loader image for Bangladeshinfo

শিরোনাম

  • মিলানকে হারিয়ে পাঁচ ম্যাচ আগেই ইন্টারের ২০তম শিরোপা জয়

  • লেভাকুজেনের ৪৫ ম্যাচে অপরাজিত থাকার রেকর্ড

  • ফুলহ্যামকে হারিয়ে শিরোপা লড়াইয়ে লিভারপুল

  • তাইওয়ানে আবারও ভূমিকম্পের আঘাত

  • প্রধানমন্ত্রীর থাইল্যান্ড সফরকালে পাঁচটি দলিল স্বাক্ষর ও বহুমুখী সহযোগিতার সম্ভাবনা

নতুন প্রজন্মকে দেশের সঠিক ইতিহাস জানাতে হবে: প্রধানমন্ত্রী


নতুন প্রজন্মকে দেশের সঠিক ইতিহাস জানাতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন প্রজন্মকে দেশের সঠিক ইতিহাস জানানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেছেন, কতোটা ত্যাগ আর সংগ্রামের পথ পাড়ি দিলে একটি জাতি তাঁর কাঙ্খিত গন্তব্যে পৌঁছতে পারে তা তাঁদের জানাতে হবে। তিনি বলেন, “আমাদের নতুন প্রজন্মকে এসব ইতিহাস জানাতে হবে। কতো ত্যাগ, তিতিক্ষা, রক্তপাতের মধ্য দিয়ে একটি জাতি তার কাঙিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারে - বাঙালির স্বাধীনতার ইতিহাস এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুক্রবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর বাংলা একাডেমীতে মাসব্যাপী অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৯ উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন। খবর স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের।

শেখ হাসিনা বলেন, “এ-বছর ১৭ নভেম্বর একুশের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিলাভের বিশ বছর পূর্তি হবে। ঊনসত্তরের উত্তাল গণঅভ্যুত্থান এবং বাংলার সংগ্রামী জনতার দ্বারা শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে অভিষিক্ত করারও ৫০ বছর পূর্ণ হচ্ছে এ-বছর। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সঙ্গে এসব ঘটনার ঘনিষ্ঠ যোগসূত্র রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, ৭০-এর নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়লাভ - এসবের মাধ্যমেই বাঙালির স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা বাস্তবরূপ লাভ করেছে।”

মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী জাতির পিতার হাতে গড়া সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকায় জাতি সাড়ম্বরে আগামী ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, “স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী ও জাতির পিতার জন্ম শতবার্ষিকী পালনের মধ্যদিয়ে আমাদের দেশের ইতিহাসকে আমরা আরও স্বচ্ছভাবে দেশের মানুষের কাছে এবং প্রজন্মের পর প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে পারবো বলে আমি বিশ্বাস করি।”

শুধু মহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে নয়, ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস নিয়েও অনেকে নানা বিভ্রান্তি ছড়িয়েছেন উল্লেখ করে জাতির পিতার কন্যা বলেন, “বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ ও সম্প্রতি প্রকাশিত ‘সিক্রেট ডক্যুমেন্টস্ অফ ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অফ দি নেশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ বই দুটিতে এসব বিভ্রান্তির অবসান হয়েছে বলে আমি মনে করি।”

তিনি বলেন, মোট ১৪টি খন্ডে প্রকাশিত হচ্ছে ‘সিক্রেট ডক্যুমেন্টস্ অফ ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অফ দি নেশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’। এসব দলিলে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীনতা সংগ্রামের অনেক অজানা তথ্য জানা যাবে।

প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে ‘সিক্রেট ডক্যুমেন্টস্ অফ ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অফ দি নেশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ শীর্ষক বইয়ের দ্বিতীয় খন্ড প্রকাশ করেন। যেখানে ১৯৫১ থেকে ‘৫২ ভাষা আন্দোলনকালীন বঙ্গবন্ধুর কারাজীবনের ওপর পাকিস্তানি গোয়েন্দা-প্রতিবেদন লিপিবদ্ধ হয়েছে।

বাংলা একাডেমির চেয়ারম্যান জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে সংস্কৃতি-বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, ভারতের বিশিষ্ট বাঙালি কবি শঙ্খ ঘোষ এবং মিশরীয় বিশিষ্ট লেখক, সাহিত্যিক ও 

‘দি ইজিপ্সিয়ান গেজেট’ পত্রিকার সম্পাদক মহসিন আল আরিশি অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. আবু হেনা মোস্তফা কামাল এবং জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমেদও বক্তৃতা করেন। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবিবুল্লাহ সিরাজী স্বাগত বক্তব্য দেন।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ চারজনকে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০১৮তে ভূষিত করেন। পুরস্কার হিসেবে দুই লাখ টাকার চেক, ট্রফি ও সনদপত্র বিজয়ীদের হাতে তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী। বিজয়ীরা হলেন - কাজী রোজী (কবিতা), মোহিত কামাল (কথা সাহিত্য), সৈয়দ মো.শাহেদ (প্রবন্ধ ও গবেষণা) ও আফসান চৌধুরী (মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষণা)।

অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাবৃন্দ, সংসদ সদসবৃন্দ, সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের জেষ্ঠ্য নেতৃবৃন্দ, সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, কবি, সাহিত্যিক, লেখক, বুদ্ধিজীবীসহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধিবৃন্দ, বিভিন্ন পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়েরর উপাচার্যবৃন্দ, বিদেশি কূটনীতিক এবং আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

‘বইমেলা শুধু বই কেনা-বেচার জন্য নয়, বইমেলা বাঙালির প্রাণের মেলা’ আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বাঙালির ইতিহাস ত্যাগের ইতিহাস। আর সেটিই আমাদের অর্জন।’ তিনি বলেন, “বাইমেলায় গিয়ে বই কিনে নতুন বইয়ের ওপর হাত দেয়ার আনন্দই আলাদা। তবে বর্তমান যুগ ডিজিটাল যুগ। তাই অন্যান্য লাইব্রেরির পাশাপাশি ডিজিটাল লাইব্রেবির পয়োজন রয়েছে। এর মাধ্যমে সহজে বই মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায়।”

শেখ হাসিনা বলেন, “যখন প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলাম না, তখন নিয়মিত বইমেলায় এসেছি। এখন মেলায় আসলে দর্শনার্থীদের সমস্যা হয়। নিরাপত্তার কারণে চলাচলে বিঘ্ন হয়। এ-কারণে আসতে পারি না। তবে মনটা বই মেলাতেই পড়ে থাকে।”

তিনি বলেন, ১৯৪৮ সালে ভাষার জন্য আন্দোলন শুরু হয়। এই আন্দোলনের পথ ধরে আমাদের স্বাধিকার আদায়। আর একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা করার উদ্যোগ ’৯৬ পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই নেয়া হয়।

তিনি বলেন, কানাডা প্রবাসী প্রয়াত রফিকুল ইসলাম, আবদুস সালামের মতো প্রবাসী বাঙালিদের আন্তরিক উদ্যোগে এবং তৎকালীন আমাদের সরকারের প্রচেষ্টায় ১৯৯৯ সালের ১৭ই নভেম্বর ইউনেস্কো কর্তৃক একুশে ফেব্রুয়ারি ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি পায়।

এ-সময় তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের উদ্যোগে পৃথিবীর সকল ভাষাগোষ্ঠীর মাতৃভাষা সংরক্ষণ, বিকাশ ও চর্চার লক্ষে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউট প্রতিষ্ঠার কথাও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, বাংলা ভাষার প্রতি মর্যাদা দেখিয়ে বঙ্গবন্ধু জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ দিয়েছিলেন এবং প্রধানমন্ত্রী হবার পর প্রতিবছর তিনি নিজেও জাতিসংঘে বাংলাতেই ভাষণ দেন।

প্রধানমন্ত্রী বিকেল তিনটায় অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছান। এরপর জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের কার্যক্রম শুরু হয়। সূচনা সঙ্গীত ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ পরিবেশন করা হয়। পরে ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এই বার নিয়ে রেকর্ড ১৬ বারের মতো বইমেলার উদ্বোধন করলেন তিনি।

মিসরীয় সাংবাদিক-গবেষক মহসিন আল আরিশির আরবিতে লেখা ‘হাসিনা হাকাইক আসাতি’ বইটির একটি কপি এ-অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেয়া হয়। নেতৃত্বে এসে শেখ হাসিনা কীভাবে মানুষের দিনবদলের রূপকার হয়ে উঠলেন - সেই বিবরণ এই বইয়ে তুলে ধরেছেন আরিশি। বইটির বাংলা অনুবাদ প্রকাশ করেছে বাংলা একাডেমি, যার নাম - ‘শেখ হাসিনা: যে রূপকথা শুধু রূপকথা নয়’।

পরে বইমেলার স্টলগুলো ঘুরে দেখেন প্রধানমন্ত্রী।

এবারের বইমেলায় ৫২৩টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে। এছাড়া ১৮০টি লিট্ল ম্যাগাজিনকে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এবার বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ১০৪টি প্রতিষ্ঠানের ১৫০টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৩৯৫টি প্রতিষ্ঠানের ৬২০টি ইউনিটসহ মোট ৪৯৯টি প্রতিষ্ঠানকে ৭৭০টি ইউনিট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

এছাড়া বাংলা একাডেমিসহ ২৪টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে ২৪টি প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। লিটল ম্যাগাজিন চত্বরে ১৮০টি লিট্ল ম্যাগকে ১৫৫টি স্টল দেয়া হয়েছে। ২৫টি স্টলে দুটি করে লিট্ল ম্যাগাজিনকে স্থান দেয়া হয়েছে। স্টল পেয়েছে অন্য ১৩০টি প্রতিষ্ঠান।

অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৯ প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। ছুটির দিনে বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত এবং ২১ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত চলবে বইমেলা।

Loading...