যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট ভবনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকেরা সহিংস হামলা চালিয়েছে। বুধবার (৬ জানুয়ারি) ক্যাপিটল হিলে জো বাইডেনের জয়কে স্বীকৃতি দেওয়ার লক্ষে যখন যৌথ অধিবেশন চলছিল, তখনই উচ্ছৃঙ্খল জনতা এই হামলা চালায়। এই ঘটনা আমেরিকার ইতিহাসে নজিরবিহীন। হামলাকে কেন্দ্র করে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান প্রচেষ্টারও অভিযোগ উঠেছে। খবর আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের।
নির্বাচনের ফলাফল উল্টে দেয়ার দাবি জানিয়ে ট্রাম্পের ব্যতিক্রমী সমাবেশের কিছু সময় পরেই পতাকা হাতে একদল উচ্ছৃঙ্খল লোক ব্যারিকেড ভেঙে ক্যাপিটল হিলে ঢুকে পড়ে। তাঁরা ভেতরে প্রবেশ করে ভাঙচুর চালান। ভবনের ভেতরে গোলাগুলি চলেছে। এ-সময়ে একজন নারী প্রাণ হারিয়েছেন বলে সংবাদে প্রকাশ । অনেকেই আহত হয়েছেন। পুলিশ টিয়ার গ্যাস ছুঁড়েছে। আইন প্রণেতাদের সুরক্ষা মাস্ক সরবরাহ করে পুলিশ তাঁদের নিরাপদ স্থানে নিয়ে যায়।
নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি একে বিদ্রোহ হিসেবেও উল্লেখ করেছেন। তিনি দাবি করেন, ট্রাম্প যেন অবিলম্বে টেলিভিশনে গিয়ে তাঁর সমর্থকদের ক্যাপিটল হিল ছেড়ে যেতে বলেন।
ডেলওয়ারে নিজ বাড়িতে থেকে বাইডেন এই ঘটনাকে গণতন্ত্রের ওপর নজিরবিহীন হামলা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, এটি বিরোধিতা নয়, উচ্ছৃঙ্খলতা। এসব এখনই বন্ধ করা উচিত। এর পরপরই ট্রাম্প একটি ভিডিও প্রকাশ করেন। এতে তিনি তাঁর সমর্থকদের ক্যাপিটল হিল ছেড়ে যাওয়ার আহ্বান জানান। কিন্তু নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগে অটল থাকেন।
ট্রাম্প বলেন, আমাদের শান্তিতে থাকতে হবে। সুতরাং, বাড়ি যাও। আমরা তোমাদের ভালোবাসি। তোমরা খুব বিশেষ কিছু। তাঁর এই ভিডিও সহিংসতাকে উস্কে দেবে এমন অভিযোগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কর্তৃপক্ষ তা সাইট থেকে সরিয়ে দিয়েছে।
কর্তৃপক্ষ বলছে, চার ঘন্টার চেষ্টায় তাঁরা সহিংসতাকারীদের ক্যাপিটল হিল থেকে সরিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছেন। কিন্তু, শত শত ট্রাম্প সমর্থক এখনও পার্লামেন্ট ভবনের চারপাশে রয়েছেন। যদিও নগরজুড়ে মেয়র মুুরিয়েল বাউজার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত কারফিউ জারি করেছেন।
অন্যদিকে, এই হামলার ঘটনায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অভ্যুত্থান ঘটাচ্ছেন বলেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। একাধিক ডেমােক্রেট আইন প্রণেতা এ-বিষয়ে সতর্ক করে টুইট করেন।
হামলার আগে ট্রাম্প হোয়াইট হাউসের বাইরে ক্ষুব্ধ ও কড়া বক্তৃতার মাধ্যমে তাঁর সমর্থকদের ক্যাপিটল হিলের দিকে যাত্রা করার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। তিনি উৎফুল্ল সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমরা কখনোই ছাড় দেবো না। আমরা কখনই পরাজয় স্বীকার করবো না। বাইডেনের জয়কে স্বীকৃতি না দিতে তিনি রিপাবলিকান আইন প্রণেতাদের প্রতি আহ্বান জানান। ট্রাম্প বলেন, তিনি আশা করছেন মাইক পেন্স সেই সাহস দেখাবেন।
এদিকে, এই হামলার একদিন আগে গত মঙ্গলবার জর্জিয়ার গুরুত্বপূর্ণ দু’টি সিনেট আসন জিতে নিয়েছে ডেমোক্রেট দল। এতে সিনেটে ডেমোক্রেটদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জিত হয়েছে।
ঐতিহাসিকরা বলছেন, ১৮১৪ সালের পর এই প্রথম মার্কিন পার্লামেন্টে এ-ধরনের ঘটনা ঘটলো। এর আগে ১৮১২ সালের যুদ্ধে ব্রিটিশরা এতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল।
গত দুই শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে কংগ্রেসের এই যৌথ অধিবেশন সুষ্ঠু ও আনুষ্ঠানিকভাবেই আয়োজিত হয়ে আসছে। যৌথ এই অধিবেশনে নির্বাচনে জয়ী প্রার্থীকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
গত ৩ নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেট প্রার্থী জো বাইডেন ৭০ লাখেরও বেশি ভোটে রিপাবলিকান দলের ট্রাম্পকে হারিয়েছেন। এছাড়া, বাইডেন ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট পেয়েছেন ৩০৬টি এবং ট্রাম্প পেয়েছেন ২৩২টি।
