loader image for Bangladeshinfo

শিরোনাম

  • কুমিল্লা ইপিজেড-এ চামড়া কারখানা করবে চীনা প্রতিষ্ঠান

  • নারী এশিয়া কাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশের গ্রুপে শ্রীলংকা

  • অস্ট্রেলিয়ার কাছে হোয়াইটওয়াশ হলো টাইগ্রেসরা

  • ১৯৭৫ সালের পর বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী

  • প্রীতি ম্যাচে পিছিয়ে পড়েও আর্জেন্টিনার জয়

মহামারির মধ্যে তিনগুণ খাদ্য উৎপাদনে কৃষকরা সব ধরনের সহায়তা পাচ্ছেন: প্রধানমন্ত্রী


মহামারির মধ্যে তিনগুণ খাদ্য উৎপাদনে কৃষকরা সব ধরনের সহায়তা পাচ্ছেন: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তাঁর সরকার কৃষকদের সর্বপ্রকার সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছেন, যাতে তাঁরা অধিক খাদ্য উৎপাদন করতে পারেন এবং কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাবে চলমান উৎপাদনকে দুই থেকে তিনগুণ বাড়াতে পারেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশে উৎপাদন যাতে দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ হতে পারে, তার জন্য যথাযথ মাটি পরীক্ষা করা থেকে শুরু করে সর্ব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি।’

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন কৃষক লীগের ৪৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার (১৯ এপ্রিল) রাতে বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত এক ভিডিও বার্তায় এ-কথা বলেন। প্রায় পৌনে আট মিনিটের ভিডিও বার্তায় প্রধানমন্ত্রী চলমান কোভিড-১৯ এর সময় উৎপাদন বৃদ্ধির উপর গুরুত্বারোপ করে সকলকে স্বাস্থ্যমত বিধি মেনে চলায় তাঁর আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন।

আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর থেকেই কৃষকদের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করায় তাঁদের কষ্ট লাঘব হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বর্গাচাষীরা যাতে বিনা জামানতে ঋণ পায় আমরা কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে তাঁদের বিনা জামানতে ঋণের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। সারের দাম – যা বিএনপি সরকারের আমলে ৯০ টাকা ছিল, তা আজ ১২ টাকায় আমরা নামিয়ে এনেছি। গবেষণার মাধ্যমে উন্নত বীজ আমরা উৎপাদন করছি এবং সেই বীজ আমরা সরবরাহ করছি।’

কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণ – যেটা জাতির পিতার লক্ষ্য ছিল – তাঁর সরকার সেই লক্ষ্য কার্যকর করে দিচ্ছে উল্লেখ করে সরকার-প্রধান বলেন, আমরা ৭০ শতাংশের উপর ভর্তুকি দিচ্ছি এবং কৃষিযান্ত্রিকীকরণ করে যাচ্ছি যাতে আমাদের কৃষকরা আরও অধিক পরিমান খাদ্য উৎপাদন করতে পারে।

তিনি বলেন, আমরা উন্নতমানের বীজ সরবরাহ ও প্রতিটি কৃষি-উপকরণ কৃষকদের হাতে পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা নিচ্ছি। সেই সাথে সেচ কাজে কৃষক যে-বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন, সেখানে আমরা ভর্তুকি দিচ্ছি এবং কৃষকের বিদ্যুৎ সরবরাহ যাতে নিশ্চিত হয়, তার ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি এবং বর্তমানে সেচ কাজে সোলার প্যানেল ব্যবহারও আমরা শুরু করে দিয়েছি।

ন্যায্যমূল্য যাতে আমাদের কৃষকরা পায়, তার জন্য সরকার যথাযথ দাম নির্দিষ্ট করেছে এবং কৃষকদের সহায়তা দিচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কৃষকের গুদামে যাতে খাদ্য সংরক্ষিত থাকে, প্রত্যেক কৃষকের ঘরে খাদ্য যেন থাকে; কারণ যাঁরা উৎপাদন করবে, তাঁরা খাবার পাবে না বা তাঁদের ছেলে-মেয়েরা খাদ্যে কষ্ট পাবে – এটা হতে পারে না। আমরা সে-ব্যবস্থাও নিয়েছি।

তিনি বলেন, আমরা প্রাকৃতিক দুর্যোগে যেসব কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাঁদের আর্থিক সহায়তা দেয়ার ব্যবস্থা নিয়েছি এবং সেই সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি।

তিনি সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের আর্থিক সহযোগিতা প্রদানের কথা উল্লেখ করে বলেন, এবারও ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা সে-ধরনের সহযোগিতা পাবেন। তার জন্য থোক বরাদ্দ রাখছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের বাংলাদেশ, ডিজিটাল বাংলাদেশ। কৃষক একটা মোবাইল ফোন ধরে ছবি তুলে তাঁর ফসলের কী অবস্থা, মাটির কি অবস্থা বা মাটি পরীক্ষা করা এবং কি ধরনের সার ব্যবহার করবেন, কতটুকু ব্যবহার করবেন বা কীটনাশক ব্যবহার করবেন কি-না, বা কতটুকু করবেন, সেই ধরনের কৃষি তথ্য যাতে তাঁরা পেতে পারেন, সে-তথ্যকেন্দ্রসমৃদ্ধ বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলেছি। সেখান থেকে কৃষক তাঁর প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন। কারণ, আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর মোবাইল ফোনও আমরা সকলের হাতে তুলে দিয়েছি।

তাঁর সরকার গবেষণার উপর সবসময় অধিক গুরুত্বারোপ করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে যখন সরকার গঠন করি, তখন থেকেই কৃষি গবেষণায় আমরা গুরুত্ব দেই। আজকে গবেষণার ফলে আরও নতুন নতুন ধরনের ফসল উৎপাদন, তরিতরকারি, ফলমূল এবং দানাদার খাদ্যশস্য থেকে শুরু করে সব ধরনের পণ্য যেন উৎপাদন হতে পারে – তার জন্য ব্যাপক হারে গবেষণা হচ্ছে এবং উন্নতমানের বীজ আমরা সরবরাহ করছি। এরফলে আজকে কৃষক খুব অল্প কষ্টে অধিক পরিমানে খাদ্য উৎপাদন করতে পারছেন। ধান, গম, ভুট্টা এবং সব ধরনের ফসল উৎপাদন করার সুযোগ পাচ্ছেন; তা বাজারজাত করার ব্যবস্থাও আমরা করে দিচ্ছি।

শেখ হাসিনা করোনায় ধান কাটার সমস্যায় তাঁর দল এবং সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের কৃষকদের পাশে দাঁড়ানোর কথাও স্মরণ করিয়ে দেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাসের সময় যখন ধানকাটা নিয়ে সমস্যা হলো, আমি যখন আমার দলের নেতা-কর্মী বিশেষ করে ছাত্রলীগকে আহ্বান করলাম, আমার ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ, কৃষকলীগ থেকে শুরু করে সকলে মাঠে নেমে পড়লেন। কৃষকের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ধান কেটে ঘরে তুলে দিলেন।

কৃষি যান্ত্রিকীকরণের অংশ হিসেবে হারভেস্টার থেকে শুরু করে সব ধরনের যন্ত্র তাঁর সরকার ধীরে ধীরে কৃষকের হাতে পৌঁছে দেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের কৃষিকে আমরা বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি আমাদেরকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। কৃষি অর্থনীতির সাথে সাথে আমরা শিল্পের দিকেও বিশেষ নজর দিয়েছি। কারণ, উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করার ব্যবস্থা এবং দেশে-বিদেশে পণ্য যেন আমরা রপ্তানি করতে পারি – তার ব্যবস্থা করে কৃষককে সব ধরনের সহযোগিতা আমরা দিয়ে যাচ্ছি।

শেখ হাসিনা বলেন, আমি এই প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বাংলাদেশের সকল কৃষক-কৃষাণীকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই। কারণ, তাঁরা রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে খাদ্য উৎপাদন করেন। সেই খাদ্য খেয়েই আমরা বেঁচে থাকি। কাজেই তাঁদের প্রতি আমাদের সবসময় সমর্থন রয়েছে এবং তাঁদের সহযোগিতা করা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কর্তব্য মনে করে। 

১৯৭৫ সালে জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পরে যখন অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীরা ক্ষমতা দখল করে এদেশের কৃষকদের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে শুরু করলো, সার চাইতে গিয়ে ১৮জন কৃষককে জীবন দিতে হলো; এ-ধরনের ঘটনাও বাংলাদেশে ঘটেছে।

তিনি বলেন, আমি কৃষকলীগকে ধন্যবাদ জানাই। আজকের এই দিনে আমার দুঃখ একটাই – করোনাভাইরাসের কারণে আমি নিজে সশরীরে উপস্থিত থাকতে পারলাম না। সকলের সাথে দেখাও আমার হলো না।

প্রধানমন্ত্রী করোনা সম্পর্কে পুনরায় সতর্ক করে বলেন, সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে, মাস্ক পড়তে হবে। গার্গল করা, ভাপ নেওয়া, যেখানে বেশি জনসমাগম সেখানে না যাওয়া, দূরত্ব বজায় রেখে চলা এবং আমরা যে-স্বাস্থ্য-সুরক্ষার নির্দেশাগুলো দিয়েছি – অবশ্যই সে-নির্দেশনাগুলো মেনে নিজেকে ও অপরকে সুরক্ষিত করুন ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই করোনাভাইরাসের হাত থেকে যেন দেশ ও জাতি মুক্তি পায় – তার জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে সবাই দোয়া করেন, বাংলাদেশ এই মহাদুর্যোগ থেকে যেন দ্রুত মুক্তি পেতে পারে।

Loading...