রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ বুধবার (১২ জুন) শিশুদের প্রতিভা বিকাশের জন্য সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টির জন্য অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মিলনায়তনে ‘জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগিতা ২০১৯’ অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি বলেন, “শিশুদের অসুস্থ প্রতিযোগিতার দিকে ঠেলে দেবেন না। অসুস্থ প্রতিযোগিতা তাদের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত করে।”
রাষ্ট্রপ্রধান শুধুমাত্র জিপিএ-৫ এর পিছনে না ছুটে শিশুদের জন্য প্রকৃতি থেকে শিক্ষা লাভের এবং প্রয়োজনীয় মানবিক মূল্যবোধের সাথে বেড়ে উঠার সুযোগ সৃষ্টির জন্য অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানান। শিশুদেরকে সকল ক্ষেত্রে আত্মনির্ভরশীল করে তোলার জন্য অভিভাবকদের পরামর্শ দিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, “তাহলেই শিশুরা দেশ ও জাতির জন্য মূল্যবান সম্পদ হিসেবে গড়ে উঠবে।”
ছাত্রজীবনের শুরু থেকেই শিশুদের মধ্যে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিকাশ ঘটানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, “তোমাদের অবশ্যই দেশকে ভালােবাসতে শিখতে হবে। কখনো অন্যায় ও অসত্যের সাথে আপোষ করবে না।” হামিদ আরও বলেন, “যদি তুমি সত্য, সুন্দর ও ন্যায়ের পথে চল, তবে জীবনে সফল হতে পারবে।”
রাষ্ট্রপতি ২০২১ সালে দেশের স্বাধীনতার ৫০বর্ষপূর্তি ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর কথা উল্লেখ করে শিশুদের স্বাধীনতা ও মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানতে উৎসাহিত করার জন্য অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানান।
রাষ্ট্রপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নপূরণে বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের কথা উল্লেখ করেন। বঙ্গবন্ধু শিশুদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার অংশ হিসেবে জাতীয় শিশু আইন-১৯৭৪ প্রণয়ন করেছিলেন।
তিনি বলেন, “জাতির পিতা শিশুদের অনেক ভালোবাসতেন। তিনি তাদের সঙ্গে নিয়ে তাঁর ‘সোনার বাংলা’ গড়ে তোলার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে চেয়েছিলেন।’
বঙ্গবন্ধুর শৈশবের কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, “শিশুকাল থেকেই জাতির পিতা দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়াতেন ও তাদের সাহায্য করতেন। এমনকি তিনি একজন গরিব লোককে তাঁর পরনের শার্ট খুলে দিয়েছিলেন এবং শার্ট ছাড়াই তিনি বাড়ি ফিরেছিলেন।”
তিনি আরও বলেন, “তোমাদেরকে বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে শিক্ষা নিতে হবে। তিনি অত্যন্ত সাহায্যকারী ও অসামান্য নেতৃত্বগুণ সম্পন্ন মানুষ ছিলেন।”
রাষ্ট্রপতি শিশুদের অধিকার নিশ্চিত করতে জ্যেষ্ঠ নাগরিক, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রসহ সকলের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি শিশুদের সুপ্তপ্রতিভা বিকশিত করতে বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টির জন্যও সকলের আহ্বান জানিয়েছেন।
এর আগে রাষ্ট্রপতি ২৩৭ জন বিজয়ীর ৩০ জনের মাঝে পুরস্কার ও পদক বিতরণ করেন। ১৯ জানুয়ারি থেকে তিন লাখ ২৭ হাজার ১২৭ জন প্রতিযোগী ছবি আঁকা, নৃত্য, আবৃত্তি, অভিনয় ও গানসহ ৩০টি বিষয়ে প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়।
এ-সময় সংসদীয় স্থায়ী কমিটির নারী ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের চেয়ারম্যান মেহের আফরোজ চুমকি এমপি, বিশিষ্ট সাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুন নাহার ও বাংলাদেশ শিশু একাডেমির পরিচালক আনজির লিটন উপস্থিত ছিলেন।
রাষ্ট্রপতি অনুষ্ঠানে মনোজ্ঞ সংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন এবং বিজয়ীদের সঙ্গে ছবি তোলেন। খবর স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের।