loader image for Bangladeshinfo

শিরোনাম

  • লিভারপুল হারলো এভারটনের কাছে, ম্যানইউ-এর শেফিল্ড-বাধা অতিক্রম

  • শুরু হলো স্বাধীনতা দিবস জিমন্যাস্টিক্স প্রতিযোগিতা ২০২৪

  • জাভি এই মৌসুম শেষেই বার্সা ছাড়বেন না

  • নতুন করে আরও ৭২ ঘণ্টার তাপ প্রবাহের সতর্কতা জারি

  • ইতালিয়ান কাপের ফাইনালে ইউভেন্টাস

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে টাইগারদের দাপুটে জয়


ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে টাইগারদের দাপুটে জয়

দ্বাদশ ক্রিকেট বিশ্বকাপে নিজেদের পঞ্চম ম্যাচে সোমবার (১৭ জুন) দারুণ জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। ৩২২ রান তাড়া করে সাকিব আল হাসানের সেঞ্চুরি ও লিটন দাসের হাফ-সেঞ্চুরিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে সাত উইকেটে হারিয়েছে মাশরাফি অ্যান্ড কো.। খেলায় বাংলাদেশের এতটাই দাপট ছিল যে - ৫১ বল বাকী রেখেই জয় ধরা দেয় টাইগারদের কাছে।

টন্টন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সাত ‍উইকেটে জিতেছে বাংলাদেশ। ক্যারিবিয়ানদের দেওয়া ৩২২ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ৫১ বল হাতে রেখে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় টাইগাররা। সাকিব আল হাসানের অপরাজিত ১২৪ ও লিটন দাশের অপরাজিত ৯৪ রানের সুবাদে ২০১৯ বিশ্বকাপে দ্বিতীয় জয়ে পাঁচ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট তালিকার পঞ্চম স্থানে উঠে এসেছে মাশরাফি বিন মর্তুজাবাহিনী। 

সেমিফাইনালে খেলার স্বপ্ন টিকিয়ে রাখতে সোমবার (১৭ জুন) জয়ের বিকল্প ছিল না বাংলাদেশের সামনে। লক্ষ্য ঠিক রেখে বিশ্বকাপে নিজেদের সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জিতেছে টাইগাররা। সামনের ম্যাচগুলোতেও জিতে প্রথমবারের মতো শেষ চারে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন মাশরাফি। ম্যাচ-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে সেই আশার কথাই শোনালেন বাংলাদেশ অধিনায়ক, “আমাদের এখনো সুযোগ আছে এগিয়ে যাওয়ার। তার জন্য পরের ম্যাচগুলো জিততে হবে।”

বোলিংয়ের সময় মাশরাফি হাঁটুতে আবার চোট পেয়েছেন। তবে এসব নিয়ে আপাতত ভাবছেন না তিনি, “হাঁটুতে সামান্য ব্যথা পেয়েছি। তবে ডেথ ওভারে বোলিংয়ের জন্য আমাদের যথেষ্ট ভালো বোলার রয়েছে। তাই এর জন্য চিন্তা করছি না।

ম্যাচে এক সময় বড় সংগ্রহের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল উইন্ডিজ। সেই মুহুর্তে এক ওভারে দুই উইকেট নিয়ে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেয় বাংলাদেশ। সেটিকেই টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে দেখছেন ম্যাশ, “আমি মনে করি, আমাদের টার্নিং পয়েন্ট ছিল মোস্তাফিজের দুই উইকেট শিকার। আন্দ্রে রাসেলকে সে দ্রুত ফিরিয়েছে।”

টাইগার-অধিনায়ক দুর্দান্ত খেলা সাকিব এবং সতীর্থদের ভাসিয়েছেন প্রশংসার বৃষ্টিতে, “বিশ্বকাপে সাকিব দুর্দান্ত খেলছে। আশা করি, সামনে ম্যাচগুলোতেও সে তা বজায় রাখবে এবং জয়ের জন্য তাঁর সঙ্গে অন্যরা যোগ দেবে। প্রথম দুই ম্যাচে মুশি (মুশফিকুর রহিম) অসাধারণ খেলেছে। আজ তামিম চমৎকার খেলেছে এবং সৌম্য শুরুটা করেছে অনবদ্য। লিটন সাধারণত ব্যাট করে তিনে। আজ পাঁচে খেলাটা তাঁর জন্য কঠিন ছিল, তবে সে তাঁর কাজটা ভালোভাবে করেছে।”

এদিন ম্যাচ-সেরা হয়েছেন সাকিব।

টস জিতে প্রথমে বোলিং বেছে নেন মাশরাফি। অর্থাৎ, রান চেজ করে ম্যাচ জয়ের পরিকল্পনা তাঁর। এর পেছনে যুক্তিটাও বেশ মজবুত। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে সর্বশেষ ছয় মুখোমুখিতে পাঁচটি জয় ছিল বাংলাদেশের। পাঁচটি জয়ই এসেছে রান চেজ করে। তাই এবারও আগের পরিকল্পনায়ই হাঁটলেন মাশরাফি।

মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনকে নিয়ে বাংলাদেশের বোলিং ওপেন করেন মাশরাফি। মাশরাফি-সাইফউদ্দিনের বুদ্ধিদীপ্ত বোলিংয়ে প্রথম তিন ওভারে মাত্র ছয় রান তুলতে পেরেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুই ওপেনার ক্রিস গেইল ও এভিন লুইস। তবে চতুর্থ ওভারে ও নিজের দ্বিতীয় ওভারেই বাংলাদেশকে প্রথম সাফল্য এনে দেন পেসার সাইফউদ্দিন। 

দলীয় ছয় রানে বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান ক্রিস গেইলকে শূন্য রানে বিদায় দেন সাইফ। ১৩ বল খেলে রানের খাতাই খুলতে পারেননি স্বঘোষিত ‘ইউনিভার্স বস’। বাঁ-দিকে ঝাপিয়ে পড়ে উইকেটের পেছনে গেইলের দুর্দান্ত ক্যাচ নেন উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিম।

শুরুতে গেইলকে হারানোর ধাক্কা ভালোভাবেই সামাল দেন লুইস ও তিন নম্বরে নামা শাই হোপ। বাংলাদেশ বোলারদের দেখে-শুনে খেলে রানের চাকা সচল রাখেন তাঁরা। ফলে ২৩তম ওভারেই শতরান স্পর্শ করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নেন লুইস। অবশ্য, এরপরে বেশি দূর যেতে পারেননি তিনি, তাঁকে ব্যক্তিগত ৭০ রানে থামিয়ে দেন বাঁ-হাতি স্পিনার সাকিব। ৬৭ বল মোকাবেলা করে ছয়টি চার ও দুইটি ছক্কা মারেন লুইস। দ্বিতীয় উইকেটে হোপের সাথে ১২৭ বলে ১১৬ রান যোগ করেন তিনি।

লুইসের বিদায়ে উইকেটে গিয়ে হোপের সাথে বড় জুটি গড়ার চেষ্টা করেন নিকোলাস পুরান। কিন্তু তাঁকেও বেশি এগোতে দেননি সাকিব। দুইটি চার ও একটি ছক্কায় ৩০ বলে ২৫ রান করা পুরানকে থামান সাকিব।

৩তম ওভারে ১৫৯ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারানোর পর বড় জুটির আশা করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। অন্যদিকে ক্যারিবীয়দের উপর আরও চাপ সৃষ্টি করতে ছক কষেন ম্যাশ। কিন্তু সেই ছককে দুমড়ে-মুষড়ে দেন শিমরোন হেটমায়ার। বোলারদের উপর চড়াও হয়ে তিনি ২৫ বলেই হাফ-সেঞ্চুরি তুলে ফেলেন। যাহোক, ব্যক্তিগত ৫০ রানে থেমে যান হেটমায়ার। বিধ্বংসী রূপে থাকা হেটমায়ারকে আউট করেন মুস্তাফিজুর রহমান। তৃতীয় উইকেটে হোপের সাথে দলকে ৪৩ বলে ৮৩ রান উপহার দেন হেটমায়ার।

২৪২ রানে হেটমায়ার ফিরলে উইকেটে আসেন আরেক বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান আন্দ্রে রাসেল; তখন ৪০তম ওভার চলছিলো। ঐ ওভারের তৃতীয় বলে হেটমায়ারকে ফেরানোর পরে শেষ বলে রাসেলকে তুলে নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বড় স্কোরের আশা শেষ করে দেন ফিজ। শূন্য হাতে ফিরেন বিগ হিটার রাসেল।

এ-অবস্থায় রাসেলের কাজটা করার চেষ্টা করেন অধিনায়ক হোল্ডার। দ্রুতই রান তুলতে থাকেন তিনি। তাঁকে সঙ্গ দিচ্ছিলেন তিন নম্বরে নামা হোপ। ততক্ষণে হাফ-সেঞ্চুরি তুলে এক প্রান্ত আগলে রেখেছিলেন হোপ; সেঞ্চুরির পথেই হাঁটছিলেন তিনি। আর অন্যপ্রান্তে দ্রুত রান তুলতে থাকেন হোল্ডার। তাতে আবারো বড় স্কোরের স্বপ্ন দেখতে শুরু করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। শেষ পর্যন্ত ১৫ বলে ৩৩ রান করে থামেন হোল্ডার। 

চারটি চার ও দুইটি ছক্কা মারা হোল্ডারকে থামান সাইফউদ্দিন।

কিছুক্ষণ পরেই হোপকে ফেরান মুস্তাফিজ। নার্ভাস-নাইন্টিতে আউট হন হোপ। আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজে বাংলাদেশের বিপক্ষে দুর্দান্ত ফর্ম প্রদর্শন করা হোপ আউট হন ৯৬ রানে। ১২১ বল মোকাবেলা করে মাত্র চারটি চার ও একটি ছক্কা মারেন হোপ। 

হোপ বিদায় নিলেও, শেষদিকে ড্যারেন ব্রাভোর ১৫ বলে ১৯ রানের উপর ভর করে ৫০ ওভারে আট উইকেটে ৩২১ রানের সংগ্রহ পায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। 

বাংলাদেশের সাইফউদ্দিন ৭২ রানে ও মুস্তাফিজ ৫৯ রানে তিনটি করে ও সাকিব ৫৪ রানে দুইটি উইকেট নেন।

৩২২ রানের বড় টার্গেটে খেলতে নামে বাংলাদেশ। তখনও হয়তোবা ম্যাচ জয়ের স্বপ্ন দেখেনি বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা। যদিও ৩১৯ রানের লক্ষ্য তাড়া করে ৩২২ রান তুলে গত বিশ্বকাপে ম্যাচ জিতেছিলো বাংলাদেশ; তবে সেবার প্রতিপক্ষ ছিল স্কটল্যান্ড, আর এবার তো ওয়েস্ট ইন্ডিজ! 

যাহোক, এখন হাল ছাড়ার দল নয় বাংলাদেশ। দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকার ইনিংস শুরু করেই দ্রুত রান করতে থাকেন। আট ওভারে ৪৬ রান করেন তাঁরা। নবম ওভারের প্রথম বলে পেসার রাসেলকে ছক্কা মারেন সৌম্য। কিন্তু পরের বলেই আউট হন তিনি। দুইটি করে চার-ছক্কায় ২৩ বলে ২৯ রান করেন সৌম্য। এদিন ভালো শুরুর পরেও দলীয় ৫২ রানে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হন তিনি।

অবশ্য সৌম্যকে হারানোটা আমলে নেননি তিন নম্বরে নামা দুর্দান্ত ফর্মের সাকিব। উইকেটে গিয়েই বোলারদের উপর চড়াও হন। সাকিবের সাথে তাল মেলাচ্ছিলেন তামিম। তাই চতুর্দশ ওভারে বাংলাদেশ পায় শতরান। হাফ-সেঞ্চুরির পথে ছিলেন তামিম। কিন্তু এবারও হলো না তামিমের অর্ধশত রান। ছয়টি চারে ৫৩ বলে ৪৮ রান করে রান আউট হন তিনি। 

শেল্ডন কট্রেলকে সোজা ব্যাটে খেলেন তামিম। বল গিয়ে পৌছায় কট্রেলের হাতে। বল পেয়েই পাল্টা থ্রো করে তামিমের স্ট্রাইকের উইকেট ভেঙ্গে দেন কটরেল।

এরপর ব্যাটিংয়ে নেমে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি মুশফিকুর রহিম। এক রান করে থামেন তিনি। ফলে ১৩৩ রানে তৃতীয় উইকেট হারিয়ে বসে বাংলাদেশ। এ-সময় ৩১ ওভারে ১৮৯ রান দরকার ছিলো বাংলাদেশের; হাতে উইকেট ছিলো সাতটি।

মোহাম্মদ মিঠুনের বদলে এবারের আসরে প্রথমবারের মতো সুযোগ পেয়েছেন লিটন দাস। চতুর্থ উইকেটে সাকিবের সাথে জুটি বাঁধেন লিটন। তখন ৩৯ বলে ৪৯ রানে দাঁড়িয়ে সাকিব। হাফ-সেঞ্চুরি তুলে আরও মারমুখী হয়ে উঠেন সাকিব।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোলারদের লাইন-লেন্থহীন করে দিয়ে সহজেই রান করছিলেন সাকিব। নিজেকে গুটিয়ে রাখেননি লিটনও। সাকিবের সাথে রান তোলার কাজটা ভালোই করছিলেন তিনি। ৩৪তম ওভারের শেষ বলে নিজের ৮৩তম বলে শতরান পূর্ণ করেন সাকিব। এবারের আসরে দ্বিতীয় ও ওয়ানডে ক্যারিয়ারের নবম সেঞ্চুরি তুলে নেন বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার।

সাকিবের সেঞ্চুরি ও লিটনের ৪০ বলে ৪৭ রানে ৩৪ ওভার শেষে তিন উইকেটে ২৪৮ রান এলে জয়ের পথ পরিষ্কার হয়ে যায় টাইগারদের। ফলে নির্ভার হয়ে পড়েন সাকিব-লিটন জুটি। এ-অবস্থায় ৩৮তম ওভারের প্রথম তিন বলে শ্যানন গাব্রিয়েলকে পরপর তিনটি ছক্কা মারেন লিটন। 

এরপর ম্যাচ শেষ করতে খুব বেশি সময়ক্ষেপন করেননি এই জুটি। ৫১ বল বাকী রেখেই কাজ শেষ করেন তাঁরা। চতুর্থ উইকেটে ১৩৫ বলে অবিচ্ছিন্ন ১৮৯ রান যোগ করেছেন সাকিব-লিটন।

আগামী ২০ জুন নটিংহামে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে নিজেদের ষষ্ঠ ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ।

Loading...