loader image for Bangladeshinfo

শিরোনাম

  • নতুন করে আরও ৭২ ঘণ্টার তাবদাহের সতর্কতা জারি

  • সহকারী প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের সংশোধিত ফলাফল প্রকাশিত

  • অভিনেতা ওয়ালিউল হক রুমি আর নেই

  • এফএ কাপে টাইব্রেকারে জিতে ফাইনালে ম্যানইউ

  • ক্লাসিকোতে বার্সাকে হারিয়ে শিরোপার আরও কাছে রিয়াল

পবিত্র ঈদ-উল-আজহা সোমবার


পবিত্র ঈদ-উল-আজহা সোমবার

বাংলাদেশে সোমবার (১২ অগাস্ট) পবিত্র ঈদ-উল-আজহা উদযাপন করা হবে। বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা ও যথাযথ ধর্মীয় মর্যদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্যদিয়ে রাজধানীসহ সারাদেশে মুসলিম সম্প্রদায় ঈদ উদযাপন করবে। মহান আল্লাহর অনুগ্রহ লাভের জন্য ঈদের জামাত শেষে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা সামর্থ্য অনুযায়ী পশু কোরবানি করবেন।

সোমবার সকাল আটটায় রাজধানীর সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গণস্থ জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদের প্রধান জামাত হবে । তবে আবহাওয়া প্রতিকূলে থাকলে ঈদের প্রধান জামাত হবে সকাল সাড়ে আটটায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)’র ব্যবস্থাপনায় জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে অনুষ্ঠেয় প্রধান জামাতে নারীদের জন্য নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা রয়েছে। জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সার্বিক প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। ডিএসসিসি’র মেয়র সাঈদ খোকন রোববার সকালে জাতীয় ঈদগাহ ময়দান প্রস্তুতি কাজ সরেজমিন পরিদর্শন করেন। খবর স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের।

জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদের জামাতে নারীদের অংশ নেয়ার জন্য আলাদা প্রবেশপথ ও বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। মুসল্লিদের গাড়ি রাখা ও ঈদগাহকে নামাজ আদায়ের উপযোগি করার জন্য প্যান্ডেল নির্মাণ,অযুর পানি নিশ্চিত করা ইত্যাদি বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলেও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে।

পবিত্র ঈদ উপলক্ষে সরকারি-বেসরকারি ভবন, বিদেশস্থ বাংলাদেশ মিশনসমূহে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং জাতীয় পতাকা ও ‘ঈদ মোবারক’ লিখিত ব্যানার ঢাকা মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ ট্রাফিক আইল্যান্ড ও লাইটপোস্টে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া ঈদের দিবাগত রাতে নির্দিষ্ট সরকারি ভবনসমূহ ও সামরিক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসমূহে আলোকসজ্জা করা হবে।

সারাদেশে বিভাগ বা ও জেলা বা উপজেলা বা সিটি করপোরেশন বা পৌরসভা বা সশস্ত্রবাহিনী বিভাগ বা ওবসরকারি সংস্থাসমূহের প্রধানগণ জাতীয় কর্মসূচির আলোকে নিজ নিজ কর্মসূচি প্রণয়ন করে ঈদ উদযাপন করবে।

বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার ও বেসরকারি গণমাধ্যমসমূহ যথাযোগ্য গুরুত্ব সহকারে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার ও সংবাদপত্রসমূহে বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করবে।

ঈদ উপলক্ষে দেশের সকল হাসপাতাল বা কারাগার বা সরকারি শিশুসদন বা বৃদ্ধনিবাস বা মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে। 

বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস ও মিশনসমূহে যথাযথভাবে পবিত্র ঈদ উদযাপন করবে। এ-উপলক্ষে সারাদেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রক্ষার্থে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হবে। মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে রাষ্ট্রীয় নীতির সাথে সংগতিশীল ডকুমেন্টারি ফিল্ম বা চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হবে।

ঈদের দিন সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের বিনাটিকেটে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন-এর আওতাধীন সকল শিশু পার্কে প্রবেশ এবং বিনোদনের ব্যবস্থা করা হবে। ঈদের দিন সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের বিনাটিকেটে ঢাকা যাদুঘর, আহসান মঞ্জিল, লালবাগের কেল্লা ইত্যাদি দর্শনীয় স্থান প্রবেশ এবং তা প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হবে। 

বাংলাদেশ শিশু একাডেমিতে শিশুদের ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে।

কোরবানীকৃত পশুর রক্ত বা বর্জ্যে যাতে পরিবেশ দুর্গন্ধময় না হয় সে-বিষয়ে সকল প্রকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ঈদ-পূর্ববর্তী জুমার খুতবায় এ-বিষয়ে মুসল্লিদের সচেতন করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, প্রায় চার হাজার বছর আগে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য হজরত ইব্রাহিম (আ.) নিজ পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.)’কে কোরবানি করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু পরম করুণাময় হজরত ইসমাইল (আ.)-এর পরিবর্তে একটি দুম্বা কোরবানির আদেশ দেন। হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর ত্যাগের মহিমার কথা স্মরণ করে বিশ্বব্যাপী মুসলিম সম্প্রদায় হিজরি সনের জিলহজ্ মাসের ১০ তারিখে আল্লাহর অনুগ্রহ লাভের জন্য পশু কোরবানি করে থাকেন।

আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান মুসলিমের জন্য মহান আল্লাহ কোরবানি ফরজ করেছেন। ফলে কোরবানি করাই এ-দিনের উত্তম ইবাদত। সেই ত্যাগ ও আনুগত্যের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে সারাদেশের মুসলিম সম্প্রদায় সোমবার দিনের শুরুতেই ঈদগাহ বা মসজিদে সমবেত হবেন এবং ঈদের দু’রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায় করবেন। নামাজের খুতবায় খতিব তুলে ধরবেন কোরবানির তাৎপর্য।

প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে বরাবরের মতো এবারও রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বড় শহর থেকে অগণিত মানুষ নাড়ির টানে গেছেন গ্রামের বাড়িতে। ঈদ উপলক্ষে রোববার (১০ অগাস্ট) থেকে তিনদিনের সরকারি ছুটি শুরু হয়েছে।

রাজধানীর দুই সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে ৫৮২টি স্থানে ঈদ জামাতের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় জাতীয় ঈদগাহের প্রধান জামাতসহ ৩১২টি এবং উত্তর সিটি কর্পোরেশনে ২৭০ টি জামাত অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে। দেশের সবচেয়ে বড় ঈদের জামাত কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে হবে।

ঈদ উপলক্ষে জাতীয় মসজিদে পর্যায়ক্রমে পাঁচটি ঈদ-জামাত হবে। প্রথম জামাত সকাল সাতটা, দ্বিতীয় জামাত সকাল আটটা, তৃতীয় জামাত সকাল নয়টা, চতুর্থ জামাত সকাল দশটা এবং পঞ্চম ও সর্বশেষ জামাত সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে হবে।

জানা গেছে, জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে এবার ৯০ হাজার থেকে এক লাখ মুসল্লির জন্য নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এরমধ্যে পাঁচ থেকে ছয় হাজার নারী মুসল্লির জন্য আলাদাভাবে পর্দা দিয়ে নামাজ আদায়ের বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে। তাঁদের জন্য আলাদা প্রবেশ পথেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে।

জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় সকাল সাড়ে সাতটায় ঈদের জামাতের আয়োজন করা হয়েছে। এখানে মন্ত্রী পরিষদের সদস্যবর্গ, জাতীয় সংসদের হুইপবৃন্দ, সংসদ সদস্য ও সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ এলাকার মুসল্লিগণ জামাতে অংশ নেবেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ মসজিদুল জামিআয় দু’টি জামাত হবে। এখানে ঈদের প্রথম জামাত সকাল আটটায় এবং দ্বিতীয় জামাত সকাল নয়টায় হবে।

এছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হল মেইন গেইট সংলগ্ন মাঠে সকাল আট টায়, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হল লনে সকাল আটটায় এবং উত্তর নীলক্ষেত ও গিয়াসউদ্দিন আহমেদ আবাসিক এলাকার বায়তুস সালাম জামে মসজিদে সকাল আটটায় ঈদের জামাত হবে।

প্রতি বছরের মতো এবারও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় দেশের সর্ববৃহৎ ঈদের জামাত হবে। এবার জামাত শুরু হবে সকাল সাড়ে আটটায়। ইতোমধ্যে সেখানেও ঈদ জামাতের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। এবারও নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে চলছে ঈদ জামাতের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।

ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ঈদের নামাজ আদায়ের পর কোলাকুলি করে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন। নামাজ শেষে মুসল্লিদের অনেকেই যাবেন কবরস্থানে। চিরবিদায় নেওয়া স্বজনদের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে সজল চোখে এই আনন্দের দিনে তাঁদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে আল্লাহর দরবারে আকুতি জানাবেন। এরপর বাড়ি ফিরে আল্লাহর উদ্দেশ্যে পশু কোরবানির মধ্যদিয়ে ঈদের প্রধান কর্তব্য সম্পন্ন হবে।

পবিত্র জিলহজ মাসের ১০ তারিখে ঈদ-উল আযহা উদযাপিত হলেও পরের দুই দিনও পশু কোরবানি করার বিধান রয়েছে। 

ঈদের আনন্দ থেকে দরিদ্র-দুঃস্থরাও বঞ্চিত হবেন না। কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রির সমুদয় অর্থ এবং কোরবানি দেওয়া পশুর মাংসের তিন ভাগের এক ভাগ তাদের মধ্যে বন্টন করে দেওয়া হবে।

ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দও দেশবাসীকে ঈদ শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে নির্ধারিত স্থানগুলোতে পশু কোরবানির জন্য নগরবাসীকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। সেই সঙ্গে উভয় সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে কোরবানির পশুর বর্জ্য দ্রুত অপসারণের বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। দুই সিটি করপোরেশনের প্রয়োজনীয় সংখ্যক পরিচ্ছন্নতাকর্মী বর্জ্য অপসারণে নিয়োজিত থাকবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

Loading...