সফরকারী অস্ট্রেলিয়াকে এবার পাঁচ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে টাইগাররা এগিয়ে গেলো ২-০ ব্যবধানে। মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বুধবার (৪ অগাস্ট) আগে ব্যাট করে সাত উইকেটে ১২১ রান করতে পেরেছিল অজিরা। আট বল বাকী রেখেই ওই রান পেরিয়ে উল্লাসে মেতে উঠে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল।
১২২ রানের সহজ লক্ষ্যে খেলতে নেমে ৬৭ রানে পঞ্চম উইকেট হারিয়েছিল বাংলাদেশ। ফলে পাঁচ উইকেট হাতে নিয়ে শেষ ৫১ বলে ৫৫ রান দরকার ছিলো টাইগারদের। ঐ অবস্থায় অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে জয় নিয়ে চিন্তায় পড়ে যায় বাংলাদেশ। যাহােক, ষষ্ঠ উইকেটে ৪৪ বলে অনবদ্য ৫৬ রানের জুটি গড়ে বাংলাদেশকে দুর্দান্ত এক জয় এনে দেন আফিফ হোসেন ও নুরুল হাসান সোহান। এই জুটির কল্যাণেই আট বল বাকী রেখে অস্ট্রেলিয়াকে পাঁচ উইকেটে পরাজিত করেছে বাংলাদেশ। এতে পাঁচ ম্যাচের সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল মাহমুদুল্লাহর দল।
পাঁচটি চার ও এক ছক্কায় ৩১ বলে অপরাজিত ৩৭ রান করেন আফিফ। তিনটি চারে ২১ বলে ২২ রানে অপরাজিত ছিলেন নুরুল।
এদিন ম্যাচে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করে ২০ ওভারে সাত উইকেটে ১২১ রান করে অস্ট্রেলিয়া। জবাবে ১৮.৪ ওভারে পাঁচ উইকেটে ১২৩ রান করে টাইগাররা।
বিকেলে টস জিতে এবার প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক ম্যাথু ওয়েড। এই ম্যাচেও ব্যাট হাতে সুবিধা করতে পারেননি অস্ট্রেলিয়ার দুই ওপেনার জশ ফিলিপ ও অ্যালেক্স ক্যারি। ৫.৪ ওভারে ৩১ রানের মধ্যে বিদায় নেন এই দুই ওপেনার।
তৃতীয় ওভারে দলীয় ১৩ রানে ক্যারিকে বিদায় দেন স্পিনার মেহেদি হাসান। নাসুম আহমেদকে ক্যাচ দেয়ার আগে ১১ রান করেন ক্যারি। মঙ্গলবার প্রথম ম্যাচে ইনিংসের প্রথম বলেই ক্যারিকে বোল্ড করেছিলেন মেহেদি।
ফিলিপকে ১০ রানের বেশি করতে দেননি বাংলাদেশের কাটার মাস্টার মুস্তাফিজুর রহমান; তাঁকে বোল্ড করেন ফিজ।
দুই ওপেনারের বিদায়ের পরে দলের হাল ধরেন মিচেল মার্শ ও মইসেস হেনরিক্স। শুরুতে সর্তকার সাথে খেললেও, পরে রানের গতি বাড়ানোর চেষ্টা করেছেন তাঁরা। চতুর্দশ ওভারে অস্ট্রেলিয়ার রান রেট ৬-এর উপর নিতে পেরেছেন মার্শ ও হেনরিক্স।; তার আগ পর্যন্ত ৬-এর নিচেই ছিল।
পঞ্চদশ ওভারের দ্বিতীয় বলে দলীয় ৮৮ রানে এই জুটিতে ভাঙ্গন ধরান অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। তিনটি চার ও এক ছক্কায় ২৫ বলে ৩০ রান করা হেনরিক্সকে বোল্ড করেন সাকিব। তৃতীয় উইকেটে মার্শের সাথে ৫২ বলে ৫৭ রান করেছেন হেনরিক্স।
দলীয় রান তিন অংকে পৌঁছানোর আগে থেমে যায় মার্শের ইনিংসও। পেসার শরিফুলের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন মার্শ। পাঁচটি চারে ৪২ বলে ৪৫ রান করেছেন মার্শ। তখন অস্ট্রেলিয়ার স্কোর ৯৯। ইনিংসের ২৩ বল বাকী ছিলো।
এরপর অষ্টাদশ ওভারের তৃতীয় ও চতুর্থ বলে যথাক্রমে অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক ম্যাথু ওয়েড ও অ্যাস্টন আগারকে শিকার করেন মুস্তাফিজ। ওয়েড চার ও আগার কোনাে রান না করেই ফেরেন। হ্যাটট্রিকের সুযোগ থাকলেও ওয়াইড বল দিয়ে তা হারান ফিজ। নিজের তৃতীয় ওভারে মাত্র তিন রান দিয়ে দুই উইকেট নেন তিনি।
পরের ওভারে তিন রান করা আ্যাস্টন টার্নারকে আউট করে অস্ট্রেলিয়ার সপ্তম ও নিজের দ্বিতীয় উইকেট শিকার করেন শরিফুল।
শেষ দিকে দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান মিচেল স্টার্কের ১৩ ও এন্ড্রু টাইয়ের তিন রানের সুবাদে ১২১ রানের সংগ্রহ পায় অস্ট্রেলিয়া।
বাংলাদেশের মুস্তাফিজ ২৩ রানে তিন উইকেট নেন। শরিফুল দুইটি, মেহেদি-সাকিব একটি করে উইকেট শিকার করেন।
সিরিজে ডাবল লিড নিতে ১২২ রানের সহজ টার্গেটের জবাবে শুরুটা ভালো হয়নি টাইগারদের। ২১ রানের মধ্যে প্যাভিলিয়নে ফেরেন দুই ওপেনার মোহাম্মদ নাইম ও সৌম্য সরকার। তৃতীয় ওভারে সৌম্যকে খালি হাতে ফেরান অস্ট্রেলিয়ার পেসার স্টার্ক। পরের ওভারে নাইমকে থামান অস্ট্রেলিয়ার আরেক পেসার জশ হ্যাজেলউড। নয় রান করেন নাইম। দুই ওপেনারই বোল্ড হয়েছেন।
এরপর মেহেদি হাসানকে নিয়ে ধাক্কা সামলে উঠার চেষ্টা করেন তিন নম্বরে নামা সাকিব। মারমুখী মেজাজে না থাকলেও, দলের রানের চাকা সচল রেখেছিলেন সাকিব-মেহেদি। অষ্টম ওভারে অস্ট্রেলিয়ার স্পিনার এডাম জাম্পাকে লং-অফ দিয়ে ছক্কা মেরে দলের স্কোর ৫০-এ নেন ব্যাটিং অর্ডারে প্রমোশন পাওয়া মেহেদি। তবে, পরের ওভারে ভাঙ্গে সাকিব-মেহেদি জুটি। চারটি চারে ১৭ বলে ২৬ রান করা সাকিবকে বোল্ড করেন অস্ট্রেলিয়ার মিডিয়াম পেসার এন্ড্রু টাই। তৃতীয় উইকেট সাকিব-মেহেদি জুটি ৩২ বলে ৩৭ রান করেন।
সাকিবের আউটে বিপদেই পড়ে বাংলাদেশ। এরপর দ্রুত প্যাভিলিয়নে ফেরেন মাহমুদুল্লাহ ও মেহেদি। রানের খাতা খোলার আগেই মাহমুদুল্লাহকে শিকার করেন স্পিনার অ্যাস্টন আগার। এক ছক্কায় ২৪ বলে ২৩ রান করা মেহেদিকে থামান জাম্পা।
১১.২ ওভারে দলীয় ৬৭ রানে পঞ্চম ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হন মেহেদি। ঐ সময় ৫১ বলে ৫৫ রান দরকার ছিলো বাংলাদেশের। এ-অবস্থায় জুটি বাঁধেন আফিফ হোসেন ও নুরুল হাসান। বুঝেশুনে খেলার পাশাপাশি দ্রুত রানও করেছেন তাঁরা। ত্রয়োদশ ওভারে ১১, ১৬ ওভারে ১৩ রান তুলে শেষ চার ওভারে জয়ের সমীকরণ ১৯ রানে নামিয়ে আনেন আফিফ-নুরুল। বাকী ১৯ রান করতে ১৬ বল খরচ করেন আফিফ ও নুরুল।
আগামী ৬ অগাস্ট একই ভেনুতে হবে সিরিজের তৃতীয় ম্যাচ।