loader image for Bangladeshinfo

শিরোনাম

  • শেষ মুহূর্তের গোলে ইতালিয়ান কাপের ফাইনালে ইউভেন্টাস

  • আর্সেনালের কাছে পাঁচ গোলে উড়িয়ে গেলো চেল্সি

  • হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর

  • বেপজা অর্থনৈতিক জোনে চীনা কোম্পানির ১৯.৯৭ মি. ডলার বিনিয়োগ

  • কাতারের আমিরের ঢাকা ত্যাগ

মন্ত্রণালয়কে অগ্রাধিকারভিত্তিতে প্রকল্প গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী


মন্ত্রণালয়কে অগ্রাধিকারভিত্তিতে প্রকল্প গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যথাযথভাবে বাজেট বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার জন্য মন্ত্রণালয়গুলোকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রকল্প গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা বাজেট দিয়েছি এবং উন্নয়ন প্রকল্প নিয়েছি। কিন্তু তা বাস্তবায়নে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়কে প্রকল্প অনুযায়ী তাদের কাজের অগ্রাধিকার ঠিক করতে হবে।”

এ-প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী তাঁর কার্যালয়কে (পিএমও) বিষয়টির উপর লক্ষ্য রাখার নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘যেহেতু আমাদের একটা ভালো সেটআপ আছে তাই এই দপ্তর থেকেই এই বিষয়টা নিয়ে নজরদারি করা দরকার যাতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়গুলো তাদের কাজের অগ্রাধিকার ঠিক করতে পারে, আমাদের অর্জনগুলো আমরা ধরে রাখতে পারি।’

শেখ হাসিনা রোববার (১৮ অগাস্ট) তাঁর তেজগাঁওস্থ কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়কালে প্রদত্ত ভাষণে এ-কথা বলেন। খবর স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার বিশাল বাজেট পেশ করেছে এবং মন্ত্রণালয়গুলোকে অগ্রাধিকার নিয়ে তাদের ভৌত কাজ বন্যার পরই যাতে শুরু করা যায় - সে-লক্ষ্যে পেপার ওয়ার্ক শেষ করে দ্রুত উন্নয়ন কাজ করতে হবে।

তিনি উল্লেখ করেন, প্রাকৃতিক নিয়মেই বাংলাদেশে বন্যা হবে এবং এ-দেশের মানুষকে প্রকৃতির সঙ্গেই বসবাস করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বন্যার পরই বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজের গতি বাড়াতে হবে যাতে প্রকল্প সঠিক সময়ে সম্পন্ন হয় এবং দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়। দারিদ্র্য বিমোচনের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে আরও সক্রিয় দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘প্রত্যেকটি এলাকায় একটু খোঁজ নেয়া দরকার আমরা সতর্ক করে দিয়েছি কোন এলাকায় কেউ গৃহহীন থাকবে না, কেউ ভিক্ষা করবে না। যেখানেই গৃহহীন থাকবে তাদের একটা ঘর করে দিতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী এ-সময় তাঁর ‘ঘরে ফেরা’ কর্মসূচি পুনরায় চালুর ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, ‘যাঁরা ঘরে ফিরে যেতে চায়, তাঁদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ হিসেবে আমরা বস্তিবাসীর উপর সার্ভে করেছিলাম। এই কাজগুলো আবার করতে হবে।’ তিনি ‘শান্তি নিবাস’ এবং ‘অবসর’ কর্মসূচিও পুনরায় চালুর কথা বলেন।

তাঁর সরকার প্রবৃদ্ধি ৮.১ ভাগে উন্নীত করেছে এবং এরপর আরও যত উপরে ওঠার চেষ্টা করা হবে অর্থনীতির নিয়ম অনুযায়ীই তা দুরূহ হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী এ-সময় কাজের প্রতি সকলকে যত্নবান হওয়ার পরামর্শ দেন।

তিনি বলেন, “এখন কিন্তু অত দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব হবে না, অর্থনীতির নিয়ম অনুযায়ীই এটা হয়ে থাকে। আর এর থেকে যেন পিছিয়ে না যাই সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, ড. মশিউর রহমান এবং ড. তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী, পিএমও’র এসডিজি-বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক মো. আবুল কালাম আজাদ, পিএমও সচিব সাজ্জাদুল হাসান, প্রেস সচিব ইহসানুল করিম এবং প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার মো. নজরুল ইসলাম এ-সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো.নজিবুর রহমান অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।

দুর্নীতি প্রতিরোধ ও দুর্নীতি দমনে তাঁর সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যে ঘুষ খাবে সে-ই কেবল অপরাধী নয়, যে দেবে সে-ও অপরাধী। এই বিষয়টা মাথায় রেখেই পদক্ষেপ নিলে এবং এ-বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ হলে অনেক কাজ আমরা দ্রুত করতে পারবো।’

এ-সময় তাঁর সরকারের দুর্নীতি দমন কমিশন সক্রিয় থাকার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী উপার্জন অনুযায়ী ট্যাক্স প্রদানের বিষয়টিও লক্ষ্য রাখার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “কে কতো ট্যাক্স দিলো, আর কে কতো খরচ করলো - তারও একটা হিসেব নেয়া দরকার।”

দেশের কয়েকটি অঞ্চলে বন্যা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আষাঢ়, শ্রাবণ ও ভাদ্র মাসে বাংলাদেশে বৃষ্টি ও বন্যা হয় এবং এটা স্বাভাবিক। তবে, এতে জান-মালের ক্ষয়-ক্ষতি যেন কম হয় সেদিকে সবাইকে লক্ষ্য রাখতে হবে এবং বন্যা মোকাবেলায় যে-দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে - সেটাও বাস্তবায়ন করতে হবে।

বাংলাদেশ পলিবাহিত ব-দ্বীপ হওয়ায় এর মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি এবং ভূগর্ভস্থ পানির স্তর রক্ষায় বন্যার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “কিন্তু এর ক্ষতিটা আমাদের কমিয়ে আনতে হবে। যেকোনো পরিকল্পনায় মাথায় রাখতে হবে - বন্যা বন্ধ করে নয় বরং বন্যার সঙ্গে বসবাস করা আমাদের শিখতে হবে।”

দেশে ডেঙ্গু-সমস্যা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে আরও সচেতন থাকার এবং এ-বিষয়ে চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনে চলার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, এবার শুধু আমাদের দেশেই নয়, আশপাশের অনেক দেশেই ডেঙ্গু দেখা গেছে। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশে মহামারি আকারে যেমন ফিলিপাইনে মহামারি আকারে দেখা গেছে।

প্রধানমন্ত্রী এ-সময় ডেঙ্গু প্রতিরোধে পিএমও ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং সিটি কর্পোরেশনগুলোর প্রচেষ্টায় সন্তোষ প্রকাশ করে এ-ব্যাপারে জনগণকে সতর্ক এবং পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, নিজের ঘর-বাড়ি এবং কর্মস্থলের চারপাশের পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে সচেতন হতে হবে - যাতে কোথাও পানি জমে এই রোগ সৃষ্টিকারী লার্ভা জন্মাতে না পারে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখনও এই রোগের প্রকোপ অনেকটা রয়ে গেছে এবং বিভিন্ন জেলাতেও ছড়িয়ে পড়েছে। কাজেই এ-ব্যাপারে আমাদের আরেকটু সতর্ক হতে হবে। দেশের মানুষকে পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে আরো সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী নিজের কাজটি নিজেই করার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন।

দারিদ্র বিমোচন ও দেশের সার্বিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের সুযোগ রয়েছে উল্লেখ করে যেকোনো কাজে তাঁর কাছে যেকোনো সময় যে কাউকে আসার অনুমতি দেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “আমাকে জনগণ ভোট দিয়ে প্রধানমন্ত্রী করেছে এটা ঠিক, কিন্তু আমি জাতির পিতার কন্যা কাজেই সেই হিসেবে, মনে করি দেশের প্রতি আমার একটা দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। সেখানে প্রটোকলের বাধা আমি কখনো মানি না, মানতেও চাই না।”

শেখ হাসিনা বলেন, “আমি চাই সকলের সাথে মিশতে, জানতে এবং কাজ করতে। আমরা সকলে একটা টিম হিসেবে কাজ করবো যাতে দেশের উন্নয়নটা ত্বরান্বিত হয়।”

প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণের শুরুতে সকলকে পবিত্র ঈদ-উল আযহার শুভেচ্ছা জানিয়ে শোকের মাস অগাস্টে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা এবং ১৫ অগাস্টের শহীদদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন।

৭৫-এর ১৫ই অগাস্টের নির্মম হত্যাকান্ডের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পরিবার-পরিজন হারিয়ে এবং শোক ও ব্যথা নিয়ে জাতির পিতার আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্যই তিনি কাজ করে যাচ্ছেন।

এ-সময় প্রধানমন্ত্রী তাঁর সাম্প্রতিক যুক্তরাজ্য সফরের কথা উল্লেখ করে বলেন, চোখের চিকিৎসার কারণে তিনি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী দীর্ঘদিন দেশের বাইরে থাকতে বাধ্য হন।

Loading...