loader image for Bangladeshinfo

শিরোনাম

  • মিলানকে হারিয়ে পাঁচ ম্যাচ আগেই ইন্টারের ২০তম শিরোপা জয়

  • লেভাকুজেনের ৪৫ ম্যাচে অপরাজিত থাকার রেকর্ড

  • ফুলহ্যামকে হারিয়ে শিরোপা লড়াইয়ে লিভারপুল

  • তাইওয়ানে আবারও ভূমিকম্পের আঘাত

  • প্রধানমন্ত্রীর থাইল্যান্ড সফরকালে পাঁচটি দলিল স্বাক্ষর ও বহুমুখী সহযোগিতার সম্ভাবনা

ঢাকাকে ১ রানে হারিয়েছে কুমিল্লা


ঢাকাকে ১ রানে হারিয়েছে কুমিল্লা

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে ঢাকা ডায়নামাইটসের বিপক্ষে ম্যাচের শেষ বলে গিয়ে এক রানের জয় পেয়েছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। দুই দলের প্রথম দেখায় ১৫৩ রান করেও সাত রানের ব্যবধানে জিতেছিল কুমিল্লা। সেই ম্যাচেরই প্রায় পুনরাবৃত্তি ঘটলো দ্বিতীয় ম্যাচেও। তবে এবার মাত্র ১২৭ রানের পুঁজি নিয়েও শক্তিশালী ঢাকাকে এক রানে হারিয়েছে কুমিল্লা।

শুক্রবার (১ ফেব্রুয়ারি) শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ম্যাচে শেষ ওভারে ঢাকার জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিলো ১৩ রান। আন্দ্রে রাসেল যখন স্ট্রাইক পান তখন বাকি ছিল চার বলে ১২ রান। এমতাবস্থায় দুই বল ডট করেন সাঈফউদ্দীন, পঞ্চম বলে ছক্কা মারেন রাসেল। তবে শেষ বলে নিখুঁত ইয়র্কারকে রাসেলকে ভূপাতিত করে দলকে এক রানের জয় পাইয়ে দেন সাঈফউদ্দীন।

শ্বাসরুদ্ধকর এই জয়ের পর ১১ ম্যাচ শেষে আট জয় নিয়ে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে এখন কুমিল্লা। অন্যদিকে ১১ ম্যাচে পাঁচ জয় নিয়ে এখনো ঝুলে রইল ঢাকা ডায়নামাইটসের প্লে-অফের টিকিট। একইসঙ্গে বেঁচে রইলো রাজশাহী কিংসের শেষ চারে যাওয়ার আশাও। নিজেদের শেষ ম্যাচে খুলনা টাইটান্সের বিপক্ষে জয় পেলেই শুধু প্লে-অফে যেতে পারবে ঢাকা। অন্যথায় এগিয়ে যাবে রাজশাহী।

১২৭ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতেই পিছিয়ে যায় ঢাকা। লঙ্কান ওপেনার উপুল থারাঙ্গা সাজঘরে ফিরে যান রানের খাতা খোলার আগেই। মাত্র এক রান করে আউট হন টুর্নামেন্টে দারুণ ছন্দে থাকা রনি তালুকদার। সুনিল নারিনকে নিচে রেখে ইনিংস উদ্বোধনের সুযোগ দেয়া হয় মিজানুর রহমানকে। দুইটি চারের মারে শুরুটা ভালো করেছিলেন তিনি। কিন্তু নিজের ইনিংস বড় করা হয়নি তাঁর। ১৬ বলে ১৬ রান করে আউট হন মিজানুর।

মাত্র ১৭ রানেই তিন উইকেট হারিয়ে দল যখন বিপদে, তখন চাপ আরও বাড়ান অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। অফস্পিনার মেহেদি হাসানকে ছক্কা হাঁকানোর পরের বলেই আবারও বড় শটের খোঁজে বোল্ড হয়ে ফেরেন তিনি। ২৯ রানে চার উইকেট চারিয়ে অকূল পাথারে তখন ঢাকা।

সেখান থেকে দলের হাল ধরেন ওপেনিং থেকে পাঁচ নম্বরে নামা সুনিল নারিন ও কাইরন পোলার্ড। দুজন মিলে ৩৪ বলে গড়েন ৪২ রানের জুটি। দ্বাদশ ওভারে ওয়াহাব রিয়াজের দুর্দান্ত ক্যাচে পরিণত হয়ে সাজঘরে ফেরেন নারিন (২৪ বলে ২২)। তবে সেই ডেলিভারি করার সময় শহিদ আফ্রিদির পেছনের পা বক্সের দাগ ছুঁয়ে যাওয়ার কারণে ঢাকার ডাগআউট থেকে নো বলের জন্য বেশ তোড়জোড় দেখা যায়।

নারিনের বিদায়ের পর ষষ্ঠ উইকেটে জুটি বাঁধেন কাইরন পোলার্ড ও আন্দ্রে রাসেল। কিন্তু কুমিল্লার বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের বিপক্ষে হাত খুলে মারার কাজটা করতে পারছিলেন এই দুই মারকুটে অলরাউন্ডার। এর মধ্যে আবার শহিদ আফ্রিদির করা ১৬তম ওভারটি পুরোটাই মেইডেন খেলে বসেন রাসেল।

১৭তম ওভার করতে এসে আফ্রিদির দেখানো পথটাই অনুসরণ করেন মোহাম্মদ সাঈফউদ্দীন। স্ট্রাইকে থাকা পোলার্ডকে মারার কোনো সুযোগই দেননি তিনি। রানের জন্য হাঁসফাঁস করতে থাকা পোলার্ড ওভারের চতুর্থ বলে ক্যাচ দিয়ে বসেন তামিম ইকবালের হাতে। আউট হওয়ার আগে দুইটি করে চার-ছক্কার মারে ৩৩ বলে ৩৪ রান করেন পোলার্ড।

ঢাকার জয়ের সমীকরণ তখন ২২ বলে ৩৮ রান, হাতে ছয় উইকেট। এমতাবস্থায় উইকেটে এসে প্রথম বলেই ব্যাট চালান নুরুল হাসান সোহান। কিন্তু দুর্দান্ত ক্ষিপ্রতায় পয়েন্ট অঞ্চল থেকে ক্যাচ নিয়ে তাকে সাজঘরে ফেরান এভিন লুইস। হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগে সাঈফউদ্দীনের। শেষ বলে লেগবাই থেকে এক রান নিয়ে হ্যাটট্রিক ঠেকান নতুন ব্যাটসম্যান শুভাগত হোম। কিন্তু ডাবল উইকেট মেইডেন নিয়ে কুমিল্লার দিকে ম্যাচ ঘুরিয়ে দেন সাঈফউদ্দীন।

শেষ তিন ওভার থেকে ৩৭ রানের প্রয়োজন হয় ঢাকার। দলের আশার প্রদীপ হয়ে তখনো উইকেটে ছিলেন রাসেল - যিনি ১৮তম ওভারের দ্বিতীয় বলেই স্ট্রাইক পেয়ে হাঁকান বিশাল এক ছক্কা। এর পরের বলেই মারেন আরেকটি ছক্কা। সেই ওভার থেকে ১৭ রান নিয়ে সমীকরণটা ১২ বলে ২০ রানে নামিয়ে নেয় ঢাকা।

তবে এর চেয়েও বড় ক্ষতিটা হয় ওভারের পঞ্চম বলে। শুভাগত হোমের জোরালো শটের বিপক্ষে কভারে দাঁড়িয়ে সাঈফউদ্দীন ডাইভ দিলে ব্যথা পান আঙুলে, মাঠ ছাড়তে বাধ্য হন তিনি। তখনো তাঁর স্পেলের এক ওভার বাকি থাকায় ডেথ ওভারের বিষয়ে চিন্তার ভাজ দেখা দেয় কুমিল্লা অধিনায়ক ইমরুল কায়েসের কপালে।

সাঈফউদ্দীন মাঠ ছেড়ে যাওয়ায় বাধ্য হয়েই ১৯তম ওভারে ডাকা হয় ওয়াহাব রিয়াজকে। প্রথম বল ডট দিয়ে দ্বিতীয় বলেই রাসেলকে থার্ডম্যানে ক্যাচে পরিণত করেন ওয়াহাব। কিন্তু বল ছাড়ার সময় তাঁর সামনের পা পপিং ক্রিজ অতিক্রম করায় নো বলের কল্যাণে বেঁচে যান রাসেল। ফ্রি হিট পায় ঢাকা।

তবে উইকেট ক্রসওভার করায় ফ্রি হিটের বল স্ট্রাইকে যান শুভাগত। ফ্রি হিটের বলে দুই রান নিলেও ওভারে তৃতীয় ও চতুর্থ বল ডট দিয়ে বসেন শুভাগত। পঞ্চম বলে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে থার্ডম্যান ফিল্ডারের ধরা পড়েন তিনি। শেষ বলে বাউন্ডারি মেরে শেষ ওভারের সমীকরণটা ছয় বলে ১৩ রানে নামান রাসেল।

শেষ ওভারের প্রথম বলে স্ট্রাইকে থাকেন রুবেল হোসেন। এদিকে হাতে ব্যান্ডেজ লাগিয়ে মাঠে ফিরে আসেন সাঈফউদ্দীন। আগের তিন ওভারে এক মেইডেনসহ মাত্র ১১ রান খরচায় তিন উইকেট নেয়ায় তাঁর হাতে বল তুলে দেয়ার আগে ভাবতে হয়নি ইমরুলকে।

প্রথম বলেই রুবেলকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলে অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান দেন সাঈফউদ্দীন। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে উইকেটে আসেন শাহাদাত হোসেন রাজীব। মুখোমুখি প্রথম বলেই সিঙ্গেল নিয়ে রাসেলকে স্ট্রাইক ফিরিয়ে দেন রাজীব। শেষ চার বল থেকে বাকি থাকে ১২ রান।

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের মারকুটে অলরাউন্ডার রাসেলের জন্য তখন মাত্র দুইটি ছক্কার ঝলক বাকী। ওদিকে বল হাতে আত্মবিশ্বাসে টগবগ করছেন সাঈফউদ্দীন। প্রাথমিক জয়টা হয় সাঈফেরই। ওভারের তৃতীয় ও চতুর্থ বলে রান নিতে ব্যর্থ হন রাসেল। কিন্তু পঞ্চম বলেই ছক্কা মেরে সমীকরণ এক বলে ছয় রানে নামান রাসেল।

শেষ বল করার আগে ছোটখাটো মিটিং করে নেন কুমিল্লার খেলোয়াড়রা। ডাগআউটের পাশ থেকে তখন কোচ সালাউদ্দীনও দিতে থাকেন নির্দেশনা। নিজের ফিল্ডারদের ঠিকঠাক জায়গায় রেখে বল করতে দৌড় শুরু করেন সাঈফউদ্দীন। দুর্দান্ত এক ইয়র্কারে ভূপাতিত করে দেন তিনি। ব্যাটের কানায় লেগে সেই বলটি চার হয়ে গেলেও এক রানের জয় পায় কুমিল্লা।

অসাধারণ বোলিংসহ চার ওভারে মাত্র ২২ রান খরচায় চারটি উইকেট নিয়ে কুমিল্লার শ্বাসরুদ্ধকর এই জয়ের নায়ক নিঃসন্দেহে মোহাম্মদ সাঈফউদ্দীন। ফলে ম্যাচ-সেরা হয়েছেন তিনিই।

এর আগে টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে ইনিংসের প্রথম বলেই আলতো ছোঁয়ায় ফাইন লেগ দিয়ে চার, পরের বলে নিয়ন্ত্রিত ফ্লিকে ডিপ স্কয়ার লেগ দিয়ে সীমানা পার করেন তামিম ইকবাল। আন্দ্রে রাসেল তৃতীয় ওভারে বোলিং করতে আসলে দারুণ এক পুল শটে স্কয়ার লেগ দিয়ে ছক্কা হাঁকান তামিম।

সুনিল নারিন ও শুভাগত হোমকে জোড়া বাউন্ডারির পর রুবেল হোসেনকে উড়িয়ে পাঠান ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগ বাউন্ডারিতে। পরে লংঅফ বাউন্ডারিতে দুর্দান্ত এক ক্যাচ ধরে তামিমের বিদায় ঘণ্টা বাজিয়ে দেন এই রুবেলই।

মাত্র ১৯ বল থেকে চারটি চারের সঙ্গে দুই ছক্কার মারে ৩৮ রানে পৌঁছে যাওয়া তামিম খেলছিলেন আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে। শুভাগতর করা অষ্টম ওভারের প্রথম বলে লংঅন বাউন্ডারিতে ছক্কা হাঁকানোর চেষ্টা করেন তামিম। কিন্তু পুরোপুরি ব্যাটে-বলে করতে পারেননি।

লংঅন বাউন্ডারি থেকে কয়েক গজ দৌড়ে এসে দুই হাতে সামনের দিকে ঝাপিয়ে পড়ে তালুবন্দী করেন রুবেল। প্রথম দেখায় মনে হচ্ছিলো যেন মাটি খুঁড়ে বলটিকে নিজের হাতের মুঠোয় নিয়েছেন রুবেল। আম্পায়াররা প্রাথমিকভাবে দ্বিধান্বিত হলেও রুবেল জানান সরাসরিই ধরেছেন তিনি। থেমে যায় তামিমের ২০ বলে ৩৮ রানের ঝড়ো ইনিংসটি।

এক প্রান্তে তামিম ঝড় তুললেও অন্যপ্রান্তে সঙ্গ দিতে পারেননি কেউ। নিজের আগের ইনিংসেই ঝড়ো সেঞ্চুরি করা এভিন লুইস এদিন আউট হন মাত্র আট রান করে। রানের খাতা খুলতেই ব্যর্থ হন উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান এনামুল হক বিজয়।

ইমরুল (৭), শামসুর রহমান শুভ (২), থিসারা পেরেরা (৯) কিংবা মোহাম্মদ সাঈফউদ্দীনের (২) কেউই পারেননি দুই অঙ্কে যেতে। ধীরে খেলার আভাস দিয়ে ১৭ বলে ১৮ রান করে আউট হন শহীদ আফ্রিদি। সাকিবের এক ওভারে দুই ছক্কা মেরে দলীয় সংগ্রহটা একশ পার করান ওয়াহাব রিয়াজ। রুবেল হোসেন বলে আউট হওয়ার আগে তিনি করেন ১৬ রান।

শেষদিকে দলকে বলার মতো সংগ্রহ এনে দেন অফস্পিনিং অলরাউন্ডার মেহেদি হাসান। রুবেল হোসেনের করা শেষ ওভারেই একটি করে চার-ছক্কার মারে ১৩ রান নেন মেহেদি। ইনিংসের শেষ বলে আউট হওয়ার আগে দুইটি চারের সঙ্গে একটি ছক্কার মারে ২০ রান করেন মেহেদি।

ঢাকার পক্ষে চার উইকেট পেয়েছেন রুবেল। সাকিব ও সুনিল নারিন নেন একটি করে উইকেট। কুমিল্লার পক্ষে সর্বোচ্চ ৩৮ রান করা তামিমের উইকেটটি নেন শুভাগত।

Loading...