শুরু হয়েছে বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। পাকিস্তানিদের শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে দীর্ঘ নয়মাস সশস্ত্র সংগ্রাম করে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল বাঙালি। বাংলার জমিনে স্বাধীনভাবে স্বমহিমায় উড়তে শুরু করছিল লাল-সবুজ পাতাকা। জাতি রচনা করেছিলো নতুন এক ইতিহাস, বিশ্বমানচিত্রে স্থান করে নিয়েছিল নতুন এক দেশ - বাংলাদেশ।
একাত্তরের ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল বাঙালি জাতি। দীর্ঘ নয়মাস ভয়াবহ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের প্রাণের বিনিময়ে আমরা পেয়েছিলাম স্বাধীন দেশ। অসংখ্য মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জন করেছিলাম স্বাধীন মানচিত্র। হাজার বছর ধরে লালিত স্বাধীনতার স্বপ্ন ছুঁয়েছিল বাঙালি।
অন্যদিকে এই ডিসেম্বরেই স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি তাঁদের এদেশীয় দোসর রাজাকার - আলবদর, আল শামসদের সহযোগিতায় জাতির মেধা, শ্রেষ্ঠ সন্তান-বুদ্ধিজীবী হত্যার নৃশংসযজ্ঞে মেতে ওঠেছিল। বিজয়ের দু’দিন আগে ১৪ ডিসেম্বর জাতির ইতিহাসে অত্যন্ত বেদনাবিধুর একটি দিন। মহান মুক্তিযুদ্ধের বিজয় যখন সুনিশ্চিত - তখনই পাকিস্তানী হানাদারবাহিনী ও তাঁদের দোসররা ১৪ ডিসেম্বর জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বরেণ্য শিক্ষাবিদ, গবেষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সাংবাদিক, কবি ও সাহিত্যিকদের রাতের আঁধারে নির্মমভাবে হত্যা করে। জাতিকে মেধাহীন করে দেয়ার হীন উদ্দেশ্যে এমন ভয়াবহ হতাযজ্ঞের নজির বিশ্বইতিহাসে আর নেই।
এমনকি স্বাধীনতা অর্জনের পরেও সেই স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি থেমে থাকেনি। পঁচাত্তরের ১৫ অগাস্ট স্বাধীনতাযুদ্ধের মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুরকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। দেশে না থাকায় বেঁচে যান তাঁর দুই মেয়ে - শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা।
একই বছর ৩ নভেম্বর জেলখানায় হত্যা করা হয় জাতীয় চার নেতাকে। এভাবে দফায় দফায় বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা ব্যাহত করার অপচেষ্টা করা হয়েছে।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরে দেশে সামরিক স্বৈরশাসন ও অগণতান্ত্রিক সরকারের উত্থান ঘটে। দীর্ঘ নির্বাসন শেষে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে প্রত্যাবর্তন করে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে আন্দোলন শুরু করেন বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনা । দীর্ঘ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১৯৯৬ সালে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত সরকারের দায়িত্ব পালন করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
পরে ক্ষমতার পালাবদলে আসে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার। এরপর ২০০৮ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আবার রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ও ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে পুনরায় বিজয়ী হয় আওয়ামী লীগ। ফলে, বঙ্গবন্ধু স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার পথে আরও এগিয়ে যাচ্ছে দেশ।
বাধা পেরিয়ে মুক্তিকামী বাঙালি সবসময়ই সামনে এগিয়েছে, সব ষড়যন্ত্র রুখে উঠে দাঁড়িয়েছে। বাঙালি এখন বিশ্বের বুকে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখছে। বিজয়ের মাস এলে সামনে এগিয়ে যাওয়ার সেই স্বপ্ন আরও বেশি তাড়না সৃষ্টি করে।
ডিসেম্বর মাসের প্রথম দিনটি মুক্তিযোদ্ধা দিবস হিসেবে পালন করেন মুক্তিযোদ্ধারা। বরাবরের মতোই বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দেশ ও দেশের বাইরে মাসজুড়ে উদযাপন করা হবে বিজয়ের মাস।
জয় বাংলা।