বার এবং সব মিলিয়ে সপ্তমবারের মতো এশিয়া-ক্রিকেটের সেরা হলো ভারত। শেষ চার আসরের মধ্যে  তিনবার এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠে বাংলাদেশের জেতা হলো না একবারও। শেষ বলে গিয়ে এশিয়া কাপ না-জেতার যন্ত্রণায় পুড়তে হলো দুইবার। শুক্রবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে চতুর্দশ এশিয়া কাপের ফাইনালে বাংলাদেশ নেমেছিলো আন্ডারডগ হিসেবেই। তবে তুমুল লড়াই করে শেষ বল পর্যন্ত আশাটা জাগিয়ে রেখেছিল মাশরাফি মর্তুজার দলই। দলের অন্যতম সেরা দুই তারকা সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবাল ছাড়া ফাইনাল খেলাটাও কম নয়!

২০১২ ও ২০১৬ সালের পরে আবারও খুব কাছে এসেও এশিয়া কাপ শিরোপা হাতছাড়া হলো মাশরাফিদের। শেষ বলে ম্যাচ জিততে এক রান প্রয়োজন ছিলো ভারতের। বাংলাদেশের অফ-স্পিনার মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের বলে এক রান নিয়ে ফাইনালে ভারতের জয় নিশ্চিত করেন ডান-হাতি ব্যাটসম্যান কেদার যাদব। ফলে দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত ফাইনালে বাংলাদেশকে তিন উইকেটে হারিয়ে এশিয়া কাপ ক্রিকেটের চতুর্দশ আসরের শিরোপা জিতে নেয় ভারত।

শুক্রবার শিরোপা-নির্ধারণী ম্যাচে টস হেরে প্রথমে ব্যাট করে লিটন দাসের শতরানে ২২২ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। লিটন ১১৭ বলে ১২১ রান করেন। জবাবে ৫০ ওভারে সাত উইকেটে ২২৩ রান করে ম্যাচ জিতে ভারত।

ব্যাট হাতে নেমে দলকে দারুণ সূচনা এনে দেন বাংলাদেশের ওপেনার লিটন দাস ও মেহেদি হাসান মিরাজ। ফাইনালের আগে পুরো টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানদের সর্বোচ্চ রান ছিলো ১৬। তাই লোয়ার-অর্ডার ব্যাটসম্যান মেহেদিকে দিয়ে জুয়া খেলার চেষ্টা করে টিম বাংলাদেশ। তাতে সফলও হয় টাইগাররা।

লিটনের সাথে জুটি বেঁধে বড় সংগ্রহই এনে দেন মিরাজ। মিরাজ ধীরলয়ে থাকলেও মারমুখী মেজাজে ছিলেন লিটন। তাই ৭.৪ ওভারে ৫০ রান পূর্ণ হয় বাংলাদেশের। এসময় লিটনের রান ছিলো ২৬ বলে ৪১। অন্যপ্রান্তে ২২ বলে ১৫ রান মিরাজের।

১২তম ওভারের প্রথম বলে বাউন্ডারির সহায়তায় ক্যারিয়ারের প্রথম হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন লিটন। ৩৩ বলেই হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করার এক বল পরই জীবন পান তিনি। ভারতের বাঁ-হাতি স্পিনার রবীন্দ্র জাদেজার বলে ছক্কা মারতে গিয়ে আকাশে বল তুলে দেন লিটন। সেই ক্যাচ ধরতে ব্যর্থ হন মিড উইকেটে থাকা ভারতের যুজবেন্দ্রা চাহাল। ফলে ৫২ রানে জীবন পান লিটন।

এরপরে আর পেছন ফিরে তাকাননি লিটন। বাংলাদেশের রানের চাকা সচল থাকেন তিনি। তাই বিনা উইকেটে বাংলাদেশের দলীয় স্কোর শতরানে পৌঁছে যায়। ১৮তম ওভারের পঞ্চম বলে ১শ রান পায় বাংলাদেশ। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরের পর ও ২৭ ওয়ানডের পর উদ্বোধণী জুটিতে শতরান পেল টাইগাররা।

তবে ২১তম ওভারের পঞ্চম বলে বিচ্ছিন্ন হতে হয় লিটন ও মিরাজকে। ব্রেক-থ্রু এনে দিতে পারদর্শী ভারতের অফ-স্পিনার কেদার যাদব বিদায় দেন মিরাজকে। ৩টি চারে ৫৯ বলে ৩২ রান তুলে মিরাজ আউট হলে ১২০ রানে প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ।

ম্যাচে ভালো একটা শুরুর জন্য ক্ষুধার্ত ছিলো বাংলাদেশ দল। টাইগারদের সেই ক্ষুধা মিটিয়েছেন লিটন ও মিরাজ। তাই দেখার পালা ছিলো এই উড়ন্ত সূচনাটাকে ধরে রেখে কত দূর যেতে পারে বাংলাদেশ। কিন্তু না, উড়ন্ত শুরুর পরও মিডল অর্ডারের ব্যর্থতায় ২২২ রানেই গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। অর্থাৎ শেষ নয় উইকেটে ১০২ রান যোগ করতে পেরেছে বাংলাদেশ।

তিন নম্বরে ব্যাট হাতে নেমে ভারতের লেগ-স্পিনার চাহালের বলে লেগ বিফোর হন ইমরুল কায়েস। ১২ বলে দুই রান করেন তিনি। উইকেটে গিয়ে বাউন্ডারিতে ভালো কিছুর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন এবারের আসরে দুর্দান্ত ব্যাটিং নৈপুণ্য প্রদর্শন করা মুশফিকুর রহিম। কিন্তু ভারতের ব্রেক-থ্রু ম্যান কেদারের বুদ্ধিদীপ্ত ডেলিভারিরর ফাঁদে পান দেন মুশি। ছক্কা মারতে গিয়ে ক্যচ হয়ে ফিরেন তিনি। নয় বলে পাঁচ রান করেন মুশফিকুর।

আগের ম্যাচে মুশফিকুরের সাথে ১৪৪ রানের মহামূল্যবান জুটি গড়া মোহাম্মদ মিথুন এবার ব্যর্থ হয়েছেন বাংলাদেশকে খাদের কিনারা থেকে তুলে আনতে। লিটনের সাথে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউটের ফাঁদে পড়েন মিথুন। চার বলে দুই রান করতে সক্ষম হন মিথুন।

মিথুনের ফিরে যাবার কিছুক্ষণ পরেই সেঞ্চুরির স্বাদ নেন লিটন। ৮৬তম বলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরির স্বাদ নেন তিনি। ১১টি চার ও দুইটি ছক্কায় নিজের শতরান করেন লিটন। দলের মিডল-অর্ডার যখন যাওয়ার আসার মিছিল শুরু হয়, ঐ সময় দলের রানের চাকা ঘোরাচ্ছিলেন লিটন।

তাই লিটনকে সঙ্গ দেয়ার জন্য ঐ সময় যোগ্য-সঙ্গীর প্রয়োজন ছিলো। এমন পরিস্থিতিতে অতীতে ব্যাট হাতে নিজের কারিশমা দেখিয়েছিলেন মাহমুুদুল্লাহ। তাই এবারও তার কাছে প্রত্যাশা ছিলো বাংলাদেশের। কিন্তু এবার ব্যর্থ হলেন তিনি। ছক্কা মারতে গিয়ে বাউন্ডারি লাইনের পাশে ক্যাচ দিয়ে নিজের ইনিংসের সমাপ্তি টানেন মাহমুদুুল্লাহ। ১৬ বলে চার রানের বেশি করতে পারেননি তিনি।

মাহমুদুল্লাহ যখন বিদায় নেন তখন দলের স্কোর পাঁচ উইকেটে ১৫১। এ-অবস্থাতেও বড় স্কোর গড়ার ভালো সুযোগ ছিলো টাইগারদের। তাই সৌম্য সরকারকে নিয়ে ভালো একটি জুটি গড়ার চেষ্টা করেন লিটন। মিরাজের পরে আগের চার জুটির সাথে আট, নয়, দুই ও ১২ রান যোগ করতে পেরেছেন লিটন। তবে সৌম্য-লিটন ধীরলয়ে ৩৭ রান যোগ করতে পেরেছেন। যখন দু’জনের বোঝাপড়াটা ভালো হচ্ছিলো ঠিক তখনই বিদায় নিতে হলো লিটনকে। থার্ড-আম্পায়ার বিতর্কিত স্ট্যাম্প আউট ঘোষণা করেন লিটনকে। ১২টি চার ও দুইটি ছক্কায় ১১৭ বলে ১২১ রান করেন এই ম্যাচসেরা ব্যাটসম্যান।

১৮৮ রানে লিটনের বিদায়ের পরে শেষদিকে সৌম্য দলকে সম্মানজনক সংগ্রহ এনে দেন। ২২২ রানে নবম ব্যাটসম্যান হিসেবে সৌম্য আউট হবার পরে ঐ স্কোরেই থেমে যায় বাংলাদেশের ইনিংস। তখনও ইনিংসে নয় বল বাকী ছিলো। একটি করে চার ও ছক্কায় ৪৫ বলে ৩৩ রান করেন সৌম্য। ভারতের কুলদীপ তিনটি ও কেদার দুইটি উইকেট নেন।

জয়ের জন্য ২২৩ রানের খেলতে নেমে দ্রুত রান তোলার চেষ্টা করেন ভারতের দুই ওপেনার রোহিত শর্মা ও শিখর ধাওয়ান। প্রথম চার ওভারে ২৪ রান যোগ করেন এই দুই ওপেনার। পঞ্চম ওভারের প্রথম তিন বল থেকে ১১ রান নিয়ে বাংলাদেশ বোলারদের উপর চাপ সৃষ্টি করার চেষ্টা করেন রোহিত ও ধাওয়ান। তবে ঐ ওভারের চতুর্থ ধাওয়ানের পথে বাঁধা হয়ে দাড়ান বাংলাদেশের বাঁ-হাতি স্পিনার নাজমুল ইসলাম। মিড-অফে সৌম্য সরকারকে ক্যাচ দেয়ার আগে তিনটি চারে ১৪ বলে ১৫ রান করেন ধাওয়ান।

তিন নম্বরে নামা আম্বাতি রাইদুকে ক্রিজে বেশিক্ষণ থাকতে দেননি বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি। সাত বলে দুই রান করে ফিরেন রাইদু। দলীয় ৪৫ রানে রাইদুকে হারানোর পর দিনেশ কার্তিককে নিয়ে বড় জুটি গড়ার চেষ্টা করেন আরেক ওপেনার রোহিত। দেখেশুনে খেলতে থাকেন রোহিত ও কার্তিক। ফলে ভারতের সংগ্রহ শতরানের দিকে এগিয়ে যায়। তবে দলীয় ৮৩ রানে রোহিতকে শিকার করে বাংলাদেশকে খেলায় ফেরার সুযোগ করে দেন রুবেল হোসেন। তিনটি করে চার ও ছক্কায় ৫৫ বলে ৪৮ রান করেন রোহিত।

অধিনায়ককে হারানোর পরে চতুর্থ উইকেটে জুটি গড়েন কার্তিক ও মহেন্দ্র সিং ধোনি। ম্যাচের লাগাম নিজেদের দিকে নেয়ার চেষ্টা করেন কার্তিক ও ধোনি। নিজেদের পরিকল্পনায় সফলও হন তাঁরা। উইকেটে সাথে মানিয়ে নিয়ে সহজেই রান করছিলেন কার্তিক ও ধোনি। তাই এই জুটিতে ভাঙ্গন ধরাতে অস্থির হয়ে উঠেন মাশরাফি। শেষ পর্যন্ত মাহমুদুল্লাহ’র অধিনায়ককে চিন্তা মুক্ত করেন। কার্তিককে লেগ বিফোর ফাঁদে ফেলেন মাহমুুদুল্লাহ। একটি করে চার ছক্কায় ৬১ বলে ৩৭ রান করেন কার্তিক।

কার্তিককে তুলে নিয়েই দমে যায়নি বাংলাদেশ। মিডল-অর্ডারে ভারতের প্রধান ভরসা ধোনিকেও প্যাভিলিয়নে ফেরত পাঠিয়ে দেন কাটারমাস্টার মুস্তাফিজুর রহমান। কাটার ডেলিভারিতে ধোনিকে বোকা বানান ফিজ। তিনটি বাউন্ডারিতে ৬৭ বলে ৩৬ রান করেন ধোনি। ফলে ১৬০ রানে পঞ্চম উইকেট হারায় ভারত।

ধোনিকে বিদায়ের কিছুক্ষণ পরে পায়ের আঘাতে পড়ে প্যাভিলিয়নে ফিরেন কেদার যাদব। ফলে লোয়ার-অর্ডারের দুই ব্যাটসম্যান রবীন্দ্র জাদেজা ও ভুবেনশ্বর কুমার লড়াই শুরু করেন। বাংলাদেশ বোলারদের সামনে নিজেদের সেরাটা দেয়া চেষ্টা করেন তাঁরা। সিঙ্গেলসের উপরই বেশি নির্ভর করেন জাদেজা ও ভুবেনশ্বর। ফলে ম্যাচ জয়ের পথেই হাটতে থাকে ভারত। 

শেষ চার ওভারে ১৮ রান দরকার পড়ে ভারতের।

৪৭তম ওভারে পাঁচ রান তুলে নিয়ে ভারতকে জয়ের পথেই রাখেন জাদেজা ও ভুবেনশ্বর। তবে ৪৮তম ওভারের দ্বিতীয় বলে জাদেজাকে তুলে নিয়ে বাংলাদেশকে গুরুত্বপূর্ণ ব্রেক-থ্র্রু এনে দেন  রুবেল। একটি চারে ৩৩ বলে ২৩ রান করেন জাদেজা।

এরপর ব্যাট হাতে নামেন ২০ বলে ১৯ রান নিয়ে আহত-অবসর নেয়া যাদব। তবে ৪৯তম ওভারের প্রথম বলে ভুবেনশ্বরকে তুলে নিয়ে বাংলাদেশকে দারুণভাবে খেলায় ফেরান মুস্তাফিজ। ঐ ওভারে মাত্র তিন রান দেন ফিজ। এতে শেষ ওভারে ছয় রান প্রয়োজন পড়ে ভারতের।

শেষ ওভারে বল হাতে আসেন মাহমুদুল্লাহ। প্রথম দু’বল থেকে দুই রান নেন যাদব ও কুলদীপ। তৃতীয় বলে দুই রান নেন কুলদীপ। চতুর্থ বলে কোন রান দেননি মাহমুদুল্লাহ। ফলে শেষ দুই বলে দুই রান দরকার হয় ভারতের। পঞ্চম বলে এক রান নেন কুলদীপ। এরপর শেষ বলে এক রান নিয়ে ভারতকে শিরোপার স্বাদ দিয়েছেন যাদব। 

একটি চার ও ছক্কায় ২৭ বলে অপরাজিত ২৩ রান করেন যাদব। পাঁচ রানে অপরাজিত থাকেন কুলদীপ। 

বাংলাদেশের পক্ষে দুইটি করে উইকেট নেন মুস্তাফিজ ও রুবেল এবং একটি করে উইকেট নেন নাজমুল-মাশরাফি-মাহমুদুল্লাহ। 

ফাইনালে ম্যাচ-সেরা হয়েছেন বাংলাদেশের লিটন। সিরিজ সেরা হন ভারতের ধাওয়ান।

Loading...