রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ শ্রমবাজারের বর্তমান চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে শিক্ষা কার্যক্রম চালু করতে এবং বিশ্বপ্রতিদ্বন্দ্বিতা মোকাবেলায় শিক্ষার্থীদের মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রদানের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি সোমবার (৬ জানুয়ারি) ঢাকায় সামরিকবাহিনী পরিচালিত বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ প্রফেশনালস (বিইউপি)-এর ক্যাম্পাসে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির পঞ্চম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ভাষণদানকালে বলেন, “শ্রমবাজারের চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে শিক্ষা কার্যক্রম চালু করতে হবে।”
দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য (চ্যান্সেলর) হিসেবে রাষ্ট্রপতি বিশ্ব প্রতিযোগিতা মোকাবেলায় পেশাভিত্তিক শিক্ষার উপর গুরুত্বারোপ করে আরও বলেন, ‘সময়োপযোগী ও চাকরিভিত্তিক শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই।”
সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ১৭৭৮ জন শিক্ষার্থীকে স্নাতক ডিগ্রি প্রদান করা হয় এবং সাতজন গবেষক পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। জাতীয় অধ্যাপক প্রফেসর ড. আনিসুজ্জামান সমাবর্তন বক্তব্য রাখেন। খবর স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের।
রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, বৈশ্বিক প্রেক্ষিত বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিশন-২০২১ অথবা ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে বিজ্ঞান ও তথ্য-যোগাযোগ প্রযুক্তি জ্ঞানে দক্ষ তরুণপ্রজন্ম গড়ে তুলতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
ডিগ্রি অর্জনের জন্য গ্রাজুয়েটদের অভিনন্দন জানিয়ে তিনি আশা প্রকাশ করেন, এই গ্রাজুয়েটরা স্বাধীনতা যুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সুখী, সমৃদ্ধ ও আত্মনির্ভরশীল ও আত্মমর্যাদা সম্পন্ন ‘সোনার বাংলা’ প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখবে।
রাষ্ট্রপতি গ্রাজুয়েটদের মানসম্মত শিক্ষা গ্রহণের পরামর্শ দিয়ে বলেন, “শিক্ষা কেবল নোট বইয়ের মাধ্যমে সার্টিফিকেট অর্জন অথবা পরীক্ষায় পাশের বিষয় নয়।” তিনি আরও বলেন, “বরং আলোকিত মানুষ হওয়ার জন্য প্রকৃত শিক্ষাগ্রহণ করতে হবে।”
রাষ্ট্রপতি বলেন, মানসম্মত শিক্ষা গভীর দেশপ্রেম, অসাম্প্রদায়িক জীবনযাত্রা, অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও বুদ্ধিবৃত্তির উন্নয়নে সহায়তা করে।
তিনি বিশেষ করে বিইউপি শিক্ষার্থীদের স্মরণ করিয়ে দেন যে, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সফলভাবে ডিগ্রি অর্জনের জন্য দেশ ও সমাজ আজ তোমাদের এ-পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। তাঁদের কাছে তোমরা ঋণী। তোমরা তোমাদের অর্জিত জ্ঞান, মেধা ও মনন দিয়ে দেশমাতৃকার কল্যাণ করতে পারলে সে-ঋণ কিছুটা হলেও শোধ হবে।
আবদুল হামিদ বলেন, কোনো প্রতিকূল পরিস্থিতিতে তোমরা কখনও হতাশ হবেনা, মনে সাহস রাখবে। মনে রাখবে সাফল্যের শিখরে পৌঁছাতে হলে তোমাদের অধ্যবসায়, পরিশ্রম ও কাজের প্রতি ভালোবাসা থাকতে হবে। তবেই আসবে সফলতা।”
তিনি দেশের সকল শিক্ষার্থীদের রাস্তা-ঘাটে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করতে এবং ট্র্যাফিক আইনসহ অন্যান্য কিছু বিধি বজায় রাখার জন্য প্রচারণা চালানোর আহ্বান জানান। এই ধরণের পরিচ্ছন্নতা সাধারণত সেনানিবাসের অভ্যন্তরে এবং দেশের বাইরে দেখা যায়।
রাষ্ট্রপতি সকল স্তরে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার জন্য শিক্ষার্থীদের নিজ-নিজ অবস্থান থেকে মানুষের অভ্যাস পরিবর্তনের জন্য কাজ করার আহ্বান জানান।
বক্তব্যের শুরুতে রাষ্ট্রপতি পরম শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। এরপর তিনি বিনম্র চিত্তে ১৯৫২’র মহান ভাষা আন্দোলন, স্বাধিকার, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধসহ বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শহীদের স্মরণ করেন। তিনি তাঁদের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন।
রাষ্ট্রপতি হামিদ স্ব-স্ব বিভাগে অসাধারণ ফলাফলের জন্য ৩৪ জন শিক্ষার্থীর হাতে স্বর্ণপদক তুলে দেন।
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল আওরঙ্গজেব চৌধুরী, বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল মসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত, রাষ্ট্রপতির সংশ্লিষ্ট সচিবগণ এবং পদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তাসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন। বিইউপি ভিসি মেজর জেনারেল মো. এমদাদ-উল-বারী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।
