loader image for Bangladeshinfo

শিরোনাম

  • কুমিল্লা ইপিজেড-এ চামড়া কারখানা করবে চীনা প্রতিষ্ঠান

  • নারী এশিয়া কাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশের গ্রুপে শ্রীলংকা

  • অস্ট্রেলিয়ার কাছে হোয়াইটওয়াশ হলো টাইগ্রেসরা

  • ১৯৭৫ সালের পর বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী

  • প্রীতি ম্যাচে পিছিয়ে পড়েও আর্জেন্টিনার জয়

চিরায়ত চিকিৎসা-পদ্ধতির প্রতি প্রধানমন্ত্রীর গুরুত্বারোপ


চিরায়ত চিকিৎসা-পদ্ধতির প্রতি প্রধানমন্ত্রীর গুরুত্বারোপ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের চিরায়ত চিকিৎসা পদ্ধতির ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রচলিত চিকিৎসা ব্যবস্থার পাশাপাশি প্রাচীনকাল থেকে চলে আসা চিরায়ত স্বাস্থ্য সেবা পদ্ধতিকে মূলধারার ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়েছেন। মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা সপ্তাহ-২০১৯ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ভেষজ, আয়ুর্বেদিক, ইউনানী এবং হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা উপেক্ষা করতে পারি না এবং মানুষের চিকিৎসার সুবিধার জন্য এগুলোর উন্নয়নের জন্য আরও গুরুত্ব দিতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ বর্তমানে মান সম্পন্ন ওষুধ উৎপাদনে ব্যাপক সফল্য অর্জন করেছে এবং বিদেশে এর চাহিদা তৈরি হয়েছে পাশাপাশি চিরায়ত ওষুধেরও ব্যাপক গুরুত্ব রয়েছে।

বিশ্বব্যাপী ভেষজ (হার্বাল) চিকিৎসার চাহিদা ব্যাপক উল্লেখ করে তিনি চিরায়ত চিকিৎসার উন্নয়নে নিবিড় গবেষণার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। প্রধানমন্ত্রী তৃণমূল পর্যায়ে জরুরি স্বাস্থ্যসেবা সহজতর করতে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সরকারি অর্থে কেনা অ্যাম্বুলেন্স ও জিপ বিতরণ করেন। তিনি জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে তাঁর সরকারের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, স্বাস্থ্য খাতের সামগ্রিক উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। সকল মানুষকে স্বাস্থ্যসেবার আওতায় আনার অঙ্গীকারের অংশ হিসেবে দেশব্যাপী কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, বর্তমান প্রায় ১৪ হাজার ক্লিনিক মা ও শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছে এবং এখান থেকে ৩০টি মারাত্মক রোগের ওষুধ বিনামূল্যে দেয়া হচ্ছে। তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন যে, ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ক্লিনিকগুলো প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় পরে পরবর্তী বিএনপি-জামায়াত শাসনামলে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী এই বুনিয়াদী প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়।

তিনি বলেন, প্রসবকালীন সময়ের জন্য দক্ষতা প্রশিক্ষণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। সরকার আইসিটি ব্যবহার করে ‘স্বাস্থ্য বার্তা’ নামে কল সেন্টারের মাধ্যমে টেলি-মেডিসিন সেবা চালু করেছে। এসব উদ্যোগ মূলতঃ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রবর্তিত স্বাস্থ্যসেবারই অংশ। এ-প্রসঙ্গে তিনি স্বাধীনতা-পরবর্তী সরকারের আমলে জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছাতে ইউনিয়ন পর্যায়ে ১০ শয্যার হাসপাতাল নির্মাণের কথা স্মরণ করেন।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক এই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. মুরাদ হাসান। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব স্বাগত বক্তৃতা দেন। এছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও)-এর প্রতিনিধিগণ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। খবর স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের।

প্রধানমন্ত্রী আরও উল্লেখ করেন যে, বঙ্গবন্ধু সংবিধানে স্বাস্থ্যকে পাঁচটি মৌলিক চাহিদার একটি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেন। এই সাংবিধানিক নীতির অনুসরণে আওয়ামী লীগ সরকার মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জনগণকে মানসম্পন্ন চিকিৎসা প্রদান এবং চিকিৎসক ও নার্সদের মতো দক্ষ জনশক্তি তৈরির ওপর গুরুত্বারোপ করেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার ঢাকায় প্রথম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করে। পরবর্তী সময়ে সরকার দেশের আটটি বিভাগের প্রতিটি মেডিকেল কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা গ্রহণ করে। বর্তমানে চট্টগ্রাম, সিলেট ও রাজশাহীতে তিনটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

শেখ হাসিনা শুধু সায়েন্স ব্যাক গ্রাউন্ডের বদলে সব একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে নার্স নিয়োগে প্রয়োজনীয় আইন ও বিধি সংশোধনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি অপারেশন-পরবর্তী রোগীদের পরিচর্যার জন্য নার্সদের বিশেষ প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নের কারণে দেশের মানুষের গড় আয়ু ৬৬.৮ বছর থেকে বেড়ে ৭২ বছর ছাড়িয়েছে এবং মাতৃমৃত্যুর হার ৩.৪৮ থেকে কমে ১.৭২ (প্রতি হাজারে) এবং শিশু মৃত্যুর হার প্রতি হাজারে ৪১ থেকে কমে ২৪-এ দাঁড়িয়েছে।

আওয়ামী লীগ সরকার সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে কাজ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাঁর সরকার বর্তমানে প্রতিবন্ধীদের জন্য আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে। তিনি বলেন, আগামী বাজেট থেকে অটিস্টিকসহ সব ধরণের প্রতিবন্ধীকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। শেখ হাসিনা এ-সময় অটিস্টিকদের কল্যাণে তাঁর কন্যা সায়মা ওয়াজেদ হোসেনের অবদানের কথা স্মরণ করেন।

প্রধানমন্ত্রী হৃদরোগ, স্ট্রোক, ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, কিডনি রোগের ব্যাপক বিস্তার ঘটায় এসব রোগ সম্পর্কে সতর্ক থাকার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, এই রোগগুলো প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহনই উত্তম। তিনি এ-সময় এসব রোগের ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টির ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, এগুলো প্রতিরোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধি সেরা সমাধানগুলোর একটি। তিনি পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহনের জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, রোগ নিরাময়ের চেয়ে প্রতিরোধ করা ভালো।

প্রধানমন্ত্রী এ-সময় বাংলাদেশকে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধশালী এবং ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি)-এর মতো টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

Loading...