loader image for Bangladeshinfo

শিরোনাম

  • ভারতের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে টাইগ্রেসদের দল ঘোষণা

  • বার্সাকে কাঁদিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিতে পিএসজি

  • অ্যাটলেটিকোকে উড়িয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ চারে ডর্টমুন্ড

  • রাষ্ট্রপতি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পাঠ্যক্রম যুগোপযোগী কর তাগিদ দিলেন

  • ক্যানাডায় আর্টসেলের আটটি কনসার্ট

পড়াশোনার জন্য শিশুদের অতিরিক্ত চাপ না দিতে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান


পড়াশোনার জন্য শিশুদের অতিরিক্ত চাপ না দিতে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষার্থীদের মেধা ও মননের যথাযথ বিকাশে বদলে শিশু অবস্থাতেই তাদের পড়াশোনার জন্য অতিরিক্ত চাপ না দিতে অভিভাবক, শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে আমি এটুকুই বলবো, কোনোমতেই যেন কোমলমতি শিশুদের কোন অতিরিক্ত চাপ না দেয়া হয়। তাহলেই দেখবেন তারা ভেতরে একটা আলাদা শক্তি পাবে। তাদের শিক্ষার ভিতটা শক্তভাবে তৈরি হবে।”

কোমল বয়সে লেখাপড়ার কঠোর শৃঙ্খলে আবদ্ধ করাকে এক ধরনের মানসিক অত্যাচার অভিহিত করে তিনি বলেন, শিশুরা প্রথমে স্কুলে যাবে এবং হাসিখেলার মধ্য দিয়েই লেখাপড়া করবে। “তারাতো আগে থেকেই পড়ে আসবে না, পড়ালেখা শিখতেইতো স্কুলে যাবে।”

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার (১৩ মার্চ) বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ ২০১৯-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলা এবং সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে শিক্ষার্থীদের বেশি করে সম্পৃক্ত করার জন্য সংশ্লিষ্ট কতৃর্পক্ষকে নির্দেশ দেন।

প্রধানমন্ত্রী শিশুদের পাঠদান সম্পর্কে নিজস্ব অভিব্যক্তি সকলের সঙ্গে ভাগাভাগি করে বলেন, “পৃথিবীর অনেক দেশেই ৭ বছরের আগে শিশুদের স্কুলে পাঠায় না। কিন্তু আমাদের দেশে অনেক ছোটবেলা থেকেই বাচ্চারা স্কুলে যায়। কিন্তু তারা যেন হাসতে খেলতে মজা করতে করতে পড়াশোনাটাকে নিজের মতো করে করতে পারে সেই ব্যবস্থাটাই করা উচিত। 

অনবরত ‘পড়’, ‘পড়’, ‘পড়’ বলাটা বা ধমক দেয়াটা বা আরও বেশি চাপ দিলে শিক্ষার ওপর তাদের আগ্রহটা কমে যাবে, একটা ভীতির সৃষ্টি হবে”, বলেছেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, “শিক্ষার প্রতি সেই ভীতিটা যেন সৃষ্টি না হয় সেজন্য আমি শিক্ষক এবং অভিভাবকদেরকে অনুরোধ করবো। অনেক সময় আমরা দেখি প্রতিযোগিতাটা শিশুদের মধ্যে না হলেও বাবা-মায়ের মধ্যে একটু বেশি হয়ে যায়। এটাকেও আমি একটি অসুস্থ প্রতিযোগিতা বলে মনে করি।”

তিনি বলেন, সকল শিক্ষার্থীর সমান মেধা থাকবে না এবং সকলেই সবকিছু একরকমভাবে করায়াত্ত করতে পারবে না। যার যা সহজাতভাবে আসবে তাঁকে সেটি গ্রহণ করার সুযোগ দেওয়া উচিত - যেন শিক্ষাটাকে সে আপন করে নিয়ে শিখতে পারে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আকরাম আল হোসেন স্বাগত বক্তৃতা করেন। খবর স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের।

প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে ‘প্রাথমিক শিক্ষা পদক’ বিতরণ করেন এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। অনুষ্ঠানে প্রথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকান্ডের ওপর একটি ভিডিওচিত্র প্রদর্শিত হয়।

প্রাথমিক শিক্ষাটা যেন আরও উন্নত ও মানসম্মত হয় - তার প্রতি দৃষ্টি রাখছে তাঁর সরকার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সকল শিশুর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ২০১৮-২০২৩ মেয়াদের জন্য ৩৮ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকার চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা কর্মসূচি বাস্তবায়ন হচ্ছে।”

শিক্ষার ক্ষেত্রে অর্থ ব্যয়ে সরকারের কোনো কার্পণ্য নেই উল্লেখ করে তিনি তাঁর সরকারের শিশু কল্যাণ ট্রাস্টের কল্যাণমূলক কার্যক্রমও আলোচনায় তুলে আনেন।

তিনি বলেন, শিশু কল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয় চালু, ঝরেপড়া রোধকল্পে বিভিন্ন স্থানে বিনামূল্যে স্কুলের পোশাকসহ সকল শিক্ষা উপকরণ প্রদান, শিক্ষাভাতা ও ক্ষেত্র বিশেষে পরীক্ষার ফি প্রদান করাসহ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য তাদের নিজেদের ভাষায় শিক্ষা প্রদানের উদ্যোগ, অন্ধদের জন্য ব্রেইল বই এবং শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের জন্যও বই প্রদান ও হেয়ারিং এইড প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে শিক্ষার্থীদের বেশি করে সম্পৃক্ত করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, তাঁর সরকার এজন্য প্রত্যেক উপজেলায় একটি করে মিনি স্টেডিয়াম করে দিচ্ছে। তিনি বলেন, পর্যায়ক্রমে শিশু-কিশোরদের মানসিক বিকাশের জন্য মিনি স্টেডিয়াম ইউনিয়ন পর্যায়েও করে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হবে।

স্টেডিয়ামগুলোতে সারাবছরই যেন বিভিন্ন প্রতিযোগিতা ও খেলাধুলার আয়োজন থাকে সেদিকে দৃষ্টি দেয়ার জন্যও তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান। প্রতিটি স্কুলে ধর্মীয় শিক্ষা ও সংস্কৃতি চর্চায় তাঁর সরকার উদ্যোগ গ্রহণ করছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এভাবেই শিক্ষাকে আমরা সার্বজনীন ও বহুমুখী করে দিচ্ছি।”

ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার তাঁর সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম আমরা করে দিয়েছি এবং এটা সকল জায়গায় পর্যায়ক্রমিকভাবে করে দেব।”

মাধ্যমিকের মতো প্রাথমিক পর্যায় থেকেও কম্পিউটার শিক্ষা বাধ্যতামূলক করে দেয়া হবে এবং প্রতি দুই কিলোমিটারের মধ্যে যেন একটা বিদ্যালয় থাকে সেদিকে লক্ষ্য রেখেই তার সরকার সারাদেশে প্রায় ১৫ হাজার নতুন বিদ্যালয় করে দিয়েছে এবং উন্নতকরণ করেছে, বলেছেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার শিক্ষকদের মর্যাদা বৃদ্ধি করেছে, বেতন ও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করেছে এবং প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে দিয়েছে যাতে তাঁরা ভালোভাবে শিক্ষা দিতে পারে।

ইংরেজি শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী এজন্য কোমলমতিদেরকে বেশি চাপ প্রয়োগ না করার পরামর্শও দেন। তিনি স্কুলে ভর্তি হওয়াকে শিশুদের অধিকার উল্লেখ করে তিনি বলেন, শিশুরা যেন বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারে সেই ব্যবস্থাটা নিতে হবে। তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের এ-বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান।

প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক শ্রেণী পর্যন্ত বিনামূল্যে বই বিতরণে তাঁর সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শিক্ষাটাকে আরও আকর্ষণীয় করার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ প্রদান করেন।

তিনি ঝরেপড়া রোধকল্পে তাঁর সরকারের বৃত্তি ও উপবৃত্তি প্রদান, ১ কোটি ৪০ লাখ মায়ের মোবাইল ফোনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বৃত্তির টাকা পৌঁছে দেয়াসহ সারাদেশে সরকারি-বেসরকারি ও স্থানীয় উদ্যোগে স্কুল-ফিডিং কর্মসূচির কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, প্রতিটি স্কুল দরকার হলে টিফিন তৈরি করে দেবে। না হলে বাচ্চার মায়েরা তাঁদের সন্তানের জন্য টিফিন দেবেন। এটা প্রত্যেক মা ও অভিভাবককেই উদ্যোগ নিতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বিদ্যালয়ে ফিডিং কর্মসূচি চালুর ফলে আমরা দেখেছি অনেক জায়গাতেই এখন ঝরেপড়া বন্ধ হয়ে গেছে।” তিনি এ-সময় বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন (অটিজম আক্রান্ত বা প্রতিবন্ধী) শিশুদের শিক্ষার বেলায় সংশ্লিষ্ট শিক্ষক, সহপাঠী ও বিদ্যালয় কতৃর্পক্ষকে যত্নবান হওয়ার আহ্বান জানান, যাতে তারা মূলস্রোতে যুক্ত হয়ে দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে।

পিইসি এবং জেএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠানের যৌক্তিকতা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিক্ষা-জীবনের শুরুতেই একটি সনদপত্র পাওয়ায় শিক্ষার প্রতি শিশুদের আগ্রহ বাড়ছে, তেমনি পরীক্ষা-ভীতিও দূর হচ্ছে।

শিক্ষার সঙ্গে আধুনিক প্রযুক্তি-জ্ঞানসমৃদ্ধ প্রজন্মের উপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী আজকের শিশুদের আগামীতে দেশের নেতৃত্ব প্রদানের যোগ্যতাসম্পন্ন করে গড়ে তোলার পরামর্শ দেন। কোমলমতিরা যেন বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার জন্য সোনার মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারে - সেদিকে দৃষ্টি দেয়ার জন্যও তিনি শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান জানান।

Loading...