মুক্তিযুদ্ধের ৮ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার কর্ণেল (অব.) আবু ওসমান চৌধুরী আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। আজ সকাল পৌনে আটটার দিকে ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ)-এ তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন । গত ৩০ অগাস্ট থেকে তিনি সেখানে চিকিৎসাধীন ছিলেন। আবু ওসমান চৌধুরীর মেয়ে নাসিমা তারিক গণমাধ্যমকে এ-তথ্য জানান।
৩০ অগাস্ট শারীরিক অসুস্থতাজনিত কারণে কর্নেল (অব.) আবু ওসমান চৌধুরীকে সিএমএইচ ভর্তি করা হয়। সেখানে তাঁর করোনা শনাক্ত হয় বলে সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের মহাসচিব হারুন হাবীব জানান। তিনি বলেন, গত শনিবার থেকে তিনি খাবার গ্রহণ করছিলেন না, ফলে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাই জরুরি ভিত্তিতে রোববার দুপুরে তাঁকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। সেখানে পরীক্ষা শেষে তাঁর শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়।
তিনি জানান, আবু ওসমান চৌধুরী দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছিলেন। স্মৃতিশক্তিও ক্রমে লোপ পাচ্ছিল তাঁর। অসুস্থ থাকলেও করোনাকালের আগে তিনি সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের বৈঠকে উপস্থিত থাকতেন। যদিও সেসময় তাঁর কথা বলতে কষ্ট হতো।
আবু ওসমান চৌধুরীর মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ পৃথক শোকবার্তায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
আবু ওসমান চৌধুরীর বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর। তিনি সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের সহ-সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তিনি।
১৯৩৬ সালের ১ জানুয়ারি চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার মদনেরগাঁও গ্রামে জন্ম হয় আবু ওসমান চৌধুরীর। সপরিবারে তিনি রাজধানীর ধানমন্ডিতে থাকতেন।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে আবু ওসমান চৌধুরীকে বিজেএমসির চেয়ারম্যান করা হয়। পরে তাঁকে চাঁদপুর জেলা পরিষদের প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়। স্বাধীনতাযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ২০১৪ সালে আবু ওসমান চৌধুরীকে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করে সরকার।
১৯৬০ সালে কুমিল্লার মৌলভী পাড়ার মনসুর আহম্মেদের বড় মেয়ে নাজিয়া খানমের সঙ্গে আবু ওসমানের বিয়ে হয়। নাসিমা ওসমান ও ফাওজিয়া ওসমান তাঁদের দুই মেয়ে।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আবু ওসমান চৌধুরী পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একজন মেজর হিসেবে কুষ্টিয়ায় কর্মরত ছিলেন। অপারেশন সার্চলাইটের সংবাদ পেয়ে ২৬ মার্চ সকালে বেলা ১১টায় তিনি চুয়াডাঙার ঘাঁটিতে পৌঁছে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন এবং মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন।
এর আগে ১৯৭১ সালের ৬ মার্চ আবু ওসমান চৌধুরী কুষ্টিয়া থেকে বরিশাল জেলা পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকাকে দক্ষিণ-পশ্চিম রণাঙ্গণ নামকরণ করে সেই রণাঙ্গণের অধিনায়কত্ব গ্রহণ করেন।
পরে ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল বাংলাদেশ সরকার তাঁকে দক্ষিণ-পশ্চিমাংশের আঞ্চলিক কমান্ডার হিসেবে নিযুক্ত করে। মে মাসের শেষার্ধে মুক্তিযুদ্ধে প্রধান সেনাপতি এম এ জি ওসমানী দক্ষিণ-পশ্চিম রণাঙ্গনকে দুই ভাগ করে ৮ নম্বর ও ৯ নম্বর সেক্টরদ্বয় গঠন করেন এবং ৮ নম্বর সেক্টরের দায়িত্বে আবু ওসমানকে নিয়োগ করা হয়। প্রাথমিকভাবে সে-সময় ওই সেক্টরের অপারেশন এলাকা ছিল কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনা, বরিশাল, ফরিদপুর ও পটুয়াখালী জেলা। মে মাসের শেষে অপারেশন এলাকা সংকুচিত করে কুষ্টিয়া ও যশোর, খুলনা জেলা সদর, সাতক্ষীরা মহকুমা এবং ফরিদপুরের উত্তরাংশ নিয়ে এই এলাকা পুনর্গঠন করা হয়। এই সেক্টরের প্রধান ছিলেন আবু ওসমান চৌধুরী এবং পরে মেজর এম এ মঞ্জুর।
(সংকলিত)
