loader image for Bangladeshinfo

শিরোনাম

  • শেষ মুহূর্তের গোলে ইতালিয়ান কাপের ফাইনালে ইউভেন্টাস

  • আর্সেনালের কাছে পাঁচ গোলে উড়িয়ে গেলো চেল্সি

  • হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর

  • বেপজা অর্থনৈতিক জোনে চীনা কোম্পানির ১৯.৯৭ মি. ডলার বিনিয়োগ

  • কাতারের আমিরের ঢাকা ত্যাগ

সারাদেশে আনন্দ-উচ্ছ্বাসে ঈদ-উল-আযহা উদযাপন


সারাদেশে আনন্দ-উচ্ছ্বাসে ঈদ-উল-আযহা উদযাপন

ত্যাগের মহিমা নিয়ে যথাযোগ্য মর্যাদা, ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও আনন্দ-উচ্ছ্বাসের মধ্যদিয়ে সোমবার (১২ অগাস্ট) থেকে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে পবিত্র ঈদ-উল-আযহা উদযাপন করা হচ্ছে। দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ঈদের নামাজ ও পশু কোরবানির মধ্যদিয়ে পালন করছেন তাঁদের অন্যতম প্রধান এই ধর্মীয় উৎসব।

মহান আল্লাহ’র সন্তুষ্টি লাভের জন্য রাজধানী ঢাকাসহ দেশের ধর্মপ্রাণ লাখো-কোটি মানুষ ঈদগাহ, মসজিদ ও খোলা মাঠে ঈদের নামাজ আদায় করা হয়েছে। সকাল আটটায় রাজধানী ঢাকায় প্রধান ঈদ জামাত হাইকোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে অনুষ্ঠিত হয়। এই জামাতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন, প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, সংসদ সদস্য, সুপ্রিমকোর্ট ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি, সিনিয়র রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন মুসলিম দেশের কূটনীতিকবৃন্দসহ সর্বস্তরের হাজারো মানুষ নামাজ আদায় করেন।

নামাজ শেষে রাষ্ট্রপতি উপস্থিত সবার সাথে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। নামাজ শেষে বাংলাদেশসহ গোটা বিশ্বের মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনায় বিশেষ মোনাজাত করা হয়। এছাড়াও বিশেষ মোনাজাতে চাওয়া হয় ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব থেকে মুক্তির। খবর স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন জাতীয় ঈদগাহের এই জামাতের আয়োজন করে। রাষ্ট্রপতি হামিদ ঈদগাহে পৌঁছলে সিটি মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন তাঁকে স্বাগত জানান। এই প্রধান জামাতে নারী ও বিদেশী কূটনীতিকদের নামাজ আদায়ে বিশেষ ব্যবস্থা ছিল। মুসুল্লিদের জন্য ওযু, খাবার পানি ও মোবাইল টয়লেটেরও ব্যবস্থা ছিল।

জাতীয় ঈদগাহে সুষ্ঠুভাবে ঈদ জামাত অনুষ্ঠানে নেয়া হয় বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ঈদগাহে সকল প্রবেশ পথ এবং ভিভিআইপি ও ভিআইপিদের নামাজের স্থানসহ ঈদগাহ মাঠের গোটা প্যান্ডেলে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়। প্রধান জামাতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সাদা পোশাকে র‌্যাব এবং পুলিশ সদস্যরা ঈদগাহ ময়দানে সার্বক্ষণিক তৎপর ছিলেন।

ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন এবার ৫৮২টি স্থানে ঈদ-জামাতের আয়োজন করে। দক্ষিণ সিটির ৫৭টি ওয়ার্ডের প্রত্যেকটিতে চারটি করে এবং জাতীয় ঈদগাহ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মাঠসহ মোট ২৩০টি স্থানে ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয় এবং উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৩৬টি ওয়ার্ডে মোট ১৭৯টি ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়।

রাজধানীতে দ্বিতীয় বৃহত্তম জামাত অনুষ্ঠিত হয় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে। এখানে এবারও পাঁচটি ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম জামাত হয় সকাল সাতটায়। এর পরপর আর চারটি জামাত যথাক্রমে আটটা, নয়টা, ১০টা ও পৌনে ১১টায় অনুষ্ঠিত হয়।

জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় সকাল সাড়ে সাতটায় ঈদের জামাতের আয়োজন করা হয়। এখানে চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী এমপি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, স্পিকারের স্বামী সৈয়দ ইশতিয়াক হোসাইন, ত্রাণ ও দূর্যোগ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ বি তাজুল ইসলাম, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি মোঃ মুজিবুল হক, সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব ড. জাফর আহমেদ খানসহ সংসদ সচিবালয়ের কর্মচারীবৃন্দ এবং এলাকার মুসল্লীরা ঈদের জামাতে অংশ নেন। নামাজ শেষে দেশ ও জাতির কল্যাণ, সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ মসজিদুল জামিআয় ঈদের দু’টি জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রথম জামাত হয় সকাল ৮টায় এবং দ্বিতীয় জামাত হয় সকাল ৯টায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হল মেইন গেইট সংলগ্ন মাঠে সাড়ে সাতটায় ও ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ হল লনে সকাল আটটায় পৃথক দু’টি ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়।

এছাড়া রাজধানীর আরামবাগে দেওয়ানবাগ শরীফে ঈদের তিনটি জামাত অনুষ্ঠিত হয়। প্রথমটি সকাল আটটা, দ্বিতীয়টি সকাল সাড়ে নয়টা এবং শেষ জামাত সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত হয়। নামাজ শেষে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা মহান আল্লাহপাকের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ, তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন এবং তাঁরই রাস্তায় সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের মহিমায় কোরবানী করছেন। অনেকে আগামীকাল মঙ্গলবারও তার পরদিনও কোরবানি করবেন।

মুসলিমদের অন্যতম প্রধান এই ধর্মীয় উৎসব উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে পৃথক বাণী দিয়েছেন।

এদিন বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ ও আমন্ত্রিত অতিথিদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

ঈদ উপলক্ষে গত রোববার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত তিনদিনের সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। নগরীর লাখ লাখ বাসিন্দা গ্রামের বাড়িতে আপনজন ও আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে ঈদের খুশি ভাগাভাগি করতে ইতোমধ্যে রাজধানী ছেড়ে গেছেন।

পবিত্র এই দিনটিতে উৎসবের আমেজ দিতে রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও সড়ক দ্বীপসমূহে জাতীয় ও ঈদ মোবারক খচিত পতাকা দিয়ে সুশোভিত করা হয়েছে। এর পাশাপাশি সকল সরকারি-বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা ও ঈদ মোবারক খচিত পতাকা উত্তোলন করা হয়। এছাড়াও নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবনগুলো আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়।

ঈদ উপলক্ষে কেন্দ্রীয় কারাগারসহ দেশের সকল কারাগার, সরকারি হাসপাতাল, ভবঘুরে কল্যাণ কেন্দ্র, বৃদ্ধাশ্রম, শিশুসদন, ছোটমনি নিবাস, সামাজিক প্রতিবন্ধী কেন্দ্র, সরকারি আশ্রয় কেন্দ্র, সেফ হোম্স, দুস্থ কল্যাণ কেন্দ্র এবং শিশু ও মাতৃসদনে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হয়।

প্রতি বছরের মতো এবারও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় দেশের বৃহত্তম ঈদের জামাত সকাল সাড়ে আটটায় অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেসরকারি টিভি চ্যানেল ও রেডিও বিনোদনমূলক বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচারের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এছাড়াও যথাযোগ্য মর্যাদা ও আনন্দ উৎসবের মধ্যদিয়ে ঈদ উদযাপনের লক্ষ্যে জাতীয় পর্যায়ের সঙ্গে সমন্বয় রেখে স্থানীয় পর্যায়ে জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভাগুলো দেশব্যাপী ঈদ উৎসব করছে।

বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসসমূহে সরকারি কর্মসূচির আলোকে ঈদ উদযাপনের ব্যবস্থা নেয়া হয়।

ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে কোরবানির পশুর বর্জ্য দ্রুত অপসারণের বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

Loading...