loader image for Bangladeshinfo

শিরোনাম

  • ভারতের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে টাইগ্রেসদের দল ঘোষণা

  • বার্সাকে কাঁদিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিতে পিএসজি

  • অ্যাটলেটিকোকে উড়িয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ চারে ডর্টমুন্ড

  • রাষ্ট্রপতি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পাঠ্যক্রম যুগোপযোগী কর তাগিদ দিলেন

  • ক্যানাডায় আর্টসেলের আটটি কনসার্ট

সাকিবের নৈপুণ্যে আফগানিস্তানকে বিধ্বস্ত করলো বাংলাদেশ


সাকিবের নৈপুণ্যে আফগানিস্তানকে বিধ্বস্ত করলো বাংলাদেশ

সাকিব আল হাসানের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে দ্বাদশ ক্রিকেট বিশ্বকাপে নিজেদের সপ্তম ম্যাচে সোমবার (২৪ জুন) আফগানিস্তানকে ৬২ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। এই জয়ে সেমিফাইনালে খেলার পথে ভালোভাবে টিকে থাকলো টাইগাররা। পাশাপাশি সাত খেলায় সাত পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের পঞ্চম স্থানে উঠে এলো বাংলাদেশ। সমানসংখ্যক ম্যাচে শূন্য পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের তলানিতেই থাকলো আফগানিস্তান।

রোউস্ বোলে এদিন জয়ের জন্য আফগানিস্তানকে ২৬৩ রানের টার্গেট দেয় বাংলাদেশ। শুরুটা ভালো ছিলো আফগানদের। ১০ ওভারেই ৪৮ রান তুলে ফেলেন আফগানিস্তানের দুই ওপেনার অধিনায়ক নাইব ও রহমত শাহ। এই ১০ ওভারের মধ্যে তিন বোলার ব্যবহার করেছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি। তারপরও আফগানদের উদ্বোধনী জুটি ভাঙতে পারেনি বাংলাদেশের তিন বোলার মাশরাফি-মুস্তাফিজুর-সাইফউদ্দিন। তাই বাধ্য হয়ে ১১তম ওভারেই সাকিবকে আক্রমনে নিয়ে আসেন ম্যাশ।

বল হাতে নিয়ে অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন সাকিব। নিজের পঞ্চম ডেলিভারিতেই রহমতকে বিদায় দেন সাকিব। ৩৫ বলে ২৪ রান করেন রহমত। দ্বিতীয় সাফল্য পেতে খুব বেশি অপেক্ষা করতে হয়নি বাংলাদেশকে। গত ম্যাচে ইনজুরির কারণে খেলতে না পারার মোসাদ্দেক বাংলাদেশকে সাফল্য এনে দেন। উইকেটের পেছনে থাকা মুশফিক দুর্দান্তভাবে স্টাম্প করেন তিন নম্বরে ব্যাট হাতে নামা ৩১ বলে ১১ রান করা হাসমতউল্লাহ শাহিদিকে।

৭৯ রানে দুই উইকেট পড়ে যাওয়ায় পথ হারানোর অবস্থায় চলে যায় আফগানিস্তান। এ-অবস্থায় দলকে খেলায় ফেরানোর চেষ্টা করেন নাইব ও সাবেক অধিনায়ক আসগর আফগান। উইকেটের সাথে মানিয়ে নিয়ে ধীরে ধীরে দলের রানের চাকা সচল রেখেছিলেন তাঁরা। তাতে দলের স্কোর ১০০ ছাড়িয়ে যায়। 

আবারো বাংলাদেশের ত্রানকর্তায় ভূমিকায় অবতীর্ণ হন সাকিব। নিজের পঞ্চম ওভারের প্রথম ও তৃতীয় বলে ডাবল উইকেট শিকার করেন তিনি। নাইব তিনটি চারে ৭৫ বলে ৪৭ ও মোহাম্মদ নবী শূন্য রান করে সাকিবের শিকার হন। এতে ১০৪ রানে চতুর্থ উইকেট হারায় আফগানিস্তান।

তৃতীয় উইকেট শিকারের পর আরও বিধ্বংসী হয়ে ওঠেন সাকিব। ২৯তম ওভারে ২০ রান করা আফগানকে আউট করে নিজের চতুর্থ উইকেট নেন তিনি। 

ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বারের মতো পাঁচ বা ততোধিক উইকেট নিতে উন্মুখ ছিলেন সাকিব। সপ্তম ওভারে সাকিবের মনের আশা পূরণ হয়। আট নম্বর নাজিবুল্লাহ জাদরানকে ২৩ রানে শিকার করেন তিনি। এর মাধ্যমেই ২০৪ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বারের মতো পাঁচ বা ততোধিক উইকেট শিকার করলেন সাকিব। এর আগে ২০১৫ সালের নভেম্বরে ঢাকায় জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১০ ওভারে ৪৭ রানে পাঁচ উইকেট নিয়েছিলেন বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার ।

সাকিবের বিধ্বংসী বোলিং তোপে ১৮৮ রানেই সাত উইকেট হারায় আফগানিস্তান। তাই ম্যাচ জয়ের পথ সহজ হয়ে যায় বাংলাদেশের। এরপরও লড়াই করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় আফগানিস্তানের লোয়ার-অর্ডার ব্যাটসম্যানরা। 

শেষদিকে মুস্তাফিজ দু’টি ও সাইফউদ্দিন একটি উইকেট শিকার করেন। সাইফউদ্দিন শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে মুজিবকে ফিরিয়ে দেন, ৪৯ রানে অপরাজিত থাকেন সামিউল্লাহ শিনয়ারি। 

৪৭ ওভারে ২০০ রানে থামে আফগান ইনিংস। সাকিব ১০ ওভারে ২৯ রানে পাঁচ উইকেট নেন। এটি তাঁর ক্যারিয়ারের সেরা বোলিং ফিগার। তাই ম্যাচ-সেরাও হয়েছেন তিনিই। 

মুস্তাফিজ দুইটি ও সাইফউদ্দিন, মোসাদ্দেক একটি করে উইকেট নেন।

এর আগে টস হেরে প্রথমে ব্যাট হাতে নামতে হয় বাংলাদেশকে। নিয়মিত ওপেনার সৌম্যকে সরিয়ে লিটন দাসকে ইনিংসের শুরুতে পাঠানো হয়। সাথে ছিলেন নিয়মিত ওপেন করা তামিম। দু’টি চারে ভালো কিছু করার ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে পাঁচ নম্বরে নেমে অপরাজিত ৯৪ রান করা লিটন। কিন্তু এবার আর বেশি দূর যেতে পারেননি তিনি। ১৭ বলে ১৬ রান করে আফগানিস্তানের অফ-স্পিনার মুজিব উর রহমানের শিকার হন লিটন।

পঞ্চম ওভারের দ্বিতীয় বলে লিটনকে হারানোর পরে ক্রিজে তামিমের সঙ্গী হন ফর্মের তুঙ্গে থাকা সাকিব। লিটন যে- ওভারে ফেরেন, পরের ওভারেই পেসার দৌলত জাদরানকে সরিয়ে দলের আরেক স্পিনার মোহাম্মদ নবীকে আনেন আফগানিস্তানের অধিনায়ক গুলবাদিন নাইব। প্রতিপক্ষের এমন পরিকল্পনার ফাঁদে পা দেননি তামিম-সাকিব। উইকেটের সাথে মানিয়ে নিয়ে দলের রানের চাকা বুঝেশুনে ঘুরাচ্ছিলেন তাঁরা। জুটিতে হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করায় তাঁদের ওপর ভর করে বড় সংগ্রহের ভিত গড়ার স্বপ্ন দেখছিলো বাংলাদেশ।

কিন্তু বাংলাদেশের স্বপ্নে বাধা হন নবী। শুরুতে না পারলেও নিজের ষষ্ঠ ওভারের শেষ বলে তামিম-সাকিবের জুটি ভাঙ্গেন তিনি। চার বাউন্ডারিতে ৫৩ বলে ৩৬ রান করে নবীর ঘুর্ণিতে বোল্ড হন তামিম। বিচ্ছিন্ন হয় সাকিব-তামিমের ৫৯ রানের জুটি।

তামিমের ফিরে যাবার পরের বলে আউটের ফাঁদে পড়েছিলেন সাকিব। রশিদ খানের করা ১৮তম ওভারের প্রথম বলে আম্পায়ার তাকে আউট দেন। কিন্তু রিভিউ নিয়ে জীবন পান ২৬ রানে থাকা সাকিব।

জীবন পেয়ে এবারের বিশ্বকাপে তৃতীয় হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নেন সাকিব। তৃতীয় উইকেটে মুশফিকুর রহিমের সাথে ভালো জুটির ইঙ্গিত দিয়েও বেশি দূর এগোতে পারেননি সাকিব। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে নিজের ৪৪তম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে আউট হন তিনি। একটি চারে ৬৯ বলে ৫১ রান করেন সাকিব। মুশফিকের সাথে তাঁর জুটির রান ছিলো ৬১। এই রানের মাধ্যমে বাংলাদেশের পক্ষে একত্রে জুটিবদ্ধ হয়ে তিন হাজার রানের মাইলফলকও স্পর্শ করেন সাকিব-মুশফিক। সাকিবকে নিজের দ্বিতীয় শিকার বানান মুজিব।

সাকিবকে ফিরিয়ে বাংলাদেশের রানের লাগাম টেনে ধরার চেষ্টা করেন মুজিব। দ্রুতই বাংলাদেশ শিবিরে আরও একবার আঘাত হানেন মুজিব। দলীয় ১৪৩ রানে সাকিব ও ১৫১ রানে আউট হন সৌম্য সরকার। লিটনকে ওপেনার হিসেবে সুযোগ করে দিয়ে সৌম্যকে পাঁচ নম্বরে খেলায় বাংলাদেশ । তবে আস্থার প্রতিদান দিতে পারেননি ১০ বলে তিন রান করা সৌম্য। লেগ বিফোর ফাঁদে পড়েন তিনি। রিভিউ নিয়েও নিজেকে রক্ষা করতে পারেননি সৌম্য।

৩২ ওভারে চার উইকেট হারিয়ে কিছুটা চাপে বাংলাদেশ। এ অবস্থায় দলকে চাপমুক্ত করার চেষ্টা করেন মুশফিক ও মাহমুদুল্লাহ। আগের ম্যাচে নটিংহামে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পঞ্চম উইকেটে ৯৭ বলে জুটিতে ১২৭ রান করেছিলেন মুশফিক-মাহমুদুল্লাহ। তাই এবারও তাঁদের কাছ থেকে বড় একটি জুটি আশা করেছিলো বাংলাদেশ। যাতে আফগানিস্তানের সামনে বড় সংগ্রহ দাঁড় করাতে পারে টাইগাররা।

দলের আশা পূরণের পথেই ছিলেন মুশফিক-মাহমুদুল্লাহ। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৩৫তম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে বাংলাদেশের রানের চাকা সচল রাখেন মুশফিক। তাঁকে সঙ্গ দিচ্ছিলেন মাহমুদুল্লাহ। জুটিতে তাদের অর্ধশতকে দলের স্কোর ২শ পেরোয়। তবে এরপরই মাহমুদুল্লাহকে থামিয়ে দিয়ে প্রয়োজনীয় সময়ে আফগানিস্তানকে ব্রেক-থ্রু এনে দেন আফগানিস্তানের অধিনায়ক নাইব। দুইটি চারে ৩৮ বলে ২৭ রান করে ফিরেন মাহমুদুল্লাহ।

দলীয় ২০৭ রানে মাহমুদুল্লাহ বিদায়ের পর মুশফিক-মোসাদ্দেক হোসেন বাংলাদেশকে বড় সংগ্রহ এনে দেয়ার দায়িত্ব পান। দ্রুত গতিতে রান তুলতে থাকেন তাঁরা। ৪৮তম ওভারের প্রথম বলে আড়াইশ রানের কোটা স্পর্শ করে বাংলাদেশ। কিন্তু তখনও এই রান কম ছিলো বাংলাদেশের জন্য। কারণ আগের ম্যাচেই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৩৩৩ রান করেছিলো বাংলাদেশ।

২৫০ পেরোনোর ওভারেই আউট হন মুশফিক। চারটি চার ও একটি ছক্কায় ৮৭ বলে ৮৩ রানে জাদরানের বলে আউট হন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অপরাজিত ১০২ রান করা মুশফিক। এরপর মোসাদ্দেকের চারটি চারে ২৪ বলে ৩৫ রানের সুবাদে ৫০ ওভারে সাত উইকেটে ২৬২ রানের লড়াকু সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। 

আফগানিস্তানের মুজিব উর রহমান ১০ ওভারে ৩৯ রানে তিন উইকেট শিকার করেন। অধিনায়ক গুলবাদিন নাইব ১০ ওভারে ৫৬ রানে দুই উইকেট পেয়েছেন।

Loading...