loader image for Bangladeshinfo

শিরোনাম

  • তৃতীয় ধাপে ১১২টি উপজেলায় ভোটগ্রহণ ২৯ মে

  • সিটিকে বিদায় করে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিতে রিয়াল

  • আর্সেনালকে বিদায় করে সেমিতে বায়ার্ন

  • ‘রাজকুমার’ যুক্তরাষ্ট্র ও ক্যানাডার ৭৫ থিয়েটারে

  • ভারতের বিপক্ষে টাইগ্রেসদের দল ঘোষণা

কোভিড ভ্যাকসিন সময়োপযোগী ও সমপ্রাপ্তি নিশ্চিতের উপর প্রধানমন্ত্রীর গুরুত্বারোপ


কোভিড ভ্যাকসিন সময়োপযোগী ও সমপ্রাপ্তি নিশ্চিতের উপর প্রধানমন্ত্রীর গুরুত্বারোপ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্ভাব্য কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন সময়োপযোগী ও সমান প্রাপ্তি নিশ্চিতের উপর গুরুত্বারোপ করেছেন। সম্ভাব্য ভ্যাকসিন প্রাপ্তিতে উন্নত দেশগুলোর ‘ভ্যাকসিন জাতীয়তাবাদ’ এর একটি দৃশ্যমান প্রবণতা দেখা দেয়ার প্রেক্ষিতে তিনি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ভাষণে এ-কথা বলেন। খবর স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের।

তিনি বলেন, ‘আশা করা হচ্ছে বিশ্ব শিগগিরই কোভিড-১৯-এর ভ্যাক্সিন পাবে। এই ভ্যাকসিনকে বৈশ্বিক সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করা প্রয়োজন।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘কোভিড-১৯ প্রমাণ করেছে, আমাদের সকলের ভাগ্য একই সূত্রে গাঁথা। কাজেই সকল দেশ যাতে এই ভ্যাকসিন সময়মতো এবং একইসঙ্গে পায় – তা নিশ্চিত করতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী শনিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৫ তম অধিবেশনে দেশের পক্ষে ভার্চুয়াল ভাষণে এই আহ্বান জানান। পূর্বে ধারণকৃত এই ভাষণে শেখ হাসিনা দেশের ওষুধ শিল্পের অবকাঠামোগত সক্ষমতার বিষয়টির উল্লেখ করে বলেন, ‘কারিগরি জ্ঞান ও মেধাস্বত্ত্ব প্রদান করা হলে, এই ভ্যাকসিন বিপুল পরিমাণে উৎপাদনের সক্ষমতা বাংলাদেশের রয়েছে।’

বিশ্ব স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রকদের মতে, গবেষকরা মানবদেহে ক্লিনিকাল ট্রায়ালগুলোতে ৪২ টি ভ্যাকসিন পরীক্ষা করছেন এবং কমপক্ষে ৯৩ টি প্রাক্কলিত ভ্যাকসিন প্রাণীতে সক্রিয় তদন্তাধীন রয়েছে। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মহামারি নিরসনে আমাদের উদ্যোগ এবং এজেন্ডা-২০৩০ অর্জনে আমাদের প্রচেষ্টা সমানতালে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের দ্বিতীয় ভলান্টারি ন্যাশনাল রিভিউ রিপোর্ট উপস্থাপন প্রমাণ করে যে, টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে আমরা যথাযথভাবে এগিয়ে চলেছি।’

শেখ হাসিনা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে প্রতিবছরের মতো এবারও বাংলায় ভাষণ দেন। কোভিড-১৯ এর কারণে জাতিসংঘের ইতিহাসে এই প্রথম নিউইয়র্কের সদর দপ্তরে সদস্য দেশসমূহের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানগণের অনুপস্থিতিতে ডিজিটাল পদ্ধতিতে সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

শেখ হাসিনা মহামারি কার্যকরভাবে মোকাবেলায় সঠিক নেতৃত্বের নির্দেশনায় ‘সম্মিলিত ব্যবস্থা’ নেয়ারও আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ যেমন জাতিসংঘ সৃষ্টির মাধ্যমে বিশ্বের সকল দেশের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসের উপর গুরুত্বারোপের সুযোগ সৃষ্টি করেছিল, তেমনি এই মহামারি আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে সঠিক নেতৃত্ব প্রদানের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি সামনে নিয়ে এসেছে।’

করোনাভাইরাস আমাদের অনেকটাই ঘরবন্দি করে ফেলেছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা কেউই সুরক্ষিত নই, যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা সকলের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারছি। এর প্রভাবে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার পাশাপাশি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

কোভিড-১৯ মহামারির কারণে বিদ্যমান বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জসমূহ আরও প্রকট হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই মহামারি আমাদের উপলব্ধি করতে বাধ্য করেছে যে, এই সঙ্কট উত্তরণে বহুপাক্ষিকতাবাদের বিকল্প নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘জাতিসংঘের ৭৫তম বছর পূর্তিতে জাতিসংঘ সনদে অন্তর্নিহিত বহুপাক্ষিকতাবাদের প্রতি আমাদের অগাধ আস্থা রয়েছে। জাতীয় পর্যায়ে বহু প্রতিকূলতার মধ্যেও বহুপাক্ষিকতাবাদের আদর্শ সমুন্নত রাখতে আমরা বদ্ধপরিকর।’

রোহিঙ্গা-সমস্যা, জলবায়ু সংকট, কোভিড-১৯ মহামারির কারণে অভিবাসী শ্রমিকদের দুর্দশা, সন্ত্রাসবাদ এবং চরমপন্থার বিরুদ্ধে তাঁর সরকারের গৃহীত জিরো টলারেন্স পলিসি, এসডিজি অর্জনের পদক্ষেপসমূহ, দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের চিত্র, নারীর ক্ষমতায়ন, বহুপাক্ষিকতা এবং বিশ্বশান্তি প্রচেষ্টার নানাদিক তাঁর ১৭ মিনিটের ভাষণে তুলে আনেন প্রধানমন্ত্রী।

দীর্ঘায়িত রোহিঙ্গা-সংকট নিরসনে আরও কার্যকর ভূমিকা নিতে শেখ হাসিনা বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি তাঁর আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, ‘এই সমস্যা মিয়ানমারের সৃষ্টি এবং এর সমাধান মিয়ানমারকেই করতে হবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ ১১ লাখেরও বেশি জোরপূর্বক বাস্তুচ্যূত মিয়ানমার নাগরিককে আশ্রয় দিয়েছে। তিন বছরের বেশি সময় অতিক্রান্ত হলেও এখন পর্যন্ত মিয়ানমার একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত নেয়নি।’ তিনি বলেন ‘আমি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এ-ব্যাপারে আরও কার্যকর ভূমিকা গ্রহণের অনুরোধ জানাচ্ছি।’

সরকার-প্রধান হিসেবে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে এবার নিয়ে ১৭ তম বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী কোভিড-১৯ মহামারির কারণে অভিবাসী শ্রমিকদের দুর্দশা প্রসঙ্গে বলেন, ‘এই মহামারির কারণে অনেক শ্রমিক কাজ হারিয়েছেন। অনেককে নিজ দেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা দেশে ফিরে আসা অভিবাসী শ্রমিকদের প্রণোদনা বাবদ ৩৬১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বরাদ্দ দিয়েছি। তবে, কোভিড-পরবর্তী সময়ে তাঁদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

প্রধানমন্ত্রী অভিবাসী শ্রমিকদের বিষয়টি সহমর্মিতার সঙ্গে ও ন্যায়সঙ্গতভাবে বিবেচনা করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও অভিবাসীগ্রহণকারী দেশসমূহের প্রতি ও আহ্বান জানান।

অনেক উন্নত দেশের চেয়ে বাংলাদেশে কোভিড-১৯ কে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারা এবং সরকার প্রদত্ত নাগরিকদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার তথ্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোভিড-১৯ রোগী সনাক্তের সাথে সাথে আমরা ৩১-দফা নির্দেশনা জারি করেছিলাম। করোনাভাইরাস যাতে ব্যাপকহারে সংক্রমিত হতে না পারে, তার জন্য আমরা সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানোর পাশাপাশি সুরক্ষাসামগ্রী বিতরণ করেছি। যার সুফল হিসেবে আমরা লক্ষ্য করছি, ঋতু পরিবর্তনের ফলে আমাদের দেশে যেসব রোগের প্রাদুর্ভাব হয়, এবার সেসব রোগ তেমন একটা দেখা যাচ্ছে না।

আর্থিক খাতের আশু সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে তাঁর সরকার ২১টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘রপ্তানিমুখী শিল্প, শ্রমিকদের সুরক্ষা, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে ওয়ার্কিং ক্যাপিট্যাল প্রদান, রপ্তানি বৃদ্ধিতে ঋণ প্রদান, কৃষি ও কৃষকদের সহায়তা, কর্মসৃজনের জন্য ঋণ প্রদান, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সুদ মওকুফ, পুনঃঅর্থায়ন স্কিম এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য বীমা চালুকরণ খাত প্রণোদনার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এ-পর্যন্ত আমরা মোট ১৩.২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছি, যা আমাদের মোট জিডিপি’র ৪.০৩ শতাংশ।’

সমগ্রবিশ্বে খাদ্যাভাবের আশঙ্কা থাকায় এ-সম্পর্কে তাঁর সরকারের পদক্ষেপ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা করোনাকালে খাদ্য উৎপাদনকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছি। সেই সঙ্গে পুষ্টি নিশ্চয়তার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে দেশের শিল্প কারখানা সচল রাখা এবং কৃষি ও শিল্পপণ্য যথাযথভাবে বাজারজাতকরণের বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছি। যার ফলে বাংলাদেশের স্ব্যাস্থ্য ও অর্থনীতি এখনও তুলনামূলকভাবে অনেক ভালো আছে।’

সরকার-প্রধান বলেন, কোভিড-১৯ বিস্তারের কারণে কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষের জন্য আমরা তাৎক্ষণিকভাবে খাদ্য ও অন্যান্য সহায়তার ব্যবস্থা নিয়েছি। এতে ১০ মিলিয়নের বেশি পরিবার উপকৃত হয়েছেন। আমরা চার মিলিয়ন শিক্ষার্থীকে শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করেছি। তিনি বলেন, করোনাকালে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক, শ্রমিক ও দিনমজুরসহ পাঁচ মিলিয়ন মানুষকে নগদ অর্থ সহায়তা দিয়েছি। সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে গ্রাম পর্যায়ের প্রায় ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র হতে বিনামূল্যে ৩০ ধরনের ওষুধ দেওয়া হয়।

তিনি আরও বলেন, সরকারি সহায়তার পাশাপাশি তিনি নিজে উদ্যোগী হয়ে তহবিল সংগ্রহ করে এতিম ও গরীব শিক্ষার্থী, মাদ্রাসা, মসজিদ, মন্দির, স্কুল শিক্ষক, শিল্পী, সাংবাদিকসহ যাঁরা সাধারণভাবে সরকারি সহায়তার আওতাভুক্ত নন, তাঁদের মধ্যে ২.৫ বিলিয়নের বেশি টাকা বিতরণ করেছেন। ফলে, সাধারণ মানুষকে করোনাভাইরাস খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারেনি।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৮.২ শতাংশ হারে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হয়েছিল। অন্যদিকে কোভিড-১৯-এর কারণে বিশ্বব্যাপী উৎপাদনে স্থবিরতা সত্ত্বেও আমাদের ৫.২৪ শতাংশ হারে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। আগামী অর্থবছরে জিডিপি’র প্রবৃদ্ধির হার ৭ শতাংশে উন্নীত হবে বলে আমরা আশাবাদী।’

জলবায়ু পরিবর্তন ইসুতে প্রধানমন্ত্রী, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর বিদ্যমান সমস্যাসমূহ প্রতিনিয়ত প্রকট হচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, কোভিড-১৯ এর এই সংকটকালেও আমাদেরকে বন্যা ও ঘূর্ণিঝড় আম্পানের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলা করতে হচ্ছে। সিভিএফ ও ভি-টুয়েন্টি গ্রুপ অফ মিনিস্টার্স অফ ফিন্যান্স-এর সভাপতি হিসেবে বাংলাদেশ জলবায়ু সমস্যা উত্তরণে টেকসই পরিকল্পনা প্রণয়নে নেতৃত্ব প্রদান করবে। এছাড়াও, গ্লাসগো কপ-এ গঠনমূলক ও কার্যকর ফলাফল নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সর্বদা সচেষ্ট থাকবে।

বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন সম্পর্কে তিনি বলেন, এ-বছর আমরা ‘উইমেন, পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি’এজেন্ডার ২০ বছর পূর্তি উদযাপন করছি। এই এজেন্ডার অন্যতম প্রবক্তা হিসেবে আমরা শান্তি ও নিরাপত্তায় নারীর ভূমিকার উপর গুরুত্বারোপ করি। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে এ-বিষয়ে একটি জাতীয় কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

লিঙ্গ সমতা নিশ্চিতকরণে ‘বেইজিং ঘোষণা’ এবং ‘প্ল্যাটফর্ম অফ অ্যাকশন’ কার্যকরে বাংলাদেশ কার্যকর ভূমিকা রেখেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন,‘ এই ঘোষণার ২৫ বছর পূর্তি উদযাপনকালে ঘোষণায় উল্লেখিত গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুসমূহ বাস্তবায়নে আমাদের দৃঢ় সঙ্কল্প ও পারস্পরিক সহযোগিতার প্রয়োজন।’

তিনি বলেন, বাংলাদেশে আমরা লিঙ্গবৈষম্য সামগ্রিকভাবে ৭২.৬ শতাংশ কমিয়ে এনেছি। আমাদের জাতীয় উন্নয়নের মূলে রয়েছে নারীদের অবদান। মহামারি মোকাবেলাসহ সকল কার্যক্রমে বাংলাদেশের নারীরা সামনে থেকে কাজ করে যাচ্ছেন।

বাংলাদেশ শিশুদের উন্নয়নে বিশেষ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ইউনিসেফ-এর এক্সিকিউটিভ বোর্ডের বর্তমান সভাপতি হিসেবে আমরা শিশুর প্রতি বৈষম্য দূরীকরণে কাজ করে যাচ্ছি। তাছাড়া, কোভিড সংক্রান্ত সমস্যা যাতে শিশুদের সামগ্রিক সমস্যায় পরিণত না হয়, তা নিশ্চিত করতে আমরা সচেষ্ট রয়েছি।’

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে দেশের পররাষ্ট্রনীতি ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরীতা নয়,’ এর উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘মহামারিকালে অসহিষ্ণুতা, ঘৃণা, বিদ্বেষ ও উগ্র জাতীয়তাবাদের মতো বিষয়গুলো বৃদ্ধি পাচ্ছে। শান্তির সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আমরা এ-বিষয়গুলোর মোকাবেলা করতে পারি।’

তিনি বলেন, বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় শান্তিরক্ষী প্রেরণে বাংলাদেশের অবস্থান এখন শীর্ষে। সংঘাতপ্রবণ দেশসমূহে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও শান্তি বজায় রাখতে আমাদের শান্তিরক্ষীগণ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন।

শেখ হাসিনা বলেন, এই শান্তিরক্ষীদের ‘সুরক্ষা’ ও ‘নিরাপত্তা’ নিশ্চিত করা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অন্যতম দায়িত্ব।

তিনি বলেন, শান্তির প্রতি অবিচল থেকে আমরা সন্ত্রাসবাদ ও সহিংস উগ্রবাদের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছি। মহামারির ফলে সৃষ্ট ঝুঁকি মোকাবেলায় জাতীয় উদ্যোগের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সহযোগিতাও অপরিহার্য।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত পৃথিবী বিনির্মাণে বৈশ্বিক আকাঙ্ক্ষার প্রতি আমাদের সমর্থন অবিচল। সেই বিবেচনা থেকে পরমাণু প্রযুক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের বিষয়ে উন্নয়নশীল দেশসমূহের কার্যক্রমকে আমরা জোর সমর্থন জানাই।’

বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন ও সেসময়ে দেশে সংঘটিত গণহত্যার প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রামে বাঙালি জাতি অবর্ণনীয় দুর্দশা, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার মতো জঘন্য অপরাধের শিকার হয়েছে। সেই কষ্টকর অভিজ্ঞতা থেকেই আমরা নিপীড়িত ফিলিস্তিনী জনগণের ন্যায়সঙ্গত দাবীর প্রতি সমর্থন দিয়ে আসছি।’

তিনি বলেন, বাংলাদেশকে আমরা ২০২১ সালের মধ্যে একটি মধ্যম আয়ের দেশ, ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি অর্জন, ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ এবং ২১০০ সালের মধ্যে সমৃদ্ধ ব-দ্বীপে পরিণত করতে কাজ করে যাচ্ছি।

এজন্য প্রযুক্তিগত বিভাজন নিরসন, সম্পদ আহরণ ও প্রযুক্তি স্থানান্তরের জন্য আমাদের বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনকে কাজে লাগানোর পাশাপাশি স্বল্পোন্নত হতে উন্নয়নশীল এবং সদ্য উত্তরিত উন্নয়নশীল দেশসমূহের জন্য এই আপদকালীন, উত্তরণকাল ও উত্তরণপরবর্তী সময়ে বর্ধিত আন্তর্জাতিক সহায়তা এবং প্রণোদনা প্যাকেজ নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে আমরা প্রথম থেকেই “জীবন ও জীবিকা” দুই ক্ষেত্রেই সমানভাবে গুরুত্ব দিয়ে কার্যক্রম শুরু করেছিলাম। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, উৎপাদন যাতে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন না হয়, তার জন্য বিভিন্ন প্রণোদনার ব্যবস্থা করেছি। আমরা সামাজিকনিরাপত্তা কর্মসূচির পরিধি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করেছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আমরা প্রতি বছর প্রায় ৩৯ বিলিয়ন টাকা বরাদ্দ করি। এছাড়া, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা নারীদের জন্য ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা এবং সমাজের অনগ্রসর শ্রেণিসহ অন্যদের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি ও ভাতা প্রচলন করেছি; যার মাধ্যমে প্রায় ৯.১ মিলিয়ন পরিবার উপকৃত হচ্ছেন।

শেখ হাসিনা তাঁর ভাষণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর এই সাধারণ পরিষদে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রথম ভাষণই বাংলায় প্রদানের স্মৃতি রোমন্থন করেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘আমি গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। তিনি শোষণ, বঞ্চনা ও নিপীড়নের অবসান ঘটিয়ে বাঙালি জাতিকে পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে শিখিয়েছেন। তাঁরই দেখানো পথে হেঁটে আমরা আজ বাংলাদেশকে একটি মর্যাদাশীল আসনে নিয়ে আসতে পেরেছি।’

তিনি বলেন, ‘১৯৭৪ সালে জাতিসংঘে তাঁর (বঙ্গবন্ধু) প্রদত্ত দিকনির্দেশনামূলক ভাষণ বর্তমান সঙ্কট মোকাবেলার জন্য আজও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক।’

প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা প্রদত্ত ভাষণের উদ্ধৃতি দেন – ‘জাতিসংঘ সনদে যে-মহান আদর্শের কথা বলা হয়েছে, তা আমাদের জনগণের আদর্শ এবং এই আদর্শের জন্য তাঁরা চরম ত্যাগ স্বীকার করেছেন। এমন এক বিশ্বব্যবস্থা গঠনে বাঙালি জাতি উৎসর্গকৃত – যে-ব্যবস্থায় সকল মানুষের শান্তি ও ন্যায়বিচার লাভের আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত হবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর এই দীপ্ত ঘোষণা ছিল মূলত বহুপাক্ষিকতাবাদেরই বহিঃপ্রকাশ।

এ-বছর জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন এবং ’৭৫ এর ১৫ অগাস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার পরে তাঁর (শেখ হাসিনা) ও ছোট বোন শেখ রেহানার প্রবাসে রিফিউজি জীবন কাটাতে বাধ্য হওয়ার মর্মন্তুদ ইতিহাসও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছি। দারিদ্র্য ও শোষণমুক্ত সেই সোনার বাংলাদেশ হবে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের উপর প্রতিষ্ঠিত – যেখানে সবার মানবাধিকার নিশ্চিত হবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীতে জাতি ও বিশ্বের কাছে এটিই আমাদের দৃঢ় অঙ্গীকার।’

Loading...