ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল)-এর ফাইনালে কলকাতা নাইট রাইডার্সকে বেশ বড় লক্ষ্যই দিয়েছিল চেন্নাই সুপার কিংস; যদিও তাঁদের বোলারদের শুরুটা ভালো ছিল না। তবে, এক পর্যায়ে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় দলটি। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট নিয়ে ভেঙে দেয় কলকাতার স্বপ্ন। ফলে, ম্যাচ জিতে আইপিএল-এর শিরোপা পুনরুদ্ধার করলো এমএস ধোনির দল। প্রতিযোগিতায় এটি দলটির চতুর্থ শিরোপা।
দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শুক্রবার (১৫ অক্টোবর) কলকাতা নাইট রাইডার্সকে ২৭ রানে হারিয়েছে চেন্নাই। এদিন আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে তিন উইকেট হারিয়ে ১৯২ রান করেছিল চেন্নাই। জবাবে, নির্ধারিত ২০ ওভারে নয় উইকেটে ১৬৫ রানের বেশি করতে পারেনি কলকাতা।
ব্যাটিং ও বোলিং দুই দিকেই ব্যর্থ হয়েছেন কলকাতার বাংলাদেশি অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। ব্যাট করতে নেমে প্রথম বলেই এলবিডাব্লিউর ফাঁদে পড়েন তিনি। আর বল হাতেও খেয়েছেন পিটুনি। তিন ওভার বল করে উইকেটশূন্য থেকে ৩৩ রান খরচ করেছেন এই বাঁহাতি।
অথচ, লক্ষ্য তাড়ায় এদিন দারুণ শুরু করেছিল কলকাতা। শুবমান গিল ও ভেংকাটেশ আইয়ারের ওপেনিং জুটিতেই এসেছে ৯১ রান। দুই ওপেনারই ফিফটি করেছেন। কিন্তু এরপরই যেন বালির বাঁধের মতো ভেঙে পড়ে দলটি। পরের ছয় ব্যাটসম্যান আউট হয়েছেন দ্রুতই। তবে নবম উইকেট জুটিতে লোকি ফার্গুসনকে নিয়ে চেষ্টা চালিয়েছিলেন শিভাম মাভি। কিন্তু ৩৯ রান জুটিতে শুধু পরাজয়ের ব্যবধানই কমাতে পেরেছেন।
মূলত আইয়ারকে আউট করে কলকাতার দুঃস্বপ্নের শুরুটা করেন শার্দুল ঠাকুর। একই ওভারে খালি হাতে নিতিশ রানাকেও তুলে নেন তিনি। পরের ওভারে নারিনকে আউট করেন জশ হ্যাজ্লউড। এক ওভার পরে ফিরে এসে সেট ব্যাটসম্যান শুবমানকেও এই অজি পেসার ফিরিয়ে দিলে বড় চাপে পড়ে যায় কলকাতা।
পঞ্চদশ ওভারে পরপর দুই বলে দিনেশ কার্তিক ও সাকিবকে ফিরিয়ে সেই চাপ আরও বাড়িয়ে দেন রবীন্দ্র জাদেজা। তখনই জয়ের সুবাস পেতে শুরু করে চেন্নাই। শেষ পর্যন্ত ফার্গুসন ও মাভির লড়াই থামিয়ে ম্যাচ জিতে নেয় হলুদ জার্সিধারীরা।
এদিন দলের সর্বোচ্চ ৫১ রান করেছেন শুবমান। ৪৩ বলে ছয়টি চারের সাহায্যে এই রান করেন তিনি। আরেক ওপেনার আইয়ারের ব্যাট থেকে এসেছে ৫০ রান। ৩২ বলে পাঁচটি চার ও তিনটি ছক্কায় এই রান করেন তিনি। একটি চার ও দুইটি ছক্কায় ২০ রান আসে মাভির ব্যাট থেকে। একটি করে চার ও ছক্কায় ১১ বলে ১৮ রান করে অপরাজিত ছিলেন ফার্গুসন।
চেন্নাইয়ের পক্ষে ৩৮ রানের খরচায় তিন উইকেট পেয়েছেন শার্দুল। দুইটি করে উইকেট শিকার করেছেন হ্যাজলউড ও জাদেজা।
কলকাতার বোলিং শুরু করেছিলেন সাকিব। প্রথম ওভারে দেন ছয় রান। পরের ওভারে ফিরে মার খেয়েছেন তিনি। দশম ওভারে আবার যখন তাঁকে বল দেওয়া হলো, তখনও অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি। সুনীল নারিন ছাড়া সাকিবের মতোই বিবর্ণ ছিলেন কলকাতার বাকি বোলাররাও। ফলে, বড় লক্ষ্যই পেয়েছে দল।
টস হেরে বোলিংবেছে নিয়েছিল কলকাতা। কিন্তু পাওয়ার প্লেতে কোনো উইকেট না হারিয়ে ৫০ রান আনেন চেন্নাইয়ের দুই ওপেনার। গায়কোয়াড় ও ডু প্লেসির উদ্বোধনী জুটি টিকে থাকে ৮.১ ওভার পর্যন্ত। ৬১ রানের এই জুটি ভাঙেন নারিন। শিভাম মাভিকে ক্যাচ দিয়ে ২৭ বলে ৩২ করে সাজঘরে ফেরেন গায়কোয়াড়।
তিনে নামা উথাপ্পা উইকেটে গিয়েই চড়াও হন; ফলে, দ্র্রুত বাড়তে থাকে চেন্নাইয়ের রান। দ্বিতীয় উইকেটে ডু প্লেসির সঙ্গে মাত্র ৩২ বলে ৬৩ রান যোগ করেন উথাপ্পা। ক্যারিবিয়ান তারকা নারিনকে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে এলবিডাব্লিউ হন তিনি। ১৫ বলে তিন ছক্কায় ৩১ রান এসেছে তাঁর ব্যাট থেকে।
৩৫ বলে হাফসেঞ্চুরি করা ডু প্লেসি এরপর সঙ্গী হিসেবে পান ইংল্যান্ডের অলরাউন্ডার মঈন আলীকে। তাঁদের জুটিও এগোতে থাকে আগ্রাসীভাবে। ইনিংসের শেষ ডেলিভারিতে ডু প্লেসি শিকার হন মাভির। সাত চার ও তিন ছক্কায় ৫৯ বলে ৮৩ রান করেন তিনি। তাঁর সঙ্গে ৩৯ বলে ৬৮ রানের জুটিতে মঈনের অবদান ৩৭। ২০ বলের ইনিংসে দুই চার ও তিন ছক্কা হাঁকিয়ে অপরাজিত ছিলেন তিনি।
কলকাতার হয়ে নারিন চার ওভারে ২৬ রানে দুই উইকেট শিকার করেন। এক উইকেট নিয়ে ৩২ রান দিয়েছেন মাভি। সবচেয়ে খরুচে ছিলেন নিউজিল্যান্ডের পেস অলরাউন্ডার লোকি ফার্গুসন। তাঁর চার ওভারে চেন্নাই করেছে ৫৬ রান। স্পিনার বরুণ চক্রবর্তী দিয়েছেন ৩৮ রান।