প্রথম টেস্ট, এম এ আজিজ স্টেডিয়াম, চট্টগ্রাম
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ৪৩০/১০, ১৫০.২ ওভার (মিরাজ ১০৩, সাকিব ৬৮, সাদমান ৫৯, ওয়ারিকান ৪/১৩৩)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম ইনিংস: ২৫৯/১০, ৯৬.১ ওভার (ব্র্যাথওয়েট ৭৬, ব্ল্যাকউড ৬৮: মিরাজ ৪/৫৮)
বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস: ২২৩/৮ ডি., ৬৭.৫ ওভার (মোমিনুল ১১৫, লিটন ৬৯, ওয়ারিকান ৩/৫৭)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ দ্বিতীয় ইনিংস (আগের দিন ১১০/৩, ৪০ ওভার, মায়ার্স ৩৭*, বোনার ১৫*, মিরাজ ৩/৫২)
বাংলাদেশের বিপক্ষে ডাবল-সেঞ্চুরি করে চট্টগ্রাম টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে অবিস্মরণীয় জয় এনে দিলেন অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান কাইল মায়ার্স। তাঁর অপরাজিত ২১০ রানের সুবাদে বাংলাদেশকে তিন উইকেটে হারিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এই জয়ে দুই ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল ক্যারিবিয়রা।
সিরিজের প্রথম টেস্টের চতুর্থ দিন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে জয়ের জন্য ৩৯৫ রানের টার্গেট ছুঁড়ে দিয়েছিল টাইগাররা। জবাবে দিন শেষে তিন উইকেটে ১১০ রান করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। টেস্টটি জিততে ম্যাচের পঞ্চম ও শেষ দিনে বাংলাদেশের দরকার ছিলো সাত উইকেট। আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রয়োজন ছিল আরও ২৮৫ রান। এই অবস্থায় দুই অভিষিক্ত খেলোয়াড় এনক্রুমার বোনার ১৫ ও কাইল মায়ার্স ৩৭ রানে অপরাজিত থেকে দিন শেষ করেন।
আজ ম্যাচের পঞ্চম ও শেষ দিনের শুরু থেকে বাংলাদেশ বোলারদের বিপক্ষে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করে খেলতে থাকেন বোনার ও মায়ার্স। উইকেট বাঁচিয়ে খেলাই ছিল তাঁদের মূল লক্ষ্য। উইকেটে সেট হয়ে হওয়ার পরে রানের দিকে মনোযোগী হয়েছেন তাঁরা। তাই প্রথম সেশনে ৮৭ রান করেন বোনার ও মায়ার্স। দু’জনে অবিচ্ছিন্ন থেকে মধ্যাহ্ন-বিরতিতে যান।
৯১ রান নামের পাশে রেখে সেঞ্চুরির স্বপ্ন নিয়ে বিরতিতে গিয়েছিলেন মায়ার্স। বিরতির পরে পেসার মুস্তাফিজুর রহমানের করা ৮৪তম ওভারের প্রথম বলে স্লিপ ও গালির মাঝখান দিয়ে চার মেরে অভিষেকেই শতরান করেন তিনি। টেস্ট ইতিহাসে অষ্টম ব্যাটসম্যান হিসেবে অভিষেকের ম্যাচের চতুর্থ ইনিংসে সেঞ্চুরি করলেন মায়ার্স।
মায়ার্সের সেঞ্চুরি ও বোনারের দৃঢ়তাপূর্ণ ব্যাটিংয়ে দ্বিতীয় সেশনেও কোনো উইকেট পায়নি বাংলাদেশ। ফলে তিন উইকেটে ২৬৬ রান নিয়ে চা-বিরতিতে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তখন জয় থেকে ১২৯ রান দূরে ছিল ক্যারিবিয়রা।
বিরতির পরে প্রথম ওভারের পঞ্চম বলে স্পিনার তাইজুল ইসলামকে মিডউইকেট দিয়ে ছক্কা মারেন বোনার। কিন্তু পরের ডেলিভারিতে বোনারকে লেগ বিফোর ফাঁদে ফেলেন বাংলাদেশকে সেরা ব্রেক-থ্রু এনে দেন তাইজুল। ১০টি চার ও একটি ছক্কায় ২৪৫ বলে ৮৬ রান করে থামেন বোনার। চতুর্থ উইকেটে ২১৬ রান যোগ করেন বোনার ও মায়ার্স।
এক ম্যাচে অভিষেক খেলোয়াড়ের সর্বোচ্চ রানের জুটির রেকর্ড তালিকায় দ্বিতীয়স্থানে জায়গা করে নেন বোনার ও মায়ার্স। এই তালিকার শীর্ষে আছেন পাকিস্তানের খালিদ আবদুল্লাহ ও আব্দুল কাদির। ১৯৬৪ সালে করাচিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অভিষেক হওয়া খালিদ-কাদির উদ্বোধনী জুটিতে ২৪৯ রান করেছিলেন।
বোনারের আউটের পরে উইকেটে এসে সুবিধা করতে পারেননি জার্মেই ব্ল্যাকউড। ১১ বলে নয় রান করে স্পিনার নাইম হাসানের বলে বোল্ড হন তিনি। দলীয় ২৯২ রানে পঞ্চম উইকেট হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
ব্ল্যাকউডের আউটের পরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের রানের চাকা ঘুরিয়েছেন মায়ার্সই। জয়ের জন্য শেষ ২৩ ওভারে ৮৮ রানের দরকার ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের। মায়ার্সের মারমুখী ব্যাটিংয়ে অন্যপ্রান্তে শান্ত ছিলেন উইকেটরক্ষক জসুয়া ডা সিলভা। ২৬১তম বলে দেড়শ রান পূর্ণ করেন মায়ার্স।
প্রায় প্রতি ওভারেই বাংলাদেশের বোলারদের বিপক্ষে বাউন্ডারি বা ওভার বাউন্ডারি আদায় করেছেন মায়ার্স। ইনিংসের ১২৪তম ওভারের শেষ বল ও নিজের ৩০৩তম বলে এক রান নিয়ে ডাবল-সেঞ্চুরিতে পা রাখেন তিনি।
পরের ওভারে সিলভাকে থামান তাইজুল। ২০ রান করেছেন তিনি। ষষ্ঠ উইকেটে সিলভাকে নিয়ে ১৩১ বলে ১০০ রানের জুটি গড়েন মায়ার্স। সিলভা যখন ফেরেন, তখন ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রয়োজন ছিল তিন রান। এরপর মিরাজের বলে খালি হাতে প্যাভিলিয়নে ফেরেন কেমার রোচও। যাহােক, জয়ের বন্দরে পৌঁছাতে কোনো সমস্যাই হয়নি ওয়েস্ট ইন্ডিজের।
৩১০ বলে ২০টি চার ও সাতটি ছক্কায় অপরাজিত ২১০ রান করেছেন ম্যাচ-সেরা নির্বাচিত হওয়া মায়ার্স। অন্যপ্রান্তে এক বল খেলে কোনো রান না করে অপরাজিত ছিলেন নয় নম্বরে নামা রাকিম কর্নওয়াল।
বাংলাদেশের মিরাজ ১১৩ রানে চারটি, তাইজুল ৯১ রানে দুইটি ও নাইম ১০৫ রানে এক উইকেট শিকার করেছেন।
আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি মিরপুরে শুরু হবে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট।