loader image for Bangladeshinfo

শিরোনাম

  • ভারতের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে টাইগ্রেসদের দল ঘোষণা

  • বার্সাকে কাঁদিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিতে পিএসজি

  • অ্যাটলেটিকোকে উড়িয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ চারে ডর্টমুন্ড

  • রাষ্ট্রপতি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পাঠ্যক্রম যুগোপযোগী কর তাগিদ দিলেন

  • ক্যানাডায় আর্টসেলের আটটি কনসার্ট

সাকিবের নৈপুণ্যে ম্যাচ জিতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরলো টাইগাররা


সাকিবের নৈপুণ্যে ম্যাচ জিতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরলো টাইগাররা

সংক্ষিপ্ত স্কোর 

টস: বাংলাদেশ
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ১২২/১০, ৩২.২ ওভার (মায়ার্স ৪০, পাওয়েল ২৮, সাকিব ৪/৮, হাসান ৩/২৮, মুস্তাফিজ ২/২০)
বাংলাদেশ: ১২৫/৪, ৩৩.৫ ওভার (তামিম ৪৪, সাকিব ১৯, মুশফিক ১৯*, আকিল ৩/২৬)
ফলাফল: বাংলাদেশ ছয় উইকেটে জয়ী
ম্যাচ-সেরা: সাকিব আল হাসান (বাংলাদেশ)
সিরিজ: তিন ম্যাচের সিরিজে বাংলাদেশ ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে

অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান ও অভিষিক্ত পেসার হাসান মাহমুদের বোলিং তোপে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ছয় উইকেটে হারিয়েছে স্বাগতিক বাংলাদেশ। করোনা-মহামারির কারণে দীর্ঘ ১০ মাস পরে বুধবার (২০ জানুয়ারি) প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে নেমেছিল বাংলাদেশ জাতীয় দল। এদিন থেকে মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শুরু হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট সিরিজ’-এর তিন ম্যাচের ওয়ানডে লড়াই।

প্রথমে ব্যাট হাতে নামা ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১২২ রানে গুটিয়ে দেন সাকিব ও হাসান। সাকিব আট রানে চারটি এবং অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা হাসান ২৮ রানে তিন উইকেট শিকার করেন। জবাবে ৩৩.৫ ভারে চার উইকেট হারিয়ে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ দল। ম্যাচ-সেরা হয়েছেন সাকিব-ই।

প্রথম ওয়ানডেতে টস জিতে প্রথমে বোলিং করতে নামে বাংলাদেশ। ২৪ রানের মধ্যে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুই ওপেনারকে বিদায় দেন বাংলাদেশের বাঁ-হাতি পেসার মুস্তাফিজুর রহমান। নিজের প্রথম ওভারের দ্বিতীয় বলে সফরকারী ওপেনার সুনীল অ্যামব্রিসকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন মুস্তাফিজ। রিভিউ সিস্টেম নিয়েও বাঁচতে পারেননি সাত রান করা অ্যামব্রিস।

বৃষ্টির কারণে চতুর্থ ওভারের পর কিছুক্ষণ খেলা বন্ধ ছিলো। পরে, আবারো বাংলাদেশকে উইকেট শিকারের আনন্দে মাতিয়ে তুলেন মুস্তাফিজ। আরেক ওপেনার জসুয়া ডা সিল্ভাকে বিদায় করেন তিনি। এই উইকেটের পুরো কৃতিত্ব পেতে পারেন লিটন দাস। গালিতে ঝাঁপিয়ে ক্যাচ নেন লিটন। নয় রান করেন জসুয়া।

দুই ওপেনারকে হারানোয় চাপে পড়া ওয়েস্ট ইন্ডিজকে খেলায় ফেরানোর চেষ্টা করেন আন্দ্রে ম্যাকার্থি ও অধিনায়ক জেসন মোহাম্মদ। উইকেটে সেট হতে সময় নিয়েছেন তাঁরা। তাই রানের গতিও ছিল ধীর। প্রথম নয় ওভারে দুই উইকেটে ৩৪ রান এসেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের।

দশম ওভারে বোলিংয়ে পরিবর্তন আনেন বাংলাদেশ অধিনায়ক তামিম ইকবাল। এক প্রান্ত দিয়ে অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা হাসান মাহমুদ ও অন্য প্রান্তে সাকিব আল হাসান। নিজের দ্বিতীয় ওভারেই উইকেট পেয়ে যান সাকিব।

৩৪ বলে ১২ রান করা ম্যাকার্থিকে বোল্ড করেন সাকিব। ঘরের মাঠে ১৫০তম উইকেট শিকার করলেন সাকিব। জেসনের সাথে ৪৫ বলে ২১ রানের জুটি গড়েন ম্যাকার্থি।

প্রতিপক্ষের অধিনায়ক জেসনকেও দ্রুত বিদায় দেন সাকিব। নিজের চতুর্থ ওভারে উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিমের স্টাম্পিং-এর সহায়তা নিয়ে ক্যারিবীয় অধিনায়ককে ১৭ রানে থামান সাকিব।

পরের ওভারে আবারো ওয়েস্ট ইন্ডিজ শিবিরে আঘাত হানেন সাকিব। রানের খাতা খোলার আগেই এনক্রুমার বোনারকে লেগ বিফোর আউট করেন তিনি। তাই মুস্তাফিজ-সাকিব তোপে ৫৬ রানে ৫ উইকেট হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

এ-অবস্থায় ওয়েস্ট ইন্ডিজকে আরও চেপে ধরার পরিকল্পনায় ছিলো বাংলাদেশ। কিন্তু ষষ্ঠ উইকেটে দারুণ এক জুটি গড়েন কাইল মায়ারস ও রোভম্যান পাওয়েল। বাংলাদেশী বোলারদের পাল্টা আক্রমণ করেন তাঁরা। এতে রানের চাকা ঘুরতে থাকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের। মায়ার্স ও পাওয়েলের ব্যাটিংএ ২৭তম ওভারে শতরানের স্বাদ নেয় ক্যারিবীয়রা।

প্রথম স্পেলে তিন ওভারে ১৪ রান দিয়েছিলেন অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা হাসান। দ্বিতীয় স্পেলে আক্রমণে এসে ১০ রান দেন তিনি। তবে, হতাশ হননি এই তরুণ পেসার। নিজের পঞ্চম ওভারের প্রথম দু’বলে দু’টি উইকেট শিকার করেন হাসান।

পাওয়েলকে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেন হাসান। দুইটি করে চার ও ছক্কায় ৩১ বলে ২৮ রান করেন পাওয়েল। মায়ারসের সাথে ষষ্ঠ উইকেটে ৬৩ বলে গুরুত্বপূর্ণ ৫৯ রান যোগ করেছেন তিনি।

পাওয়েলের বিদায়ে উইকেটে গিয়ে প্রথম বলে হাসানের বলে লেগ বিফোর হন রেমন রেইফার। এতে হ্যাট্রিকের সুযোগ তৈরি হয়েছিলো হাসানের সামনে। কিন্তু হাসানকে হ্যাট্রিক বঞ্চিত করেন আলজারি জোসেফ।

১১৫ রানের পাওয়েল-রেইফারের আউটের পর বাকী তিন উইকেটে বেশি দূর যেতে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। মাত্র সাত রান করে ১২২ রানে থেমেছে সফরকারী দল।

উইকেটে সেট হয়ে থাকা মায়ার্সকে শিকার করে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে দ্রুত গুটিয়ে দেওয়ার পথ সহজ করে ফেলেন অফ-স্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজ। ৫৬ বলে চারটি চার ও এক ছক্কায় ৪০ রান করেন মায়ার্স। এরপর আকিল হোসেনকে এক রানে হাসান ও জোসেফকে চার রানে শিকার করেন সাকিব। এতেই ৩২.২ ওভারে শেষ হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংস।

৭.২ ওভারে আট রানে চার উইকেট নিয়েছেন সাকিব। আইসিসির নিষেধাজ্ঞা শেষে এটিই সাকিবের প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ ছিল।

অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা হাসান ছয় ওভারে ২৮ রানে চার উইকেট শিকার করেছেন। ২০ রানে দুই উইকেট শিকার করেন মুস্তাফিজ। ২৯ রানে এক উইকেট নিয়েছেন মিরাজ।

জয়ের জন্য ১২৩ রানের সহজ লক্ষ্যে খেলতে নেমে দলকে ভালো সূচনা এনে দেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও লিটন দাস। দেখেশুনে খেলে ১০ ওভারে ৩৯ রান যোগ করেছেন তাঁরা। এরমধ্যে লিটনের ১১ ও তামিমের ২১ রান ছিল।

চতুর্দশ ওভারে দলীয় ৪৭ রানে বাংলাদেশের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বাঁ-হাতি স্পিনার আকিল। ৩৮ বলে দুইটি চারে ১৪ রান করা লিটনকে বোল্ড করেন আকিল।

লিটনের বিদায়ে উইকেটে তামিমের সঙ্গী হন নাজমুল হোসেন শান্ত। তিন নম্বরে খেলার সুযোগটা কাজে লাগাতে পারেননি শান্ত। আকিলের দ্বিতীয় শিকার হয়ে মাত্র এক রান করেন শান্ত। নয় বল খেলেছেন শান্ত। ফলে, ৫৭ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ১০ রানের ব্যবধানে দুই উইকেট পতনের পরে বাংলাদেশকে সামনে নিয়ে যান তামিম ও সাকিব। সাবধনতা অবলম্বন করে স্কোরবোর্ডে রান জড়ো করছিলেন অভিজ্ঞ এই জুটি। জুটিতে ৪১ বলে ২৬ রান যোগ করেন তাঁরা। ধীরলয়ে খেলতে থাকা তামিমকে আউট করে এই জুটি ভাঙ্গেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়ক জেসন মোহাম্মদ। সাত চারে ৪৪ রান করেন তামিম। বল খেলেছেন ৬৯টি।

তামিমের চেয়ে অতিমাত্রায় ধীর গতির ছিলেন সাকিব। ৪৩ বলে খেলে ১৯ রান করেন তিনি। তাঁর ইনিংসে মাত্র একটি চার ছিলো। সাকিবকে আউট করে নিজের তৃতীয় উইকেট শিকার করেন আকিল।

দলীয় ১০৫ রানে চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে সাকিব ফেরার পরে ৯৭ বল বাকী রেখে টাইগারদের জয় নিশ্চিত করেন মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। ৩৬ বলে অবিচ্ছিন্ন ২০ রান করেছেন তাঁরা। ৩১ বলে একটি চারে মুশফিক অপরাজিত ১৯ ও রিয়াদ ১৬ বলে এক চারে অপরাজিত নয় রান করেছেন।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের আকিল ১০ ওভারে ২৬ রানে তিন উইকেট শিকার করেছেন।

এই ম্যাচে আকিলসহ ওয়েস্ট ইন্ডিজের ছয়জনের অভিষেক হয়েছে।

২২ জানুয়ারি একই ভেনুতে হবে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ।

Loading...