loader image for Bangladeshinfo

শিরোনাম

  • তৃতীয় ধাপে ১১২টি উপজেলায় ভোটগ্রহণ ২৯ মে

  • সিটিকে বিদায় করে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিতে রিয়াল

  • আর্সেনালকে বিদায় করে সেমিতে বায়ার্ন

  • ‘রাজকুমার’ যুক্তরাষ্ট্র ও ক্যানাডার ৭৫ থিয়েটারে

  • ভারতের বিপক্ষে টাইগ্রেসদের দল ঘোষণা

ঐতিহাসিক ছয়-দফা দিবস পালিত


ঐতিহাসিক ছয়-দফা দিবস পালিত

বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে আজ ৭ জুন ঐতিহাসিক ছয়-দফা দিবস পালিত হয়েছে। ১৯৬৬ সালের এদিনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষিত বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ ছয়-দফা দাবির পক্ষে দেশব্যাপী তীব্র গণআন্দোলনের সূচনা হয়। এই দিনে আওয়ামী লীগের ডাকা হরতালে টঙ্গী, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে পুলিশ ও ইপিআর-এর গুলিতে মনু মিয়া, শফিক ও শামসুল হকসহ ১১ জন বাঙালি শহীদ হন। এরপর থেকেই বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আপোষহীন সংগ্রামের ধারায় ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের দিকে এগিয়ে যায় পরাধীন বাঙালি জাতি। পরবর্তী সময়ে ঐতিহাসিক ছয়-দফাভিত্তিক নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনই ধাপে ধাপে বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামে পরিণত হয়।

দিবসের কর্মসূচির অংশ হিসাবে সকালে রাজধানীর ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কে বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে রক্ষিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সংগঠন।

দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করে আওয়ামী লীগ। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তাঁরা নিরবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকেন। এর আগে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে দেশব্যাপী দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ-সময় সাংবাদিকদের বলেন, যাঁরা স্বাধীনতার মাইলফলক ৭ জুন তথা ছয়-দফাকে অস্বীকার করেন, তাঁরা মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধে বিশ্বাস করেন না। ওবায়দুল কাদের বলেন, স্বাধীনতা ও স্বাধিকার আন্দোলনে একই সূত্রে গাঁথা ছয়-দফা ছিল বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ।

এ-সময় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু ও তোফায়েল আহমেদ, সভাপতি মন্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, এডভোকেট সাহারা খাতুন ও কর্নেল (অব.) ফারুক খান, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ও খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, বন ও পবিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেনসহ আওয়ামী লীগের অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। খবর স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের।

দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী প্রদান করেছেন। বাণীতে তাঁরা ছয়-দফা দাবি বাস্তবায়নের জন্য যাঁরা জীবন দিয়েছেন তাঁদের স্মৃতির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানান।

পাকিস্তানি শাসন-শোষণ বঞ্চনা থেকে মুক্তির লক্ষ্যে আইয়ুব খান সরকারের বিরুদ্ধে নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সভাপতি নবাবজাদা নসরুল্লাহ খানের নেতৃত্বে লাহোরে তৎকালীন পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের সব বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে ডাকা বিরোধীদলীয় এক জাতীয় সম্মেলন আহ্বান করা হয় ১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি। বঙ্গবন্ধু এ-দিন অনুষ্ঠিত সম্মেলনের সাবজেক্ট কমিটিতে ৬-দফা উত্থাপন করেন এবং পরের দিন সম্মেলনের আলোচ্যসূচিতে যাতে এটি স্থান পায় সে-ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেন। কিন্তু এই সম্মেলনে বঙ্গবন্ধুর এ-দাবির প্রতি আয়োজকপক্ষ গুরুত্ব প্রদান করেনি। তাঁরা এ-দাবি প্রত্যাখ্যান করে।

প্রতিবাদে বঙ্গবন্ধু সম্মেলনে যোগ না দিয়ে লাহোরে অবস্থানকালেই ছয়-দফা উত্থাপন করেন। এ-নিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানের বিভিন্ন খবরের কাগজে বঙ্গবন্ধুকে বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা বলে চিহ্নিত করা হয়। পরে ঢাকায় ফিরে বঙ্গবন্ধু ১৩ মার্চ ছয়-দফা এবং এ-ব্যাপারে দলের অন্যান্য বিস্তারিত কর্মসূচি আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদে পাস করিয়ে নেন।

ছয়-দফার মূল বক্তব্য ছিল - প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্র বিষয় ছাড়া সকল ক্ষমতা প্রাদেশিক সরকারের হাতে থাকবে। পূর্ববাংলা ও পশ্চিম পাকিস্তানে দু’টি পৃথক ও সহজ বিনিময়যোগ্য মুদ্রা থাকবে। সরকারের কর ও শুল্ক ধার্য ও আদায় করার দায়িত্ব প্রাদেশিক সরকারের হাতে থাকাসহ দুই অঞ্চলের অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রার আলাদা হিসাব থাকবে এবং পূর্ববাংলার প্রতিরক্ষা ঝুঁকি কমানোর জন্য এখানে আধা-সামরিকবাহিনী গঠন ও নৌবাহিনীর সদর দফতর স্থাপন।

বঙ্গবন্ধু ঘোষিত ছয়-দফা দাবির মুখে পাকিস্তানের তৎকালীন সামরিক শাসক আইয়ুব খান বিচলিত হয়ে পড়েন। তিনি হুমকি দিয়ে বলেন, ছয়-দফা নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে অস্ত্রের ভাষায় উত্তর দেয়া হবে।

এদিকে ছয়-দফা কর্মসূচি জনগণের মাঝে পৌঁছে দেয়ার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ সমগ্র পূর্ববাংলা সফর করেন এবং ছয়-দফাকে বাঙালির বাঁচার দাবি হিসেবে অভিহিত করেন।

বঙ্গবন্ধুর সাথে তাজউদ্দিন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, মিজানুর রহমান চৌধুরী, জহুর আহমদ চৌধুরী ও নুরুল ইসলাম চৌধুরী গণসংযোগে অংশ নেন। যশোর, ময়মনসিংহ ও সিলেটসহ অন্যান্য কয়েকটি স্থানে ছয়-দফার পক্ষে প্রচারকালে বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার হন।

এ-দাবির স্বপক্ষে বাঙালি জাতির সর্বাত্মক রায় ঘোষিত হয় ১৯৭০ সালের ঐতিহাসিক সাধারণ নির্বাচনের মধ্যদিয়ে। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বাঙালিরা বিজয়ী করে।

অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধুর দলকে জনগণ বিজয়ী করলেও পাকিস্তানের স্বৈরাচারী শাসকরা বিজয়ী দলকে সরকার গঠন করতে না দিলে আবারো বঙ্গবন্ধু জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে স্বাধীনতার পক্ষে আন্দোলন শুরু করেন। এরই ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের।

Loading...