loader image for Bangladeshinfo

শিরোনাম

  • কুমিল্লা ইপিজেড-এ চামড়া কারখানা করবে চীনা প্রতিষ্ঠান

  • নারী এশিয়া কাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশের গ্রুপে শ্রীলংকা

  • অস্ট্রেলিয়ার কাছে হোয়াইটওয়াশ হলো টাইগ্রেসরা

  • ১৯৭৫ সালের পর বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী

  • প্রীতি ম্যাচে পিছিয়ে পড়েও আর্জেন্টিনার জয়

২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলায় জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করা হবে: প্রধানমন্ত্রী


২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলায় জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করা হবে: প্রধানমন্ত্রী

২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের এক শান্তি-সমাবেশে গ্রেনেড হামলার জন্য খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ তৎকালীন জোট সরকারকে পুনরায় অভিযুক্ত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এই জঘন্য ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বিএনপি-জামায়াত সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া এ-ধরনের হামলা কোনোদিনও ঘটা সম্ভব নয়।’ তিনি বলেন, ‘এটা একটি প্রমাণিত সত্য - যার জন্য মামলা করে এতোদিন পরে আমরা একটা রায়ও পেয়েছি, যা এখন উচ্চ আদালতে ডেথ রেফারেন্সে যাবে এবং আমরা আশা করি এর বিচার হবে।”

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার (২১ অগাস্ট) রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন ২১ অগাস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় হতাহতদের স্মরণে আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় সভাপতির ভাষণে এ-কথা বলেন। খবর স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা ঠিক - খালেদা জিয়াকে আসামী করা হয়নি; কিন্তু তাঁর প্রচ্ছন্ন সহযোগিতা রয়েছে। কারণ তিনি প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তাঁর যে সম্পূর্ণ দায়-দায়িত্ব রয়েছে সেটাতো অস্বীকার করা যায় না। আর তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন এবং লুৎফুজ্জামান বাবর স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ছিল। শেখ হাসিনা বলেন, উল্টাে তাঁরা দোষারোপ শুরু করলো - এটা আওয়ামী লীগ নিজে নিজেই করেছে।’ শেখ হাসিনা প্রশ্ন তোলেন - “আওয়ামী লীগ কেন এটা করবে? আমরা কি সুইসাইড করতে এসেছিলাম সেখানে?”

২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলার দিন পুলিশের তৎপরতায় বিস্ময় প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর আগে কোথাও মিটিং করতে চাইলে আওয়ামী লীগকে মিটিং করতে দেয়া হতো না। হাজার হাজার পুলিশ দিয়ে মিটিংয়ের জায়গা ঘিরে রাখা হতো। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় সেদিন কোনো পুলিশের তৎপরতাই ছিল না। সেদিন পুলিশের কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থাই ছিল না। পুলিশ ছিল নীরব। এমনকি আওয়ামী লীগের ভলান্টিয়ারদের পর্যন্ত বিএনপি-সরকার আশপাশের ভবনের ছাদে উঠে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করতে দেয়নি। নিজস্ব কোনো নিরাপত্তাবলয় সৃষ্টি করতেও সেদিন দেয়নি। তিনি প্রশ্ন তোলেন - কেন দেয়নি? প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ভাবতে অবাক লাগে যে এতবড় একট ঘটনা ঘটার পরেও সেখানে কোনো পুলিশি তৎপরতা বা আহতদের উদ্ধারের কোনো তৎপরতা ছিল না। উপরন্তু যেসব নেতা-কর্মীরা আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠাচ্ছিল পুলিশ তাদের ওপর লাঠিচার্জ করে এবং উপর্যুপরি টিয়ার সেল নিক্ষেপ করে।”

মামলার আলামত সংরক্ষণ না করে উল্টো পানির ট্রাক এনে আলামত ধুয়ে নষ্ট করে ফেলা হয় বলেও তৎকালীন সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন তিনি।

উল্লেখ্য, বিচারিক আদালতে রায়ের পর ২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলা-সংক্রান্ত দুটি মামলা হাইকোর্টে শুনানির পূর্বপ্রস্তুতির অংশ হিসেবে এখন মামলার বৃত্তান্ত (পেপার বুক) তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। মামলায় রায়ে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনের ফাঁসি, বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন এবং ১১ জনের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়েছে।

২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের সন্ত্রাস-বিরোধী সেই সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত এবং ৫০০ নেতা-কর্মী আহত হন। গ্রেনেডের স্প্লিন্টার লেগে চিরতরে পঙ্গুত্ব বরণ করেন আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মী এবং আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনার শ্রবণইন্দ্রিয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

বুধবারের সভায় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন এমপি, দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, কেন্দ্রীয় নেতা মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, বীরবিক্রম, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন, ঢাকা দক্ষিণ মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি আবুল হাসনাত এবং ঢাকা উত্তর মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি সাদেক খান বক্তৃতা করেন।

দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এবং উপপ্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম সভা পরিচালনা করেন। সভার শুরুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও ১৫ অগাস্টের সকল শহীদ এবং ২১ আগস্টের নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

২১ অগাস্টের গ্রেনেড হামলার সময় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা মানবঢাল রচনা করে তাঁকে রক্ষার কথা উল্লেখ করে দুঃসহ স্মৃতিচারণ করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যুদ্ধের ময়দানে ব্যবহৃত গ্রেনেড দিয়ে জনসভায় হামলা হলো। গ্রেনেডের স্প্লিন্টার হানিফ (মেয়র মোহাম্মদ হানিফ) ভাইয়ের গায়ে ঢুকছে আর সেখান থেকে রক্ত বেয়ে আমার গায়ে পড়ছে। তিনটা গ্রেনেড মারার পর একটু বিরতি।”

তিনি বলেন, “তারপর আবার গ্রেনেড হামলা একটার পর একটা গ্রেনেড মারতে শুরু করলো। এই ধরনের একটা পরিস্থিতি দিনে-দুপুরে কীভাবে ঘটতে পারে?”

শেখ হাসিনা বলেন, “এই ঘটনার পর তাঁদের ধারণা হয়েছিল - আমি মারা গেছি। কিন্তু যখন নেমে গাড়িতে উঠতে যাবো - ঠিক তখনই আবার হামলা করা হলো। সেখানে মাহবুব (আওয়ামী লীগ সভাপতির নিরাপত্তারক্ষী) ছিল, তাঁর গায়ে গুলিটা লাগলো। গাড়িতেও গুলি লেগেছিল।”

তিনি বলেন, “গ্রেনেড ট্রাকের ভেতরে পড়তে পারতো, কিন্তু সেটা ট্রাকের ঢালার সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে ভেতরে না পড়ে বাইরে পড়ে যায়। গ্রেনেডটা যদি ট্রাকের ভেতরে পড়ে, তাহলে আমরা সবাই কিন্তু সেখানে শেষ হয়ে যেতাম।”

গ্রেনেড হামলা চালানোর জন্য কারাগার থেকেও অপরাধী আনা হয়েছিল অভিযোগ করে শেখ হাসিনা বলেন, জেলখানায় একটা গ্রেনেড পাওয়া গেছে। যাঁদের দিয়ে আক্রমণ করিয়েছিল সেই ক্রিমিনালদের কিছু জেলখানা থেকেও সংগ্রহ করা হয়েছিল। তাঁদের অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে আসে, আবার ফেরত নিয়ে যায়।” তিনি প্রশ্ন তােলেন - কতো গ্রেনেড ছিল তাঁদের কাছে?

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের বিরুদ্ধে আলামত ধ্বংসের অভিযোগ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, “এতো বড় একটা ঘটনার পরে সেখানে সরকারের পক্ষ থেকে আলামত সংগ্রহ করার ব্যবস্থা নেয়ার কথা। সেখানে যে অবিস্ফোরিত গ্রেনেড পাওয়া যায় - সেটা রাখতে চাওয়ায় সেই অফিসারের চাকরি চলে যায়। এই ঘটনার কোনো আলামতই যেন না থাকে - সেই চেষ্টাটাই তাঁরা করেছে।”

বহুল আলোচিত ‘জজ মিয়া নাটক’-এর কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “জনগণের চাপে একজন বিচারককে দিয়ে একটা তদন্ত কমিটি করা হয়। সেই তদন্ত কমিটির যে রিপোর্ট - সেটাতো তাঁদের ফরমায়েশি রিপোর্ট।”

তিনি বলেন, “সেখানে একটা সাধারণ মানুষ ধরে নিয়ে আসে, তাঁর নাম জজ মিয়া, তাঁকে আসামি করা হয়। জজ মিয়ার নাটক সাজানো হয়। সাধারণ গ্রামের মানুষ সে, এতো গ্রেনেড কোথা থেকে কিনবে?”

“স্বাধীন বাংলাদেশ যাতে বিশ্বে মাথা তুলে না দাঁড়াতে পারে সেজন্য পঁচাত্তরের ১৫ অগাস্টের ধারাবাহিকতায় ২১ অগাস্টের হত্যাকান্ড” - উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমার পরিবারের সবাইকে হত্যা করা হলো। আমি ও আমার ছোট বোন রেহানা, আমাদেরকেও হত্যা করা হতো। আমাদের বাসায় গুলি করা হয়েছিল। কিন্তু আমরা দুই বোন জার্মানিতে গিয়েছিলাম। মাত্র ১৫ দিনের মধ্যে এতিম হয়ে যাই। সব হারিয়ে আমরা আর দেশে আসতে পারিনি। পাসপোর্টটাও জিয়াউর রহমান সরকার রিনিউ করতে দেয়নি।”

Loading...