loader image for Bangladeshinfo

শিরোনাম

  • কুমিল্লা ইপিজেড-এ চামড়া কারখানা করবে চীনা প্রতিষ্ঠান

  • নারী এশিয়া কাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশের গ্রুপে শ্রীলংকা

  • অস্ট্রেলিয়ার কাছে হোয়াইটওয়াশ হলো টাইগ্রেসরা

  • ১৯৭৫ সালের পর বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী

  • প্রীতি ম্যাচে পিছিয়ে পড়েও আর্জেন্টিনার জয়

চীন সফর দু’দেশের সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে: প্রধানমন্ত্রী


চীন সফর দু’দেশের সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তাঁর সাম্প্রতিক চীন সফরে বাংলাদেশ ও চীন দু’ দেশের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে। শেখ হাসিনা সোমবার (৮ জুলাই) তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে সাম্প্রতিক চীন সফর নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ-কথা বলেন। খবর স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের।

প্রধানমন্ত্রী চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তাঁর দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের প্রসঙ্গে বলেন, “চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির প্রশংসা করে বলেছেন, আমরা পরস্পরের সত্যিকারের বন্ধু হয়ে থাকবো। আমরা দুই প্রতিবেশী দেশ উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে রয়েছি।”

“তাঁর দেশ সবসময় বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রচেষ্টার পাশে রয়েছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। একইসঙ্গে চীনের প্রেসিডেন্ট দু’দেশের মধ্যকার সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে একমত হন”, বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।

ওয়ার্ল্ড ইকোনামিক ফোরাম (ডব্লিউইএফ)-এ অংশ নিতে এবং চীনের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় অংশগ্রহণের জন্য চীনের প্রধানমন্ত্রী লি খোচাং-এর আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১ জুলাই থেকে ৬ জুলাই পর্যন্ত এই সফর করেন।

অটিজম অ্যান্ড নিউরো ডেভেলপমেন্ট ডিজঅর্ডারস-এর জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপারসন সায়মা ওয়াজেদ হোসেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো.শাহরিয়ার আলম এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতিসহ উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল তাঁর সফরসঙ্গী ছিলেন। এছাড়া, একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যান।

শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর এবারের চীন সফরে দ্বিপাক্ষিক বিষয় ছাড়াও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রী লি খোচাং, প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং চীনা নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠকে তিনি বিষয়টি জোরালোভাবে তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, “এসব আলোচনার সময় সকল নেতাই বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নিয়েছেন এবং এই সমস্যা সমাধানে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন।”

তিনি চীনের দালিয়ান শহরে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম (ডব্লিউইএফ)-এর অ্যানুয়াল মিটিংয়ে যোগদান করেন এবং ‘কোঅপারেশন ইন দি প্যাসিফিক রিম’ শীর্ষক প্যানেল আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। প্রধানমন্ত্রীর এই সফরে ঢাকা ও বেইজিং-এর মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা-সংক্রান্ত নয়টি চুক্তি ও স্বাক্ষরিত হয়।

প্রধানমন্ত্রী লিখিত বক্তৃতায় বলেন, ২ জুলাই সকালে তিনি ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বার্ষিক সভায় যোগদান করেন। চীনের প্রধানমন্ত্রী লি খোচাং এই সভা উদ্বোধন করেন। বিকেলে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ক্লাউস সোয়াবের সঙ্গে তাঁর দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হয়। প্রফেসর সোয়াব জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিক এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করবেন বলে জানান। ২০২১ সালে দাভোসে ফোরামের মূল ফোকাস হবে বাংলাদেশ।

এরপর তিনি ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম আয়োজিত প্যাসিফিক রিম সহযোগিতা-সংক্রান্ত একটি প্যানেল আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। এই আলোচনায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যে-বিষয়গুলোর উপর গুরুত্বারোপ করেন তা হলো -

১. টেকসই উন্নয়নের সবদিকে দৃষ্টি প্রদান

২. দেশগুলোর পারস্পরিক স্বার্থে বিশ্বাস ও শ্রদ্ধার ভিত্তিতে সম্পর্ক গড়ে তোলা

৩. সবার জন্য সম্পদ সৃষ্টির লক্ষ্যে সার্বিক উন্নয়ন এবং

৪. প্রতিদ্বন্দ্বিতা নয়, সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার পরিবেশ তৈরি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দালিয়ানে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বার্ষিক সভায় যোগদান শেষে ৩ জুলাই সকালে তিনি বেইজিং পৌঁছান। চীনের ভাইস ফরেন মিনিস্টার কিং গ্যাং বিমানবন্দরে তাঁকে অভ্যর্থনা জানান এবং চীনের সশস্ত্রবাহিনীর একটি সুসজ্জিত দল তাঁকে গার্ড অফ অনার প্রদান করে।

৪ জুলাই সকালে চীনের গ্রেট হলে প্রধানমন্ত্রী লি খোচাং-এর সঙ্গে তাঁর দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “গ্রেট হল চত্বরে পৌঁছালে চীনের প্রধানমন্ত্রী আমাকে স্বাগত জানান। পরে তিনবাহিনীর একটি চৌকস দল গার্ড অফ অনার প্রদান করে।”

চীনের প্রধানমন্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে তিনি সালাম গ্রহণ করেন এবং গার্ড পরিদর্শন করেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ-সময় বাংলাদেশ ও চীনের জাতীয় সঙ্গীত বাজানো হয় এবং তোপধ্বনি দেয়া হয়।

দ্বিপাক্ষিক আলোচনার শুরুতেই চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ায় চীনা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানান এবং বাংলাদেশ থেকে মায়ানমারের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে মায়ানমার সরকারকে সম্মত করতে চেষ্টা করবেন বলে তাঁকে আশ্বস্ত করেন।

চীনের প্রধানমন্ত্রী বলেন, “রোহিঙ্গা সমস্যা বাংলাদেশের জন্য একটি বড় সমস্যা। তিনি উল্লেখ করেন, চীন তার পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে দু’বার মায়ানমারে পাঠিয়েছে। আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধানে প্রয়োজনে তাঁরা আবারও মন্ত্রীকে মায়ানমারে পাঠাবে।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বৈঠকে তিনি উন্নয়নের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে এই অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতার উপর গুরুত্বারোপ করেন এবং রোহিঙ্গা সঙ্কটের কারণে এই শান্তি ও স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

সরকার-প্রধান বলেন, দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় পাঁচটি বিষয় গুরুত্ব পেয়েছে। এগুলো হলো অর্থনৈতিক বিকাশ ও বাণিজ্য, প্রকল্প বাস্তবায়ন-সংক্রান্ত বিষয়, বিসিআইএম বা যোগাযোগ ব্যবস্থা, ভিসা সংক্রান্ত এবং রোহিঙ্গা ইস্যু।

তিনি বলেন, চীনা প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের অংশীদার হিসেবে আখ্যায়িত করেন। চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি কৌশলগত অংশীদারিত্ব রয়েছে। তিনি এটিকে আরও উচ্চ স্তরে নিয়ে যেতে চান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, চীনের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় চীনের সমর্থন অব্যাহত রাখার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।

“আমরা উভয়েই আশা করি এই সম্পর্ক আগামীতে আরও গভীর ও জোরদার হবে।”

শেখ হাসিনা বলেন, তিনি দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্য-বৈষম্য দূর করার জন্য বাংলাদেশে আরও বেশি বিনিয়োগ করতে এবং ফিরতি ক্রয়ের গ্যারান্টিসহ আরও কলকারখানা গড়ে তোলার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “বাংলাদেশে ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে উল্লেখ করে আমি এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে চীনকে বিনিয়োগে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই। লি খোচাং বাণিজ্য-বৈষম্য কমিয়ে আনতে কাজ করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “২০১৬ সালে চীনের প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফরকালে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে বেশ কিছু চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছিল। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার উপরও আমি গুরুত্বারোপ করি।”

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তিনি চীনের প্রতি ঋণচুক্তির শর্ত সহজ করার এবং প্রকল্প বাস্তবায়নে সঠিক সময়ে তহবিল ছাড়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান এবং চীনের প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি বিবেচনার আশ্বাস দেন।

এছাড়া প্রধানমন্ত্রী, ডেল্টা পরিকল্পনা ২১০০ বাস্তবায়ন, একটি জলবায়ু অভিযোজন কেন্দ্র স্থাপন এবং তিস্তা নদীর সার্বিক ব্যবস্থাপনা ও পুনরুদ্ধার প্রকল্প বাস্তবায়ন, সেইসাথে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার দ্রুতগামী ট্রেন যোগাযোগ প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া গতিশীল করতেও চীনের সহায়তা কামনা করেছেন।

তিনি বলেন, “আমি চীনের প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশি পাসর্পোটধারী - বিশেষ করে ছাত্র ও ব্যবসায়ীদের জন্য ভিসা-প্রক্রিয়া সহজ করার আহ্বান জানাই। এ-অঞ্চলের বাজারগুলোকে সংযুক্ত করতে আমরা উভয় দেশ বিসিআইএম করিডোর দ্রুত বাস্তবায়নে সম্মত হই। পরে প্রধানমন্ত্রী লি খোচাং-এর দেওয়া এক ভোজসভায় যোগদান করি। আমাদের উভয়ের উপস্থিতিতে নয়টি চুক্তি ও সমঝোতা দলিল স্বাক্ষরিত হয়।” দলিলগুলো হলো:

১. রোহিঙ্গা শরণার্থীদের খাদ্য সাহায্য সংক্রান্ত এল.ও.ই

২. সাংস্কৃতিক বিনিময় ও পর্যটন কর্মসূচি নিয়ে সমঝোতা স্মারক

৩. ইয়ালু ঝাংবো ও ব্রহ্মপুত্র নদীর তথ্য বিনিময়সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক ও তা বাস্তবায়নের পরিকল্পনা

৪. ডিপিডিসির আওতাধীন এলাকায় বিদ্যুৎ-ব্যবস্থা সম্প্রসারণ ও শক্তিশালীকরণ নিয়ে ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট 

৫. বাংলাদেশ ও চীন সরকারের মধ্যে অর্থনীতি ও কারিগরি সহযোগিতাবিষয়ক চুক্তি

৬. বিনিয়োগ সহযোগিতা ওয়ার্কিং গ্রুপ প্রতিষ্ঠা নিয়ে সমঝোতা স্মারক

৭. পিজিসিবি প্রকল্পের আওতায় বিদ্যুৎ গ্রিড নেটওয়ার্ক জোরদার প্রকল্পের জন্য ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট

৮. ডিপিডিসির আওতাধীন এলাকায় বিদ্যুৎ-ব্যবস্থা সম্প্রসারণ ও শক্তিশালীকরণ নিয়ে গভর্নমেন্ট কনসেশনাল লোন এগ্রিমেন্ট

৯. ডিপিডিসির আওতাধীন এলাকায় বিদ্যুৎ-ব্যবস্থা সম্প্রসারণ ও শক্তিশালীকরণ নিয়ে প্রিফারেনশিয়াল বায়ার্স ক্রেডিট লোন এগ্রিমেন্ট

ঐদিন বিকেলে চায়না কাউন্সিল ফর দি প্রোমোশন অফ ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড আয়োজিত চীনা ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের সঙ্গে এক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি মূল প্রবন্ধ পাঠ করেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এ-সময় বাংলাদেশে ব্যবসার বিভিন্ন অনুকূল পরিবেশ এবং সুযোগ-সুবিধার কথা তুলে ধরে আমি চীনের শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানাই। চীনের ব্যবসায়ী নেতারা বাংলাদেশের চলমান আর্থসামাজিক উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং তাঁরা এই অগ্রযাত্রায় অংশগ্রহণে আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন।”

৫ জুলাই সন্ধ্যায় দিয়াওউয়াতি রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে প্রধানমন্ত্রী চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে মিলিত হন এবং অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক বিষয় ছাড়াও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “বাংলাদেশ বর্তমানে ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিচ্ছে - যা দেশের জন্য পরিবেশ ও নিরাপত্তার দিকে থেকে একটি বড় চ্যালেঞ্জ।’ তিনি বলেন, “রোহিঙ্গারা যাতে তাঁদের নিজভূমিতে ফিরে যেতে পারে সেজন্য আমি প্রেসিডেন্টকে চীনের গুড উইল কাজে লাগানোর অনুরোধ জানাই।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “চীনের প্রেসিডেন্ট মনে করেন রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুরা বাংলাদেশের জন্য একটি বড় সমস্যা এবং কিভাবে এর সমাধান করা যায় এনিয়ে চীন কাজ করবে বলে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন।”

চীনের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, “আমরা এ-সঙ্কট সমাধানে যতোটা সম্ভব চেষ্টা করবো। বাংলাদেশ ও মায়ানমার - দু’দেশই আমাদের ঘনিষ্ট বন্ধু। আমাদের কাছে দু’দেশই সমান, কেউ কম বা বেশি নয়।”

ভোজসভায়ও এই আলোচনা উঠে আসে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী চীনের প্রেসিডেন্টের বক্তব্য তুলে ধরেন। শি জিনপিং বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেন, “চীনের প্রেসিডেন্ট আমাকে বলেছেন, আমরা পরস্পরের সত্যিকারের বন্ধু হয়ে থাকবো। তিনি বাংলাদেশকে চীনের বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী উল্লেখ করে বলেন, ‘আমরা দুই প্রতিবেশী দেশ উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে রয়েছি।”

চীনের প্রেসিডেন্ট বলেছেন তাঁর দেশ সব সময় বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রচেষ্টার পাশে রয়েছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। “আমরা দু’দেশের মধ্যকার সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে একমত হই”, বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর সঙ্গেও দুদেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তিসমূহ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার বিষয়ে আলোচনা হয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সময়মতো তহবিল ছাড়, ঋণচুক্তির শর্তাবলী সহজ করার জন্য চীনের প্রেসিডেন্টের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে। জবাবে তিনি এ-ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দেন।

শেখ হাসিনা বলেন, চীনের প্রেসিডেন্ট বাণিজ্যিক ভারসাম্যহীনতা হ্রাসে প্রচেষ্টা চালাবেন বলে আশ্বাস দেন। তিনি বাংলাদেশে বিনিয়োগে চীনের বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করবেন বলেও জানিয়েছেন। চীনের প্রেসিডেন্ট ক্লাইমেন্ট অ্যাডাপশন সেন্টার প্রতিষ্ঠা এবং তিস্তা নদীর সার্বিক ব্যবস্থাপনা ও পুনরুদ্ধার প্রকল্প বাস্তবায়নে চীনের আর্থিক সহায়তায় কথা বিবেচনার আশ্বাস দেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশ ও চীন জাতিসংঘে একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে। এছাড়া বিসিআইএম অর্থনৈতিক করিডোর বাস্তবায়নের উপর গুরুত্বারোপ করি। পরে চীনের প্রেসিডেন্টের দেওয়া নৈশভোজে অংশ নিই।”

তিনি বলেন, চীনের প্রধানমন্ত্রী এবং প্রেসিডেন্ট ছাড়াও কমিউনিস্ট পার্টির প্রভাবশালী দুই নেতার সঙ্গে তাঁর দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হয়েছে।

৪ জুলাই বিকেলে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির নেতা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী সং তাও-এর সঙ্গে তাঁর বৈঠকে উভয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং চীন কমিউনিষ্ট পার্টির মধ্যে আরও ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ বৃদ্ধির বিষয়ে একমত হন। তিনি বলেন, সিপিসি নেতা সমঝোতার ভিত্তিতে রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে মায়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সুচি ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।

বাংলাদেশে ব্যাপক উন্নয়নের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে সং তাও বলেন বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় চীনের সমর্থন অব্যাহত থাকবে। বঙ্গবন্ধুর ডায়েরি থেকে ‘নতুন চীন’ নামে প্রকাশিতব্য বইটি চীনা ভাষায় অনুবাদ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন সং তাও, বলেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এনপিসি’র স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান লি ঝানসু’র সঙ্গে বৈঠকে তিনি দুই দেশের রাজনীতিবিদ ও আইনপ্রণেতাদের মধ্যে আরও ঘনিষ্ট যোগাযোগ বৃদ্ধির বিষয়ে কাজ করার অঙ্গীকার করেছেন।

তিনি বলেন, “৩ জুলাই বিকেলে আমি চীনে বসবাসরত বাঙালিদের এক সংবর্ধনা সভায় যোগদান করি। এছাড়া চীনের প্রভাবশালী ইংরেজি ভাষার টিভি চ্যানেল সিজিটিএন আমার একটি সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে তা প্রচার করে।

চীনে তাঁর সফর শেষে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে যৌথ বিবৃতি গৃহীত হয়, বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।

Loading...