loader image for Bangladeshinfo

শিরোনাম

  • কুমিল্লা ইপিজেড-এ চামড়া কারখানা করবে চীনা প্রতিষ্ঠান

  • নারী এশিয়া কাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশের গ্রুপে শ্রীলংকা

  • অস্ট্রেলিয়ার কাছে হোয়াইটওয়াশ হলো টাইগ্রেসরা

  • ১৯৭৫ সালের পর বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী

  • প্রীতি ম্যাচে পিছিয়ে পড়েও আর্জেন্টিনার জয়

মানব-পাচার প্রতিরোধে প্রয়োজন সমন্বিত প্রচেষ্টা


মানব-পাচার প্রতিরোধে প্রয়োজন সমন্বিত প্রচেষ্টা

মানব-পাচার ও অনিয়মিত অভিবাসন প্রতিরোধে সমন্বিত প্রচেষ্টার প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোঃ নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, এ-সমস্যা সমাধানে সরকারি-বেসরকারি সংস্থা, গণমাধ্যম ও অন্যান্য অংশীজনের সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। সোমবার (২৯ জুলাই) রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে সংস্থাটির অভিবাসন কর্মসূচি আয়োজিত এক পরামর্শ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই মন্তব্য করেন।

নজরুল ইসলাম বলেন, অনেকে বলছেন পাচার-রোধে সরকারের দিক থেকে কোনো চেষ্টা নাই। আমি বলবো চেষ্টা আছে, কিন্তু বিষয়টি সমন্বয়ের ক্ষেত্রে যে-ঘাটতি রয়েছে, দীর্ঘদিনের সরকারির চাকরির অভিজ্ঞতা থেকে সেটা আমার মনে হয়েছে। আমরার অনেক সহকর্মী (সরকারি কর্মকর্তা) এখানে রয়েছেন তাঁরা হয়তো স্বীকার করবেন যে, সমন্বয়ের ক্ষেত্রে আরও কিছু করার সুযোগ রয়েছে।

২০১২ সালে প্রণীত মানব-পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনটি কীভাবে আরও কার্যকর করা যায় সে বিষয়ে তিনি  বলেন, মানবাধিকার কমিশনের একটি দায়িত্ব হচ্ছে যত বিদ্যমান আইন রয়েছে এবং যেগুলো ভবিষ্যতে হবে সেসব পর্যালোচনা করে মানবাধিকারের দিকটা দেখা এবং সরকারকে পরামর্শ দেওয়া। মানবাধিকার কমিশন দায়িত্ব নিচ্ছে মানব পাচার আইনসহ আরও কিছু আইন পর্যালোচনা করার।  আমি বিশ্বাস করি যে, আইনটি ভালোভাবে পর্যালোচনা করা গেলে আরও নতুন কিছু তথ্য আমরা পাবো। কারণ গত সাত বছরের হিসেবে অনেক কিছুরই পরিবর্তন হয়েছে, সেগুলোকেও আমলে নেয়া যেতে পারে।

মানবাধিকার লঙ্ঘনবিষয়ক বার্ষিক প্রতিবেদনের অংশ হিসেবে মানব-পাচার পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন মানবাধিকার কমিশনের পক্ষ থেকেও করা হবে বলেও জানান তিনি। 

মানব-পাচার রোধ, নিয়মিত অভিবাসন ও অনিয়মিত অভিবাসনকে নিরুৎসাহী করতে গণমাধ্যম আরও বেশি ভুমিকা রাখতে পারে উল্লেখ করে নজরুল ইসলাম বলেন, জনসচেতনতা তৈরির ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের অনেক বেশি ভুমিকা রয়েছে। তাই এ-বিষয়ে গণমাধ্যম যদি আরও বেশি গুরুত্ব নিয়ে সংবাদ প্রচার করে, তবে মানব-পাচার প্রতিরোধ অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে।

তিনি বলেন বেশিরভাগ অভিবাসনপ্রত্যাশীই জানেন না, বিদেশ গিয়ে তাঁকে কি কাজ করতে হবে। এ-ব্যাপারে তাঁদের সঠিক তথ্য দিতে প্রচারণা চালানো যেতে পারে এবং একটু সম্মানজনক কাজের বাজার কোন দেশে রয়েছে সে-ব্যাপারে খোঁজ-খবর নেওয়া যেতে পারে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কমিটিগুলোকে আরও শক্তিশালী করা প্রয়োজন বলেও মত দেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।  

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আবু বকর সিদ্দিক বলেন, বাংলাদেশের মানুষতো খেয়েপরে খারাপ নেই; তবুও কেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অনিয়মিতভাবে বিদেশ যেতে হবে বা পাচারের শিকার হতে হবে? এক্ষেত্রে সিস্টেমের যেমন ত্রুটি রয়েছে তেমনি মানুষের লোভও কারণ। গত মে মাসে ভূমধ্যসাগরে অনেকে মারা গেলেন। এর কিছু দিন পরে আরও যাঁদেরকে জীবিত উদ্ধার করা হলো তাদের অনেকেই আসতে চাচ্ছে না, যেকোনোভাবেই হোক তাঁকে ইউরোপ পৌঁছতেই হবে। এক্ষেত্রে শুধু অজ্ঞতা নয়, লোভও দায়ী।

তিনি বলেন সব অনিয়মের মূলে রয়েছে দুর্নীতি। দুর্নীতি প্রতিরোধ করতে না পারলে সমাধান অসম্ভব। মানব-পাচার রোধে বেসরকারি সংস্থারগুলোর অবদানের কথা উল্লেখ করে আবু বকর সিদ্দিক বলেন, সরকারের সাথে সাথে বেসরকারি সংস্থাগুলোও মানব-পাচার প্রতিরোধে কাজ করে যাচ্ছে। এভাবে সমন্বিতভাবে কাজ করায় সরকারের জন্য কাজ করা সহজ হয়।

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের উপ-মহাপুলিশ পরিদর্শক মোঃ শাহ আলম বলেন, অনিয়মিতভাবে বিদেশ গিয়ে প্রতারণার শিকার হওয়া এবং পাচারের শিকার যাঁরা হন - তাঁরা বিভিন্ন চাপে পড়ে মামলা করতে পারেন না। যাঁরা মামলা করেন তাঁরাও আপোষ করে ফেলতে বাধ্য হন। কারণ এই ঘটনার রেশে তাঁর বিরুদ্ধে বা তাঁর কোনো ভাই-বোনের বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা দেওয়া হয়। তিনি বলেন, এমনও ঘটনা আছে একজনের বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা করায় তাঁর ভাইকে খুনের মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।

তাই কেউ বিদেশ গিয়ে প্রতারণার শিকার হলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সে-দেশ থেকেই যদি মামলা করার সুযোগ পায় তাহলে তাঁদের উদ্ধার কাজ এবং প্রতারকদের আইনের আওতায় আনার কাজ একই সঙ্গে করা যেতে পারে বলে মনে করেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।

সমাপণী বক্তব্যে ব্র্যাকের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ বলেন, মানব-পাচারের বিষয়টিকে সামষ্টিকভাবে দেখা দরকার। এ-সংক্রান্ত কার্যক্রমগুলো সমন্বয়ের দিক থেকে জবাবদিহির জায়গা তৈরি করা এবং দায়বদ্ধতার জায়গাগুলো শক্তিশালী করা প্রয়োজন। সমাজে সচেতনতা তৈরির জন্য প্রচারণা চালানোর ক্ষেত্রে প্রয়োজন নতুনত্ব আনা।

তিনি বলেন, মূলত অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতার কারণেই মানুষ পাচারের শিকার হচ্ছে বা অনিয়মিতভাবে বিদেশ যাচ্ছে। তাই তাঁদের জন্য দক্ষতাভিত্তিক প্রশিক্ষণ দিয়ে বিকল্প জীবিকার ব্যবস্থা করা যায় কিনা সে বিষয়টিও ভেবে দেখা যেতে পারে। সরকারের যেকোনো উদ্যোগে ব্র্যাক সবসময় সহযোগিতা করার জন্য প্রস্তুত বলেও উল্লেখ করেন তিনি। 

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধে ব্র্যাক অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল ইসলাম হাসান বলেন, ২০১২ সালে মানবপাচার আইন হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ৪ হাজার ৬৬৮টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে নিষ্পত্তি হওয়া হওয়া মামলার সংখ্যা খুবই নগণ্য। এখনও বিচারাধীন রয়েছে ৪ হাজার ১০৬টি মামলা।

তিনি বলেন, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মানব-পাচারবিষয়ক প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে টানা তৃতীয়বারের মতো টায়ার-২ ওয়াচ লিস্টে রাখা হয়েছে। গণমাধ্যমের প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশ থেকে মানব-পাচারের ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন উইনরক ইন্টারন্যাশনালের চিফ অফ পার্টি (কাউন্টার ট্রাফিকিং ইন পারসন) লিসবেথ জোনভেল্ড, ব্র্যাকের মানবাধিকার ও আইন সহায়তা কর্মসূচির পরিচালক জেনেফা জব্বার, সুইস এজেন্সি ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কোঅপরাশেনের (এসডিসি) প্রোগ্রাম ম্যানেজার নাজিয়া হায়দার।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই বিদেশ গিয়ে প্রতারণার শিকার হয়ে ফিরে আসা তিনজন ভুক্তভোগী তাঁদের দুর্ভোগের কথা তুলে ধরেন। 

পরামর্শ সভাটি আয়োজনে সহযোগিতা করেছে সুইস এজেন্সি ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কোঅপরাশেন (এসডিসি) ও রয়্যাল ড্যানিশ দূতাবাস।

– সংবাদ বিজ্ঞপ্তি

Loading...