loader image for Bangladeshinfo

শিরোনাম

  • লিভারপুল হারলো এভারটনের কাছে, ম্যানইউ-এর শেফিল্ড-বাধা অতিক্রম

  • শুরু হলো স্বাধীনতা দিবস জিমন্যাস্টিক্স প্রতিযোগিতা ২০২৪

  • জাভি এই মৌসুম শেষেই বার্সা ছাড়বেন না

  • নতুন করে আরও ৭২ ঘণ্টার তাপ প্রবাহের সতর্কতা জারি

  • ইতালিয়ান কাপের ফাইনালে ইউভেন্টাস

ত্রিদেশীয় টি২০: জিম্বাবুয়েকে হারিয়ে ফাইনালে বাংলাদেশ


ত্রিদেশীয় টি২০: জিম্বাবুয়েকে হারিয়ে ফাইনালে বাংলাদেশ

সংক্ষিপ্ত স্কোর

বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৭৫/৭ (মাহমুদউল্লাহ ৬২, লিটন ৩৮, মুশফিক ৩২; জার্ভিস ৩/৩২, এমপুফু ২/৪২, বার্ল ১/১৩, মুটম্বোদজি ১/১৭)
জিম্বাবুয়ে: ২০ ওভারে ১৩৬ (মুটুম্বামি ৫৪, জার্ভিস ২৭, মাসাকাদজা ২৫; সাইফউদ্দিন ১/১৪, সাকিব ১/২৮, শফিউল ৩/৩৬, মোস্তাফিজুর ২/৩৮, আমিনুল ২/১৪)
ফলাফল: বাংলাদেশ ৩৯ রানে জয়ী
ম্যাচ-সেরা: মাহমুদউল্লাহ (বাংলাদেশ)

জিম্বাবুয়েকে হারিয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখেই ত্রিদেশীয় টি-২০ সিরিজের ফাইনালে উঠলো বাংলাদেশ দল। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে টুর্নামেন্টের চতুর্থ ও লিগের ফিরতি পর্বের প্রথম ম্যাচে বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) জিম্বাবুয়েকে ৩৯ রানে হারিয়েছে সাকিববাহিনী। এই জয়ে তিন খেলায় দুই জয়ে চার পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে উঠে ফাইনাল নিশ্চিত করেছে টাইগাররা।

বাংলাদেশের এই জয়ে ফাইনাল নিশ্চিত হয়ে গেল আফগানিস্তানেরও। কারণ দুই খেলায় দুই জয়ে চার পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে দলটি। তিন খেলায় সবক’টিতে হেরে লিগ পর্ব থেকে টুর্নামেন্ট শেষ করা নিশ্চিত করলো জিম্বাবুয়ে। লিগ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচ জিতলেও আফগানিস্তান ও বাংলাদেশের পয়েন্টকে স্পর্শ করতে পারবে না জিম্বাবুয়ে।

জিতলেই ফাইনাল নিশ্চিত - এই সমীকরণে খেলতে নেমে টসে হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নামতে হয় বাংলাদেশকে। প্রথমে ওভারে দুই রানের বেশি নিতে পারেননি দুই ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্ত ও লিটন দাস। বাঁ-হাতি স্পিনার আইনস্লে এনডিলোভুর প্রথম ওভারের পঞ্চম বলে লিটনের বিপক্ষে লেগ বিফোরের আবেদন করেছিল জিম্বাবুয়ে, তবে আম্পায়ার আউট দেননি। তাই রিভিউ নেয় জিম্বাবুয়ে; কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয়নি।

এরপরই ব্যাট হাতে মারমুখী মেজাজ দেখান লিটন। দ্বিতীয় ওভারে দু’টি চার, তৃতীয় ওভারে দু’টি ছক্কা ও একটি চার হাঁকান তিনি। লিটনের পরে নিজের প্রথম বাউন্ডারি মারেন শান্তও। কিন্তু নিজের ইনিংসটি বড় করতে পারেননি শান্ত। দলীয় ৪৯ রানে পঞ্চম ওভারের পঞ্চম বলে আউট হন অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা শান্ত। নয় বলে ১১ রান করা শান্তকে ফিরিয়ে জিম্বাবুয়েকে প্রথম সাফল্য এনে দেন কাইল জার্ভিস।

শান্তর বিদায়ের পরের ওভারে প্যাভিলিয়নে ফেরেন আরেক ওপেনার লিটনও। চারটি চার ও দুইটি ছক্কায় ২২ বলে ৩৮ রান করা লিটন লিটন শিকার হন ক্রিস এমপোফুর। মারমুখী ব্যাটিং করে পাওয়ার প্লেতে দলকে ৫৫ রানে পৌঁছে দেন লিটন।

দুই ওপেনারের বিদায়ে দলের হাল ধরার দায়িত্ব আসে অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিমের কাছে। কিন্তু জুটিতে বেশি দূর যেতে পারেননি তাঁরা। মাত্র ১০ রান দলকে দিতে পেরেছেন এই জুটি। নয় বলে ১০ রান করে বাংলাদেশের তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হন সাকিব।

৬৫ রানে তৃতীয় উইকেট পতনের পরে বাংলাদেশকে বড় জুটির স্বাদ দেন মুশফিক ও মাহমুদুল্লাহ। দেখেশুনে খেলতে থাকেন তাঁরা। উইকেট আগলে রাখার প্রচেষ্টায় সফল হন এই জুটি। তাতে দ্বাদশ ওভারেই শতরানে পৌঁছে যায় দল। এরপরই রানের গতি বাড়াতে থাকেন মুশফিক-মাহমুদুল্লাহ। ১৬ ওভারে তিন উইকেটে ১৪২ রানের সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। ফলে শেষ চার ওভারে দলকে কোথায় নিয়ে যেতে পারেন মুশফিক-মাহমুদুল্লাহ - সেটাই ছিল দেখার বিষয়।

কিন্তু সপ্তদশ ওভারের তৃতীয় বলে প্যাভিলিয়নে ফেরেন মুশফিক। ভেঙ্গে যায় ৫৫ বলে ৭৮ রান যোগ করা মুশফিক-মাহমুদুল্লাহ জুটি। তিনটি চার ও একটি ছক্কায় ২৬ বলে ৩২ রান করে ফেরেন মুশফিক।

মুশফিকের ফেরার পরে টি-২০ ক্যারিয়ারের চতুর্থ অর্ধশত রান করেন মাহমুদুল্লাহ। ২৪ ইনিংস পরে হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ পেলেন তিনি। মাহমুদুল্লাহর হাফ-সেঞ্চুরির পরপরই থামতে হয় প্রথম ম্যাচের হিরো আফিফ হোসেনকে। আট বলে সাত রান করেন তিনি।

আফিফ থেমে গেলেও বাংলাদেশকে বড় স্কোর এনে দেয়ার চেষ্টায় ছিলেন মাহমুদুল্লাহ, দ্রুত রানও করছিলেন; কিন্তু শেষ ওভারের তৃতীয় বলে আউট হন। ৪১ বল মোকাবেলায় একটি চার ও পাঁচটি ছক্কায় নিজের ৬২ রানের ইনিংসটি সাজিয়েছেন তিনি।

মাহমুদুল্লাহকে শিকারের পরের বলে মোসাদ্দেককে বিদায় দিয়ে হ্যাটট্রিকের সুযোগ তৈরি করেছিলেন জার্ভিস। কিন্তু সেটি হতে দেননি বাঁ-হাতি বোলিং অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। পঞ্চম বলে দুই ও ইনিংসের শেষ বলে চার মেরে ২০ ওভারে সাত উইকেটে ১৭৫ রানে দলকে পৌঁছে দেন সাইফউদ্দিন। দুই বলে ছয় রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। জিম্বাবুয়ের কাইল জার্ভিস চার ওভারে ৩২ রানে তিন উইকেট পেয়েছেন।

জয়ের জন্য ১৭৬ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে বাংলাদেশের বোলারদের তোপের মুখে পড়ে জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যানরা। প্রথম ওভারের পঞ্চম বলে জিম্বাবুয়ের ওপেনার ব্রেন্ডন টেইলরকে শূন্য রানে বিদায় দেন সাইফউদ্দিন।

পরের ওভারে তিন নম্বরে নামা রেগিস চাকাভাকে শূন্য হাতে ফেরান সাকিব। দুই রানের মধ্যে শূন্য রানে দুই ব্যাটসম্যান ফিরলেও, চার নম্বরে নামা সিন উইলিয়ামস শূন্য পেরিয়ে তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হন। দুই রান করা উইলিয়ামসকে থামান পেসার শফিউল ইসলাম। ফলে আট রানে তিন উইকেট হারিয়ে নিজেদের ইনিংসের শুরুতেই মহাবিপদে পড়ে জিম্বাবুয়ে।

শুরুতে চাপে পড়ে যাওয়া জিম্বাবুয়েকে লড়াইয়ে ফেরানোর চেষ্টা করেন ওপেনার-অধিনায়ক হ্যামিল্টন মাসাকাদ্জা ও টিনোটেন্ডা মুতোমবদ্জি। বড় জুটি গড়ার চেষ্টায় ছিলেন তাঁরা। দ্রুত রান তুলে বাংলাদেশ বোলারদের চাপে ফেলার পরিকল্পনা করেন এই জুটি। ২০ বলে ২৭ রান করার পর বিচ্ছিন্ন হন তাঁরা। একটি ছক্কায় নয় বলে ১১ রান করা মুতোমবদ্জিকে থামিয়ে অভিষেক ম্যাচে উইকেট তুলে নেন লেগ-স্পিনার আমিনুল ইসলাম বিপ্লব।

ক্যারিয়ারের প্রথম ম্যাচের প্রথম ওভারে উইকেট পেয়ে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেন আমিনুল। এরপর নিজের দ্বিতীয় ওভারেও উইকেটের স্বাদ পান তিনি। এবার তিনি শিকার করেন উইকেটে সেট হওয়া মাসাকাদজাকে। তিনটি চারে ২৫ বলে ২৫ রান করা মাসাকাদজাকে লেগ বিফোর ফাঁদে ফেলেন বিপ্লব।

মাসাকাদজার বিদায়ের আগের ওভারে মারকুটে ব্যাটসম্যান রায়ার্ন বার্লকে এক রানেই থামিয়ে দেন শফিউল। এমন অবস্থায় ৪৪ রানে ছয় উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ে জিম্বাবুয়ে। তারপরেও দলকে খেলায় ফেরানোর চেষ্টা করেন রিচমন্ড মুতুম্বামি। অন্যপ্রান্ত দিয়ে তাঁকে সঙ্গ দিচ্ছিলেন নেভিল মাদজিভা। তবে বেশিক্ষণ উইকেটে টিকে থাকতে পারেননি মাদজিভা। রান আউটের ফাঁদে পড়েন তিনি। ফলে নয় রান করে দলীয় ৬৬ রানে সপ্তম ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হন মাদজিভা।

১৩ ওভারের মধ্যে প্রথম সাতজন ব্যাটসম্যান ফিরলেও হাল ছাড়েননি মুতুম্বামি। জার্ভিসকে নিয়ে চার-ছক্কার ফুলঝুড়ি ফুটিয়ে ৩০ বলে টি-২০ ক্যারিয়ারের প্রথম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন তিনি। দলের স্কোরও ছাড়িয়ে যায় শতরান। কিন্তু হাফ-সেঞ্চুরি পরে নিজের ইনিংসটি বড় করতে পারেননি মুতুম্বামি। ততক্ষণে ম্যাচও হাতছাড়া হয়ে যায় জিম্বাবুয়ের। শেষ ১২ বলে ৫৬ রান দরকার ছিলো দলটির।

১৯তম ওভারের দ্বিতীয় বলে বাংলাদেশের শফিউলের বলে সাইফউদ্দিনকে ক্যাচ দিয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরেন মুতুম্বামি। চারটি চার ও তিন ছক্কায় ৩২ বলে ৫৪ রান করেছেন তিনি।

জিম্বাবুয়ের পক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৭ রান করেছেন জার্ভিস। তাঁকে বিদায় দিয়ে নিজের ৩৩তম টি-২০ ম্যাচে ৫০তম উইকেট শিকারের স্বাদ নেন মুস্তাফিজ। বাংলাদেশের দ্বিতীয় বোলার হিসেবে টি-২০ ক্রিকেটে ৫০ উইকেট শিকারের মাইলফলক স্পর্শ করলেন তিনি। জিম্বাবুয়ের ইনিংসের শেষ বলেও উইকেট শিকার করেছেন ফিজ। শেষ পর্যন্ত ২০ ওভারে ১৩৬ রানে অলআউট হয় জিম্বাবুয়ে। বাংলাদেশের শফিউল ৩৬ রানে তিনটি ও মুস্তাফিজ ৩৮ রানে দুই উইকেট নেন।

আগামী ২১ সেপ্টেম্বর লিগ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে আফগানিস্তানের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। এর আগে ২০ সেপ্টেম্বর আফগানিস্তান-জিম্বাবুয়ের ম্যাচ হবে।

Loading...