loader image for Bangladeshinfo

শিরোনাম

  • ভারতের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে টাইগ্রেসদের দল ঘোষণা

  • বার্সাকে কাঁদিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিতে পিএসজি

  • অ্যাটলেটিকোকে উড়িয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ চারে ডর্টমুন্ড

  • রাষ্ট্রপতি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পাঠ্যক্রম যুগোপযোগী কর তাগিদ দিলেন

  • ক্যানাডায় আর্টসেলের আটটি কনসার্ট

সংগীতশিল্পী আইয়ুব বাচ্চু আর নেই


সংগীতশিল্পী আইয়ুব বাচ্চু আর নেই

বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যান্ড লাভ রানস ব্লাইন্ড (এলআরবি)’র দলনেতা, লিড গিটার-বাদক ও প্রধান গায়ক আইয়ুব বাচ্চু আর নেই। বৃহস্পতিবার (১৮ অক্টোবর) সকালে ঢাকায় নিজের বাসায় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে গেলে তাঁকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

বাচ্চু দীর্ঘদিন যাবত হৃদরোগে ভুগছিলেন। তাঁর বয়স হয়েছিলো ৫৬ বছর।

আইয়ুব বাচ্চুর মৃত্যুতে দেশের সঙ্গীতাঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। রাষ্ট্রপতি মাে. আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আইয়ুব বাচ্চুর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।

আইয়ুব বাচ্চুর প্রতি সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য শুক্রবার (১৯ অক্টোবর) সকাল ১০টায় তাঁর মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাখা হবে। এরপর জুম্মার নামাজ শেষে জাতীয় ঈদগাহে মরহুমের প্রথম জানাজা হবে। এরপরের দিন শনিবার চট্টগ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে এই শিল্পীর দাফন হবে।

সত্তরের দশক থেকে দলীয় সংগীতের চর্চা শুরু করেন আইয়ুব বাচ্চু। এরপর থেকে এই গায়ক, গিটার-বাদক, সুরকার ও সংগীত পরিচালক সুর ও সঙ্গীতের মূর্ছনায় বাংলাদেশের শ্রোতাদের মাতিয়ে রাখেন প্রায় চারদশক।

১৯৬২ সালের ১৬ অগাস্ট চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন আইয়ুব বাচ্চু। তাঁর ডাক নাম রবীন। ভক্তদের কাছে তিনি “এবি” নামে পরিচিত ছিলেন।

দীর্ঘ চারদশকে অসংখ্য শ্রোতাপ্রিয় গান উপহার দিয়েছেন “এবি”।  ১৯৭৮ সালে ‘ফিলিংস’ ব্যান্ডের মাধ্যমে সংগীত-জগতে প্রবেশ করেন বাচ্চু। তখন তিনি ছিলেন মূলত গিটার-বাদক। তাঁর গাওয়া প্রথম গান ‘হারানো বিকেলের গল্প’। এরপর ১৯৮০ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত তিনি ‘সোলস’ ব্যান্ডের সাথে যুক্ত ছিলেন। 

১৯৮৬ সালে প্রকাশিত ‘রক্তগোলাপ’ আইয়ুব বাচ্চুর প্রথম একক অ্যালবাম। এই অ্যালবামটি তেমন একটা সাফল্য পায়নি। গায়ক হিসেবে আইয়ুব বাচ্চু সফলতা পান তাঁর দ্বিতীয় একক অ্যালবাম ‘ময়না’ (১৯৮৭)’র মাধ্যমে।

১৯৯১ সালে বাচ্চু এলআরবি ব্যান্ড গঠন করেন। এই ব্যান্ডের সাথে তাঁর প্রথম অ্যালবাম ‘এলআরবি’ প্রকাশিত হয় ১৯৯২ সালে। এটি বাংলাদেশের প্রথম যুগ্ম অ্যালবাম। এই অ্যালবামের ‘ঢাকার সন্ধ্যা’, ‘মাধবী’, ‘শেষ চিঠি’, ‘ঘুম ভাঙ্গা শহরে’, ‘হকার’, ‘ফেরারী মন’ গানগুলো জনপ্রিয়তা লাভ করে। 

১৯৯৩ ও ১৯৯৪ সালে এলআরবি’র দ্বিতীয় ও তৃতীয় ব্যান্ড অ্যালবাম ‘সুখ’ এবং ‘তবুও’ বের হয়। ‘সুখ’ অ্যালবামের ‘সুখ’, ‘চলো বদলে যাই’, ‘রূপালী গিটার’, ‘গতকাল রাতে’ গানগুলো সে-সময় দারুণ জনপ্রিয় হয়। তাঁর গাওয়া ‘চলো বদলে যাই’ বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় একটি গান। গানটির কথা ও সুর করেছেন বাচ্চু নিজেই। 

‘তবুও’ এলআরবি’র একটি পরীক্ষামূলক অ্যালবাম - যেটি ছিলো অল্টারনেটিভ রক ধাঁচের।

১৯৯৫ সালে বের হয় তাঁর তৃতীয় একক অ্যালবাম ‘কষ্ট’। সর্বকালের সেরা একক অ্যালবামের একটি বলে অভিহিত করা হয় এটিকে। এই অ্যালবামের প্রায় সবগুলো গানই জনপ্রিয়তা পায়। বিশেষ করে ‘কষ্ট কাকে বলে’, ‘কষ্ট পেতে ভালোবাসি’, ‘অবাক হৃদয়’, ও ‘আমিও মানুষ’, ‘কি যে কষ্ট আমার’ গানগুলোর শ্রোতাপ্রিয়তা আকাশচুম্বী।

সে-বছরই এলআরবি’র চতুর্থ অ্যালবাম ‘ঘুমন্ত শহরে’ প্রকাশিত হয়। এই অ্যালবামের শিরোনাম গানটিসহ বেশ কয়েকটি গান জনপ্রিয় হয়। ১৯৯৬ সালে বের হয় এলআরবি’র ‘স্বপ্ন’ অ্যালবামটি। এই অ্যালবামের ‘চাঁদ মামা’, ‘কেঁদে কেঁদে যাবো’ গানগুলো পরিচিতি পায়।

 ১৯৯৮ সালে এলআরবি’র আরেকটি যুগ্ম অ্যালবাম ‘আমাদের বিস্ময়’ প্রকাশিত হয়। এই অ্যালবামের ‘সাড়ে তিন হাত মাটি’ গানটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এলআরবি’র অন্য স্টুডিও অ্যালবামগুলো হলো ‘মন চাইলে মন পাবে’ (২০০০), ‘অচেনা জীবন’ (২০০৩) ‘মনে আছে নাকি নাই’ (২০০৫), ‘স্পর্শ’ (২০০৯), ‘যুদ্ধ’ (২০১২)। 

ব্যান্ডটির একমাত্র লাইভ অ্যালবাম হলো ‘ফেরারী মন’ (২০০৬)।

২০০৯ সালে বাচ্চুর আরেকটি একক অ্যালবাম ‘বলিনি কখনো’ প্রকাশিত হয়। তাঁর অন্য একক অ্যালবামগুলো হলো - ‘সময়’ (১৯৯৮), ‘একা’ (১৯৯৯), ‘প্রেম তুমি কি’ (২০০২), ‘দুটি মন’ (২০০২), ‘কাফেলা’ (২০০২), ‘রিমঝিম বৃষ্টি’ (২০০৮), ‘বলিনি কখনো’ (২০০৯), ‘জীবনের গল্প’ (২০১৫)।

আইয়ুব বাচ্চু ছিলেন একাধারে গায়ক, গিটার-বাদক, গীতিকার, সুরকার ও সংগীত পরিচালক। গিটার-জাদুকর হিসেবে আলাদা সুনাম ছিলো তাঁর। জিমি হেন্ড্রিক্স ও জো স্যাট্রিয়ানির বাজনায় তিনি অণুপ্রাণিত।

বেশ কিছু বাংলা ছবিতেও প্লেব্যাক করেছেন বাচ্চু। চলচ্চিত্রে তাঁর গাওয়া প্রথম গান হলো ‘লুটতরাজ’ ছবির ‘অনন্ত প্রেম তুমি দাও আমাকে’। এছাড়া ‘আম্মাজান’ ছবির শিরোনাম গানটিও বেশ জনপ্রিয় হয়। ‘সাগরিকা’ তাঁর আরেকটি জনপ্রিয় প্লেব্যাক। ‘ব্যাচেলর‘ ছবির ‘আমি তো প্রেমে পড়িনি’ গানটি এখনো তরুণদের মুখে মুখে ফেরে।

আইয়ুব বাচ্চুর নিজের একটি মিউজিক স্টুডিও আছে। ঢাকার মগবাজারে অবস্থিত স্টুডিওটির নাম এবি কিচেন।

১৯৯১ সালে তিনি ফেরদৌস আইয়ুব চন্দনার সঙ্গে বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁদের ঘরে এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে - দু’জনেই বর্তমানে কানাডায় পড়াশোনা করছেন। 

Loading...