loader image for Bangladeshinfo

শিরোনাম

  • শেষ মুহূর্তের গোলে ইতালিয়ান কাপের ফাইনালে ইউভেন্টাস

  • আর্সেনালের কাছে পাঁচ গোলে উড়িয়ে গেলো চেল্সি

  • হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর

  • বেপজা অর্থনৈতিক জোনে চীনা কোম্পানির ১৯.৯৭ মি. ডলার বিনিয়োগ

  • কাতারের আমিরের ঢাকা ত্যাগ

উচ্চহারে সংক্রমিত এলাকাগুলোতে লকডাউনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী


উচ্চহারে সংক্রমিত এলাকাগুলোতে লকডাউনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, তাঁর সরকার করোনা ভাইরাসের বিস্তার রোধে উচ্চহারে সংক্রমিত এলাকাগুলোতে লকডাউনের পাশাপাশি কারো যেন খাবারের অভাব না হয় সেজন্য অর্থনীতির চাকাকেও সচল করার উদ্যোগ নিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাস আতঙ্ককটা এখন এমন পর্যায়ে চলে যাচ্ছে যেটা খুব দুঃখজনক। তবু, আমরা ঠিক করেছি কোন কোন এলাকায় বেশি (করোনা সংক্রমণ) দেখা যাচ্ছে সেটা লকডাউন করা। আমরা সেটা আটকাচ্ছি যাতে সেখান থেকে আর কোনোভাবে সংক্রমিত না হয়।’

তিনি আরও বলেন,‘সাথে সাথে আমাদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডগুলো যেন সচল থাকে – সেদিকেও আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি এবং আমরা একটা বাজেটও দিতে সক্ষম হয়েছি।’

প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা আজ দুপুরে একাদশ জাতীয় সংসদের অষ্টম (বাজেট) অধিবেশনে সাবেক মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম এমপি এবং ধর্ম প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ’র মৃত্যুতে জাতীয় সংসদে গৃহীত শোক প্রস্তাবের উপর আলোচনায় এ-কথা বলেন। ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এ-সময় স্পিকারের দায়িত্ব পালন করছিলেন। খবর স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের।

বাস্তবতার নিরিখে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের মানুষগুলোকে তো আমরা করোনার ভয়ে না খাইয়েতো মারতে পারি না। তাঁদের বেঁচে থাকার ব্যবস্থাতো আমাদের নিতে হবে। তাঁদের জীবনযাত্রাটা যেন চলে – সে-ব্যবস্থাটাতো আমাদের করতে হবে।’

করোনাভাইরাসকে অত্যন্ত শক্তিশালী আখ্যায়িত করে শেখ হাসিনা বলেন, উন্নত পশ্চিমা দেশগুলোতে এই রোগের যে-ধরণ দেখেছেন – তাতে এই রোগের সংক্রমণ এবং মৃত্যুহার ক্রমেই বেড়ে গিয়ে একটি পর্যায়ে গিয়ে থামে। বর্তমানে যে-ওয়েভটি দক্ষিণ এশিয়া তথা বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশগুলোতে চলছে।

যে-কারণে জনগণকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে তাঁর সরকার, বলেছেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি জনগণকে বোঝাতে যে – আপনারা অন্তত একটু স্বাস্থ্যবিধিটা মেনে চলেন। কারণ, এটা খুব সাংঘাতিক একটা সংক্রামক ব্যাধি। কাজেই, সংক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করেন।’

প্রধানমন্ত্রী বর্তমান পরিস্থিতিকে যুদ্ধের সঙ্গে তুলনা করেন এবং এ-সময়ে তাঁর দু’জন সারথীর বিয়োগ অত্যন্ত দুঃখজনক আখ্যায়িত করে তাঁদের বিভিন্ন অবদানের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।

তিনি বলেন, ‘এটাও এক ধরনের একটা যুদ্ধ, আর সেই সময় আমার দুইজন যাঁদেরকে সবসময় পাশে পেয়েছি, প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে পেয়েছি। কাজেই, তাঁদেরকে হারানো অত্যন্ত কষ্টদায়ক।’

‘আমি মোহাম্মদ নাসিম এবং শেখ মো. আব্দুল্লাহর রুহের মাগফিরাত কামনা করে তাঁদের শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি আমার সমবেদনা জানাচ্ছি,’ বলেছেন তিনি।

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘তাঁদের পরিবারের সদস্যদের শুধু এটুকুই বলবো যে – ধৈর্য ধরতে হবে। কারণ স্বজন হারাবার বেদনাটা যে কি – সেটাতো আমি জানি।’

তিনি বলেন, ‘সবাইকে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ‘সবর’ দান করুন, আর আমাদের ছেড়ে যাঁরা চলে গেছেন, তাঁদের বেহেস্ত নসীব করুন – সেই কামনাই করি।’

মোহাম্মদ নাসিম ও শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহর শোক প্রস্তাবের উপর আলোচনায় অংশ নেন, সরকারি দলের বেগম মতিয়া চৌধুরী, হাবিবে মিল্লাত, মৃণাল কান্তি দাস, বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের, জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ ও ওয়ার্কার্স পার্টির মোস্তফা লুতফুল্লাহ।

আলোচনা শেষে সর্বসম্মতিক্রমে সংসদে শোক প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়।

এরপর মোহাম্মদ নাসিম ও শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহর প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের জন্য এক মিনিট নিরবতা পালন ও তাঁদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া।

এরপর প্রথা অনুযায়ী কোনো সংসদ সদস্যের মৃত্যুতে সংসদ মুলতবির রেওয়াজ থাকায় এদিনের সংসদ মুলতবি ঘোষণা করা হয়।

সংসদনেতা তাঁর ভাষণে বলেন, ‘আজকে আমি সংসদে আসবো, কিন্তু আমাকে অনেক জায়গা থেকে নিষেধ করা হয়েছে। ভীষণভাবে বাধা দেওয়া হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘তাঁদের আমি বললাম হুমকি, বোমা, গ্রেনেড – কতো কিছুই তো মোকাবিলা করে করে এ-পর্যন্ত এসেছি। এখন কি একটা অদৃশ্য শক্তি, তার ভয়ে ভীত হয়ে থাকবো।

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের আওয়ামী লীগ পরিবারের একজন পার্লামেন্ট মেম্বার তাঁকে হারিয়েছি,আমাদের ক্যাবিনেট সদস্য একজন তাঁকেও হারালাম, সেখানে আমি যাবো না – এটা তো হয় না।’

‘নেতাকর্মীদের মৃত্যুতে পাশে দাঁড়ানো আওয়ামী লীগের ঐতিহ্য হলেও করোনা-সংক্রমণের কারণে সেটা সম্ভব হচ্ছে না,’ উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘অথচ, আমরা আওয়ামী লীগের যেকোনো একজন কর্মী মারা গেলে ছুটে গিয়েছি। জানাজায় অংশ নেওয়া, ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো, পরিবারের সঙ্গে দেখা করা, সবই করেছি। কিন্তু এখন এমন একটা অস্বাভাবিক পরিবেশ, সেটা আর করতে পারছি না।’

প্রচন্ড আক্ষেপের সুরে তিনি বলেন, ‘পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে একটু দেখা করা, তাঁদের একটু সান্তনা দেওয়া সেই সুযোগটা পেলাম না কেন – এটা সব থেকে কষ্টকর।’

এ-সময় মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যুকে তিনি ‘অপূরণীয় ক্ষতি’ আখ্যায়িত করে বলেন, ‘রাজনীতি করতে গিয়ে নাসিম ভাইকে সবসময় আমার পাশে পেয়েছি। রাজনীতিতে পাশে থেকে যারা সাহস ও সমর্থন দিয়েছেন, তাঁরা একে একে আমাদের ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। নাসিম ভাইয়ের পর ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ আব্দুল্লাহ ভাইও চলে গেলেন। এটা আমার জন্য খুবই দুঃখজনক।’

বক্তব্যের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন গণ আন্দোলন-সংগ্রাম এবং বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে মোহাম্মদ নাসিমের অবদানের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাঁকে ১৪ দলের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। কারণ, তিনি সকলকে নিয়ে চলতে পারতেন। শরিক দলের সদস্যরাও তাঁকে ভালো জানতেন।’

‘তিনি সফলতার সঙ্গে সেই দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর মৃত্যুতে বিরাট ক্ষতি হয়েছে নিঃসন্দেহে। শেখ আব্দুল্লাহর মৃত্যুতেও যে-ক্ষতি হয়েছে – তা পূরণ হওয়ার নয়,’ বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মোহাম্মদ নাসিমের বাবা মো. মনসুর আলী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে রাজনীতি করতেন। যখন ছোট ছিলাম তখন থেকেই চিনতাম। সে-সময় নাসিম ভাইদের সাথে আমাদের একটা পারিবারিক সম্পর্ক ছিল, আসা-যাওয়া ছিল।’

শেখ হাসিনা স্মৃতি রোমন্থনে বলেন, ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যার পর খন্দকার মোশতাক যখন মোহাম্মদ নাসিমের বাবাকে মন্ত্রী হওয়ার জন্য ডেকে নিয়ে যায়, তখন তিনি সেই প্রস্তাব ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেন।

‘তোমার হাতে বঙ্গবন্ধুর রক্ত, তুমি কি করে ভাবলে আমি তোমার মন্ত্রিসভায় আসবো, তা কখনই আমার কাছে গ্রহণযোগ্য নয়,’ ক্যাপ্টেন মনসুর আলীর এই কথার উদ্ধৃতি দেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৫ অগাস্ট আমাদের বাসায় আক্রমণ হয়েছে শুনে মনসুর আলী অনেক জায়গায় টেলিফোন করেন, অনেক চেষ্টাও করেছিলেন। এমনকি বাসা থেকে চলে গিয়েছিলেন কিছু করা যায় কি-না। যেহেতু মোশতাকের প্রস্তাব ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন এজন্য জাতীয় চার নেতার সাথে তাঁকেও কারাগারে হত্যা করা হয়।’

‘মোহাম্মদ নাসিম একজন রাজনৈতিক নেতা হিসেবে অত্যন্ত দক্ষ ছিলেন,’ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি ’৮১ সালে দেশে ফেরার পর আমার একটা প্রচেষ্টা ছিল শহীদ পরিবারগুলোর ছেলেমেয়েদের নিয়ে আওয়ামী লীগকে আবার পুনরুজ্জীবিত করা, শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ করা। সেই রাজনীতি করতে গিয়ে নাসিম ভাইকে সবসময় আমার পাশে পেয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘এটা ঠিক যে চলার পথ এত সহজ ছিল না, বারবার বাধা এসেছে। সে (নাসিম) প্রতিটি ক্ষেত্রে আমার পাশে থেকেছে, সমর্থন দিয়েছে।’

সংসদনেতা বলেন, ‘মোহাম্মদ নাসিম অত্যন্ত সাহসী ছিলেন। যে-কারণে যেকোনো অবস্থার মোকাবেলা করতে যেতেন। আর এ-কারণে তাঁকে বারবার অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। জিয়াউর রহমানের আমলে যেমন তিনি নির্যাতিত হয়েছিলেন, এরশাদের আমলেও সেভাবেই নির্যাতিত হয়েছেন।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘এরশাদ ক্ষমতায় থাকার সময় মার্শাল ল’ জারির পরপরই সাভারে ফুল দেয়ার জন্য সেনারা হকিস্টিক দিয়ে প্রত্যেকের ওপর নির্যাতন করেছিল। অনেককেই সাভার থানায় নিয়ে বন্দি করে রাখা হয় সেই সময়। তিনিও (নাসিম) ঘাড়ে ও হাতে আঘাত পান।’

তিনি বলেন, ‘এরপর খালেদা জিয়ার আমলেতো আরও অত্যাচার, যেটার সীমা-পরিসীমা নেই। এরপর এলো ওয়ান ইলেভেন। তাঁকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হলো এবং সে-সময় তাঁর স্ট্রোক হয়।’

‘তখন হাসপাতালে সময় মতো পৌঁছাতে পারার কারণে সে-যাত্রায় নাসিম ভাই বেঁচে যান,’ উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘তবে স্ট্রোক করার পর তাঁর শরীরের একটা দিক প্যারালাইজড হয়ে যায়।’

শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১০টা সাড়ে ১০টার দিকে শুনলাম তিনি (আব্দুল্লাহ) খুব অসুস্থ। তাঁকে হাসপাতালে নিতে হবে। তাঁর বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেখানে না-নিয়ে যাওয়া হলো সিএমএইচ-এ।

তিনি বলেন, জাহাঙ্গীর গেট পার হতে না হতেই তাঁর আরেকটা হার্ট অ্যাটাক হলো এবং খুব অল্প সময়ের মধ্যে পর পর তিনটা অ্যাটাক। রাত ১১টা প্রায় বাজে তখন খবর এলো – তিনি নেই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়া – যে-সময় যে ক্ষমতায় এসেছে, তাঁদের যেন একটা লক্ষই ছিল (রোষানল) গোপালগঞ্জের প্রতি, বহু নেতা-কর্মী নির্যাতিত হয়েছে। সেই দুঃসময়গুলোতে সংগঠনকে ধরে রাখা, নেতা-কর্মীদের দিকে নজর দেওয়া, এই কাজগুলো অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গেই তিনি সামলেছেন।

শেখ হাসিনা বলেন,‘ যাঁরা সবসময় পাশে থেকেছেন; একইদিনে এমন দু’জনের মৃত্যু আমাদের জন্য অত্যন্ত কষ্টদায়ক। আমার অত্যন্ত কষ্ট হচ্ছে বলতে।’

Loading...