মুক্তিযুদ্ধকালীন ৪নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল (অব.) চিত্তরঞ্জন দত্ত (সি আর দত্ত) বীর উত্তমের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সম্পন্ন হয়েছে।
মঙ্গলবার (১ সেপ্টেম্বর) রাজারবাগের বরদেশ্বরী মহাশ্মশান ঘাটে তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়। সি আর দত্তের মরদেহ শ্মশানঘাটে পৌঁছলে সেনাবাহিনীর একটি চৌকস দল গার্ড অফ অনার প্রদান করে। পরে, সেখানেই তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
এর আগে, ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে তার মরদেহের প্রতি ফুল দিয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানান বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। ঢাকা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে এই বীরউত্তমকে রাষ্ট্রীয় সম্মান জানায় পুলিশের একটি চৌকস দল। খবর স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের।
মঙ্গলবার সকালে সিএমএইচ-এর হিমঘর থেকে সিআর দত্তের মরদেহ নেওয়া হয় নিজ বাসা বনানীর ডিওএইচএস মাঠে। সেখানে সাবেক ও বর্তমান সেনাকর্তারা ছাড়াও শ্রদ্ধা জানান বেসামরিক অনেকে।
ঢাকেশ্বরী মন্দিরে বাবাকে শেষবারের মতো দেখেন তাঁর চার সন্তান। পরে মরদেহবাহী গাড়ি রওয়ানা দেয় সবুজবাগ শ্মশানের দিকে। এখানে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, সেনাবাহিনী ও বিজিবি’র পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। আকাশে বন্দুক উঁচিয়ে দেওয়া হয় হলি ফায়ার। সামরিক কায়দায় সালাম জানানোর পরে তাঁর ইচ্ছে অনুযায়ী দেশের মাটিতেই সম্পন্ন হয়েছে দাহ প্রক্রিয়া।
এদিকে, সকালে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দিরে সি আর দত্তের কফিনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফের নেতৃত্বে শ্রদ্ধা নিবেদনের সময়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, উপদপ্তর সম্পাদক সায়েম খান, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন ও খ ম জাহাঙ্গীর, আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে সি আর দত্তকে ঢাকেশ্বরী মন্দির প্রাঙ্গনে গার্ড অফ অনার প্রদান করা হয়। সকাল ১০টার দিকে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দিরে ঢাকা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পুলিশের একটি চৌকস দল তাঁকে গার্ড অফ অনার প্রদান করে।
পরে, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন মন্ত্রণালয়ের সচিব তপন কান্তি ঘোষ। ঢাকার জেলা প্রশাসক শহিদুল ইসলাম শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এছাড়াও একে একে সি আর দত্তের মরদেহে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে বিএনপি, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, বাংলাদেশ মহিলা ঐক্য পরিষদ, ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির, বাংলাদেশ হিন্দু পরিষদ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখা, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, বাংলাদেশ হিন্দু মহাজোট, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, লালবাগ পূজা থানা কমিটিসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ।
সি আর দত্ত ২৫ অগাস্ট সকালে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৩ বছর। ৩১ অগাস্ট সকালে এমিরেটস্ এয়ারলাইন্স-এর একটি ফ্লাইটে তাঁর মরদেহ দেশে আনা হয়। হযরত শাহজালাল বিমান বন্দর থেকে জেনারেল দত্তের মরদেহ সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) হিমাগারে রাখা হয়।
সি আর দত্ত যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় তাঁর মেয়ের বাসায় গত ২০ অগাস্ট বাথরুমে পড়ে যান; এতে তাঁর পা ভেঙ্গে যায়। এরপর তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানে তাঁর শারিরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটতে থাকে।
সি আর দত্তের জন্ম ১৯২৭ সালের ১ জানুয়ারি আসামের শিলংয়ে। তাঁর পৈতৃক বাড়ি হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার মিরাশি গ্রামে। তাঁর বাবার নাম উপেন্দ্র চন্দ্র দত্ত এবং মায়ের নাম লাবণ্য প্রভা দত্ত।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (সাবেক বাংলাদেশ রাইফেল্স)-এর প্রতিষ্ঠাতা মহাপরিচালক, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশনের সাবেক চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন সি আর দত্ত।
মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য চিত্ত রঞ্জন দত্ত বীর উত্তম খেতাবে ভূষিত হন। ঢাকার কাঁটাবন থেকে কারওয়ান বাজার সিগন্যাল পর্যন্ত সড়কটি ‘বীরউত্তম সি আর দত্ত সড়ক’ নামকরণ করা হয়।
