loader image for Bangladeshinfo

শিরোনাম

  • ভারতের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে টাইগ্রেসদের দল ঘোষণা

  • বার্সাকে কাঁদিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিতে পিএসজি

  • অ্যাটলেটিকোকে উড়িয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ চারে ডর্টমুন্ড

  • রাষ্ট্রপতি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পাঠ্যক্রম যুগোপযোগী কর তাগিদ দিলেন

  • ক্যানাডায় আর্টসেলের আটটি কনসার্ট

সামাজিক অভিশাপের বিরুদ্ধে সজাগ থাকতে সশস্ত্রবাহিনীর প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান


সামাজিক অভিশাপের বিরুদ্ধে সজাগ থাকতে সশস্ত্রবাহিনীর প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) রুটিন দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি বিদ্যমান কিছু সামাজিক অভিশাপের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকার জন্য সশস্ত্রবাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, তাঁর সরকার এসব সামাজিক অভিশাপ নির্মূল করতে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণ করে যাবে। তিনি বলেন, ‘সমাজে মাদক, সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতির মতো কিছু সামাজিক অভিশাপ রয়েছে। আমি এসব বিষয়ে আপনাদের বিশেষ মনোযোগ আকর্ষণ করছি।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার সকালে মিরপুর সেনানিবাসে ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজ (ডিএসসিএসসি)’র শেখ হাসিনা কমপ্লেক্সে ২০১৯-২০২০ কোর্সের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ-কথা বলেন। খবর স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের।

সমাজের বিদ্যমান সামাজিক অপরাধের বিরুদ্ধে চলমান অভিযান পরিচালনায় সরকারের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ, মাদক ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছি। অপরাধবিরোধী এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, সমাজকে রক্ষা করার জন্য এই ধরণের অভিশাপ নির্মূল করা জরুরি। কারণ, আমরা আমাদের সন্তানদের জীবন ধ্বংস করার কোন সুযোগ দিতে চাই না।

তিনি একইসঙ্গে বলেন, তাঁর সরকার সশস্ত্রবাহিনীকে সমগ্রবিশ্বের সঙ্গে যেন তাল মিলিয়ে চলতে পারে তেমনই একটি আধুনিক ও সুসজ্জিত বাহিনী হিসাবে গড়ে তুলতে কাজ করে যাচ্ছে। শেখ হাসিনা বলেন, ‘তাঁর সরকার তরুণদের মেধা, জ্ঞান ও শক্তি দেশের কল্যাণে কাজে লাগাতে চায়।’

জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে বাংলাদেশের সশস্ত্রবাহিনীর অবদানের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি সশস্ত্রবাহিনীকে এমন ভাবে উন্নত করতে চাই যাতে তাঁরা যেকোন দেশে যেকোন পরিস্থিতিতে শান্তি রক্ষায় কাজ করে যেতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনী পৃথিবীর যেখানে কাজ করেছে সেখানেই সুনাম অর্জন করেছে।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘মানবিক সেবা দিয়ে বিভিন্ন দেশে স্থানীয় মানুষের হৃদয় জয় করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।’

অনুষ্ঠানে ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড ও স্টাফ কলেজের কম্যাড্যান্ট মেজর জেনারেল মো. এনায়েত উল্লাহ স্বাগত বক্তৃতা করেন।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১২৫ জন, নৌবাহিনীর ৩৪ জন ও বিমানবাহিনীর ২২ জন ছাড়াও ২১ দেশ থেকে আগত ৫৪ জন বিদেশি অফিসারসহ মোট ২৩৫ জন শিক্ষার্থী এ-বছর এই কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেছেন।

উল্লেখ্য, ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজ বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনীর একটি আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সশস্ত্রবাহিনীর মধ্যপর্যায়ের নির্বাচিত কর্মকর্তাদের কমান্ড স্টাফ হিসেবে ভবিষ্যতের গুরুদায়িত্ব পালনে দক্ষ করে গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে এই প্রতিষ্ঠান কাজ করে যাচ্ছে।

প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ-পর্যন্ত ‘ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড ও স্টাফ কলেজে’ সেনাবাহিনীর ৪৪টি, নৌবাহিনীর ৩৮টি ও বিমানবাহিনীর ৪০টি স্টাফ কোর্সে ৫,২৫৩ জন সাফল্যের সঙ্গে কোর্স সম্পন্ন করেছেন। এরই মধ্যে ৪২টি বন্ধুপ্রতিম দেশের ১,১৬৫ জন অফিসারও এই কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েশন করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে গ্র্যাজুয়েশন করা অফিসারদের হাতে সনদ তুলে দেন।

২১ টি দেশের মধ্যে রয়েছে - যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, কুয়েত, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, নেপাল, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান, ফিলিস্তিন, ফিলিপাইন, সৌদি আরব, সিয়েরা লিয়ন, দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা, সুদান, তানজানিয়া, তুরস্ক, উগান্ডা ও জাম্বিয়া।

অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ, তিন বাহিনী প্রধানগণ, সশস্ত্রবাহিনী বিভাগের পিএসও সহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ এবং ঊর্ধ্বতন বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

‘সশস্ত্রবাহিনীকে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক’ আখ্যায়িত করে শেখ হাসিনা একটি আধুনিক সুশৃঙ্খল ও পেশাদার সশস্ত্রবাহিনী গড়ে তোলার উপর গুরুত্বারোপ করেন।

তিনি সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশ্যে ১৯৭৫ সালের ১১ জানুয়ারি কুমিল্লার সামরিক একাডেমিতে প্রথম শিক্ষা সমাপনী অনুষ্ঠানে বিদায়ী ক্যাডেটদের উদ্দেশ্যে প্রদত্ত জাতির পিতার ভাষণের বিশেষ কিছু অংশ উদ্বৃত করেন। জাতির পিতা বলেছিলেন, ‘পূর্ণ সুযোগ-সুবিধা পেলে আমাদের ছেলেরা যেকোনো দেশের যেকোনো সৈনিকের সাথে মোকাবেলা করতে পারবে। আমার বিশ্বাস, আমরা এমন একটি একাডেমি সৃষ্টি করবো, সারা দুনিয়ার মানুষ আমাদের এই একাডেমি দেখতে আসবে।’... আজকে এটা বাস্তবে রূপ নিয়েছে।

১৯৯৬ সালে দীর্ঘ ২১ বছর পরে সরকার গঠন করে অনেকটা ছোট পরিসরে ‘ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ’ প্রতিষ্ঠা করলেও তা আজকে একটি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। সরকার-প্রধান বলেন,‘শুরু করলে যে পারা যায় - আমরা তা প্রমাণ করেছি।’ 

প্রশিক্ষণের উপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে ডিজিটাল পদ্ধতি কাজে লাগানোর পরামর্শ দেন।

প্রধানমন্ত্রী দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের খন্ড চিত্র তুলে ধরে বলেন, ‘গত এক দশকে বাংলাদেশ বিশ্বে একটা স্থান করে নিতে পেরেছে। আমরা আশা করি ২০.৫ ভাগ থেকে দারিদ্রের হার ১৫ থেকে ১৬ শতাংশে নামিয়ে এনে বাংলাদেশকে আমরা দারিদ্র মুক্ত হিসেবে ঘোষণা দিতে পারবো। ‘মুজিববর্ষ’তে দেশের সকল ঘরে তাঁর সরকার বিদ্যুতের আলো জ্বালাতে সক্ষম হবে, বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

তিনি বলেন, ‘সশস্ত্রবাহিনীর উন্নয়নেও আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে যাচ্ছি এবং আমি মনে করি, আমাদের সশস্ত্রবাহিনী আধুনিক সাজ-সরঞ্জাম ও প্রশিক্ষণসহ সর্বক্ষেত্রে যথেষ্ট উন্নতি করতে পেরেছে।’ তিনি বলেন, ১৯৭৪ সালে জাতির পিতা যে-প্রতিরক্ষা নীতিমালা প্রণয়ন করে গিয়েছিলেন, সেই আলোকেই তাঁর সরকার ‘ফোর্সেস গোল-২০৩০’ প্রণয়ন করে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর উন্নয়নে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।

লাখো শহীদ যে-চেতনা নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছিল - সেই চেতনাতেই বাংলাদেশকে তাঁর সরকার এগিয়ে নিয়ে যেতে চায় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে উত্তরণ লাভ করেছি এবং ২০৪১ সাল নাগাদ বাংলাদেশকে আমরা দক্ষিণ এশিয়ার একটি উন্নত, সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।’ সেজন্য তাঁর সরকার পাঁচ বছর মেয়াদি পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার পাশাপাশি ১০ বছর মেয়াদি প্রেক্ষিত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে এবং আগামী প্রজন্মকে একটি সুন্দর বাংলাদেশ উপহার দেয়ার জন্য শতবর্ষ মেয়াদি ডেল্টা পরিকল্পনাও বাস্তবায়ন করছে।

প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারের গৃহীত উন্নয়ন পরিকল্পনাগুলোর অনেকগুলো বাস্তবায়নের দায়িত্ব সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যদের উপর ন্যস্ত রয়েছে উল্লেখ করে কোর্স সমাপনী কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আমার বিশ্বাস আপনাদের প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞান আপনাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব দক্ষতার সঙ্গে পালনে এবং যেকোনো ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সফল করে তুলবে। আর দেশের সার্বিক উন্নয়নের দিকেও আপনারা দৃষ্টি দেবেন, যাতে করে আমরা দেশটা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি।’ তিনি বলেন, ‘আমি চাই আমাদের উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার যে-লক্ষ্য - তা বাস্তবায়নে সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যরা বিশেষ ভূমিকা রাখবেন।’

কোর্সে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন দেশের সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যদের অভিনন্দন জানিয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়,’-এর উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন,‘আমরা চাই আপনারাও (বিদেশি শিক্ষার্থীরা) আমাদের বন্ধু হিসেবে থাকবেন এবং সেদেশে বাংলাদেশের একজন গুডউইল অ্যাম্বাসেডর হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।’ 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা বাংলাদেশকে কখনো ভুলবেন না, সেটাই আমরা চাই।’ কোর্সে অংশগ্রহণকারী সকল সদস্য এবং তাঁদের পরিবার-পরিজন এবং ডিএসসিএসসি’র কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকেও আন্তরিক অভিনন্দন ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন,‘যেকোনো কাজ করতে গেলে সকলেরই সহযোগিতা প্রয়োজন হয়। কাজেই এই প্রশিক্ষণের সময় যাঁরা স্পাউজ (সহধর্মিনী) এবং নারী প্রশিক্ষণার্থীদের স্বামীরাও বিশেষভাবে অবদান রেখেছেন।’

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা জাতির পিতার শততম জন্মদিন ১৭ মার্চ ২০২০ বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালার মাধ্যমে উদযাপন করবো। ১৭ মার্চ ২০২০ থেকে ১৭ মার্চ ২০২১ সময়কে আমরা ‘মুজিববর্ষ’ ঘোষণা করেছি। ইউনেস্কো আমাদের সঙ্গে যৌথভাবে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী সারাবিশ্বে উদযাপন করবে। তিনি বলেন, ‘আমার বিশ্বাস, উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনের জাতীয় আকাঙ্ক্ষায় সশস্ত্রবাহিনীর একজন গর্বিত সদস্য হিসাবে আজকের গ্র্যাজুয়েটগণ যথাযথ ভূমিকা রাখবে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনীকে বিশ্বের দরবারে আরও সমুন্নত ও সমুজ্জ্বল করবে।’

Loading...