loader image for Bangladeshinfo

শিরোনাম

  • ভারতের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে টাইগ্রেসদের দল ঘোষণা

  • বার্সাকে কাঁদিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিতে পিএসজি

  • অ্যাটলেটিকোকে উড়িয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ চারে ডর্টমুন্ড

  • রাষ্ট্রপতি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পাঠ্যক্রম যুগোপযোগী কর তাগিদ দিলেন

  • ক্যানাডায় আর্টসেলের আটটি কনসার্ট

লাইট ইঞ্জিনিয়ারিংকে ২০২০ সালের বর্ষপণ্য ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী


লাইট ইঞ্জিনিয়ারিংকে ২০২০ সালের বর্ষপণ্য ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রপ্তানি সম্প্রসারণের মাধ্যমে অর্থনৈতিক ভিত্তি মজবুত করার জন্য লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং (হাল্কা প্রকৌশল) পণ্যকে ২০২০ সালের ‘বর্ষপণ্য’ হিসেবে ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেন, “আমাদের রপ্তানিনীতি অনুযায়ী পণ্যভিত্তিক রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য আমরা ২০২০ সালের জন্য ‘লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্যকে জাতীয়ভাবে বর্ষপণ্য ঘোষণা করছি। এই খাতে আমরা আরও বিনিয়োগের আহ্বান জানাচ্ছি।”

শেখ হাসিনা বুধবার (১ জানুয়ারি) সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে মাসব্যাপী ২৫তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা-২০২০’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ-কথা বলেন। খবর স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের।

প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প খাতের বিকাশে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে এর রপ্তানি সম্ভাবনা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট মহলের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে এ-খাতের উন্নয়নে প্রয়োজনীয় কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি।”

এ-খাতের পণ্যসমূহের মধ্যে বাইসাইকেল, মটরসাইকেল, অটোমোবাইল, অটো-পার্টস, ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিক্স, অ্যাকুমুলেটর ব্যাটারি, সোলার ফটোভলটিক মডিউল এবং খেলনা প্রভৃতি রয়েছে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।

পণ্যভিত্তিক রপ্তানিকে উৎসাহিত করার জন্য প্রতিবছর একটি পণ্যকে ‘বর্ষপণ্য’ ঘোষণার রীতি অনুযায়ী অতীতে চামড়া ও পাটকে বর্ষপণ্য ঘোষণা করায় এগুলোর বিকাশ ঘটে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “কাজেই এ-বছর আমরা লাইট ইঞ্জিনিয়ারিংকে গুরুত্ব দিচ্ছি যেহেতু এই শিল্পটির বিনিযোগ আকর্ষণের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।

‘বাংলাদেশ বিশ্বে এখন বিনিয়োগ এবং সোর্সিং-এর জন্য সর্বাধিক অনুকূল গন্তব্য হয়ে উঠেছে,” বলে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।

বরাবরের মতো এবারও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইবিপি) যৌথভাবে মেলার আয়োজন করেছে।

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান তোফায়েল আহমেদ, বাণিজ্য সচিব মো. জাফর উদ্দীন এবং এফবিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)’র ভাইস-চেয়ারম্যান ফাতেমা ইয়াসমিন স্বাগত বক্তৃতা করেন।

অনুষ্ঠানে দেশের বাণিজ্য খাতের অগ্রগতির নিয়ে একটি ভিডিওচিত্র পরিবেশিত হয়।

অনুষ্ঠানে ডেপুটি স্পিকার, মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাগণ,সংসদ সদস্যবৃন্দ, সিনিয়র সচিব, সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, কূটনৈতিক মিশনের সদস্যবৃন্দ, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ ও রপ্তানিকারকবৃন্দ, মেলায় অংশগ্রহণকারী দেশি-বিদেশী প্রতিনিধিগণ এবং আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনকে সামনে রেখে দেশের পণ্য প্রদর্শনী এবং পারিবারিক বিনোদনের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে দৃষ্টিনন্দন করে এবারের মেলাকে সাজানো হয়েছে। মেলায় বাংলাদেশসহ ২১টি দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ৪৮৩টি স্টল থাকছে। বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে বঙ্গবন্ধু প্যাভেলিয়নকে ভিন্ন আঙ্গিকে উপস্থাপন করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেরেবাংলা নগরের মেলা প্রাঙ্গনের গেটের ফিতা কেটে মেলা উদ্বোধনের পর এর বিভিন্ন স্টল ও প্যাভেলিয়ন ঘুরে দেখেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রায় ১৭ কোটি ভোক্তার বাজার নিয়ে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার গেটওয়ে হওয়ায় প্রায় চার বিলিয়ন ভোক্তার সঙ্গে সংযুক্ত। বাংলাদেশের বিনিয়োগবান্ধব নীতি একই সঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি পণ্যের জন্য শুল্কমুক্ত ও কোটা-মুক্ত সুবিধা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ করছে।

তিনি বলেন, “আমি কূটনীতিক এবং বিদেশি ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানাবো যে, উইন-উইন পরিস্থিতির জন্য ব্যবসার সুবিধার্থে বিনিয়োগ এবং সোর্সিং-এর জন্য বাংলাদেশকে বেছে নিন।”

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) কর্তৃক সম্পূর্ণ আন্তর্জাতিক মানের অনলাইনভিত্তিক ওয়ানস্টপ সার্ভিস চালু, অন লাইন পেমেন্ট গেটওয়ের উদ্যোগ গ্রহণ, অবকাঠামো উন্নয়ন, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টিতে তাঁর সরকারের নানাবিধ উদ্যোগও তুলে ধরেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, রপ্তানি বৃদ্ধি এবং ‘ডুয়িং বিজনেসে ব্যয় হ্রাসে’র জন্য বিভিন্ন সংস্কারমূলক কর্মসূচি এবং উন্নয়নের জন্য ওয়ানস্টপ সার্ভিসসহ সমগ্রিকভাবে ইকোনমিক জোন এবং সারাদেশে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হয়েছে।

অতীতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ভূমির যে সমস্যা ছিল তা দূরীকরণ এবং যত্রতত্র শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে আবাদী জমি যেন নষ্ট না হয়। আবার ব্যবসায়ীদের সবরকমের সুযোগ সুবিধা যেন একটি জায়গায় পাওয়া যায় সেজন্যই সরকারের এ উদ্যোগ, বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক আপডেট-২০১৯’-এর রিপোর্ট অনুসারে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে বাংলাদেশ প্রধান শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।”

তিনি বলেন, “২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে পণ্য ও সেবা খাতে আমাদের রপ্তানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৬ দশমিক ৮৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।”

তাঁর সরকার মাত্র ১০ বছরের মধ্যে আমরা এই অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে এবং বিশ্ব ব্যাংকের ২০২০ প্রতিবেদন অনুযায়ী ইজ অফ ডুয়িং বিজনেস গ্লোবাল র‌্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ১৯০টি দেশের মধ্যে গত বছর থেকে আট ধাপ উপরে ১৬৮তম অবস্থানে এসেছে। কাজেই, ২০২০ বছরটি তাঁর সরকারের জন্য খুবই গুতুরুত্বপূর্ণ, বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, যাঁরা ব্যবসায়ী এবং দেশে ব্যবসা করতে চান - তাঁদের জন্য ইজ অফ ডুয়িং বিজনেস আরও সহজ করা হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা নিজেরা ব্যবসা করি না। কিন্তু সরকার ব্যবসা-বান্ধব।

তিনি বলেন, আমরা ব্যবসার জন্য অন্যদের সুযোগ করে দেই। আর বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান গত বছরের ৮৯তম থেকে বর্তমানে ৭২তম অবস্থানে আমরা চলে এসেছি। ইনশাআল্লাহ ভবিষ্যতে আরো উন্নতি করতে পারবো।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহজ করার লক্ষ্যে একটি টাস্কফোর্স ও গঠন করা হয়েছে।”

‘বাংলাদেশ এখন ২০২টি দেশে ৬ শতাধিক পণ্য রপ্তানি করছে’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে পণ্য ও সেবা খাতে রপ্তানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৬ দশমিক ৮৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

দেশের রিজার্ভ এখন অতীতের যেকোনো সময়ের থেকে বেশি সমৃদ্ধ আখ্যায়িত করে সরকার প্রধান ইউরোপের বিভিন্ন দেশে থাকা বাংলাদেশি দূতাবাসগুলোর রাষ্ট্রদূত এবং হাইকমিশনারদেরকে নিয়ে লন্ডনে ’দূত সম্মেলনে’র আয়োজন করে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি বৃদ্ধিতে তাঁর সরকারের পদক্ষেপও তিনি তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, “এখন আসলে ডিপ্লোমেসিটা হয়ে গেছে ‘ইকোনমিক ডিপ্লোমেসি’। এখন আর শুধু পলিটিক্যাল দিকে দেখলে হবে না।”

‘ব্যবসা বাণিজ্য সম্প্রসারণের জন্য নতুন বাজার খুঁজে বের করার এবং নতুন নতুন রপ্তানি পণ্য খুঁজে বের করার’ দিকে ও দৃষ্টি দেওয়ার জন্য ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ এবং উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।টেকসই উন্নয়নের অভীষ্ট (এসডিজি) লক্ষ্য অর্জনে অর্থনৈতিক খাত বিশেষ করে শিল্প ও উৎপাদনশীল প্রকল্পে বিনিয়োগ একান্ত প্রয়োজন, উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী

উদ্যোক্তাবৃন্দকে আইসিটিসহ অন্য সব সেবা খাতের রপ্তানিতে এগিয়ে আসার মাধ্যমে সীমিত পণ্যের উপর রপ্তানি নির্ভরতা দূর করারও আহ্বান জানান তিনি। একটি দেশের উন্নয়নের জন্য ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়ন এবং সম্প্রসারণ এবং উৎপাদন বৃদ্ধি জরুরি বলে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।

পাশাপাশি মানুষকে কর্মক্ষম করা, তাঁদের প্রশিক্ষণ দেওয়া, তাঁদেরকে শিক্ষিত করে গড়ে তোলা এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং অন্যান্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন করাটাও একান্তভাবে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করেই তাঁর সরকারের নানা উদ্যোগ, বলেন তিনি।

তিনি বলেন, “একটা কথা  আছে -বাণিজ্যে বসতে লক্ষ্মী, তাই আমরা বাণিজ্যের দিকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছি।”

একদম তৃণমূল পর্যায় থেকে মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করাই তাঁর সরকারের লক্ষ্য উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আরেকটা বিষয়ের দিকে আমরা লক্ষ্য রাখছি তা হলো-দেশের মানুষের ক্রয় ক্ষমতা আমাদেরকে বাড়াতে হবে।”

তিনি বলেন, “এ-প্রসঙ্গে আমি উদ্যোক্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই যে, দেশজ কাঁচামাল নির্ভর রপ্তানি পণ্য যথা পাটভিত্তিক বহুমুখী পণ্য, খাদ্যসহ এগ্রো-প্রসেস্ড পণ্য, হিমায়িত চিংড়ি, হিমায়িত মাছ, আম, আলু, হস্তশিল্পজাত পণ্য ইত্যাদি খাতের সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে এসব পণ্যের রপ্তানি বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণ করবেন।”

প্রতিবেশি দেশে রপ্তানি বৃদ্ধির উদ্যোগ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “প্রতিবেশি দেশগুলোর দিকেই আমাদের দৃষ্টি। যে কারণে, তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর এবং ব্যবসা-বাণিজ্যটাকে সহজ করে দেওয়ার উদ্যোগ আমরা নিয়েছি। একইসঙ্গে দেশে যাতে বিনিয়োগ আসে সেদিকেও দৃষ্টি দিয়েছি।”

তিনি বলেন, বর্তমান বিশ্ব বাণিজ্য প্রেক্ষাপটে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারে এই মেলার আয়োজন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ-মেলায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে দেশি ও বিদেশি উদ্যোক্তাগণ যেমন তাদের নতুন পণ্যসম্ভার প্রদর্শনীর সুযোগ পাবেন, তেমনি দেশি-বিদেশি ক্রেতার পছন্দ, রুচি ও চাহিদা আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ বিস্তৃত করতে সহায়ক হবে বলে আমি মনে করি।

মেলায় অংশগ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রী বিদেশি অংশগ্রহণকারীসহ সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান এবং একই সঙ্গে আরও বেশি পণ্য নিয়ে ভবিষ্যতে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় অংশগ্রহণের অনুরোধও জানান।

Loading...