ব্যবসা, নাকি ব্র্যান্ড, কোনটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ? এই দরকারি প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে ব্র্যান্ড ও মার্কেটিং পেশাজীবীদের কমিউনিটি ‘ব্র্যান্ড প্রাক্টিসনার্স বাংলাদেশ’-এর আয়োজনে এবং প্রথমআলো ডটকম-এর সহায়তায় গত শনিবার (৩০ নভেম্বর) ঢাকার কারওয়ান বাজারের সিএ ভবনে প্রথম আলোর প্রশিক্ষণ কক্ষে ‘বিজনেস অর ব্র্যান্ড’ শীর্ষক ওয়ার্কশপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠানটির পৃষ্ঠপোষক ছিল এস্কিমি ও মেট্রোসেম গ্রুপ।
বাংলাদেশের স্বনামধন্য ব্র্যান্ড ক্যাটালিস্ট ও বিজনেস মার্কেটিং স্পেশালিস্ট আফতাব মাহমুদ খুরশীদ মূল সেশন পরিচালনা করেন।
পরিকল্পিত ব্র্যান্ডিং ব্যবসাকে দীর্ঘসময় ধরে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকতে ও এগিয়ে যেতে কিভাবে সাহায্য করে এবং ব্র্যান্ডিং ছাড়া ব্যবসা শুধু পণ্য বেচাকেনার কারবার হয়ে ওঠে - এ-বিষয়ে আলোকপাত করেন তিনি। দীর্ঘদিন বিভিন্ন ব্র্যান্ডে সরাসরি কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে তিনি ব্র্যান্ড, মার্কেটিং, উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ীদের করণীয়, চিফ মার্কেটিং অফিসারের দায়িত্ব ইত্যাদি নিয়ে তুলনামূলক বিশ্লেষণ করেন।
বাংলাদেশে কেন ব্যবসায়ীরা ব্র্যান্ড দাঁড় করাতে হিমশিম খেয়ে থাকেন - এর কারণ হিসাবে ‘ব্র্যান্ডিং’ কার্যক্রমকে বিনিয়োগ হিসাবে না দেখে খরচ হিসাবে দেখা, রিসার্চে কাজ না করা এবং শর্ট টার্মে যেকোনোভাবে মুনাফা লাভের প্রত্যাশাকে দায়ী করেন আফতাব মাহমুদ খুরশীদ। চরম প্রতিযোগিতামূলক এই বৈশ্বিক পরিবেশে দেশি ব্র্যান্ডগুলো এ-কারণেই পিছিয়ে যাচ্ছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন তিনি।
“কয়েক কোটি টাকা দিয়ে মেশিন কেনার সামর্থ্য থাকলেও মাত্র কয়েক লাখ টাকা ব্র্যান্ড বিল্ডিং-এ বিনিয়োগের অনীহা এ-দেশের অনেক উদ্যোক্তার” - বলেছেন তিনি।
দেশি-বিদেশি ব্র্যান্ডের উদাহরণসহ বিভিন্ন প্রশ্নের তাঁর দেয়া উত্তরে সেশন প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছিল।
“ক্রেতারা আসলে ব্র্যান্ড কিনে থাকেন, প্রমিজ কিনে থাকেন - শুধু পণ্য কেনেন না।” এসব ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের ব্র্যান্ডের পার্সোনালিটি ও ক্রেতার মনোভাব বুঝে এগিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
‘বিজনেস অর ব্র্যান্ড’ ওয়ার্কশপ শুরু হয় মেট্রোসেম গ্রুপের সিনিয়র ব্র্যান্ড ম্যানেজার হুমায়ন মোর্শেদের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের গল্প দিয়ে। ব্র্যান্ড নিয়ে ভুল ধারণা, চিফ অফিসারদের এ-যুগের সাথে মানিয়ে নেওয়ার প্রয়োজনীতা এবং সময়ের সাথে টিকে থাকতে না পারলে ব্র্যান্ডের বাজার থেকে বাদ পড়ে যাওয়ার মতো বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন তিনি।
তাঁর মতে সমসাময়িক ব্র্যান্ড-মার্কেটিং-এর বই পড়ার পাশাপাশি অভিজ্ঞদের সাথে আলোচনা করা, বিভিন্ন ইভেন্টে যোগ দেওয়া, মেলা ভিজিট করা এবং প্রতিনিয়ত নিজেকে আপডেট রাখা জরুরি।
ইনসাইট স্পিকার হিসাবে ডেকো ফুডস-এর হেড অফ মার্কেটিং আহাম্মদ আলী হাসান বিশ্বের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের এগিয়ে যাওয়ার পেছনের কারণগুলো আলোচনা করেন। তিনি বলেন, “যুগের চাহিদার সাথে মিলিয়ে ব্র্যান্ডের টোন ও পার্সোনালিটি বদলে ফেলার দরকার হলে তা বদল করাই ভালো”।
“ব্র্যান্ডে স্টিক থাকা ভালো, কিন্তু প্রোডাক্টে না; কারণ, ইনোভেশান ও ভ্যালু যোগ করে অনেক ব্র্যান্ড দুই-তিন যুগ ধরে যে-সেবা দিতো, তা আপডেট করে আরও ক্রেতামুখী হয়েছে, গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছে।”
ব্র্যান্ডের ব্যাপারে ইনসাইট পেতে তিনটি উপায় নিয়েও আলোচনা করেন তিনি। বেশি দাম দিয়ে হলেও ক্রেতারা কেন ব্র্যান্ড পণ্য ক্রয় করে - সেটা ভেবে দেখার জন্য অংশগ্রহনকারীদের পরামর্শ দেন তিনি।
তিনটি সেশন শেষে তিনজন বক্তা অংশগ্রহণকারীদের বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্নের উত্তর দেন এবং নিজেদের অভিজ্ঞতার আলোকে দিকনির্দেশনা প্রদান করেন।
এই আয়োজন নিয়ে প্রথমআলো ডটকমের হেড অফ বিজনেস জাবেদ সুলতান পিয়াস বলেন, “প্রথম আলো দেশের পেশাজীবি ও তরুণদের এগিয়ে যাওয়ার জন্য নানা ধরণের কাজ করে করে যাচ্ছে। তারই আলোকে ব্র্যান্ড প্র্যাক্টিশনার্স বাংলাদেশ কমিউনিটির সদস্যদের দরকারি বিষয়ে আরও দক্ষ করে তুলতে অভিজ্ঞ মার্কেটিয়ার এবং ব্র্যান্ড এক্সপার্টদের নিয়ে সেশন আয়োজনে যুক্ত হয়েছে।” ব্যবসা ও ব্র্যান্ডের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে ওয়ার্কশপ আয়োজন করতে পেরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন তিনি।
ব্র্যান্ড প্রাকটিশনার্স বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা মির্জা মুহাম্মদ ইলিয়াস বলেন, “পরপর দুইমাসে দুইটি প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রের উপর সেশন আয়োজন করতে পেরে আমরা খুশি”। ডিসেম্বর মাসেও এই ধরণের প্রোগ্রাম আয়োজনের আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। স্পিকার, স্পন্সর ও আগত ব্র্যান্ড প্রাকটিশনারদের সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানান ইলিয়াস।
প্রথমআলো ডটকমের আমিনুর রহমান তাঁর সূচনা বক্তব্যে জানান যে, ‘যা কিছু ভালো, তার সাথে প্রথম আলো’ - এই স্লোগানের ধারাবাহিকতায় প্রথম আলো ব্র্যান্ড পেশাজীবিদের জন্যে ট্রেইনিং ও ওয়ার্কশপ আয়োজনের পৃষ্ঠপোষকতা করে আসছে। তিনি মনে করেন, চরম প্রতিযোগিতার এই যুগে টিকে থাকার জন্য ইনসাইট ও কৌশলের কোনো বিকল্প নেই।
ব্যান্ড প্র্যাকটিশনার্স বাংলাদেশ গ্রুপের অ্যাডমিন মুহাম্মদ আবদুল্লাহ এই আয়োজনের সমাপনী বক্তব্যে আরও নতুন নতুন বিষয়ে সেমিনার ও ওয়ার্কশপের ঘোষণা দিয়ে সবাইকে নৈশভোজে আহ্বান জানান।
ছয় ঘণ্টাব্যাপী প্রথম আলো ডটকম প্রেজেন্টস ‘বিজনেস অর ব্র্যান্ড’ ওয়ার্কশপে ৭৩ জন ব্র্যান্ড, মার্কেটিং ক্ষেত্রের পেশাজীবি ও উদ্যোক্তা অংশ নেন।
নলেজ পার্টনার হিসাবে এডস অফ বাংলাদেশ এবং ক্রিয়েটিভ পার্টনার হিসাবে বাযুকা কমিউনিকেশন্স এই অনুষ্ঠানে যুক্ত ছিল।
– সংবাদ বিজ্ঞপ্তি
