loader image for Bangladeshinfo

শিরোনাম

  • ভারতের বিপক্ষে টাইগ্রেসদের দল ঘোষণা

  • বার্সাকে কাঁদিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিতে পিএসজি

  • অ্যাটলেটিকোকে উড়িয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ চারে ডর্টমুন্ড

  • রাষ্ট্রপতি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পাঠ্যক্রম যুগোপযোগী কর তাগিদ দিলেন

  • ক্যানাডায় আর্টসেলের আটটি কনসার্ট

বিদ্যালয় না খোলা পর্যন্ত অনলাইন শিক্ষা কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে: প্রধানমন্ত্রী


বিদ্যালয় না খোলা পর্যন্ত অনলাইন শিক্ষা কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ কর্মসূচির উদ্বোধনকালে বিদ্যালয়গুলো না খোলা পর্যন্ত তাঁর সরকারের অনলাইন শিক্ষা কর্মসূচি অব্যাহত রাখার পাশাপাশি সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি করোনাকালীন শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশে পাঠ্য পুস্তকের পাশাপাশি অন্য বই পড়ার এবং শরীরচর্চা ও খেলাধূলার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক চর্চা চালিয়ে নেওয়ার জন্যও অভিভাবকদের প্রতি অনুরোধ করেন।

প্রধানমন্ত্রী আজ সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভার্চুয়ালি এক অনুষ্ঠানে ২০২১ শিক্ষাবর্ষের প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক স্তর, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন স্তরের শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। খবর স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি মনে করি, বিভিন্ন ডিজিটাল পদ্ধতিতে শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।’ তিনি বলেন, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনলাইনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম (জুম, ম্যাসেঞ্জার, ফেইসবুক গ্রুপ, ইউটিউব) ব্যবহারের মাধ্যমে ক্লাস রেকর্ডিং করে কিশোর বাতায়ন, শিক্ষক বাতায়ন এবং ইউটিউবে ভিডিও আপলোড করে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করছে। কাজেই, ঘরে বসে আমাদের শিক্ষার্থীরা শিক্ষা গ্রহণ করতে পারছে।

তাঁর সরকার যখনই স্কুলগুলো খোলার বিষয়ে চিন্তা শুরু করলো তখনই করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ধাক্কা আসার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আমাদের ছেলে-মেয়েদের কথা চিন্তা করেই স্কুল না খুলে এখন ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় দিয়েছি। এরমধ্যে যদি অবস্থা ভালো হয়, তাহলে স্কুল খোলা হবে, না হলে আমরা খুলবো না।’

করোনা-পরিস্থিতির মধ্যেও যথাসময়ে প্রায় সাড়ে চার কোটি শিক্ষার্থীর হাতে বিনামূল্যে নতুন বই তুলে দিচ্ছে সরকার। ২০২১ শিক্ষাবর্ষে সর্বমোট ৩৪ কোটি ৩৬ লাখ ৬২ হাজার ৪১২ খানা পাঠ্যপুস্তক বিনামূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে।

স্বাস্থ্যবিধি মেনে রাজধানীর শেরেবাংলানগরস্থ বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে মিলনায়তনে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে শিক্ষা মন্ত্রী ডা. দীপু মনি এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন কয়েকজন প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থীর হাতে নতুন পাঠ্যপুস্তক তুলে দেন।

শুক্রবার (১ জানুয়ারি) থেকে সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বই বিতরণ শুরু হবে। এরপর পর্যায়ক্রমে তিনদিন করে মোট বারোদিন ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নতুন বই বিতরণ করা হবে।

করোনাভাইরাসের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ১ জানুয়ারি বই উৎসব না হলেও বছরের শুরুতেই শিক্ষার্থীরা বিনামূল্যে বই পাচ্ছে। এবার ছাপা হচ্ছে প্রায় ৩৫ কোটি বই।

প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে শিক্ষার্থীদের মানসিক শিক্ষার বিকাশের উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, ‘আমি আমাদের সকল শিক্ষার্থীদের অনুরোধ করবো, যদিও ঘরে বসে সময় কাটানোটা অত্যন্ত কষ্টকর তারপরেও শুধু পাঠ্যপুস্তক নয়, অন্য আরও অনেক বই আছে, যেগুলো পড়া যায়, তা পড়ার জন্য আমি অনুরোধ করবো। সেইসাথে একটু খেলাধুলাও করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘যাঁরা অভিভাবক বা বাবা-মা রয়েছেন, তাঁদেরকে আমি অনুরোধ করবো আপনারা বাচ্চাদেরকে সময় দেবেন। কারণ, করোনাভাইরাস যেমন আমাদের কষ্ট দিচ্ছে তারপরেও হাজার কাজের চাপের মধ্যেও ছেলে-মেয়েদের নিয়ে সময় কাটানোর সুযোগ পাচ্ছেন, এই সুযোগটার আপনারা সদ্ব্যবহার করবেন।’

শেখ হাসিনা বলেন, ছেলে-মেয়েদের নিয়ে একটু সময় কাটাবেন এবং তাঁদের শরীর চর্চাটা যেন হয়, সেজন্য একটু খেলাধূলা যাতে করতে পারে সেই ব্যবস্থাটা নিতে হবে। এতে করে ছেলে-মেয়েদের মানসিক এবং শারিরীক স্বাস্থ্যটা ভাল থাকবে। সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেয়ার জন্য আমি অনুরোধ জানাচ্ছি।’

শিক্ষামন্ত্রী মন্ত্রী ডা. দীপু মনি এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো.আমিনুল ইসলাম খান এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব গোলাম মো. হাসিবুল আলম নিজ নিজ মন্ত্রীকে বই বিতরণে সহযোগিতা করেন।

গণভবন প্রান্তে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। সেখানে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ৯৪,২৭৫ জন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর (চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, গারো ও সাদ্রী) শিশুদের জন্য পাঁচটি ভাষায় প্রাক-প্রাথমিক থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় ২ লাখ ১৩ হাজার ২৮৮ টি বিশেষ ভাষায় বই বিতরণ করা হবে। তবে, তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীরা তাঁদের ভাষায় শুধুমাত্র বাংলা বইটি পাবে। এবার ৯,১৯৬ জন দৃষ্টি প্রতিবন্ধীর জন্য ব্রেইল পদ্ধতির বই বিতরণ করা হবে।

মুজিববর্ষ উপলক্ষে এবার বইয়ের প্রচ্ছদে নতুনত্ব আনা হয়েছে। পাঠ্যপুস্তকের শেষ পাতায় বঙ্গবন্ধু, স্বাধীনতা, মহান মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলনসহ বর্তমান সরকারের নানা উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের বিভিন্ন স্থিরচিত্র ক্যাপশনসহ সংযোজন করা হয়েছে। গত ২০১০ সাল থেকে চলতি বছর (২০২০ সাল) পর্যন্ত এই দশবছরে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক মিলিয়ে প্রায় ৩৩১ কোটি ৪৭ লাখ বই সারাদেশে বিতরণ করা হয়েছে। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি ছাত্র-ছাত্রীদের আহ্বান জানাচ্ছি তাঁরা যাতে করোনাকালে ঘরে বসে চলমান পাঠদান (অনলাইন ও টেলিভিশন) কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে।

তিনি বলেন, করোনার কারণে দীর্ঘ সময় ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীগণের মানসিক স্বাস্থ্যসমস্যা বা অভিঘাত মোকাবেলায় করণীয় বিষয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান এবং একজন ফোকাল পয়েন্ট শিক্ষককে প্রশিক্ষণ প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এ-লক্ষ্যে ইতোমধ্যে দেশের শীর্ষস্থানীয় সাইকোলজিস্টগণের সহায়তায় একটি কাউন্সেলিং ম্যানুয়াল প্রণীত হয়েছে।

করোনাকালীন বিশেষ ব্যবস্থায় ১,৬৪৬টি স্কুল-কলেজকে এমপিওভুক্তকরণের মাধ্যমে ২ হাজার ৫৫ জন শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন-ভাতা ও অবসর সুবিধা নিশ্চিত করাসহ এই সময়ে সরকার প্রদত্ত অন্যান্য সুবিধাদিরও কথাও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, সাধারণ শিক্ষাধারার ৬৪০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বৃত্তিমূলক কোর্স চালু করে ইতোমধ্যে ৬৭৬ জন ট্রেড ইন্সট্রাকটর নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এবং বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৫ হাজার ৩৫১ জন শিক্ষক-কর্মচারীকে ৫১৭ কোটি ৩৩ লক্ষ ১২ হাজার টাকা অবসর সুবিধা প্রদান করা হয়েছে। পাশপাশি, ৫,৪৪৬ জন শিক্ষক-কর্মচারীর কল্যাণভাতার আবেদন নিষ্পত্তি করে ২১৮ কোটি ৬৩ লক্ষ ৮ হাজার ১৩৫ টাকা প্রদান করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সকল ধরনের বৃত্তির অর্থ ‘জিটুপি’ পদ্ধতিতে ১ লাখ ৫৯ হাজার ৫২৬ জন বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীকে অনলাইনে ‘ইএফটি’ এর মাধ্যমে ব্যাংক একাউন্টে প্রেরণ করা হয়েছে।

তিনি ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় ৪০ লাখ দরিদ্র শিক্ষার্থীদের মাঝে উপবৃত্তির টাকা মোবাইল ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে অনলাইনে করোনাকালীন প্রেরণ করার তথ্য উল্লেখ করেন।

শেখ হাসিনা করোনাকালীন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, ‘সবাইকে আমি অনুরোধ করবো যেখানে জনসমাগম বেশি বা লোকজন বেশি সেখানে মুখে মাস্ক পরিধান করতে হবে এবং কিছুক্ষণ পরপর হাত সাবান বা স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। কারণ, এটাই করোনার ক্ষেত্রে আমাদের সুরক্ষা দেয়।’

তিনি এই শীতকালে লেবু ও কমলালেবুসহ বিভিন্ন ভিটামিনযুক্ত খাবার খাওয়ার উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, ‘সকলে যেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেন, সেজন্য আমি আমাদের অভিভাবক শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ সকলের প্রতি অনুরোধ জানাবো। আর সব সময় ঘরে বসে না থেকে যেকোনো সময়ে একটু রোদে বা খোলা বাতাসে থাকতে হবে। এটি আমাদের করোনাভাইরাস থেকে মুক্তি দিতে পারে।’

তিনি করোনাকালেও যথযসময়ে বই মুদ্রণ করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিতে পারায় শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের আজকের শিশুরাই আগামী দিনের কর্ণধার। এদের মধ্য থেকেই আগামীতে কেউ ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, বিজ্ঞানী, মন্ত্রী বা প্রধানমন্ত্রী হবে। কাজেই, সেইভাবে তাঁদের শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই করোনাভাইরাসের মধ্যেও আমরা সকলের হাতে নতুন বই তুলে দিতে পারলাম। কাজেই, ছোট্ট সোনামণিরা, তোমরা মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করবে। মানুষের মতো মানুষ হবে এবং দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

তিনি এ-সময় দেশবাসীকে খ্রিস্টীয় নববর্ষের আগাম শুভেচ্ছা ও জানান।

তিনি বলেন, ‘যাঁরা গৃহহীন বা ভূমিহীন তাঁদেরকে আমরা ঘর করে দিচ্ছি। মুজিববর্ষে বাংলাদেশের একজন মানুষও ঠিকানা বিহীন থাকবে না।’

‘মুজিববর্ষে দেশের সকল ঘরে বিদ্যুৎ সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে আলো জ্বালানোর পাশাপাশি সমগ্র দেশে শিক্ষার আলো জ্বালানোও তাঁর সরকারের অন্যতম লক্ষ্য,’ উল্লেখ করে সরকার-প্রধান বলেন, ‘মুজিববর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে শতভাগ বিদ্যুৎ প্রদানের মাধ্যমে দেশের সকল ঘর যেমনি আলোকিত করবো, তেমনি দেশের প্রতিটি ছেলে-মেয়ে সুশিক্ষায় শিক্ষিত হবে। দেশে ও বিদেশেও তাঁরা নাম করবে এবং এর মাধ্যমেই বাংলাদেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে আমরা গড়ে তুলবো।’

Loading...