দ্বিতীয়ার্ধে ফেদেরিকো কিয়েসার গোলে এগিয়ে গিয়েছিল পাল্টা-আক্রমণ নির্ভর কৌশল বেছে নেওয়া ইতালি। শেষদিকে বদলি নামা আলভারো মোরাতার লক্ষ্যভেদে সমতায় ফিরলো বল দখলে অনেক এগিয়ে থাকা স্পেন। নির্ধারিত সময়ের বাকি অংশে ও অতিরিক্ত সময়ে বেশ কিছু সুযোগ তৈরি করেও দল দুটি আর জাল স্পর্শ করতে পারেনি। পেনাল্টি শুটআউটে স্নায়ুচাপ জয় করে শেষ হাসি হেসে ইউরোপিয়ান কাপের ফাইনালে উঠলেন রবার্তো মান্চিনির শিষ্যরা।
মঙ্গলবার (৬ জুলাই) রাতে ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে ইউরো ২০২০-এর প্রথম সেমিফাইনালে টাইব্রেকারে স্পেনের বিপক্ষে ৪-২ গোলে জিতেছে ইতালি। আগের ১২০ মিনিট মিলিয়ে খেলা শেষ হয় ১-১ সমতায়। অবশ্য আজ্জুরিদের চেয়ে তুলনামূলক ভালো খেলা উপহার দিয়েছে স্প্যানিশরা।
টাইব্রেকারে মানুয়েল লোকাতেল্লির প্রথম শট রুখে দেন স্পেনের গোলরক্ষক উনাই সিমোন। তবে এরপর আর কোনো ভুল করেনি ইতালি। একে একে আন্দ্রেয়া বেলোত্তি, লিওনার্দো বোনুচ্চি ও ফেদেরিকো বার্নারদেস্কি বল জালে পাঠানোর পরে জর্জিনিয়ো উল্লাসে মাতান দলকে। অন্যদিকে, স্পেনের দানি ওল্মো প্রথম শটটি উড়িয়ে মারেন। এরপর জেরার্দ মোরেনো ও থিয়াগো আলকান্তারা সফল কিক নিলেও মোরাতার বাজে শট আটকে দেন ইতালিয়ার গোলরক্ষক জিয়ানলুইজি ডোনারুমা।
এদিন শুরু থেকে বল পায়ে রেখে খেলতে থাকে স্পেন। তবে প্রতিপক্ষের রক্ষণে ভীতি ছড়াতে অনেক সময় লেগে যায় দলটির। লা রোহাদের পাসিং ফুটবলের বিপরীতে ইতালির বেশ কষ্টই হয়েছে আক্রমণ করতে।
ত্রয়োদশ মিনিটে মিডফিল্ডার পেদ্রির পাসে ডি-বক্সের মধ্যে ফাঁকায় বল পেয়েছিলেন ফরোয়ার্ড মিকেল ওইয়ারজাবাল; কিন্তু তাঁর প্রথম ছোঁয়া ভালো না হওয়ায় হাতছাড়া হয় স্পেনের সুযোগটি। দুই মিনিট পরে নিকোলো বারেল্লার পাস কেড়ে নিয়ে আক্রমণে ওঠেন ফরোয়ার্ড ফেরান তোরেস; জর্জিনিয়োকে তাঁর শট ইতালির গোলরক্ষক ডোনারুমার পরীক্ষা নিতে পারেননি।
একবিংশ মিনিটে বল বিপদমুক্ত করতে গোলপোস্ট ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলেন গোলরক্ষক সিমোন। তখন এমারসন কাট-ব্যাক করেন মিডফিল্ডার বারেল্লাকে। তবে জাল ফাঁকা থাকলেও আয়মেরিক লাপোর্তকে পেরিয়ে ডি-বক্সের প্রান্ত থেকে শট নেওয়ার পরিস্থিতি তৈরি করতে পারেননি তিনি। চার মিনিট পরে ডোনারুমার দক্ষতায় বেঁচে যায় ইতালি। উইঙ্গার ওল্মোর প্রথম শট লিওনার্দো বোনুচ্চি ব্লক করার পরে মুক্ত বলে তাঁর ফিরতি শট ফিরিয়ে দেন তিনি।
৩৩তম মিনিটে ইতালির রক্ষণভাগের ভুলের ফায়দা তুলতে পারেননি ওল্মো, কাছাকাছি বিকল্প থাকলেও উড়িয়ে মারেন তিনি। ছয় মিনিট পরে স্পেনের আরেকটি গোছানো আক্রমণ সফল হয়নি ওইয়ারজাবালের লক্ষ্যভ্রষ্ট শটে।
প্রথমার্ধের শেষ মিনিটে ভাগ্য সহায় থাকলে গোল পেতে পারতো ইতালি। ডি-বক্সের মধ্যে এমারসনের শট বাধা পায় ক্রসবারে।
বিরতির পরে খেলার গতি বাড়ে। স্পেনের পাশাপাশি ইতালিও আরও মনোযোগী হয় আক্রমণে। ৫২তম মিনিটে ওইয়ারজাবালের পাসে সার্জিও বুস্কেত্সের শট ক্রসবারের সামান্য উপর দিয়ে চলে যায়। আট মিনিট পরে গতিময় পাল্টা-আক্রমণে এগিয়ে যায় ইতালি। চিরো ইম্মোবিলের পাসে দারুণভাবে গোল করেন উইঙ্গার ফেদেরিকো কিয়েসা। চলতি আসরে এটি তাঁর দ্বিতীয় গোল।
৬৫তম মিনিটে সমতায় ফিরতে পারতো স্পেন; তবে, কোকের হাওয়ায় ভাসানো ক্রসে মাথা ছোঁয়াতে ব্যর্থ হন অরক্ষিত ওইয়ারজাবাল। তিন মিনিট পরে ব্যবধান দ্বিগুণ হতে পারতো ইতালির। কিয়েসার পাসে ডি-বক্সের ভেতরে দমিনিকো বেরার্দির শট ঠেকান সিমোন। ৮০তম মিনিটে মাত্তেও পেসসিনার সোজাসুজি শটও লুফে নেন তিনি।
কিছুক্ষণের মধ্যে সমতা আনে স্পেন। ওল্মোর সঙ্গে বল আদান-প্রদান করে ডি-বক্সে ঢুকে নিখুঁত শটে গোল করেন স্ট্রাইকার মোরাতা। আসরে এটি তাঁর তৃতীয় গোল।
গোল পেয়ে উজ্জীবিত হয়ে ওঠে লুইস এনরিকের দল। ইতালির রক্ষণভাগে চাপ বৃদ্ধি করেন তাঁরা। গোল অবশ্য হয়নি।
অতিরিক্ত সময়ের প্রথমার্ধে পেদ্রির ফ্রি-কিক ডোনারুমা ফিরিয়ে দেওয়ার পরে মার্কোস লরেন্তের শট প্রতিহত করেন বোনুচ্চি। দ্বিতীয়ার্ধে বেরার্দি সিমোনকে ফাঁকি দিলেও অফসাইডের কারণে গোল টেকেনি।
অবশেষে টাইব্রেকারে জিতে মাঠ ছাড়ে ইতালি। ১৯৬৮ সালের পরে দ্বিতীয়বারের মতো ইউরোর শিরোপা জয় থেকে মাত্র এক ধাপ দূরে রয়েছে দেশটি। আগামী ১২ জুলাই একই মাঠে ফাইনালে ইংল্যান্ড ও ডেনমার্কের মধ্যকার দ্বিতীয় সেমিফাইনালে জয়ী দলের মুখোমুখি হবে মানচিনির দল।