বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক ও পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান আর নেই। আজ দুপুর দুইটায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন) যান। গত ৮ এপ্রিল অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান করোনা-আক্রান্ত হন। অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়েছিল। পরিবারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শামসুজ্জামান খানকে মানিকগঞ্জে মায়ের কবরে দাফন করা হবে। খবর স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের।
বিশিষ্ট এই ফোকলোরবিদের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এবং সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
শামসুজ্জামান খান মানিকগঞ্জের সিংগাইরে চারিগ্রামে ১৯৪০ সালের ২৯ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন।
তিনি ছিলেন লোকসংস্কৃতি ও পল্লীসাহিত্য গবেষক। তাঁর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কর্ম হলো – ‘বাংলাদেশের লোকজ সংস্কৃতি গ্রন্থমালা’ শিরোনামে ৬৪ খন্ডে ৬৪ জেলার লোকজ সংস্কৃতির সংগ্রহশালা সম্পাদনা এবং ১১৪ খন্ডে ‘বাংলাদেশের ফোকলোর সংগ্রহমালা’ সম্পাদনা।
শামসুজ্জামান খানের বাবা এমআর খান ছিলেন একজন বিখ্যাত অনুবাদক। তাঁর দাদার দাদা এলহাদাদ খান এবং তাঁর ভাই আদালাত খান ঔপনিবেশিক ভারতে অত্যন্ত আলোচিত বুদ্ধিজীবী ছিলেন।
শামসুজ্জামান খান মাত্র দু’বছর বয়সে বাবাকে হারান। তাঁর মা ও দাদী তাঁকে লালন-পালন করেন। তিনি ১৯৬৩ ও ১৯৬৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে সম্মানসহ স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন এবং ১৯৬৪ সালে মুন্সীগঞ্জ হরগঙ্গা কলেজের বাংলা বিভাগে প্রভাষক হিসাবে যোগদান করেন। একই বছর তিনি জগন্নাথ কলেজে সহকারী অধ্যাপক হিসাবে যোগদান করেন।
২০০৯ সালের ২৪ মে শামসুজ্জামান খান বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হন। তাঁর পদের মেয়াদ তিনবার বাড়ানো হয়, যা ২০১৮ সালের ২৩ মে শেষ হয়। তিনি বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
২০১৮ সালের ১ অক্টোবর তিনি কুষ্টিয়ায় বাংলাদেশের ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’-এর অধ্যাপক পদে নিয়োগ পান।
অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান ২০০৯ সালে একুশে পদক ও ২০১৭ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া তিনি ১৯৮৭ সালে অগ্রণী ব্যাংক পুরস্কার ও কালুশাহ পুরস্কার, ১৯৯৪ সালে দীনেশচন্দ্র সেন ফোকলোর পুরস্কার, ১৯৯৮ সালে আব্দুর রব চৌধুরি স্মৃতি গবেষণা পুরস্কার, ১৯৯৯ সালে দেওয়ান গোলাম মোর্তজা পুরস্কার, ২০০১ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী জাতীয় গবেষণা পুরস্কার, ২০০৪ সালে মীর মশাররফ হোসেন স্বর্ণপদক অর্জন করেন।