loader image for Bangladeshinfo

শিরোনাম

  • ভারতের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে টাইগ্রেসদের দল ঘোষণা

  • বার্সাকে কাঁদিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিতে পিএসজি

  • অ্যাটলেটিকোকে উড়িয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ চারে ডর্টমুন্ড

  • রাষ্ট্রপতি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পাঠ্যক্রম যুগোপযোগী কর তাগিদ দিলেন

  • ক্যানাডায় আর্টসেলের আটটি কনসার্ট

বছরের প্রথম দিনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নতুন বই নিয়ে বাড়ি ফিরেছে শিক্ষার্থীরা


বছরের প্রথম দিনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নতুন বই নিয়ে বাড়ি ফিরেছে শিক্ষার্থীরা

প্রতি বছরের মতো এবারও সারাদেশে নতুন শিক্ষাবর্ষের (২০২১) বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে তাঁরা বিদ্যালয়ে এসে নতুন বই নিচ্ছে। নতুন বইয়ের গন্ধ মেখে শিক্ষার্থীরা বাড়ি ফিরছে।

শুক্রবার (১ জানুয়ারি) রাজধানীসহ সারাদেশে বই বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সকাল সাড়ে নয়টা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত বই বিতরণ কার্যক্রম চলেছে। শিক্ষকরা অভিভাবকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বই বিতরণের কথা জানালে শিক্ষার্থীরা মুখে মাস্ক পরে বিদ্যালয়ে প্রবেশ করেছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে তিন ফিট দূরত্বে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে তাঁরা অপেক্ষা করেছে নতুন বইয়ের জন্য। খবর স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের।

রাজধানীর মীরপুর ন্যাশনাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের (বিকেল) সহকারী শিক্ষক সাকিনা মল্লিক গণমাধ্যমকে বলেন, বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা নতুন বই নেওয়ার জন্য ভোর থেকেই বিদ্যালয়ে পৌঁছে। প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণির বই গ্রহণ করেছে প্রায় ৮৫ শতাংশ শিক্ষার্থী ও অভিভাবক। শ্রেণি শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের হাত স্যানিটাইজ করে শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করান।

তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে নতুন বই গ্রহণ করেছে। কোভিড-১৯ এর কারণে অনেক শিক্ষার্থী গ্রামের বাড়িতে চলে যাওয়ায় বই বিতরণ কার্যক্রমে কয়েকদিন লাগতে পারে। স্বাভাবিকভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা থাকলে এক থেকে দু’দিনের মধ্যেই তাঁরা নতুন বই পেতো।

একই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পঞ্চম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ জান্নাতুল ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হওয়া আল ইমরানের মা নাসিমা বেগম বলেন, স্কুল থেকে কয়েকবার মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বই নেওয়ার জন্য আমাদেরকে জানিয়েছে। বছরের পহেলা দিন শুক্রবার হওয়ায় বই পাবো না বলে ভাবছিলাম। করোনাভাইরাসের কারণে সময় মতো বছরের প্রথম দিনে বই পাবে না বাচ্চারা – এই নিয়ে তাঁদেরও মন খারাপ ছিল। আবার অনলাইনে ক্লাস করলেও স্কুল বন্ধ থাকায় চিন্তায় ছিলাম। সঠিক সময়ে আজকে বই পেয়ে আমার খুবই আনন্দ হচ্ছে। ছেলে মেয়ে দুটোও নতুন বই পেয়ে খুশি।

পিরোজপুর জেলার ১৩৯ নম্বর পশ্চিম পশারিবুনিয়া শিকদার হাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মনিরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, বিদ্যালয়ে এসে নতুন বই নেয়ার জন্য অভিভাবকদেরকে মোবাইলে কল দিয়ে জানানো হয়েছে। পাশাপাশি তাঁদেরকে মাস্ক পরিধান করে আসার কথাও বলা হয়েছিল। শিক্ষার্থীরা সেভাবেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে আলাদা লাইনে তিন ফিট দূরত্বে থেকে শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করেছে। সকাল নয়টা থেকে (নামাজ ও খাওয়ার বিরতিসহ) বিকেল চারটা পর্যন্ত প্রায় ৯৮ শতাংশ শিক্ষার্থী নতুন বই নিয়েছে।

তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে দ্বিধা ছিল – পরবর্তী শ্রেণিতে উঠতে শিক্ষার্থীদের জন্য কোনো ধরনের নির্দেশনা রয়েছে কি-না। আমরা তাঁদের অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে অ্যাসেস করেছি। পূর্বের রোল নম্বরের মাধ্যমে তাঁরা নতুন শ্রেণিতে পাঠ নেবে। কোনো শিক্ষার্থী যদি একই শ্রেণিতে পুনরায় পাঠ নিতে চায়, তাহলে সেই শ্রেণির শিক্ষার্থীর ঐ রোল নম্বর বহাল থাকবে।

করোনাভাইরাসের কারণে গত মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় কোমলমতি শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি মাথায় রেখে এ-বছর পাঠ্যপুস্তক ভিন্ন আঙ্গিকে বিতরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে বর্তমান সরকার।

গত ২৯ ডিসেম্বর ২০২১ শিক্ষাবর্ষে মাধ্যমিকে শিক্ষার্থীদের বই বিতরণ-সংক্রান্ত মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষার ওয়েবসাইটে দেওয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্রতি বছরের মতোই ২০১১ শিক্ষাবর্ষে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক ১ জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হবে। প্রতি শ্রেণির বই বিতরণের জন্য তিনদিন করে সময় দেওয়া হবে। অর্থাৎ, ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত চার শ্রেণিতে সপ্তাহে তিনদিন করে মোট ১২ দিনে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করতে হবে। এতে বলা হয়েছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে অবশ্যই যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। 

কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে এবারের পাঠ্যপুস্তক বিতরণ কার্যক্রম ভিন্ন আঙ্গিকে হওয়ার কারণে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সকলকে জানাতে এবং মাঠ পর্যায়ে তা যথাযথ বাস্তবায়নের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২০২১ সালে সর্বমোট পাঠ্যপুস্তকের সংখ্যা ১০ কোটি ২৫ লাখ ৮২ হাজার ৫৫৫টি। এর মধ্যে প্রথম-দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীর জন্য ২ কোটি ৫৯ লাখ ৯২ হাজার ৬৭১ টি বই, তৃতীয়-চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীর জন্য ৬ কোটি ৯৬ লাখ, ৯৭ হাজার ৩৭৪ টি। এর মধ্যে ৯৪ হাজার ২৭৫ জন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর (চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, গারো ও সাদ্রী ) শিশুদের জন্য পাঁচটি ভাষায় প্রাক-প্রাথমিক থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত ২ লাখ ১৩ হাজার ২৮৮ টি বিশেষ ভাষায় বই বিতরণ করা হবে। তবে, তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীরা তাঁদের ভাষায় শুধুমাত্র বাংলা বইটি পাবে। এ-বছর সাঁওতাল ভাষায় পাঠ্যপুস্তক দেওয়া সম্ভব হয়নি। এবার ৯ হাজার ১৯৬ জন দৃষ্টি-প্রতিবন্ধীর জন্য ব্রেইল পদ্ধতির বই বিতরণ করা হচ্ছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ শিক্ষাবর্ষের মাধ্যমিক স্তরের (বাংলা ও ইংরেজি ভার্শন), ইবতেদায়ি, দাখিল, এসএসসি ও দাখিল ভোকেশনাল এবং কারিগরি (ট্রেড বই) মুদ্রণ করা হয়েছে। এরমধ্যে মোট ১ কোটি ৮৫ লাখ,৭৫ হাজার ৪৫৩ জন শিক্ষার্থীর জন্য প্রায় ২৪ কোটি ১০ লাখ ৭৯ হাজার ৮৫৭ টি বই, প্রাক-প্রাথমিকের ২ লাখ ৩০ লাখ ৭৯ হাজার ৭৭৩ জন শিক্ষার্থীর জন্য ১০ কোটি ২৫ লাখ ৮২ হাজার ৫৫৫ কপি বইয়ের চাহিদা ছিল। ২০২১ শিক্ষাবর্ষে প্রাক-প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তরের মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪ কোটি ১৬ লাখ ৫৫ হাজার ২২৬ জন এবং পাঠ্যপুস্তকের সংখ্যা ৩৪ কোটি, ৩৬ লাখ,৬২ হাজার ৪১২ কপি।

উল্লেখ্য, শিক্ষাকে মানসম্মত করার লক্ষ্যে এবং ঝরে পড়ার হার রোধ করতে ২০১০ সাল থেকে আওয়ামী লীগ সরকার প্রতিবছর ১ জানুয়ারি উৎসবমুখর পরিবেশে ‘বই উৎসব ’ করে আসছে। এবার বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের কারণে বই উৎসব করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু বছরের শুরুতেই শিক্ষার্থীরা নতুন বইয়ের গন্ধ পেলো। গত ২০১০ সাল থেকে চলতি বছর (২০২০ সাল) পর্যন্ত এই দশ বছরে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক মিলিয়ে প্রায় ৩৩১ কোটি ৪৭ লাখ বই সারাদেশে বিতরণ করা হয়েছে।

Loading...