সংক্ষিপ্ত স্কোর
আফগানিস্তান: ২০ ওভারে ১৩৮/৭ (হজরতুল্লাহ ৪৭, রহমানুল্লাহ ২৯, শফিকুল্লাহ ২৩*; সাইফউদ্দিন ১/২৩, শফিউল ১/২৩, সাকিব ১/২৪, মোস্তাফিজ ১/৩১, আফিফ ২/৯)
বাংলাদেশ: ১৯ ওভারে ১৩৯/৬ (সাকিব ৭০*, মুশফিক ২৬, মোসাদ্দেক ১৯; মুজিব ১/১৯, নাভিন ২/২০, করিম ১/৩১, রশিদ ২/২৭)
ফলাফল: বাংলাদেশ চার উইকেটে জয়ী
ম্যাচ-সেরা: সাকিব আল হাসান
অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের ব্যাটিং নৈপুণ্যে ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজে লিগ পর্বের শেষ ম্যাচে ও ফাইনালের ড্রেস রিহার্সেলে আফগানিস্তানকে চার উইকেটে হারিয়েছে স্বাগতিক বাংলাদেশ। এদিন ম্যাচ-সেরা নির্বাচিত হওয়া সাকিব ৪৫ বলে করেছেন অপরাজিত ৭০ রান।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) টস জিতে সাকিব আগে বোলিং করার সিদ্ধান্ত নিলে ব্যাট হাতে আবারো উড়ন্ত সূচনা করেন আফগানিস্তানের দুই ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজ ও হযরতউল্লাহ জাজাই। এর আগের ম্যাচে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৯.৩ ওভারে ৮৩ রান করেছিলেন তাঁরা। গতকাল শনিবার ৯.৩ ওভার একত্রে ব্যাট করে রহমানুল্লাহ ও হজরতুল্লাহ যোগ করেছেন ৭৫ রান।
ছয়টি চার ও দুইটি ছক্কায় ৩৫ বলে ৪৭ রান করা হজরতুল্লাহকে তুলে নিয়ে বাংলাদেশকে প্রথম সাফল্য এনে দেন সাত নম্বরে বোলিং আক্রমণে আসা ডান-হাতি অফ-স্পিনার আফিফ হোসেন। মুস্তাফিজুর রহমানের হাতে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন হজরতুল্লাহ। অবশ্য ইনিংসের একাদশ বলে মাহমুদুল্লাহ রহমানুল্লাহর ক্যাচ মিস না করলে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারতো এই জুটি।
নিজের প্রথম ও ইনিংসের দশম ওভারের তৃতীয় বলে হজরতুল্লাহকে থামিয়েছেন আফিফ। ঐ ওভারের পঞ্চম বলে আবারো উইকেট শিকার করে বাংলাদেশকে দ্বিতীয় সাফল্য এনে দেন আফিফ। তিন নম্বরে নামা সাবেক অধিনায়ক আসগর আফগান দুই বলে কোনাে রান না-করে নাজমুল হোসেন শান্তকে ক্যাচ দিয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন।
দলীয় ৭৫ রানে হজরতুল্লাহ-আসগর ফিরে যাওয়ার পরেই নিয়মিত বিরতি দিয়ে উইকেট হারাতে থাকে আফগানিস্তান। বাংলাদেশের বোলাররা চেপে ধরেন আফগানিস্তানের ব্যাট্সম্যানদের। ফলে ৭৫ থেকে ১১৪ রানে পৌঁছাতেই সাত উইকেট হারিয়ে ফেলে আফগানরা।
তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হন উইকেটে সেট হয়ে যাওয়া আরেক ওপেনার রহমানুল্লাহ। দুইটি করে চার-ছক্কায় ২৭ বলে ২৯ রান করে তিনি শিকার হন মুস্তাফিজের।
এরপর আরেক সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ নবি লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন। ছয় বলে চার রান করেছেন তিনি। বোলারদের উইকেট শিকারের মাঝে ফিল্ডাররাও চমক দেখান। ছয় নম্বরে নামা গত বিশ্বকাপের অধিনায়ক গুলবাদিন নাইবকে রান আউটের ফাঁদে ফেলেন মাহমুদুল্লাহ। নাইব করেছেন এক রান। দলীয় স্কোর শতরান থেকে চার রান দূরে থাকতে নাইব ফেরেন পঞ্চম ব্যাটসম্যান হিসেবে।
দলীয় ১০৯ রানে আফগানিস্তানের শেষ স্বীকৃত ব্যাটসম্যান হিসেবে নাজিবুল্লাহ জাদরানকে বিদায় করে প্রতিপক্ষকে বড় স্কোর করার পথ আটকে দেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন।আফিফকে ছক্কা হাঁকানো জাদরান ১৬ বলে ১৪ রান করেছেন।
পরের ওভারে নিজের প্রথম উইকেট নিয়ে আফগানিস্তানের টেইল এন্ডারে আঘাত হানেন শফিউল। তিন রান করে আউট হন আট নম্বরে নামা করিম জানাত।
দলীয় ১১৪ রানে জানাতের বিদায়ের পরে ইনিংসের শেষ ১৯ বলে অবিচ্ছিন্ন ২৪ রান যোগ করে আফগানিস্তানকে সাত উইকেটে ১৩৮ রানের পুঁজি এনে দেন শফিকুল্লাহ ও অধিনায়ক রশিদ খান। শফিকুল্লাহ দুই চার ও এক ছক্কায় ১৭ বলে অপরাজিত ২৩, ও রশিদ ১৩ বলে অপরাজিত ১১ রান করেন।
এদিন বাংলাদেশের সফল বোলার ছিলেন আফিফ। তিন ওভারে নয় রানে দুই উইকেট পেয়েছেন তিনি। এছাড়া সাইফউদ্দিন, শফিউল, সাকিব, মুস্তাফিজুর একটি করে উইকেট শিকার করেছেন।
১৩৯ রানের লক্ষ্যে প্রথম ২০ বলের মধ্যে দুই ওপেনারকে হারায় বাংলাদেশ। চার রান করে আফগানিস্তানের স্পিনার মুজিব-উর-রহমানের শিকার হন লিটন। পাঁচ রান করা নাজমুল হাসান শান্তকে শিকার করেন ডান-হাতি পেসার নাভিন-উল-হক।
১২ রানে দুই ওপেনারকে হারিয়ে চাপে পড়ে যায় টাইগাররা। এ-অবস্থায় দলের হাল ধরেন সাকিব ও মুশফিকুর রহিম। দ্রুত রান তুলতে থাকেন সাকিব, তাঁকে স্ট্রাইক দেয়ার চেষ্টায় ছিলেন মুশফিক। ফলে ১০ ওভারে ৬২ রান করে ফেলে বাংলাদেশ। এতে শেষ ১০ ওভারে আট উইকেট হাতে নিয়ে জয়ের জন্য ৭৭ রান প্রয়োজন হয় সাকিববাহিনীর।
একাদশ ওভারের শুরুটা ছক্কা দিয়ে করেছিলেন মুশফিক। তবে ঐ ওভারের চতুর্থ বলেই প্যাভিলিয়নে ফেরেন তিনি। ২৫ বলে ২৬ রান করে থামতে হয়েছে তাঁকে। সাকিবের সাথে ৪৪ বলে ৫৮ রান যোগ করেছেন মুশি - যেখানে সাকিবের অবদান ছিলো ১৯ বলে ৩১ রান।
দলীয় ৭০ রানে মুশফিকের বিদায়ের পরে ক্রিজে গিয়ে সুবিধা করতে পারেননি মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। আফগানিস্তানের অধিনায়ক ও লেগ স্পিনার রশিদের প্রথম ওভারের চতুর্থ বলে লেগ বিফোর ফাঁদে পড়েন তিনি। আট বলে ছয় রান করেন মাহমুদুল্লাহ। এরপর উইকেটে গিয়ে টিকতে পারেননি সাব্বির রহমানও। এক রান করে নাভিনের দ্বিতীয় শিকার হন সাব্বির।
সাব্বিরের বিদায়ের ওভারে টি-২০ ক্যারিয়ারে ১৯তম অর্ধশত রান তুলে নেন সাকিব। সাকিবের হাফ-সেঞ্চুরির পরে টাইগারদের উপর আঘাত হানেন রশিদ। আফিফ হোসেনকে দুই রানের বেশি করতে দেননি তিনি। ১০৪ রানে ষষ্ঠ উইকেট হারিয়ে চিন্তায় পড়ে যায় বাংলাদেশ।
তবে সাকিব জ্বলছিলেন আশার আলো হয়েই। আট নম্বরে নামা মোসাদ্দেককে নিয়ে শেষ তিন ওভারে জয়ের সমীকরণ ২৭ রানে দাঁড় করান তিনি। রশিদের করা অষ্টাদশ ওভার থেকে ১৮ রান নিয়ে ম্যাচ জয়ের পথ সহজ করে ফেলেন সাকিব-মোসাদ্দেক। সাকিব একটি করে ছক্কা-চারে ১৩ ও মোসাদ্দেক একটি চারে পাঁচ রান নেন। জয়ের জন্য শেষ ১২ বলে নয় রান দরকার পড়ে বাংলাদেশের।
১৯তম ওভারে ফাইনালে আগে দলকে দুর্দান্ত জয়ের স্বাদ দেন সাকিব-মোসাদ্দেক। সাকিব আটটি চার ও একটি ছক্কায় ৪৫ বলে অপরাজিত ৭০ ও মোসাদ্দেক একটি চারে ১২ বলে অপরাজিত ১৯ রান করেন।
আফগানিস্তানের নাভিন ও রশিদ দুই উইকেট করে পেয়েছেন।
আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর ঢাকায় সিরিজের ফাইনালে লড়বে এই দুই দেশ।