রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ পরিবেশ রক্ষা এবং রাস্তাঘাট, নালা ও তৎসংলগ্ন স্থান পরিচ্ছন্ন রাখতে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে অগ্রণী ভূমিকা পালনের জন্য ছাত্রদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, “আমরা বিদেশে গেলে কখনোই রাস্তাঘাটে ময়লা ফেলি না। এমনকি মানুষ সেখানে পুলিশের ভয়ে রাস্তায় থুথুও ফেলে না। কিন্তু একই ব্যক্তি - হোক সে শিক্ষিত বা অশিক্ষিত, সুবেশি হোক আর না-ই হোক - দেশে এসে যেখানে-সেখানে পলিথিন, চকলেটের মোড়ক, পানির বোতল ফেলে পরিবেশ দূষিত করে। আমাদের এই অভ্যাস পরিবর্তন করতে হবে।”
রোববার (২২ ডিসেম্বর) খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ষষ্ঠ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তব্যে রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, “এই অভ্যাসে পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ছাত্রদের বিশেষ দায়িত্ব নিতেই হবে। অন্যথায় একটি সুন্দর বাংলাদেশ গড়া সম্ভব হবে না।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য আব্দুল হামিদ পরিচ্ছন্ন অভিযানকে একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করে মানুষের মন-মানসিকতায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সহায়তা কামনা করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা কর্মকাণ্ডের কথা তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি গবেষক ও সংশ্লিষ্টদের প্রতি আন্তর্জাতিক মান বজার রাখার আহ্বান জানান। তিনি দেশ ও জনগণের কল্যাণে গবেষণা থেকে প্রাপ্ত ফলাফল যথাযথভাবে ব্যবহার করতেও তাঁদের প্রতি আহ্বান জানান।খবর স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের।
রাষ্ট্রপতি বলেন, “বিশেষ লক্ষ্য রাখবেন যেন এই গবেষণাগুলো আন্তর্জাতিক মানের হয়। এগুলোর ফলাফলকে শুধুমাত্র পাঠাগারেই আবদ্ধ রাখবেন না।”
জীববৈচিত্র্য, সুন্দরবন ও সমুদ্রসম্পদের কল্যাণে খুলনাকে একটি সমৃদ্ধ উপকূলীয় অঞ্চল উল্লেখ করে তিনি বলেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের জীববৈচিত্র্য ও উপকূলীয় সম্পদের গবেষণায় আরও মনযোগী হতে হবে।
হামিদ আরও বলেন, উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণা পরস্পরের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িত। একটি সফল গবেষণা থেকে অর্জিত জ্ঞান সকলের কল্যাণে কাজে লাগতে পারে। রাষ্ট্রপতি প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে শিক্ষাদানের মান উন্নয়নের জন্য শিক্ষকদের পরামর্শ দেন।
নতুন স্নাতক ডিগ্রীধারীদের স্বাগত জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, “মানবিক মূল্যবোধ হৃদয়ে ধারণ করে তোমাদের প্রজ্ঞা, জ্ঞান, প্রতিভা ও সৃজনশীলতাকে জাতির বৃহত্তর কল্যাণে কাজে লাগাতে হবে।”
রাষ্ট্রপতি স্ব স্থান থেকে ২০২০ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও ২০২১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের জন্য স্নাতকপ্রাপ্ত ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানান।
সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ৭,০০৮ জন স্নাতক ও স্নাতকোত্তরপ্রাপ্তদের সনদ প্রদান এবং অসামান্য অবদানের জন্য ২৩ জন শিক্ষার্থীকে স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত প্রদান করা হয়। আটজন গবেষক ডক্টর অফ ফিলসফি (পিএইচডি) ও পাঁচজন গবেষককে মাস্টার অফ ফিলসফি (এমফিল) ডিগ্রি প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনি এমপি, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. কাজী শহিদুল্লাহ্ ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহম্মদ ফায়েক উজ্জামান। সমাজবিজ্ঞানী প্রফেসর ড. অনুপম সেন স্বাগত বক্তব্য রাখেন।
খুলনা সিটি কর্পোরেশন-এর মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, সংসদ সদস্যবৃন্দ, জাতীয় নেতৃবৃন্দ, শিক্ষকবৃন্দ, রাষ্ট্রপতি সংশ্লিষ্ট সচিবগণ এবং জ্যেষ্ঠ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তাগণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে রাষ্ট্রপতি মুজিব বর্ষ’কে সামনে রেখে ক্যাম্পাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে ‘শাশ্বত মুজিব’ নামে একটি প্রাচীরচিত্র উন্মোচন করেন।