loader image for Bangladeshinfo

শিরোনাম

  • জাভি এই মৌসুম শেষেই বার্সা ছাড়বেন না

  • নতুন করে আরও ৭২ ঘণ্টার তাপ প্রবাহের সতর্কতা জারি

  • ইতালিয়ান কাপের ফাইনালে ইউভেন্টাস

  • আর্সেনালের কাছে পাঁচ গোলে উড়িয়ে গেলো চেল্সি

  • হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর

আমজাদ হোসেন আর নেই


আমজাদ হোসেন আর নেই

জীবন ও মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে চলছিল তুমুল লড়াই। শেষ পর্যন্ত সে-লড়াইয়ে হেরে গেলেন বরেণ্য কাহিনিকার, চিত্রনাট্য রচয়িতা, চলচ্চিত্র ও নাট্য পরিচালক এবং অভিনেতা আমজাদ হোসেন। জাগতিক সব বন্ধন ছিন্ন করে চলে গেলেন তিনি। ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার (১৪ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ সময় দুপুরে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই কিংবদন্তি (ইন্নালিলাহি...রাজিউন)। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর। তিনি স্ত্রী ও দুই ছেলে রেখে গেছেন। খবর স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের।

মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হওয়ায় গত ১৮ই নভেম্বর রাজধানীর একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় আমজাদ হোসেনকে। হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি।

এই নির্মাতার অসুস্থতার খবর শুনে হাসপাতালে ভর্তির পরে তাঁর চিকিৎসার দায়িত্ব নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর উন্নত চিকিৎসার জন্য ২৭শে নভেম্বর মধ্যরাতে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে আমজাদ হোসেনকে ব্যাংককে নিয়ে যাওয়া হয়। সে-সময় তাঁর সঙ্গে যান তার দুই ছেলে সাজ্জাদ হোসেন দোদুল ও সোহেল আরমান। সেখানে বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। 

দেশীয় চলচ্চিত্রের এই বরেণ্য ব্যক্তির মৃত্যুতে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি, প্রযোজক পরিবেশক সমিতি, ডিরেক্টর গিল্ডস, ফিল্ম ক্লাব, চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি, চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতি, বাচসাসসহ অনেকেই শোক প্রকাশ করেছেন। 

আমজাদ হোসেনের জন্ম ১৯৪২ সালের ১৪ই অগাস্ট, জামালপুরে। শৈশব থেকেই তাঁর সাহিত্য চর্চা শুরু। পঞ্চাশের দশকে ঢাকায় এসে সাহিত্য ও নাট্যচর্চার সঙ্গে জড়িত হন। প্রথমেই তিনি অভিনয়ে নিজেকে তুলে ধরেন মহিউদ্দিন পরিচালিত ‘তোমার আমার’ চলচ্চিত্রে। এর পরপরই তিনি অভিনয় করেন মুস্তাফিজ পরিচালিত ‘হারানো দিন’ চলচ্চিত্রে। তবে এরপরের ইতিহাসটা শুধুই সাফল্যের।

পরিচালক সালাহ উদ্দিন আমজাদ হোসেনের লেখা নাটক ‘ধারাপাত’ নিয়ে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। এতে আমজাদ হোসেন নায়ক হিসেবে অভিনয় করেন। এরপর তিনি বরেণ্য নির্মাতা জহির রায়হানের ইউনিটে কাজ শুরু করেন। এভাবেই দীর্ঘদিন কাজ করতে করতে ১৯৬৭ সালে তিনি নিজেই চলচ্চিত্র নির্মাণ শুরু করেন। তাঁর প্রথম ছবি ‘জুলেখা’। এরপর তিনি নূরুল হক বাচ্চুর সঙ্গে যৌথভাবে নির্মাণ করেন ‘দুই ভাই’।

আমজাদ হোসেন পরিচালিত দর্শকপ্রিয় চলচ্চিত্রগুলো হলো: ‘বাল্যবন্ধু’, ‘পিতাপুত্র’, ‘এই নিয়ে পৃথিবী’, ‘বাংলার মুখ’, ‘নয়নমণি’, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘সুন্দরী’, ‘কসাই’, ‘জন্ম থেকে জ্বলছি’, ‘দুই পয়সার আলতা’, ‘সখিনার যুদ্ধ’, ‘ভাত দে’, ‘হীরামতি’, ‘প্রাণের মানুষ’, ‘সুন্দরী বধূ’, ‘কাল সকালে’, ‘গোলাপী এখন ঢাকায়’, ‘গোলাপী এখন বিলেতে’ প্রভৃতি। 

তাঁর পরিচালনায় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত ছবিগুলো হলো: ‘আগুন নিয়ে খেলা’ (১৯৬৭), ‘দুই ভাই’ (১৯৬৮), ‘নয়নমণি’ (১৯৭৬), ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ (১৯৭৮), ‘সুন্দরী’ (১৯৭৯), ‘কসাই’ (১৯৮০), ‘জন্ম থেকে জ্বলছি’ (১৯৮২), ‘দুই পয়সার আলতা’ (১৯৮২), ‘ভাত দে’ (১৯৮৪), ‘হীরামতি’ (১৯৮৮), ‘গোলাপী এখন ঢাকায়’ (১৯৯৪), ‘কাল সকালে’ (২০০৫) ও ‘গোলাপী এখন বিলেতে’ (২০১০)। 

শিল্পকলায় অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার আমজাদ হোসেন দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান একুশে পদক (১৯৯৩) ও স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করে। 

আমজাদ হোসেন বেশ কিছু টিভি নাটকও নির্মাণ করেন। এর মধ্যে ‘জব্বার আলী’ সিরিজের নাটকগুলো আকাশছোঁয়া দর্শকপ্রিয়তা পায়। এসব নাটকে জব্বার আলী চরিত্রে অভিনয় করে আমজাদ হোসেন নিজেও বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।

Loading...