আগামী বুধবার (২০ জানুয়ারি ) দুপুরে যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যখন দেশটির ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন, তার আগে সকালেই হোয়াইট হাউস ছাড়বেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। একজন কর্মকর্তা শুক্রবার এ-তথ্য জানিয়েছেন। খবর আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের।
গত দেড় শতাব্দীর মধ্যে এই প্রথম কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট তাঁর উত্তরসূরির শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকছেন না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সেই কর্মকর্তা আরও জানান, নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টের শপথের দিন সকালেই ট্রাম্প হোয়াইট হাউস ছাড়বেন। যদিও এর আগে তিনি শপথের আগের দিন (মঙ্গলবার) ওয়াশিংটন ডিসি ছাড়ার পরিকল্পনা করেছিলেন।
সূত্রটি আরও বলেছে, ট্রাম্প তাঁর বিদায়ী অনুষ্ঠান ওয়াশিংটনের বাইরের ঘাঁটি জয়েন্ট বেইজ অ্যান্ড্রুজে করার পরিকল্পনা করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে বহনকারী উড়োজাহাজ এয়ারফোর্স ওয়ানের সদরদপ্তর এই ঘাঁটিতে। জয়েন্ট বেইজ অ্যান্ড্রুজে বিদায়ী অনুষ্ঠান শেষে ট্রাম্প ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের পাম বিচে চলে যাবেন। সেখানে তাঁর মার-এ-লাগো রিসোর্টে পরবর্তী জীবন শুরু করবেন তিনি।
ট্রাম্পকে গত সপ্তাহে অভিশংসিত করেছে মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদ। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো কোনো প্রেসিডেন্ট দ্বিতীয়বারের মতো অভিশংসনের শিকার হলেন।
গত ৬ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট ভবন ক্যাপিটল হিলের হামলায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে এই পদক্ষেপ নেয় প্রতিনিধি পরিষদ।
এর আগে ২০১৯ সালে ইউক্রেন কেলেঙ্কারির কারণে কংগ্রেসে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে প্রথম দফায় অভিশংসন করা হয়েছিল।
নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিনিধি পরিষদে অভিশংসনের প্রস্তাব পাশের পরে তা যাবে কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটে। তবে, তা ২০ জানুয়ারির আগে হবে না বলে এরই মধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা রিপাবলিকান সিনেটর মিচ ম্যাক্কনেল। সিনেটেও ট্রাম্প অভিশংসিত হলে তিনি পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে অযোগ্য বিবেচিত হবেন।
এদিকে রীতি অনুযায়ী হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে জো বাইডেন ও তার স্ত্রী জিল বাইডেনকে চা-চক্রে আমন্ত্রণ জানানোর প্রটোকলও ভাঙতে যাচ্ছেন ট্রাম্প। অবশ্য, শপথ গ্রহণের আর মাত্র পাঁচদিন বাকী থাকতে বিদায়ী ভাইস-প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স নতুন ভাইস-প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে শুক্রবার টেলিফোনে অভিনন্দন জানিয়েছেন। নিউইয়র্ক টাইমস-এর খবরে বলা হয়েছে, নির্বাচনের দুই মাসেরও বেশি সময় পরে কমলা হ্যারিসকে অভিনন্দন জানিয়েছেন পেন্স এবং তাঁকে সহায়তারও আশ্বাস দিয়েছেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বাইডেন প্রশাসনকে প্রথম দিন থেকেই বহুবিধ সংকট মোকাবেলা করতে হবে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো – হোঁচট খাওয়া জাতীয় টিকাদান প্রকল্প, ভঙ্গুর অর্থনীতি পুনরুদ্ধার এবং সিনেটে ট্রাম্পের অভিশংসন প্রক্রিয়া চালিয়ে নেওয়া।
হোয়াইট হাউসের নতুন প্রেস সেক্রেটারি জেন পাসাকি শুক্রবার সাংবাদিকদের বলেছেন, কেবিনেটের নিয়োগ নিশ্চিতের পাশাপাশি অভিশংসন প্রক্রিয়া চালিয়ে নিতে সিনেট সক্ষম।
নির্বাচনের কয়েক মাস আগে থেকেই ভোট জালিয়াতি ও ষড়যন্ত্রের কথা বলে আসছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। একাধিকবার তিনি শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন না বলেও জানিয়েছিলেন। ৩ নভেম্বর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জো বাইডেনের কাছে পরাজিত হওয়ার পরেও আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি। যাহোক, তাঁর আইনি লড়াইয়ের সবগুলো প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হয়েছে।
