কোপা আমেরিকা ফুটবলের কোয়ার্টার ফাইনালে প্যারাগুয়েকে টাইব্রেকারে হারিয়ে সেমিফাইনালে পা রেখেছে স্বাগতিক ব্রাজিল। তিতের শিষ্যরা জিতেছে ৪-৩ গোলে। ম্যাচের প্রায় এক তৃতীয়াংশ সময় ১০ জন নিয়ে খেলেও রক্ষণভাগের কৃতিত্বে ব্রাজিলকে গোলবঞ্চিত করে রাখে প্যারাগুয়ে। নির্ধারিত সময়ের খেলা গোলশূন্যভাবে শেষ হলে খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে।
পেনাল্টি শুট আউটে ব্রাজিলের হয়ে গোল করেছেন উইলিয়ান, মার্কুইনহোস, ফিলিপ কটিনিয়ো ও গ্যাব্রিয়েল জাসুস। মিস করেছেন রবার্টো ফিরমিনো। অন্যদিকে প্যারাগুয়ের হয়ে লক্ষ্যভেদ করেছেন মিকুয়েল গোমেজ, ব্রুনো ভালদেজ, হুয়ান রদ্রিগো রোহাস। মিস করেছেন গুস্তাভো গোমেজ ও দেরলিস গঞ্জালেস।
শুক্রবার (২৮ জুন) বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৬টায় ব্রাজিলের পোর্তো আলেগ্রে'র অ্যারেনা দো গ্রেমিও’তে অনুষ্ঠিত ম্যাচের শুরু থেকেই আধিপত্য ছিল স্বাগতিকদের। বল দখল থেকে শুরু করে পাসিং, গোলের সুযোগ সৃষ্টি ও গোলমুখে শটের ক্ষেত্রে প্যারাগুয়ের চেয়ে বহুগুণে এগিয়ে ছিল ব্রাজিল।
৯০ মিনিটের খেলা শেষে দু’দলের পার্থক্যটা ছিল পরিষ্কার। প্যারাগুয়ের গোলমুখে ২৬টি আক্রমণের বিপরীতে প্যারাগুয়ে করতে পেরেছে মাত্র কয়েকবার। ম্যাচে ব্রাজিলের পায়ে বল ছিল ৭১ শতাংশ সময়। তবে ফাউল, হলুদ কার্ড দু’দলের কপালেই সমানভাবে জুটেছে।
এদিন ম্যাচের আগেই ইনজুরিতে ছিটকে যান ব্রাজিলের ফার্নান্দিনিয়ো। নিষেধাজ্ঞার কারণে ছিলেন না ক্যাসেমিরো। ফলে অ্যালেন ও আর্থারকে নিয়ে মিডফিল্ড সাজান কোচ তিতে। অসুস্থতার জন্য ছিলেন না রিচার্লসন, তাই এভারটন ও জাসুসের সঙ্গে ফিরমিনো আক্রমণভাগের দায়িত্বে আনেন। আর কটিনিয়োতো ছিলেনই।
শুরু থেকেই ব্রাজিলকে ঠেকাতে রক্ষণাত্নক ভূমিকায় নামে প্যারাগুয়ে। যাহোক, তৃতীয় মিনিটেই গোলের সুযোগ পায় ব্রাজিল। কিন্তু প্যারাগুয়ের ডি-বক্সের ভেতর বল পেয়েও গোলরক্ষক ফার্নান্দেজের হাতে তুলে দেন ফিরমিনো। তবে এরপরে রক্ষণ আরও জমাট করে তোলে প্যারাগুয়ে।
২৯তম মিনিটে অল্পের জন্য গোল মিস করে প্যারাগুয়ে। পেরেজের কাছ থেকে বল পেয়ে শট নিয়েছিলেন প্যারাগুয়ের গঞ্জালেস, কিন্তু ব্রাজিল গোলরক্ষক আলিসন সেই শট ঠেকিয়ে দেন। ব্রাজিলও বেশ কিছু চেষ্টা চালায়, তবে প্যারাগুয়ের জমাট রক্ষণভাগ ভেদ করতে না পারায় প্রথমার্ধ শেষ হয় গোলশূন্যভাবে।
দ্বিতীয়ার্ধে ব্রাজিলের আক্রমণ বাড়তে থাকে। ৫৪তম মিনিটে পেনাল্টি পেয়েই গিয়েছিল ব্রাজিল। ফিরমিনোকে নিজেদের ডি-বক্সের সামনে ফেলে দিয়েছিলেন প্যারাগুয়ের ব্যালবুয়েনা। কিন্তু রেফারি ভিএআর-এর সহায়তা নিয়ে সিদ্ধান্ত বাতিল করেন; বরং তিনি ব্যালবুয়েনাকে সরাসরি লাল কার্ড দেখিয়ে দেন। পেনাল্টি বদলে যায় ফ্রি-কিকে, ১০ জনের দলে পরিণত হয় প্যারাগুয়ে।
একজন কমে গেলেও ব্রাজিলের ফরোয়ার্ডদের কোনো সুযোগ দেয়নি প্যারাগুয়ে; বরং গোলরক্ষক ফার্নান্দেজ অত্যন্ত সাফল্যের সঙ্গেই ঠেকিয়ে রাখেন বিশ্বের অন্যতম সেরা আক্রমণভাগকে। ৭৫তম মিনিটে জাসুসের শট কয়েক ইঞ্চি ব্যবধানে গোলপোস্ট মিস করে।
ম্যাচের শেষদিকে ফার্নান্দেজকে কয়েকবার কঠিন পরীক্ষায় ফেলে ব্রাজিল; কিন্তু তাঁকে পরাস্ত করতে পারেনি।
ব্রাজিলের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ ছিল টাইব্রেকার; কেননা ২০১১ ও ২০১৫ কোপার আসরে প্যারাগুয়ের কাছেই টাইব্রেকারে হেরে বিদায় নিতে হয়েছিল দলটিকে। শেষ পর্যন্ত সেই টাইব্রেকারেই গড়ায় খেলা, আর তাতে ফিরমিনো মিস করা সত্ত্বেও জয়ের স্বস্তি নিয়ে মাঠ ছাড়েন কটিনিয়োরা।
আজ বাংলাদেশ সময় দিবাগত রাত ১টায় দ্বিতীয় কোয়ার্টার-ফাইনালে মুখোমুখি হবে আর্জেন্টিনা-ভেনেজুয়েলা। এই ম্যাচের জয়ী দলের বিপক্ষে সেমিফাইনালে লড়বে ব্রাজিল।