টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সপ্তম আসর লজ্জাজনক এক পরাজয় দিয়ে শুরু করলো বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। রোববার (১৭ অক্টোবর) বাছাইপর্বে নিজেদের প্রথম ম্যাচে স্কটল্যান্ডের কাছে ছয় রানে হেরেছেন মাহমুদুল্লাহ-সাকিবরা। প্রথমে ব্যাট করে ২০ ওভারে নয় উইকেটে ১৪০ রান করে স্কটল্যান্ড। জবাবে ২০ ওভারে সাত উইকেটে ১৩৪ রান করতে পেরেছে টাইগাররা।
ওমানের আল আমেরাতে ক্রিকেট গ্রাউন্ডে টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিং নেন বাংলাদেশ-অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। প্রথম ওভারে বল হাতে চার রান দেন পেসার তাসকিন আহমেদ। পরের ওভারে লেগ-বাই থেকে এক রান ছাড়া মেইডেন ওভার পান কাটার মাস্টার মুস্তাফিজুর রহমান।
প্রথম দুই ওভারে তেমন রান না আসায় চাপে পড়ে স্কটল্যান্ড। তৃতীয় ওভারে সেই চাপ আরও বাড়ান পেস অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন। দুর্দান্ত এক ইয়র্কারে রানের খাতা খোলার আগেই কাইল কোয়েৎজারকে বোল্ড করেন সাইফুদ্দিন।
এরপরই চাপের মুখ থেকে দলকে রক্ষা করতে মারমুখী হয়ে উঠেন আরেক ওপেনার জর্জ মুন্সে। পাওয়ার প্লেতে দুই ছক্কা ও একটি চার মারেন তিনি। তাঁর দেখাদেখি একটি চার মারেন তিন নম্বরে নামা উইকেটরক্ষক ম্যাথু ক্রস। এতে, সাত ওভার শেষে এক উইকেটে ৪৪ রান করে ম্যাচে ফেরে স্কটল্যান্ড। এরপরই জমে যাওয়া মুন্সে-ক্রস জুটি ভাঙতে মরিয়া ছিল টাইগাররা। দলের আশা পূরণ করেন অফ-স্পিনার মেহেদি হাসান। নিজের প্রথম ও ইনিংসের অষ্টম ওভারে দুই উইকেট তুলে নেন মেহেদি। দলীয় ৪৫ ও ৪৬ রানে মুন্সে-ক্রসকেই বিদায় দেন তিনি। ১৭ বলে একটি চারে ১১ রান করেন ক্রস। দুইটি করে চার-ছক্কায় ২৩ বলে ২৯ রান করেন মুন্সে।
দুই সেট ব্যাটসম্যানকে শিকার করে আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে টাইগাররা। এতে স্কটল্যান্ডের মিডল-অর্ডারে ছোটখাটো ধস নামান মেহেদি ও সাকিব। সাকিব দুইটি ও মেহেদি একটি উইকেট নেন। এক পর্যায়ে ৫৩ রানে ছয় উইকেট হারায় স্কটল্যান্ড। এ-অবস্থায় দলের হাল ধরেন ক্রিস গ্রেভস ও মার্ক ওয়াট। মারমুখী মেজাজে ব্যাট করে স্কটল্যান্ডকে লড়াই করার পুঁজি এনে দেন গ্রেভ্স। ২৮ বলে চারটি চার ও দুই ছক্কায় ৪৫ রান করেন গ্রেভ্স। ১৭ বলে ২২ রান করেন ওয়াট। শেষ পর্যন্ত ২০ ওভারে নয় উইকেটে ১৪০ রান করে স্কটিশরা।
বাংলাদেশের মেহেদি তিনটি, মুস্তাফিজ-সাকিব দুইটি করে এবং তাসকিন-সাইফুদ্দিন একটি করে উইকেট শিকার করেন। এদিন দুই উইকেট নিয়ে আন্তর্জাতিক টি-২০ ইতিহাসে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী এখন সাকিব আল হাসান। তাঁর পেছনে পড়ে গেলেন শ্রীলংকার লাসিথ মালিঙ্গা।
জয়ের জন্য ১৪১ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে শুরুতে ভালো করতে পারেনি বাংলাদেশ। ১৮ রানে দুই ওপেনার প্যাভিলিয়নে ফেরেন। লিটন দাস ও সৌম্য সরকার, দু’জনই পাঁচ রান করে সংগ্রহ করেছেন।
২১ বলে দুই উইকেট হারানোর পরে দলের হাল ধরেন সাকিব ও মুশফিকুর রহিম। সতর্কতার সাথে স্কটল্যান্ডের বোলারদের মোকাবেলা করতে থাকেন তাঁরা। উইকেটে টিকে থাকাই মূল লক্ষ্য ছিল সাকিব-মুশফিক জুটির । চতুর্থ ওভারে জুটি বাঁধার পরে অষ্টম ওভার পর্যন্ত কোনো বাউন্ডারি বা ওভার বাউন্ডারি করতে পারেননি সাকিব-মুশফিক। নবম ওভারে পরপর দু’টি ছক্কা মারেন মুশি।
তবে, দ্বাদশ ও চতুর্দশ ওভারে বড় ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। প্রথমে ২৮ বলে ২০ রান করা সাকিব এবং পরে ৩৬ বলে ৩৮ রান করে মুশফিক আউট হন। সাকিবের ইনিংসে একটি চার এবং মুশফিকের ইনিংসে একটি চার ও দুইটি ছক্কা ছিল।
সাকিব-মুশফিকের বিদায়ে ৭৪ রানে চতুর্থ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। এমন অবস্থায় জয়ের জন্য শেষ ৩০ বলে ৫৪ রান দরকার পড়ে বাংলাদেশের। এ-সময় অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহর সাথে উইকেটে ছিলেন আফিফ হোসেন। সপ্তদশ ওভারে দুইটি চারসহ ১২ রান মাহমুদুল্লাহ-আফিফ।
অষ্টাদশ ওভারে আউট হন আফিফ। দুইটি চারে ১২ বলে ১৮ রান করেন। আফিফ ফিরলেও, মাহমুদুল্লাহর ক্যাপ্টেন্স নকের অপেক্ষায় ছিল দল, সাথে উইকেটরক্ষক নুরুল হাসানের শেষ সময়ে ক্যামিও – যা আনঅফিসিয়াল ম্যাচে ওমান ‘এ’ দলের বিপক্ষে করেছিলেন তিনি।
কিন্তু ঊনবিংশ ওভারে বাংলাদেশের স্বপ্ন চুরমার করে দেন স্কটল্যান্ডের ডান-হাতি পেসার ব্র্যাড হুইল। দ্বিতীয় বলে নুরুলকে ও পঞ্চম বলে মাহমুুদুল্লাহকে আউট করেন তিনি। ২২ বলে একটি করে চার-ছক্কায় মাহমুদুল্লাহ ২৩ ও নুরুল দুই রান করেন। ফলে, শেষ ওভারে জিততে ২৪ রান দরকার ছিল বাংলাদেশের।
শেষ ওভারের দ্বিতীয় বলে সাইফুদ্দিনের বাউন্ডারি, এরপর মেহেদির ব্যাট থেকে চতুর্থ বলে ওভার বাউন্ডারি এসেছে। তাতেও স্কটল্যান্ডের দেওয়া টার্গেট স্পর্শ করতে পারেনি টাইগাররা। শেষ পর্যন্ত ২০ ওভারে সাত উইকেটে ১৩৪ রান করে পরাজয় মেনে নিতে হয়েছে তাঁদের।
পাঁচ বলে একটি করে চার-ছক্কায় মেহেদি অপরাজিত ১৩ এবং সাইফুদ্দিন দুই বলে পাঁচ রানে অপরাজিত ছিলেন। স্কটল্যান্ডের হুইল ২৪ রানে তিন উইকেট শিকার করেন।
মঙ্গলবার (১৯ অক্টোবর) বাছাইপর্বে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে স্বাগতিক ওমানের বিপক্ষে খেলবে টাইগাররা।