প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মৈত্রী সেতু ভারত, নেপাল এবং ভুটানের সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্য সহজ করতে সহায়তা করবে। তিনি বলেন, ‘আশা করছি যে আমরা যে-কাঠামোটির উদ্বোধন করছি, তা কেবল ভারতের সঙ্গে নয়, নেপাল এবং ভূটানের সঙ্গেও আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য সহজ করবে।’
শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে যৌথভাবে ফেনী নদীর উপর নির্মিত মৈত্রী সেতুর ভার্চুয়ালি উদ্বোধনকালে দেওয়া ভিডিও বার্তায় এ-কথা বলেন। মঙ্গলবার (৯ মার্চ) দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে এবং নরেন্দ্র মোদী দিল্লি থেকে ভার্চুয়ালি ত্রিপুরার আগরতলাতে অনুষ্ঠিত মূল অনুষ্ঠানে যোগ দেন। খবর স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের।
এই মুহূর্তটিকে ঐতিহাসিক হিসেবে বর্ণনা করে শেখ হাসিনা বলেন, তিনি মনে করছেন মৈত্রী সেতু শুধু দুই দেশের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগই স্থাপন করবে না, এটি এ-অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
এ-প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা ভারতকে কানেকটিভিটি দেওয়ার মাধ্যমে দক্ষিণ-এশিয়ায় একটি নতুন যুগের সৃষ্টি করছি। আমরা এমন একটি অঞ্চলে আছি, যেখানে কানেকটিভিটি চালুর বিষয়ে রক্ষণশীলতা ছিল এবং যেখানে সম্ভাবনার চেয়ে আন্তঃআঞ্চলিক বাণিজ্য অনেক কম।’
শেখ হাসিনা বলেছেন যে, তিনি মনে করেন, রাজনৈতিক সীমানা ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কোনো বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ফেনী নদীর উপর ভারতীয় মুদ্রায় ১৩৩ কোটি রুপি, টাকার অংকে প্রায় ১৫৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ১.৯ কি.মি. দীর্ঘ সেতুটি উদ্বোধনের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের ক্ষেত্রে ত্রিপুরা ভারতের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের প্রবেশ দ্বার হয়ে উঠতে যাচ্ছে।
দুই দেশের সীমান্তের উপর দিয়ে প্রবাহিত ফেনী নদীর উপর নির্মিত এই সেতু ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের খাগড়াছড়ির রামগড়কে সংযুক্ত করেছে।
দিল্লি থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং ত্রিপুরার মূখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
ভিডিওবার্তায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি মনে করি, এই সেতু আমাদের দুই দেশের মাঝে শুধু সেতুবন্ধই রচনা করবে না, বরং ব্যবসা-বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিরাট অবদান রাখবে। শুধু চট্টগ্রাম পোর্ট নয়, চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরও ত্রিপুরাবাসী ব্যবহার করতে পারবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০১০ সালে ত্রিপুরার তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী আমাকে ফেনী নদীর উপর একটি সেতু নির্মাণ করার প্রস্তাব রেখেছিলেন। তিনি বলেছিলেন – চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করতে ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের ব্যবসায়ীদের জন্য এই ব্রিজটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা অনুরোধটি ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করি। তারপর থেকে বাংলাদেশ সরকার ভারতীয় পক্ষকে সেতু নির্মাণে প্রয়োজনীয় সকল সহযোগিতা করে আসছে।’
তিনি বলেন, ‘১০ বছর পর আজ এই সেতুটি একটি বাস্তবতা। এই সেতুটি উত্তর-পূর্ব ভারতের জন্য একটি বাণিজ্য লাইফলাইন হবে। আপনারা সবাই জানেন, পণ্য পরিবহনের জন্য ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ভারতকে চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ফেনী সেতু চালুর মধ্যে দিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ এবং উত্তর-পূর্বের ল্যান্ডলকড রাজ্যগুলো বাংলাদেশের মধ্যদিয়ে পণ্য পরিবহন করতে পারে। আগে ১,৬০০ কিলোমিটার দূরে আগরতলার নিকটতম সমুদ্রবন্দর ছিল কলকাতা। বর্তমানে বাংলাদেশের মধ্যদিয়ে আগরতলার নিকটতম সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম বন্দরের দূরত্ব ১০০ কিলোমিটারেরও কম।
শেখ হাসিনা বলেন, ফেনী মৈত্রী সেতু ত্রিপুরা এবং আশপাশের ভারতের উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলোর জনগণের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উল্লেখযোগ্য উন্নতি করবে বলে আশা করছি। আমরা আশা করি, মৈত্রীসেতুর আশপাশের এলাকায় বসবাসরত বাংলাদেশিদের জীবন-জীবিকার উন্নতিতে অবদান রাখবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভৌগলিক অবস্থানের পাশাপাশি প্রবৃদ্ধির গতিপথ বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ায় অত্যন্ত আকর্ষণীয় প্রতিবেশী করে তুলেছে। বৈশ্বিক টেক্সটাইল শিল্পের অন্যতম নেতা হিসেবে আমরা আমাদের জন্য একটি স্বতন্ত্র পথ তৈরি করেছি এবং দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের জন্য আকর্ষণীয় গন্তব্যে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে কানেকটিভির কেন্দ্র হিসেবে এর অবস্থানগত সুবিধা সর্বাধিক করতে প্রস্তুত।’
মৈত্রী সেতুর সফল পরিচালনা এবং ব্যবহার প্রত্যাশা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা মৈত্রী সেতু এমন এক সময় উদ্বোধন করছি যখন আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী, বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং বাংলাদেশ-ভারত কূটনৈতিক সম্পর্কের পঞ্চাশতম বর্ষ উদযাপন করছি।’
তিনি বলেন, ‘৫০ বছর আগে, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার সংগ্রামকে সমর্থন জানিয়ে ভারত বাংলাদেশের জন্য তাঁদের সীমান্ত খুলে দিয়েছিল, আজকে আমরা একসঙ্গে সমৃদ্ধ অঞ্চল তৈরি করছি।’
ত্রিপুরাবাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা ভুলি নাই – ১৯৭১ সালে কিভাবে আমার জনগণকে আপনারা আশ্রয় দিয়েছিলেন, সমর্থন দিয়েছিলেন, সহযোগিতা করেছিলেন এবং আমরা আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছিলাম। কাজেই আজকের দিনে আমি সবাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। মুখ্যমন্ত্রী আপনাকেও আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।’